ইরানের কুদস বাহিনীর প্রধান কাসিম সোলেইমানি হত্যার পরিপ্রেক্ষিতে সবাইকে সংযমী হওয়ার আহবান জানিয়েছে সৌদি আরব৷ উত্তেজনা বাড়ে ইরানকে এমন কোনো পদক্ষেপ না নিতে বলেছে ফ্রান্স, জার্মানি ও চীন৷
বিজ্ঞাপন
মধ্যপ্রাচ্যে নিজেদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠায় দীর্ঘদিন ধরেই শত্রুভাবাপন্ন ইরান ও সৌদি আরব৷ মার্কিন বলয়ে থাকা সৌদি আরবকে তাই কাসিম সোলেইমানি হত্যা নিয়ে খুব একটা গলা উঁচু করতে শোনা যায়নি৷ বরং দেশটির গণমাধ্যমে দেখা গেছে ভিন্ন চিত্র৷
সৌদি আরবের প্রভাবশালী পত্রিকা আরব নিউজ ঘটনার পর প্রথম পাতায় সোলেইমানির ছবি সম্বলিত একটি সম্পাদকীয় প্রকাশ করেছে৷ যার শিরোনাম ছিল ‘‘আর কাউকে হত্যা করতে পারবে না সে (সোলেইমানি)৷''
কুদস বাহিনীর প্রধান সোলেইমানিকে একজন বিজ্ঞ সমরবিদ হিসেবে ধরা হতো যিনি মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের আধিপত্য বিস্তার ও সৌদি আরবের প্রভাব কমিয়ে আনার কারিগর৷ আর তাই তাকে খুব একটা ভালো চোখে দেখেনি সৌদি সরকার৷
পত্রিকাটি গত বছরের মে মাসে সৌদি আরবে তেলের পাইপে ড্রোন হামলার পর যুক্তরাষ্ট্রকে ইরানে ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক' চালানোর জন্যেও বলেছিল৷
এদিকে হত্যাকাণ্ডের পর সৌদি আরবের একজন কূটনীতিক উভয় পক্ষকেই সংযম প্রদর্শনের আহবান জানান বলে উল্লেখ করেছে এএফপি৷
তবে দেশটির পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আদেল আল-জুবেইর এক টুইটে বলেন ‘‘এ ঘটনায় সৌদি আরব উত্তেজনা কমিয়ে আনার বিষয়েই গুরুত্ব দিচ্ছে৷''
কে ছিলেন কাসিম সোলাইমানি
কাসিম সোলাইমানি৷ ইরানিদের কাছে তিনি নায়কোচিত এক বীর, যার জনপ্রিয়তা এমনকি প্রেসিডেন্ট রুহানির চেয়েও বেশি৷ অন্যদিকে পশ্চিমাদের কাছে তিনি জঙ্গী গোষ্ঠীগুলোর মদদদাতা৷ সোলাইমানি কেন এত আলোচিত দেখুন ছবিঘরে৷
ছবি: mojnews
তারকাখ্যাতি
ইরানের জনগনের কাছে কাসিম সোলাইমানির ছিল তারকাখ্যাতি৷ ইনস্টাগ্রামে সেনা বাহিনীর এই জেনারেলের রয়েছে বিপুল অনুসারী৷
ছবি: FARS
পর্দায় সোলাইমানি
২০০৩ সালে ইরান সিরিয়া যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার পর থেকে আলোচনায় কাসিম সোলাইমানি৷ এসময় যুদ্ধময়দানের ছবিতে, তথ্যচিত্র, এমনকি মিউজিক ভিডিও আর অ্যানিমেটেড চলচ্চিত্রেও দেখা যায় তাকে৷
ছবি: Khamenei.ir
যুদ্ধময়দানে
গত অক্টোবরে সোলাইমানির বিরল একটি সাক্ষাৎকার প্রচারিত হয় ইরানের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে৷ জানান, ২০০৬ সালে তিনি লেবাননে ইসরায়েল-হেজবুল্লাহ যুদ্ধের তদারকি করেছেন৷
ছবি: ILNA
আঞ্চলিক প্রভাব বিস্তারের স্থপতি
সোলাইমানির সমর্থকরা মনে করেন সম্প্রতি ইরানের আঞ্চলিক ক্ষমতা বিস্তারের মূল স্থপতি ছিলেন তিনি৷ তার নেতৃত্বেই মধ্যপ্রাচ্যে জিহাদী বিরোধী অভিযানগুলো পরিচালনা করেছে ইরান৷ ইরাক, সিরিয়া সহ অন্যদেশগুলোতে কূটনৈতিক তৎপরতাও চালিয়েছেন তিনি৷
ছবি: ABNA24.com
শিয়াদের জেমস বন্ড?
