মধ্য অ্যামেরিকার দেশগুলি আয়তনে ছোট হলেও সেখানকার প্রকৃতি ও জীববৈচিত্র্য নজর কাড়ার মতো৷ তবে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সেই পরিবেশ হুমকির মুখে পড়েছে৷ জার্মানির সাহায্যে সেই ক্ষতি সামাল দেবার চেষ্টা চলছে৷
বিজ্ঞাপন
রাত হলেই প্রায় ২০ লক্ষ বাদুড় খাদ্য ও পানির খোঁজে গুহা ছেড়ে বেরিয়ে পড়ে৷ কিন্তু তাদের জন্য পরিস্থিতি ধীরে ধীরে আরো কঠিন হয়ে পড়ছে৷ সেলভা মায়া অঞ্চলের স্পাইডার মাংকি প্রজাতির বানরদেরও এই পরিস্থিতির কুফল ভোগ করতে হচ্ছে৷
ক্রান্তীয় অঞ্চলে প্রায় ১ কোটি হেক্টর এলাকার এই জঙ্গল বেলিজ, গুয়াতেমালা ও মেক্সিকো – এই তিনটি দেশ জুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে৷ এর মধ্যে ৭ লক্ষ ২৩ হাজার হেক্টর এলাকা সংরক্ষিত অরণ্য৷ তারই মাঝে কালাকমুল নামে মেক্সিকোয় মায়া সভ্যতার অন্যতম বিশাল নিদর্শন রয়েছে৷ সংরক্ষিত এলাকার প্রধান হোসে সুনিয়েগা বলেন, ‘‘আমরা বেশ কিছু সময় ধরে বৃষ্টিপাতের অভাবের কারণে নাজেহাল হয়ে পড়েছি৷ পুকুরগুলি শুকিয়ে যাওয়ায় প্রাণীদের পানির চাহিদা পূরণ হচ্ছে না৷ ২০১৫ সাল থেকে এই খরার প্রবণতা টের পাচ্ছি৷ আমাদের পরিমাপ অনুযায়ী, ২০১৬ ও ২০১৭ সাল দুটি গত ১৫ বছরের সবচেয়ে শুকনা মরসুম ছিল৷’’
জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলার ‘ভাসমান’ যুদ্ধ
বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের পিরোজপুর জেলার বিভিন্ন এলাকায় আবাদি জমি বছরে ছয় মাসেরও বেশি সময় পানির নীচে তলিয়ে থাকে৷ জলবায়ু পরিবর্তনকে মোকাবিলা করে বেঁচে থাকার গল্প শুনুন তাদের মুখেই৷
ছবি: DW/M. Mostafigur Rahman
শৈশব থেকেই ভাসমান চাষ করেন সানোয়ার মিয়া
পিরোজপুর জেলার বৈঠাকাটা ইউনিয়নের সানোয়ার মিয়ার বয়স ৪৩ বছর৷ শৈশব থেকেই বাবার হাত ধরে শিখেছেন ভাসমান পদ্ধতিতে চাষাবাদ৷ পাঁচ হাজার টাকায় এক খণ্ড জমি দুই বছরের জন্য লিজ নিয়ে তিনি বিভিন্ন ধরনের সবজির চারা উৎপাদন করছেন৷ সব খরচ বাদ দিয়ে যা থাকে তাতে সংসার চলে যায় কোনোরকমে৷
ছবি: DW/M. Mostafigur Rahman.
মৌসুমে পাঁচবার চারা
বাবুল হাওলাদার যে যায়গাটিতে ভাসমান পদ্ধতিতে চাষাবাদ করেন, সেটি তাঁর নিজেরই৷ শুকনো মৌসুমে মাত্র একবার এ জমিতে ধান চাষ করতে পারলেও ডুবন্ত জমিতে ভাসমান পদ্ধতিতে তিনি কমপক্ষে পাঁচ বার চারা উৎপাদন করতে পারেন৷ এতে তাঁর লাভও ভালো হয়৷
ছবি: DW/M. Mostafigur Rahman.
স্বামীকে সহায়তা করেন আকলিমা
আকলিমা বেগমের স্বামী ভাসমান পদ্ধতিতে গাছের চারা ও সবজি চাষাবাদ করেন জলভূমিতে৷ স্বামীর কৃষিকাজে সবসময় সহায়তা করেন তিনি৷ বীজ বপন থেকে চারা গজানো পর্যন্ত যতরকমের পরিচর্যা, তার সবই তিনি করে থাকেন বাড়ির আঙ্গিনায় বসে৷ ভাসমান পদ্ধতিতে চাষাবাদে, চারা গজানোর কাজটি বাড়িতেই করতে হয়৷
ছবি: DW/M. Mostafigur Rahman.
বীজ বপন করেই চলে সংসার
আঞ্জু আরা বেগম অন্যের জমির জন্য বীজ বপনের কাজ করেন৷ কচুরিপানা ও ঘাস দিয়ে একটি গোলাকার বল তৈরি করে তার ভেতরে বীজ বপন করতে হয়৷ এক হাজার বীজ বপনের জন্য তিনি পারিশ্রমিক পান দেড়শ টাকা৷ দিনে সর্বোচ্চ দেড় হাজার পর্যন্ত বীজ বপন করতে পারেন তিনি৷
ছবি: DW/M. Mostafigur Rahman.
