তেহরানে প্রথম জানাযার মতো কেরমান শহরের জানাযাতেও কাসিম সোলেইমানিকে শেষ শ্রদ্ধা জানালেন লাখো মানুষ৷ সেখানে পায়ের নীচে পড়ে অন্তত ৩৫ জন নিহত ও ৪৮ জন আহত হন৷
বিজ্ঞাপন
শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের বিমান হামলায় নিহত হন ইরানের কুর্দ বাহিনীর প্রধান জেনারেল কাসিম সোলেইমানি৷ এ হত্যাকাণ্ডের প্রতিশোধ নেয়া হবে জানিয়ে ইরানে তিনদিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করে সে দেশের সরকার৷ রাষ্ট্রীয় শোক শেষে সোমবার রাজধানী তেহরানে প্রথম জানাযা হয় সোলেইমানির৷
মঙ্গলবার সোলেইমানি ও তার সঙ্গে নিহত অন্যদের মরদেহ নেয়া হয় সোলেইমানির নিজের শহর কেমরানে৷মরুশহরটির রাস্তার দু'পাশে দাঁড়িয়ে লাখো জনতা ‘জাতীয় বীরদের' শ্রদ্ধা জানান৷শহরের কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত জানাযাতেও উপস্থিত ছিলেন লাখো জনতা৷
উপস্থিত জনতার উদ্দেশ্যে ইরানের রেভোল্যুশনারি গার্ড ফোর্সের নেতা হোসেইন সালামি বলেন, ‘‘জীবিত কাসিম সোলেইমানির চেয়ে শহিদ কাসিম সোলেইমানি অনেক বেশি শক্তিশালী৷শত্রুরা তাকে অন্যায়ভাবে হত্যা করেছে৷''
সোলেইমানির জানাযায় জনতার এক আওয়াজ, ‘প্রতিশোধ, প্রতিশোধ’
কাসিম সোলেইমানির জানাযায় লাখো মানুষের ঢল নামে৷ সেখানে কান্নায় ভেঙে পড়েন ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা৷ সোলেইমানির কন্যা বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের জন্য কালো দিন অপেক্ষা করছে৷ জনতার ঢলে ওঠে, ‘‘প্রতিশোধ, প্রতিশোধ’’ আওয়াজ৷
ছবি: picture-alliance/AP/Tasnim/M. Hossein Thaghi
জানাযায় জনস্রোত
শুক্রবার এক ড্রোন হামলায় ইরানের কুদস বাহিনীর প্রধান কাসিম সোলেইমানিকে হত্যা করে যুক্তরাষ্ট্রের বিমানবাহিনী৷ হত্যার তীব্র নিন্দা জানিয়ে তিনদিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করে ইরান সরকার৷ ইরাক থেকে সোলেইমানির মৃতদেহ আনার পর সোমবার রাজধানী তেহরানে প্রথম জানাযা হয়৷ ইরানের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম জানাযায় ১০ লাখেরও বেশি মানুষের অংশ নেয়ার কথা বলেছে৷
ছবি: picture-alliance/AP/ISNA/A. Mohammadi
ডুকরে কেঁদে ওঠেন খামেনি
তিনদিনের শোক শেষে অনুষ্ঠিত জেনারেল সোলেইমানির প্রথম জানাযা পড়ান ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতোল্লাহ আলী খামেনি৷সোলেইমানির কফিনের ওপর তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন৷ এ সময় প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি, কুদস বাহিনীর নতুন প্রধান এসমাইল কা’নিসহ ইরানের অন্য অনেক শীর্ষ নেতাও খামেনির পাশে ছিলেন৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/Iran Press TV
সোলেইমানির কন্যার হুমকি
রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে সোলেইমানির কন্যা জয়নাব সোলেইমানি বলেন, ‘‘এখন থেকে মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের যে সেনাসদস্যরা আছেন তাদের পরিবার সন্তানের মৃত্যুর খবরের অপেক্ষায় থাকবেন৷’’ তার বাবাকে হত্যার নির্দেশ দেয়া ডনাল্ড ট্রাম্পের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘‘উন্মাদ ট্রাম্প, ভেবো না আমার বাবা শহিদ হওয়ায় সব শেষ হয়ে গেছে৷’’ তিনি আরো বলেন, যুক্তরাষ্ট্র আর তার মিত্র ইসরায়েলের জন্য ‘কালো দিন’ অপেক্ষা করছে৷
ছবি: AFP/Office of Iran's Supreme Leader Ayatollah Ali Khamenei
‘যুক্তরাষ্ট্রকে তাড়াবো’
তেহরানে জানাযা শুরুর আগে রাষ্ট্রীয় বেতারকে সোলেইমানির মৃত্যুর পর কুর্দস বাহিনীর দায়িত্ব নেয়া কা’নিও প্রতিশোধের ঘোষণা দিয়ে বলেছেন, ‘‘আমরা আমাদের বাহিনী নিয়ে শহিদ সোলেইমানির দেখানো পথেই এগিয়ে যাওয়ার প্রতিজ্ঞা করছি৷ এ অঞ্চল থেকে আমরা যুক্তরাষ্ট্রকে তাড়াবো, কারণ, এটাই উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ৷’’
জানাযায় দশ লাখেরও বেশি মানুষ অংশ নিয়েছে বলে দাবি করেছে ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন৷ জনস্রোত থেকে বারবার ‘‘প্রতিশোধ, প্রতিশোধ’’ ওঠে৷
ছবি: Reuters/WANA/N. Tabatabaee
সোলেইমানির স্মৃতি
জানাযায় উপস্থিত জনতার হাতে আয়াতোল্লাহ আলী খামেনির হাত থেকে সোলেইমানির জোলফাঘর, অর্থাৎ সেনাবাহিনীর সর্বোচ্চ স্বীকৃতি নেয়ার ছবি৷
ছবি: AFP/A. Kenare
সেনাপ্রধানের কান্না
সোলেইমানির কফিনের ওপর নুয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন ইরানের রেভোল্যুশনারি গার্ডের কমান্ডার ও সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান মোহাম্মদ বাঘেরি৷
ছবি: AFPAFP/Office of Iran's Supreme Leader Ayatollah Ali Khamenei
সেনাসদস্যদের হাতেও সোলেইমানির ছবি
আর্মি ক্যাডেটদের হাতেও দেখা যায় সোলেইমানির ছবি৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/E. Noroozi
‘আমরা সবাই সোলেইমানি’
জানাযায় উপস্থিত অনেকের হাতেই দেখা যায়, ‘আমরা সবাই সোলেইমানি’ লেখা পোস্টার৷
ছবি: Reuters/WANA/N. Tabatabaee
পরের জানাযা কেরমানে
মঙ্গলবার জেনারেল সোলেইমানির দ্বিতীয় জানাযা হবে তার নিজের শহর কেরমান-এ৷
ছবি: Reuters/WANA/N. Tabatabaee
10 ছবি1 | 10
এ সময় জানাযায় আসা সবাই সমস্বরে বলে ওঠেন, ‘‘ইসরায়ল নিপাত যাক৷ যুক্তরাষ্ট্র নিপাত যাক৷ ট্রাম্প নিপাত যাক৷''
মঙ্গলবারই সোলেইমানিসহ যুক্তরাষ্ট্রের বিমান হামলায় নিহত অন্যদের দাফন হবে৷
সোলেইমানি নিহত হওয়ার পর মধ্যপ্রাচ্য-সংকট নতুন মাত্রা পেয়েছে৷ প্রতিশোধের ঘোষণার পর পারমাণবিক চুক্তি থেকে সরে আসারও ঘোষণা দিয়েছে ইরান৷ ইরাক থেকে যুক্তরাষ্ট্র্রের সব সৈন্য ফেরত পাঠানোর প্রস্তাব পাস করেছে সে দেশের সংসদ৷ জবাবে তার দেশের কোনো ক্ষতি হলে ইরানের ৫২টি স্থানে হামলার হুমকি দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প৷ পাশাপাশি সৈন্য ফেরত পাঠালে ইরাকের বিরুদ্ধে কঠোর অবরোধ আরোপের হুমকিও দিয়েছেন তিনি৷
কে ছিলেন কাসিম সোলাইমানি
কাসিম সোলাইমানি৷ ইরানিদের কাছে তিনি নায়কোচিত এক বীর, যার জনপ্রিয়তা এমনকি প্রেসিডেন্ট রুহানির চেয়েও বেশি৷ অন্যদিকে পশ্চিমাদের কাছে তিনি জঙ্গী গোষ্ঠীগুলোর মদদদাতা৷ সোলাইমানি কেন এত আলোচিত দেখুন ছবিঘরে৷