২০১৭ সালে টাইম ম্যাগাজিনের সবচেয়ে প্রভাবাশালী ব্যক্তিদের তালিকায় জায়গা করে নেন তিনি৷ সাবেক সিআইএ অ্যানালিস্ট কেনেথ পোলাক তার সম্পর্কে সেখানে লিখেছেন, ‘‘মধ্যপ্রাচ্যের শিয়াদের কাছে কাসিম সোলাইমানি একাধারে জেমস বন্ড, আরউইন রোমেল এবং লেডি গাগার সম্মিলিত এক চরিত্র৷’’
ছবি: Farsnews
পশ্চিমাদের চক্ষুশূল
কেনেথ পোলাক আরো লিখেছেন, ‘‘পশ্চিমাদের কাছে তিনি ইরানের ইসলামি বিপ্লব অন্যদেশগুলোতে রপ্তানি করা, সন্ত্রাসীদের সহযোগিতা দেয়া, পশ্চিমাপন্থি সরকারদের সর্বনাশ করা আর বিদেশের মাটিতে যুদ্ধে ইরানের নেতৃত্ব দেয়ার জন্য দায়ী এক ব্যক্তি৷’’ পশ্চিমা নেতারা লেবাননে হেজবুল্লাহ ও ফিলিস্তিনের হামাসের মত জঙ্গীগোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে ইরানের সম্পর্কের কেন্দ্রীয় চরিত্র বলেও মনে করেন তাকে৷
ছবি: picture alliance / AA
রাজনীতির ময়দানে
অর্থনৈতিক সঙ্কট, দেশজুড়ে অসন্তোষ আর বাহির থেকে যুক্তরাষ্ট্রের চাপের প্রেক্ষিতে রাজনীতিতে আসার জন্য তার প্রতি আহবান জানিয়েছিল অনেক ইরানী৷ তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দাড়াবেন এমন গুঞ্জনও শোনা গিয়েছিল৷ যদিও পরবর্তীতে তা নাকচ করে দেন কাসিম৷
ছবি: FARS
ইরাকের সরকার গঠনে
২০০১ সালে যুক্তরাষ্ট্র যখন আফগানিস্তানে হামলা চালায় তখন ইরানের ‘কুদস ফোর্সের’ নেতৃত্বে চলে আসেন তিনি৷ এই বাহিনীর বিভিন্ন অভিযানে অংশ নিয়েছেন তিনি৷ ২০১৮ সালে ইরাকের সরকার গঠনে তার ভূমিকাও এখন আর অজানা নয়৷
ছবি: Fars
রুহানির চেয়েও জনপ্রিয়
২০১৮ সালে ইরান পোল এবং ম্যারিল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এক জরিপে দেখা সোলাইমানির জনপ্রিয়তার হার ছিল ৮৩ ভাগ৷ তার চেয়ে পেছনে ছিলেন প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভাদ জারিফও৷
ছবি: Khamenei.ir
9 ছবি1 | 9
শান্ত থাকার আহ্বান
উদ্ভুত পরিস্থিতিতে সকল পক্ষকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছে জার্মানি, ফ্রান্স ও চীন৷
ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইয়েন-ইভেস লে ডারিন জানান, তিনি জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেইকো মাস ও চীনের একজন উর্ধ্বতন কূটনীতিক ওয়াং ই এর সাথে এ বিষয়ে আলোচনা করেছেন৷
‘‘আমরা একমত হয়েছি যে, ইরাকের সার্বভৌমত্ব রক্ষা ও এ অঞ্চলের স্থিতিশীলতা রক্ষার বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ,'' বলেন তিনি৷
পাশাপাশি ইরানকে ভিয়েনা চুক্তি বজায় রেখে উত্তেজনা বৃদ্ধি পায় এ ধরনের পদক্ষেপ থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানান তিনি৷