ভাসমান চাষাবাদ সহজ
ডুবে থাকা জমিতে ভাসমান পদ্ধতিতে চাষাবাদই সহজ মনে হয় বৈঠাকাটা এলাকার খায়রুল ইসলামের কাছে৷ ভাসমান পদ্ধতিতে তিনি বিভিন্ন রকম লতা-জাতীয় সবজি চাষ করেন৷
ছবি: DW/M. Mostafigur Rahman.
কচুরিপানা বিক্রি
হারুনুর রশীদের মতো অনেকেই আছেন, কচুরিপানা বিক্রিই যাঁদের একমাত্র পেশা৷ বাড়ির আশপাশের বিভিন্ন নীচু এলাকায় তাঁরা আটকে রাখেন কচুরিপানা৷ মৌসুমে তা বিক্রি করেন কৃষকদের কাছে৷ এক নৌকা কচুরিপানা বিক্রি হয় পাঁচ থেকে আট হাজার টাকায়৷
ছবি: DW/M. Mostafigur Rahman.
শ্যাওলা-ঘাস বিক্রি করেন হারেছ মিয়া
ভাসমান পদ্ধতিতে চাষাবাদ করার জন্য পানির নিচের শ্যাওলা খুবই প্রয়োজনীয়৷ বিভিন্ন জায়গা থেকে সংগ্রহ করে কৃষকদের কাছে শ্যাওলা বিক্রি করেন তিনি৷
ছবি: DW/M. Mostafigur Rahman.
ছয় মাসে ছয় বার
নিজের জলমগ্ন জায়গায় ছয় মাসে ছয় বার সবজির চারা উৎপাদন করেন আব্দুর রহমান৷ প্রথম দুই বারের চারা বিক্রি করে তাঁর সব খরচ উঠে যায়, বাকি চার বারের পুরোটাই লাভ৷
ছবি: DW/M. Mostafigur Rahman.
জৈব পদ্ধতিতেই চাষাবাদ
নাজিরপুরের রুহুল আমিন জানান, ভাসমান পদ্ধতিতে যে চাষাবাদ হয়, তাতে সার ও কীটনাশকের ব্যবহার করতে হয় না৷ পচা কচুরিপানাই এ পদ্ধতিতে চাষাবাদে জৈব সার হিসেবে কাজ করে৷
ছবি: DW/M. Mostafigur Rahman.
9 ছবি1 | 9
কালাকমুল বায়োস্ফিয়ার অভয়ারণ্যের মধ্যে একটি পুকুরে এখনো পানি রয়েছে৷ বিজ্ঞানী হিসেবে রাফায়েল রেইনা মোট ১০টি এমন জায়গায় এমন ক্যামেরা বসিয়েছেন, যার সামনে কিছু নড়াচড়া করলেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে ছবি তোলা হয়৷
বিভিন্ন ধরনের পাখি, টেপির, জাগুয়ারের মতো প্রাণীরা ঠিক কত সংখ্যায়, কত ঘনঘন পানির খোঁজে সেখানে আসে, তিনি তা জানতে চান৷ সেইসঙ্গে বিগত বছরগুলিতে পানির পরিমাণে কতটা পরিবর্তন এসেছে, সেই তথ্যও তিনি সংগ্রহ করতে চান৷ পর্দায় একটি জাগুয়ার দেখে তিনি আপ্লুত হয়ে পড়লেন৷ এখন এই এলাকায় মাত্র ৪৫০টি জাগুয়ার টিকে রয়েছে৷ রাফায়েল বলেন, ‘‘অনেক লুপ্তপ্রায় প্রাণী পানির জন্য এই জলাশয়ের উপর নির্ভর করে৷ এই জলাশয় কিন্তু স্থায়ী নয়, ভবিষ্যতে তার অস্তিত্ব থাকবে কিনা, তা-ও স্পষ্ট নয়৷ কোনো কোনো বছরে সেটি দেখা যায়, কখনো নয়৷ এই জলাশয় বনের লুপ্তপ্রায় প্রাণীগুলির জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ, প্রত্যেক বার পরীক্ষার পর আমরা তা বুঝতে পারি৷’’
জার্মানির আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা জিআইজেড রেইনা-কে সেই কাজে সাহায্য করছে৷ তারা ৩টি দেশেই বিভিন্ন দীর্ঘমেয়াদী গবেষণার অর্থায়ন নিশ্চিত করছে এবং বিভিন্ন প্রকল্পের মধ্যে সমন্বয় করছে৷ সংস্থার প্রতিনিধি ফ্লোরিয়ান ভ্যার্নার বলেন, ‘‘তথ্য আরো সহজে, বিনামুল্যে মানুষের নাগালে আনতে হবে৷ দেশের সীমানা তাতে কোনো বাধা হতে পারে না৷ আমাদের প্রকল্পের মধ্যে বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে, অনেক কিছু করা যেতে পারে৷’’
তিনটি দেশেই সেলভা মায়া জঙ্গলের জীববৈচিত্র্য অক্ষত রাখা এই উদ্যোগের লক্ষ্য৷ জিআইজেড মেক্সিকোয় পার্কের রেঞ্জারদের জন্য ডিজিটাল স্মার্ট প্রযুক্তি প্রয়োগের ব্যবস্থা করেছে৷ এমনকি প্রত্যন্ত এলাকায়ও সেই সফটওয়্যার নির্বিঘ্নে কাজ করতে পারে৷