ফ্রান্সের মতো ভারসাম্যপূর্ণ প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে নেই এডিসন কাভানির মতো অনফর্ম ফরোয়ার্ড৷ দুর্ভাগ্যই বলতে হবে উরুগুয়ের৷ কারণ, এটি ছিল কোয়ার্টার ফাইনালের বিগম্যাচ৷
বিজ্ঞাপন
তারপরও শুরু থেকেই এল মায়েস্ত্রো অস্কার তাবারেসের শিষ্যরা চেপে বসে ফ্রেঞ্চ সীমানায়৷ চাপিয়ে খেলে দু'একবার অস্পষ্ট সুযোগও তৈরি করে ফেলেন সুয়ারেজরা৷ কিন্তু সফলতার মুখ দেখেননি৷ অন্যদিকে প্রতিপক্ষের চাপে দিদিয়ের দেশঁ'র অপ্রতিরোধ্য স্কোয়াড কিছুটা দিশেহারা ছিল প্রথম কয়েক মিনিট৷ কিন্তু ঘুরে দাঁড়াতে সময় নেননি পগবা-এমবাপে-গ্রিসমানরা৷
সেখানে প্রথমার্ধের ৩৯ মিনিটে গ্রিসমানের ফ্রি-কিককে স্লাইডিং হেডে প্রতিপক্ষের গোলরক্ষক মুসলেরার ডান দিক দিয়ে পার করে দেন ফ্রেঞ্চ ডিফেন্ডার রাফায়েল ফারানে৷ ১-০ তে এগিয়ে যায় ফ্রান্স৷ কিছুক্ষণ পরই মোক্ষম সুযোগ এসেছিল উরুগুয়ের কাছেও৷
৪৪ মিনিটে এবার উরুগুয়ের ফ্রি-কিক৷ সেখান থেকে উড়ন্ত এক বল প্রতিপক্ষের ডি-বক্সে পেয়ে হেড করেন সিসেরেস৷ কিন্তু ডান দিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে দুর্দান্তভাবে তা ঠেকিয়ে দেন ফ্রেঞ্চ গোলরক্ষক লরিস৷ কিন্তু সেখানেই শেষ নয়৷ ঠেকিয়ে দিলেও ক্লিয়ার করতে পারেননি তিনি৷ সেখানে স্ট্রাইকার স্টুয়ানি ফলোআপ শট নেন৷ কিন্তু তা লক্ষ্য থেকে অনেক ওপরে চলে যায়৷ এখানেই হয়তো কাভানিকে মিস করেছে উরুগুয়ে৷
প্রথমার্ধ শেষ হয় ১-০ ব্যবধানে৷
দ্বিতীয়ার্ধে মরিয়া হয়ে ওঠে উরুগুয়ে৷ কিন্তু এবার তারকাখচিত ফ্রান্স যেন স্বরূপেই ছিল৷ তাই সুবিধা করতে পারছিলেন না ল্যাটিন খেলোয়াড়রা৷ সেই সুযোগে ৬০ মিনিটে ব্যবধান দ্বিগুণ করে ফেলে ফ্রান্স৷ ডি-বক্সের কিছুটা বাইরে থেকে তীব্র শট নেন গ্রিসমান৷ সেটি একটু বেঁকে গিয়ে উরুগুয়ের গোলরক্ষক মুসলেরার হাতে লাগলেও লক্ষভ্রষ্ট হয়নি৷ খুঁজে নেয় প্রতিপক্ষের জাল৷ মুসলেরা যে খুবই আনাড়িভাবে কাজটি করেছেন তাতে কোনো সন্দেহ নেই৷
