বিশ্বের সবচেয়ে বড় তথ্য প্রযুক্তি মেলা সেবিট শেষ হচ্ছে শুক্রবার৷ এডওয়ার্ড স্নোডেনের দৌলতে এবার আইটি খাতে নিরাপত্তার বিষয়টি বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে৷ জার্মান সংস্থাগুলি বেশ কিছু নির্ভরযোগ্য সমাধানসূত্র তুলে ধরেছে৷
বিজ্ঞাপন
ন্যাটোর উপ মহাসচিব ‘আস্থা ও নিরাপত্তা' নিয়ে ভাষণ দিয়েছেন৷ আইটি নিরাপত্তার ‘গডফাদার' হিসেবে পরিচিত ইউজিন কাস্পারস্কি নিজে মেলায় এসেছেন৷ এনএসএ কেলেঙ্কারি তথ্য প্রযুক্তি জগতকে কতটা নাড়া দিয়েছে, এর ফলে তা স্পষ্ট হয়ে যায়৷ ইউরোপীয় কমিশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট নেলি ক্রুস বলেন, ইউরোপের আইটি কোম্পানিগুলির এবার নড়েচড়ে বসার সময় হয়েছে৷ এবারের সেবিট মেলায় সেই সচেতনতা অবশ্য দেখাও গেছে৷ চারিদিকে শুধু ‘আস্থা' ও ‘নিরাপত্তা'-র কথা শোনা গেছে৷
আইটি সিকিউউরিটির প্রশ্নে জার্মানি তার সুনাম তুলে ধরতে চাইছে৷ ইন্টারনেটের ক্ষেত্রে বিদেশের উপর নির্ভরতা কাটিয়ে তুলে ‘মেড ইন জার্মানি সলিউশন' আপাতত মূল লক্ষ্য৷ জার্মানির ডয়চে টেলিকম গ্রাহকদের তথ্য সংরক্ষণের উপর জোর দিচ্ছে৷ বিদেশি প্রোভাইডারদের উপর আস্থা কমে চলায় সেই শূন্যস্থান পূরণ করতে এগিয়ে আসছে জার্মানির অনেক ইন্টারনেট কোম্পানি৷ অন্যদিকে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলিকে নিজেদের তথ্য সংরক্ষণের ক্ষেত্রে আরও সচেতন করে তুলতে চায় টেলিকম৷ সেই লক্ষ্যে তাদের জন্য সমাধানসূত্র তৈরির কাজ করছে এই সংস্থা৷
নিরাপত্তার ক্ষেত্রে একটি বড় প্রশ্ন দেখা যাচ্ছে ‘ক্লাউড কম্পিউটিং'-কে ঘিরে৷ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান যে ক্লাউড পরিষেবার উপর ভরসা করে মূল্যবান তথ্য সেখানে জমা রাখছে, তা অন্য কারো নাগালের মধ্যে আছে কিনা, সেটা একটা বড় প্রশ্ন৷ এক্ষেত্রে জার্মানির কিছু সংস্থা অত্যন্ত নির্ভরযোগ্য পরিষেবা দিচ্ছে৷ এনএসএ কেলেঙ্কারির জের ধরে মার্কিন সংস্থাগুলির প্রতি আস্থা বিশাল ধাক্কা খেয়েছে৷ তাই স্থানীয় পর্যায়ে ক্লাউড কম্পিউটিং-এর ভবিষ্যৎ বেশ উজ্জ্বল হয়ে উঠছে৷ নিজস্ব হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার নিয়ে জার্মানির মতো দেশ অন্তত ইউরোপের মধ্যে প্রকৃত বিকল্প হয়ে উঠতে পারে – এমন সম্ভাবনা উজ্জ্বল হয়ে উঠছে৷
সেবিট-এ এক টুকরো বাংলাদেশ
বাংলাদেশ রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি)-র উদ্যোগে ১৯৯৯ সাল থেকে সেবিট-এ অংশ নিতে শুরু করে বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান৷ এ বছরও ব্যতিক্রম হয়নি৷ সফটওয়্যার নির্মাতারা নানা পণ্য নিয়ে হাজির এবার৷ বিস্তারিত ছবিঘরে৷
ছবি: DW/Arafatul Islam
সেবিট-এ বাংলাদেশ
বাংলাদেশের সেবিট যাত্রা শুরু হয় ১৯৯৯ সালে, বাংলাদেশ রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি)-র উদ্যোগে৷ সেই যাত্রায় এবার হানোফারের মেলায় হাজির দশটির বেশি প্রতিষ্ঠান৷ বিশ্বের সবচেয়ে বড় এই মেলায় বাংলাদেশি সফটওয়্যার নির্মাতা নিয়ে এসেছে গাড়ির জন্য অ্যাপস থেকে শুরু করে নিরাপদ ই-মেল ব্যবস্থাসহ বিভিন্ন পণ্য এবং সেবা৷
ছবি: DW/A. Islam
গাড়ির জন্য অ্যাপস
গাড়ির কোথাও সমস্যা হলে সহজেই তা জানার এবং দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের এক অভিনব মুঠোফোন অ্যাপস তৈরি করেছে ডাটাসফট৷ সেবিট-এ এই অ্যাপসের কর্মকাণ্ড দর্শনার্থীদের প্রদর্শন করেন প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক এম. মনজুর মাহমুদ৷ ১৯৯৯ সাল থেকে নিয়মিত হানোফারের মেলায় অংশ নিচ্ছে ডাটাসফট৷
