অস্ট্রেলিয়ার এক কার্টুনিস্ট সেরেনা উইলিয়ামসকে নিয়ে একটি কার্টুন এঁকেছেন৷ এরই মধ্যে কার্টুনটি ‘বর্ণবাদী' ও ‘নারীর প্রতি অবমাননাকর' বলে সমালোচনার ঝড় উঠেছে৷ তবে কার্টুনিস্ট ও যে পত্রিকা এটি ছেপেছে, তারা তা মানছেন না৷
বিজ্ঞাপন
অস্ট্রেলিয়ার এক কার্টুনিস্ট সেরেনা উইলিয়ামসকে নিয়ে একটি কার্টুন এঁকেছেন৷ এরই মধ্যে কার্টুনটি ‘বর্ণবাদী' ও ‘নারীর প্রতি অবমাননাকর' বলে সমালোচনার ঝড় উঠেছে৷ তবে কার্টুনিস্ট ও যে পত্রিকা এটি ছেপেছে, তারা তা মানছেন না৷
কার্টুনটিতে মোটা ঠোঁট ও লম্বা নাকের সেরেনাকে দেখা যাচ্ছে টেনিস কোর্টে তাঁর .ব্যাকেটটির ওপর লাফাচ্ছেন৷ পাশেই শিশুদের একটি চুষনি পড়ে আছে৷ সম্ভবত ইউএস ওপেনের ফাইনালে সেরেনার আচরণকে ‘শিশুসুলভ' বলা অথবা নতুন মা হিসেবে তাঁকে দেখানোও উদ্দেশ্য ছিল কার্টুনিস্টের৷
পেছনে দেখা যাচ্ছে, চেয়ার আম্পায়ার লম্বা সোনালি চুলের আরেক টেনিস খেলোয়াড়কে বলছেন, ‘‘তুমি কি ওকে জিততে দিতে পারো?'' বোঝাই যাচ্ছে, এবারের ইউএস চ্যাম্পিয়ানকে বোঝানো হয়েছে৷
কার্টুনিস্টের নাম মার্ক নাইট৷ ইউএস ওপেনের ফাইনালের পর সোমবার তা হেরাল্ড সান পত্রিকায় ছাপা হয়েছে৷
এরপর এ নিয়ে সমালোচনার ঝড় বয়ে যায়৷ সামাজিক গণমাধ্যম ও বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের মিডিয়া মোটামুটি একহাত নিয়ে নিয়েছে কার্টুনিস্ট মার্ক নাইটকে৷ অনেকেই এই কার্টুনকে নারীর প্রতি অবমাননাকর ও বর্ণবাদী বলে আখ্যায়িত করেছেন৷
এমনকি ব্রিটিশ লেখিকা জে কে রাউলিং টুইট করে একে ‘বর্ণবাদী' বলে আখ্যা দেন৷ কালোদের ব্যঙ্গ করে ঊনবিংশ ও বিংশ শতাব্দীর কুখ্যাত ‘জিম ক্রো ক্যারিকেচার'-এর সঙ্গে এই কার্টুনের তুলনা করেছেন কেউ কেউ৷
তবে তা অস্বীকার করেছেন মার্ক৷ অস্ট্রেলিয়ান ব্রডকাস্টার এবিসিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, ‘‘কার্টুনটি ইউএস ওপেন ফাইনালে তাঁর আচরণকে নিয়ে করা হয়েছে৷ এর সঙ্গে জেন্ডার বা বর্ণবাদের কোনো সম্পর্ক নেই৷''
মেলবোর্ন থেকে প্রকাশিত পত্রিকা হেরাল্ড সান-ও কার্টুন ছাপানোর পক্ষে সাফাই গেয়েছে৷ পত্রিকাটি অস্ট্রেলিয়ার সংবাদ নেটওয়ার্ক নিউজ কর্পের একটি প্রতিষ্ঠান৷ নেটওয়ার্কের নির্বাহী চেয়ারম্যান মাইকেল মিলার বলেন, ‘‘সেরেনা উইলিয়ামসকে নিয়ে মার্ক নাইটের কার্টুনের সমালোচনার অর্থ হলো, মানুষ সংবাদ মাধ্যমের কার্টুন ও স্যাটায়ারকে ভুল বোঝা শুরু করেছে৷''
বুধবার আবারো পত্রিকাটি তাদের প্রথম পাতায় কার্টুনটি ছাপিয়েছে৷
টেনিসের অন্যতম বড় ইভেন্ট ইউএস ওপেনে এবারের মেয়েদের ফাইনালটি কলঙ্ক হয়ে থাকবে ইতিহাসে৷ এই ইতিহাস তাড়া করে বেড়াবে টেনিসপ্রেমীদের৷ তার জন্য অবশ্য শিরোপাজয়ী লাজুক নাওমি ওসাকা একেবারেই দায়ী নন৷ তিনি সত্যিই হিরো৷
ছবি: Reuters/R. Deutsch
স্বপ্ন দেখেছিলেন নাওমি
জাপানের নাওমি ওসাকা৷ মাত্র তিন বছর বয়সে যুক্তরাষ্ট্র চলে আসেন৷ এখন বয়স কুড়ি৷ স্বপ্ন ছিল তারকা হবার৷ বড় টেনিস তারকা৷ গ্র্যান্ডস্লাম জিতবেন৷ এর আগে জাপানের কেউ কখনো কোনো গ্র্যান্ডস্লামের ফাইনালও খেলতে পারেননি৷ নাওমি জাপানিদের সেই স্বপ্ন পূরণ করেছিলেন৷
ছবি: Reuters/D. Parhizkaran
আইডলের বিপক্ষে
নাওমির জন্মের দুই বছর আগেই পেশাদার টেনিস খেলেন ৩৬ বছর বয়সি মার্কিন তারকা সেরেনা উইলিয়াম৷ যখন নাওমি বারো মাস বয়সি, তখন প্রথম গ্র্যান্ডস্লামের ফাইনালে খেলেন তিনি৷ ছোটবেলা থেকেই সেরেনা তাঁর আইডল৷ সেই আইডলের বিপক্ষে কোনো গ্র্যান্ডস্লামের ফাইনাল খেলা নাওমির সবচেয়ে বড় স্বপ্ন ছিল৷ এবারই তা পূরণ হলো৷ কিন্তু তাই বলে এভাবে?