এরপর খেলার ধার বাড়িয়েও কোনো সুবিধা করতে পারছিল না উরুগুয়ে৷ প্রতিপক্ষের সাদা দেয়ালের ওপারে বল ফেলতে রীতিমতো গলদঘর্ম হতে হচ্ছিল তাদের৷ যে দু'-একটা আক্রমণ হয়েছে, তাতেও কাজ হয়নি৷ শেষ পর্যন্ত ২-০ গোলের হার নিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালেই ২০১৮ বিশ্বকাপ মিশন শেষ হলো উরুগুয়ের৷ গত বিশ্বকাপে তারা অবশ্য দ্বিতীয় রাউন্ডেই বিদায় নিয়েছিল৷
অন্যদিকে, ফ্রান্স নিশ্চিত করলো সেমিফাইনাল৷ ২০০৬ সালের পর এই প্রথম কোয়ার্টার ফাইনালের গণ্ডি পেরুলো তারা৷
বিশ্বকাপ ২০১৮: কিছু স্মরণীয় মুহূর্ত
রাশিয়া বিশ্বকাপ চলছে৷ ইতোমধ্যে কয়েকটি বড় দল বাদ পড়লেও ফাইনাল অবধি বিশ্বকাপের উত্তেজনা থাকবেই৷ এখানে থাকছে এখন অবধি বিশ্বকাপের কয়েকটি স্মরণীয় মুহূর্তের ছবি৷
ছবি: picture-alliance/T. Goode
পেনাল্টি হিরো
ইংল্যান্ড অবশেষে কোনো বড় টুর্নামেন্টে পেনাল্টি শ্যুট-আউটে জয় পেলো৷ এজন্য সে দলের এরিক ডিয়ার (ছবিতে যাকে দেখা যাচ্ছে) এবং গোলরক্ষক জর্ডান পিকফোর্ড বিশেষভাবে ধন্যবাদ পেতে পারেন৷ রাশিয়ায় বিশ্বকাপের নক-আউট পর্বের ম্যাচে নানা নাটকীয়তার পর পেনাল্টিতে জয় পায় গ্যারেথ সাউথগেটের দল৷
ছবি: picture-alliance/T. Goode
দুর্দান্ত ফিরে আসা
খেলার ইনজুরি টাইমে কাউন্টার অ্যাটাকের জন্য বেলজিয়ামের গোলরক্ষক থি ব্যঁ খ্যোর্থুয়ার বাড়িয়ে দেয়া বল দ্রুতই পৌঁছে যায় নেসার শ্যাদলির কাছে৷ তিনি সেই বল অসাধারণ নৈপুণ্যে জালে জড়ান৷ ফলে ৩-২ গোলে জাপানের বিরুদ্ধে জয় পেয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে পৌঁছায় বেলজিয়াম৷ অথচ, শুরুতে দুই গোল করে এগিয়ে গিয়েছিল এশিয়ার দলটি৷
ছবি: Reuters/T. Hanai
নায়ক যখন গোলরক্ষক
ক্রোয়েশিয়া এবং ডেনমার্কের মধ্যকার নক-আউট পর্বের ম্যাচে দুই দলের গোলরক্ষকই লড়েছেন সমান তালে৷ উত্তেজনাপূর্ণ সেই ম্যাচে পেনাল্টি শ্যুট-আউটে হেরেছে ডেনমার্ক৷ ক্রোয়েশিয়ার গোলরক্ষক ডানিয়েল সুবাসিত শ্যুট-আউটের তিনটি শট ফেরাতে সক্ষম হন৷ তাঁকে ছাড়া আর কাকে সেই ম্যাচের নায়ক বলা যায়!