ছবি: mojnews
তারকাখ্যাতি
ইরানের জনগনের কাছে কাসিম সোলাইমানির ছিল তারকাখ্যাতি৷ ইনস্টাগ্রামে সেনা বাহিনীর এই জেনারেলের রয়েছে বিপুল অনুসারী৷
ছবি: FARS
পর্দায় সোলাইমানি
২০০৩ সালে ইরান সিরিয়া যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার পর থেকে আলোচনায় কাসিম সোলাইমানি৷ এসময় যুদ্ধময়দানের ছবিতে, তথ্যচিত্র, এমনকি মিউজিক ভিডিও আর অ্যানিমেটেড চলচ্চিত্রেও দেখা যায় তাকে৷
ছবি: Khamenei.ir
যুদ্ধময়দানে
গত অক্টোবরে সোলাইমানির বিরল একটি সাক্ষাৎকার প্রচারিত হয় ইরানের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে৷ জানান, ২০০৬ সালে তিনি লেবাননে ইসরায়েল-হেজবুল্লাহ যুদ্ধের তদারকি করেছেন৷
ছবি: ILNA
আঞ্চলিক প্রভাব বিস্তারের স্থপতি
সোলাইমানির সমর্থকরা মনে করেন সম্প্রতি ইরানের আঞ্চলিক ক্ষমতা বিস্তারের মূল স্থপতি ছিলেন তিনি৷ তার নেতৃত্বেই মধ্যপ্রাচ্যে জিহাদী বিরোধী অভিযানগুলো পরিচালনা করেছে ইরান৷ ইরাক, সিরিয়া সহ অন্যদেশগুলোতে কূটনৈতিক তৎপরতাও চালিয়েছেন তিনি৷
ছবি: ABNA24.com
শিয়াদের জেমস বন্ড?
২০১৭ সালে টাইম ম্যাগাজিনের সবচেয়ে প্রভাবাশালী ব্যক্তিদের তালিকায় জায়গা করে নেন তিনি৷ সাবেক সিআইএ অ্যানালিস্ট কেনেথ পোলাক তার সম্পর্কে সেখানে লিখেছেন, ‘‘মধ্যপ্রাচ্যের শিয়াদের কাছে কাসিম সোলাইমানি একাধারে জেমস বন্ড, আরউইন রোমেল এবং লেডি গাগার সম্মিলিত এক চরিত্র৷’’
ছবি: Farsnews
পশ্চিমাদের চক্ষুশূল
কেনেথ পোলাক আরো লিখেছেন, ‘‘পশ্চিমাদের কাছে তিনি ইরানের ইসলামি বিপ্লব অন্যদেশগুলোতে রপ্তানি করা, সন্ত্রাসীদের সহযোগিতা দেয়া, পশ্চিমাপন্থি সরকারদের সর্বনাশ করা আর বিদেশের মাটিতে যুদ্ধে ইরানের নেতৃত্ব দেয়ার জন্য দায়ী এক ব্যক্তি৷’’ পশ্চিমা নেতারা লেবাননে হেজবুল্লাহ ও ফিলিস্তিনের হামাসের মত জঙ্গীগোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে ইরানের সম্পর্কের কেন্দ্রীয় চরিত্র বলেও মনে করেন তাকে৷
ছবি: picture alliance / AA
রাজনীতির ময়দানে
অর্থনৈতিক সঙ্কট, দেশজুড়ে অসন্তোষ আর বাহির থেকে যুক্তরাষ্ট্রের চাপের প্রেক্ষিতে রাজনীতিতে আসার জন্য তার প্রতি আহবান জানিয়েছিল অনেক ইরানী৷ তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দাড়াবেন এমন গুঞ্জনও শোনা গিয়েছিল৷ যদিও পরবর্তীতে তা নাকচ করে দেন কাসিম৷
ছবি: FARS
ইরাকের সরকার গঠনে
২০০১ সালে যুক্তরাষ্ট্র যখন আফগানিস্তানে হামলা চালায় তখন ইরানের ‘কুদস ফোর্সের’ নেতৃত্বে চলে আসেন তিনি৷ এই বাহিনীর বিভিন্ন অভিযানে অংশ নিয়েছেন তিনি৷ ২০১৮ সালে ইরাকের সরকার গঠনে তার ভূমিকাও এখন আর অজানা নয়৷
ছবি: Fars
রুহানির চেয়েও জনপ্রিয়
২০১৮ সালে ইরান পোল এবং ম্যারিল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এক জরিপে দেখা সোলাইমানির জনপ্রিয়তার হার ছিল ৮৩ ভাগ৷ তার চেয়ে পেছনে ছিলেন প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভাদ জারিফও৷