ছবি: DW/Arafatul Islam
ওয়েবনির্ভর ই-গভর্নেন্স সফটওয়্যার
সেই ১৯৯৯ সাল থেকে নিয়মিত সেবিট-এ অংশ নিচ্ছে লিডসফট৷ মেলায় হাজির প্রতিষ্ঠানটির দুই কর্মকর্তার একজন রমিজুর রহমান খান জানান, এবার তারা ওয়েবনির্ভর ই-গভর্নেন্স সফটওয়্যারের দিকে বেশি মনযোগ দিচ্ছেন৷ পাশাপাশি রয়েছে বিভিন্ন মোবাইল অ্যাপস৷ ডেনমার্কের একাধিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজ করছে লিডসফট৷
ছবি: DW/Arafatul Islam
ই-মেলের নিরাপত্তায় বিশেষ সিস্টেম
গুগল কিংবা ইয়াহুর মতো ই-মেল সেবায় মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার নজরদারি নিয়ে গোটা বিশ্ব সোচ্চার এখন৷ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ই-মেল যোগাযোগকে গোয়েন্দাদের নজর থেকে বাইরে রাখার নতুন এক পদ্ধতি সেবিট-এ প্রদর্শন করছে বিয়ন্ড টেকনোলজিস৷ প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক সালাউদ্দিন পাশা জানান, তাদের ই-মেল সেবার নিয়ন্ত্রণ থাকবে ব্যবহারকারীর কাছে৷ তৃতীয় কোনো পক্ষ এই ব্যবস্থা থেকে তথ্য চুরির সুযোগ পাবে না৷
ছবি: DW/Arafatul Islam
চাহিদা অনুযায়ী পণ্য তৈরি
সফটওয়্যার নির্মাতা প্রতিষ্ঠান এসডিএসএল পণ্য কিংবা সেবা তৈরি করে ক্রেতার চাহিদা অনুযায়ী৷ ক্রেতা সেই পণ্য চাইলে বিক্রি করতে পারেন নিজের নামে৷ প্রতিষ্ঠানটির প্রিন্সিপাল সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ মহিউদ্দিন আহমেদ জানান, মূলত জিআইএস নির্ভর ম্যাপ, নেভিগেশন অ্যাপস এবং সফটওয়্যার তৈরি করি আমরা৷
ছবি: DW/Arafatul Islam
বছরে আয় এক মিলিয়ন মার্কিন ডলার
ব্রেইন স্টেশনের বয়স এখনো চার বছর হয়নি৷ তবে এরই মধ্যে প্রতিষ্ঠানটির বাৎসরিক আয় মিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে৷ ব্রেইন স্টেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রাইসুল কবির জানান, পার্টনার দেশের সন্ধানে সেবিট-এ এসেছেন তাঁরা৷ নিজের কর্মকাণ্ডে প্রবাসী বাংলাদেশিদের অংশীদার করতেও আগ্রহী তাঁরা৷ ছবিতে সেবিটে অংশ নেয়া ব্রেইন স্টেশনের কয়েকজন কর্মকর্তা৷
ছবি: DW/Arafatul Islam
সিসটেক ডিজিটাল
ই-লার্নিংকে এখনো গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করছে সিসটেক ডিজিটাল৷ তবে বিশ্বব্যাপী মোবাইল অ্যাপসের চাহিদার দিকেও নজর রয়েছে তাদের৷ প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা এম. রাশেদুল হাসান সস্ত্রীক মেলায় অংশ নিয়েছেন৷
ছবি: DW/Arafatul Islam
সেবিট-এ হাইটেক পার্ক অথরিটি
বাংলাদেশে বহুল প্রত্যাশিত তথ্য প্রযুক্তি কেন্দ্র হাইটেক পার্ক এখনো নির্মাণাধীন পর্যায়ে রয়েছে৷ তবে সেবিট-এ প্রদর্শনরত হাইটেক পার্ক অথোরিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক হোসনে আরা বেগম জানিয়েছেন, চলতি বছরের মধ্যেই কালিয়াকৈরে হাইটেক পার্কের কার্যক্রম শুরু হবে৷ এছাড়া বাংলাদেশের বিভিন্ন বিভাগে এরকম পার্ক তৈরির উদ্যোগ নেয়ার কথা জানিয়েছেন তিনি৷
ছবি: DW/Arafatul Islam
8 ছবি1 | 8
এমন সচেতনতা সত্ত্বেও বাস্তব সত্য হলো, এখনো বাজারের একটা বিশাল অংশ মার্কিন সংস্থাগুলির হাতে রয়েছে৷ রাতারাতি পরিস্থিতির পরিবর্তনের কোনো সম্ভাবনাও দেখা যাচ্ছে না৷ তবে আপাতত ব্যক্তি পর্যায়ে সম্ভব না হলেও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলি গুপ্তচরবৃত্তির মোকাবিলা করতে এমন নিরাপদ পরিষেবার দিকে ঝুঁকতে শুরু করেছে৷