ছবি: Reuters/C. Barria
স্পেনকে ফিরিয়ে নায়ক যিনি
ফিফা ব়্যাংকিংয়ে দুর্বল অবস্থানে থাকা রাশিয়া যে এই বিশ্বকাপে এত দূর অবধি আসবে, তা কে ভেবেছিল? ঘরের মাঠে বিশ্বকাপের শুরুর ম্যাচে সৌদি আরবকে ৫-০ গোলে হারিয়ে দুর্দান্ত সূচনা করে স্বাগতিকরা৷ আর নক-আউট পর্বে স্পেনের মতো শক্তিশালী দলকে রুখে দিতে সক্ষম হয় দলটির গোলরক্ষক ইগর আকিনফেভের দক্ষতায়৷ পেনাল্টি শ্যুট-আউটে দু’টি শট রুখে ঘরের মাঠে নায়কে পরিনত হন তিনি৷
ছবি: Reuters/K. Pfaffenbach
রোনাল্ডোর মানবিকতা
নকআউট পর্বে পর্তুগালের বিপক্ষে উরুগুয়ের দু’টি গোলই করেন এডিনসন কাভানি৷ স্বাভাবিকভাবে এমন খেলোয়াড়ের উপর অন্তত মাঠে ক্ষিপ্ত থাকার কথা প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়দের৷ কিন্তু না, হলো উলটো৷ খেলার ৭৪ মিনিটে চোট পাওয়া কাভানি যখন খুড়িয়ে খুড়িয়ে মাঠ ছাড়ছিলেন, তখন তাঁকে সহায়তায় এগিয়ে আসেন ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্ডো৷ সে ম্যাচ হেরে বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্ন শেষ হয় রোনাল্ডোদের৷
ছবি: Reuters/M. Sezer
জার্মানিকে বিদায় করে দিল দক্ষিণ কোরিয়া
গ্রুপ পর্বে নিজেদের শেষ ম্যাচের ইনজুরি টাইমে দুই গোল করে জার্মানিকে বিশ্বকাপ থেকে বিদায় করে দেয় দক্ষিণ কোরিয়া৷ ফলে ১৯৩৮ সালের পর এই প্রথম গ্রুপ পর্ব থেকেই বাদ পড়তে হলো বিশ্বকাপের আসরগুলোতে ধারাবাহিকভাবে ভালো খেলা দল জার্মানিকে৷ দক্ষিণ কোরিয়াও অবশ্য বিদায় নিয়েছে, তবে মেক্সিকোকে নক-আউট পর্বে যেতে সহায়তা করেছিল তাদের জয়৷
ছবি: Reuters/J. Sibley
অবশেষে ‘আসল মেসি’র আবির্ভাব
গতবারের মতো এবারও মেসির উপর ভরসা রেখে আর্জেন্টিনার হাতে বিশ্বকাপ দেখার স্বপ্ন দেখেছিলেন অনেকে৷ তবে বিশ্বকাপ শুরুর পর মেসিকে ঠিক যেন খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না৷ পেনাল্টি মিস থেকে শুরু করে সহজ গোলের একাধিক সুযোগ হাতছাড়া করেছেন তিনি৷ তবে নাইজেরিয়ার বিপক্ষে কয়েক সেকেন্ডের জন্য আসল মেসির দেখা পেলেন ভক্তরা৷ সেই ম্যাচে নিজের অপেক্ষাকৃত দুর্বল ডান পা দিয়ে চমৎকার এক গোল করেন তিনি৷
ছবি: Getty Images/A. Morton
গোল্ডেন বুট জয়ের পথে হ্যারি কেন
পানামার বিপক্ষে গ্রুপ পর্বের ম্যাচের প্রথমার্ধে হ্যাটট্রিক করেন ইংল্যান্ডের হ্যারি কেন৷ চলতি বিশ্বকাপে এখন অবধি তিনি গোল করেছেন ছয়টি৷ ছয়টির মধ্যে তিনটি গোলই এসেছে পেনাল্টি থেকে৷ তবে আসল কথা হলো, গোল্ডেন বুট জয়ের রেসে বেশ এগিয়ে তিনি৷ চার গোল করে তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বেলজিয়ামের রোমেলু লুকাকু৷
ছবি: Reuters/M. Childs
শেষ বেলার সেই অবিস্মরণীয় গোল
যদিও এবারের বিশ্বকাপে জার্মানির পারফর্ম্যান্স ছিল যাচ্ছেতাই, তা সত্ত্বেও সুইডেনের বিপক্ষে খেলা শেষ হওয়ার কয়েক সেকেন্ড আগে ফ্রি-কিক থেকে টনি ক্রুসের করা গোলটি ফুটবল ভক্তদের অনেক বছর মনে থাকবে৷ তবে দলের অন্য খেলাগুলোতে যেসব খেলোয়াড় দলকে ডুবিয়েছেন , তাঁদের মধ্যেও অন্যতম ছিলেন ক্রুস৷
ছবি: Reuters/
তারকার মেলায় পুটিন
ফুটবল ইতিহাসের জীবন্ত তারকাদের সঙ্গে এক ফ্রেমে বন্দি হন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিনও (বাম থেকে দ্বিতীয়)৷ ছবিতে আছেন লোথার ম্যাথাউস (একেবারে বামে), পেলে এবং মারাদোনা (মাঝে), জে জে ওকোচা (একেবারে ডানে) এবং কানু (পেছন থেকে ডানদিকে)৷