ঠিক কী ঘটেছিল?
অভিজ্ঞতা দিয়ে নাওমিকে হারিয়ে দেবেন সেরেনা৷ সবার মতো সেরেনা নিজেও তাই ভেবেছিলেন৷ কিন্তু প্রথম সেটে সেরেনার চেয়ে ভালো সার্ভ করে, তুলনামূলক কম ভুল করে এবং পুরো মাঠ দুর্দান্ত গতিতে দৌঁড়ে ৬-২ গেমের সহজ জয় তুলে নেন লাজুক নাওমি৷ বিপত্তির শুরু দ্বিতীয় সেট থেকে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/A. Hunger
প্রথম ওয়ার্নিং
ম্যাচের চেয়ার আম্পায়ার ছিলেন কার্লোস রামোস, যিনি ভয়ঙ্কর কড়া হিসেবে নিন্দিত৷ দ্বিতীয় সেটে ভালোই খেলছিলেন সেরেনা৷ কিন্তু এক পর্যায়ে তাঁর কোচ প্যাট্রিক মোরাটোগলু ‘সাগরেদ’কে ইশারায় কিছু একটা বলেই ধরা পড়ে যান আম্পায়ারের চোখে৷ ম্যাচ চলার সময় কোচিংয়ের সুযোগ নেই বলে আনুষ্ঠানিকভাবে সেরেনাকে সতর্ক করেন তিনি৷ এতে খেপে গিয়ে আম্পায়ারের সঙ্গে তর্ক জুড়ে দেন সেরেনা৷
ছবি: USA Today Sports/R. Deutsch
পয়েন্ট পেনাল্টি
সেরেনা এগিয়ে আছেন ৩-১ গেমে৷ দ্বিতীয় সেটের পঞ্চম গেম চলছে৷ সেরেনা এই গেমে পিছিয়ে ৩০-৪০ পয়েন্টে৷ তাঁর সার্ভ ছিল৷ কিন্তু একটি অনাকাঙ্খিত ভুল করে গেম হারেন তিনি৷ এতে ক্ষিপ্ত হয়ে নিজের টেনিস .ব্যাকেটটি মাটিতে ছুঁড়ে ভেঙ্গে ফেলেন৷ এ কারণে তাঁর পয়েন্ট জরিমানা করেন আম্পায়ার৷ আগের একটি সতর্কতার পরও দ্বিতীয় মিসকন্ডাক্টের কারণে এই জরিমানা৷
ছবি: picture-alliance/newscom/J. Angelillo
বিষম তর্ক ও গেম পেনাল্টি
সেরেনা ভেবেছিলেন প্রথমবার এমনি সতর্ক করা হয়েছিল তাঁকে৷ তাই দ্বিতীয়বার মিসকন্ডাক্টের পর তিনি যে পয়েন্ট হারাবেন তা ভাবেননি৷ কিন্তু আম্পায়ারের এমন সিদ্ধান্তের পর তিনি বৈষম্যের অভিযোগ আনেন৷ বলেন যে, এই কোর্টে পুরুষরা এমন অনেক কিছুই করেন, যা কখনো অপরাধ হিসেবে ধরা হয় না৷ তিনি আম্পায়ারকে ‘চোর’ ও ‘মিথ্যাবাদী’ বলে গাল দেন৷ এতে কোড ভায়োলেশনের অভিযোগে পুরো একটি গেম পয়েন্ট জরিমানা করেন আম্পায়ার৷
ছবি: USA Today Sports/R. Deutsch
আর পারেননি সেরেনা
গেম পয়েন্ট পেয়ে ৩-৩ সমতায় ফেরেন নাওমি৷ এরপর আরো চারটি গেম খেলা হয়৷ সেখানে সেরেনা কেবল একটি গেমই জেতেন৷ ৬-৪ এ দ্বিতীয় সেট জিতে ইতিহাস গড়েন নাওমি৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/A. Kudacki
কান্নাভেজা জয়
আর্থার অ্যাশ স্টেডিয়ামের দর্শকরা ঘটনার শুরু থেকেই সেরেনার পক্ষে চিৎকার করছিলেন৷ তাঁরা দুয়োধ্বনি দিচ্ছিলেন আম্পায়ারকে৷ এমনকি নাওমিকেও৷ এতে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন নাওমি৷ যে জয় তাঁর জন্য স্বপ্নময় হবার কথা, সেই জয় উদযাপন করলেন চোখের জলে৷ সেরেনা অবশ্য পরে তাঁকে সান্তনা দিয়েছেন৷
ছবি: Reuters/R. Deutsch
সত্যিই হিরো
সেরেনা-রামোস দ্বন্দ্বে হয়তো একটি পয়েন্ট পেয়েছেন নাওমি ওসাকা৷ কিন্তু ফাইনালসহ পুরো টুর্নামেন্টেই তিনি খেলেছেন দুর্দান্ত৷ ২৩ গ্র্যান্ডস্লাম জেতা টেনিস কোর্টের সর্বকালের সেরাদের একজনকে হারিয়ে দেশের জন্য দুর্লভ সুনাম কুড়িয়ে আনা নাওমি তাই সত্যিই হিরো৷