সেপাং-এ রেড বুল
৩১ মার্চ ২০১৪চলতি মরশুমটা ফেটেলের মনমতো শুরু হয়নি৷ রেড বুলের গাড়ি, অর্থাৎ দৃশ্যত তার সফ্টওয়্যার নিয়ে নানা গোলমাল৷ গোড়ার দিকের ট্রেনিং সেশনগুলোতে তো ফেটেল ক'টা ল্যাপ পূর্ণ করতে পারবেন, তা-ই নিয়েই সন্দেহ ছিল৷ ফর্মুলা ওয়ানের গাড়ি ও প্রযুক্তিতে যে নানা পরিবর্তন এসেছে, সে বিষয়ে ফেটেলের রাগ হওয়াটা স্বাভাবিক – কিন্তু অন্যান্য রেসিং টিমের মতোই রেড বুলকেও যে অনেক কাজ করতে হবে, এবং সে কাজ যে বহুলাংশে বাকি আছে, সেটাও ফেটেলের ভেবে দেখা উচিত ছিল৷ তা না করে, এই নরমস্বভাব মানুষটি নতুন এফ-ওয়ান মোটরের আওয়াজকে অতি কুচ্ছিত ভাষায় গাল দিয়েছিলেন৷
এ কেমন বৈরী
মালয়েশিয়ার সেপাং-এ এই মরশুমের দ্বিতীয় দৌড়েও মার্সিডিজের আধিপত্য প্রকট ছিল, কিন্তু ঠিক তার পিছনেই কখন যেন ‘নিঃশব্দে' এসে দাঁড়িয়েছেন রেড বুলের সেবাস্টিয়ান ফেটেল, হ্যামিলটন ও রসব্যার্গের পর পোডিয়ামে তৃতীয় স্থানটি ছিল তাঁর৷ বলতে কি, কোয়ালিফাইং-এ দুই মার্সিডিজ পাইলটের মাঝে নিজের জায়গা করে নিয়েছিলেন ফেটেল৷ কিন্তু রেসের সূচনায় প্রথম বাঁকের আগেই রসব্যার্গ ফেটেলের ডানদিক দিয়ে কোনোরকমে গলে বেরিয়ে দ্বিতীয় স্থানে চলে আসেন৷
স্টার্টের ঐ ওভারটেকিং-এর সময় ফেটেল যে হঠাৎ ফাঁকটা বুজে দেবেন না, কিংবা প্রতিদ্বন্দ্বীর উপর চাপ সৃষ্টি করবেন না – এটাই ছিল রসব্যার্গের আশা ও প্রার্থনা৷ ভাগ্যের কথা, ফেটেল স্বদেশবাসীর প্রত্যাশা ব্যর্থ করেননি৷ মালয়েশিয়া বলে কথা: বৃষ্টির প্রত্যাশা তো ছিলই; কাজেই পরে বৃষ্টি নামলে ফেটেল ও রকম দু-চারটে রসব্যার্গকে স্বচ্ছন্দে ওভারটেক করতে পারবেন, এটাই হয়ত ছিল ফেটেলের প্রত্যাশা৷
ছায়া ও কায়া
রসব্যার্গ ‘ফেটেলের গরম নিঃশ্বাস' নিজের কাঁধে অনুভব করেছেন ঠিকই৷ নয়ত মরশুমের গোড়ায় যে রেড বুলের রেনো ইঞ্জিনের নির্ভরযোগ্যতা নিয়ে সমস্যা ছিল, রসব্যার্গ তা স্বচক্ষে দেখেছেন৷ ‘‘চার সপ্তাহ আগে টেস্টিং-এর শেষ দিনে ওদের (অর্থাৎ রেড বুল দলকে) দেখাই যাচ্ছিল না৷ আর এখন ফেটেল ঠিক আমার পিছনে থেকে আমার উপর চাপ দিচ্ছে,'' সেপাং রেসের পর সাংবাদিকদের বলেছেন রসব্যার্গ৷ ‘‘ওরা (অর্থাৎ রেড বুল) যেভাবে ওদের স্পিড বাড়িয়েছে, তা চমকে যাওয়ার মতো৷ কাজেই আমাদের নিজেদের অ্যাডভান্টেজটা বজায় রাখতে হবে৷''
মনে রাখতে হবে, পয়েন্টের তালিকায় নিকো রসব্যার্গ-ই এখন শীর্ষে: ৪৩ পয়েন্ট৷ দ্বিতীয় হ্যামিলটন, ২৫ পয়েন্ট৷ তৃতীয় ফেরারির ফের্নান্দো আলন্সো, যার ২৪ পয়েন্ট৷ তা সত্ত্বেও রসব্যার্গ জানেন, ফেটেলকে একমাত্র গাড়িজনিত সমস্যাই রুখতে পারে, নয়ত আবহাওয়া পর্যন্ত নয়৷ সত্যিই তো, সেপাং-এ ট্র্যাক প্রায় শুষ্কই ছিল, তবুও ফেটেল ও রেড বুল মার্সিডিজের ঘাড়ে ‘গরম নিঃশ্বাস' ফেলেছেন!
রেড বুল দলের প্রধান ক্রিস্টিয়ান হর্নার কিন্তু জানেন যে, সেপাং-এ যেরকম ট্র্যাকের ‘স্ট্রেইট' বা সরলরেখার মতো বাঁকবিহীন ঋজু অংশগুলিতে রেড বুল মার্সিডিজের গতির কাছে দাঁড়াতে পারেনি, বাহরাইনের আগামী রেসেও ট্র্যাকটা অনেকটা সেরকম – এছাড়া বাহরাইনে বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা কম! তবে গাড়ির সফটওয়্যার সমস্যা নিয়ে কাজ চলেছে এবং এ সপ্তাহের মধ্যেই সেক্ষেত্রে প্রগতির আশা করছেন হর্নার৷
খোকা কাঁদবে না
শেষমেষ বলা দরকার: পুরনো ভি-এইট ইঞ্জিনগুলির কানফাটানো তারস্বর আওয়াজের বদলে নতুন ভি-সিক্স ১ দশমিক ৬ লিটারের টার্বো ইঞ্জিনগুলির আওয়াজ অনেক কম হওয়ার ফলে ফর্মুলা ওয়ান মোটর রেসিং-এর সাউন্ড ট্র্যাকই বদলে গিয়েছে৷ ট্র্যাকের উপর চওড়া টায়ারগুলোর আওয়াজ, দর্শকদের আনন্দ-উল্লাস, মাইকে রেসের পরিস্থিতি সংক্রান্ত ঘোষণা, এ সবই এখন শোনা যাচ্ছে৷ আরো বড় কথা, দর্শক কিংবা কর্মকর্তা, কাউকেই কানে ইয়ার-প্লাগ ঢুকিয়ে কান বাঁচাতে হচ্ছে না; দর্শকদের কোলে কচিকাঁচারা ফর্মুলা ওয়ান গাড়িগুলোর প্রচণ্ড আওয়াজে কেঁদেকোঁকিয়ে উঠছে না৷ ওদিকে পণ্ডিতরা বলছেন: ফর্মুলা ওয়ান হলো মোটরদৌড়ে সর্বাধুনিক প্রযুক্তির চরম শিখর৷ কাজেই ফর্মুলা ওয়ানকে ফুয়েল এফিসিয়েন্সির পরাকাষ্ঠা হতে হবে৷ নতুন হাইব্রিড ইঞ্জিনগুলি নাকি এক কথায় চমৎকার৷
এসি/ডিজি (রয়টার্স, এএফপি)