1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সোনার বাংলা গড়তে সততা ও সমঝোতার আহ্বান নারগিসের

১০ আগস্ট ২০১১

স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করতে কোলের শিশুকে নিয়ে ভারতে পাড়ি দেন বীর মুক্তিযোদ্ধা নারগিস আফজাল৷ পাক সেনাদের গোলার মুখেও মুক্তিযুদ্ধের জন্য কাজ করেন তিনি৷ তবে সোনার বাংলা গড়ার পথে সততা ও সমঝোতার অভাব বলে মন্তব্য নারগিসের৷

মুক্তিযুদ্ধে নিহত বুদ্ধিজীবিদের একাংশছবি: Dhaka National Archives

‘‘এতো ত্যাগ, তিতিক্ষা আর রক্তের বিনিময়ে স্বাধীনতা অর্জিত হলেও এখনও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শে আমরা পৌঁছতে পারিনি৷ তিনি যেমনটি চেয়েছিলেন সেই সোনার বাংলা গড়তে পারিনি৷ একটা সুন্দর গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে এবং একটি বাঙালি জাতি হিসেবে সবদিক দিয়ে এখনও নিজেদের গড়ে তুলতে পারিনি আমরা৷ এখনও আমাদের মধ্যে ভেদাভেদ রয়ে গেছে৷ আমরা নিজেরা এখন শুধু একে অপরকে দোষী করছি৷ কিন্তু জাতির পিতার আদর্শে আমরা এখনও উপনীত হইনি৷ ষড়যন্ত্রকারী আমরা নিজেরাই৷ এক এগারোর সময় ষড়যন্ত্র করে দেশনেত্রী শেখ হাসিনাকে এবং আমাকেও কারাগারে পাঠানো হয়েছিল৷'' এভাবেই বাংলাদেশের অর্জনের মূল্যায়ন করছিলেন বীর সাহসী নারী মুক্তিযোদ্ধা নারগিস আফজাল৷ দেশের উন্নয়নের জন্য সর্বক্ষেত্রে সততা ও সমঝোতার উপর জোর দিলেন নারগিস৷

৭ই মার্চের ঐতিহাসিক সেই ভাষণছবি: bdnews24

কুমিল্লায় ১৯৫০ সালের পহেলা সেপ্টেম্বর জন্ম নারগিস আফজালের৷ ১৯৬৭ সালে কুমিল্লা সরকারি মহিলা কলেজে ভর্তির পর থেকেই ছাত্রলীগের সাথে সক্রিয়ভাবে কাজ শুরু করেন৷ বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক হিসেবে স্বাধীনতার মন্ত্রে উজ্জীবিত ছাত্রলীগই ছিল নারগিসের প্রিয় সংগঠন৷ কলেজের ছাত্র-সংসদ নির্বাচনে আমোদ-প্রমোদ সম্পাদক নির্বাচিত হন৷ ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধু অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিলে স্বামী শিক্ষাবিদ এবং আইনজীবী আফজাল খানের সাথে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েন নারগিস৷ ২৫ মার্চ পাক হানাদার বাহিনী নির্মমভাবে বাঙালিদের উপর গণহত্যা ও নির্যাতন শুরু করলে পরের দিন চৌদ্দগ্রাম সীমান্ত দিয়ে ভারত রওয়ানা করেন তাঁরা৷ উভয়পাশে গোলা বর্ষণ চলতে থাকলেও জীবন বাজি রেখে মাত্র ছয় মাসের শিশু কন্যাকে কোলে নিয়ে সীমান্ত পাড়ি দেন৷

রাঙামুড়ায় অবস্থান করে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি নেন৷ অস্ত্রচালনা প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন৷ কিন্তু কোলের শিশু থাকায় সশস্ত্র যুদ্ধে অংশগ্রহণের সুযোগ হয়নি নারগিসের৷ সোনামুড়া, উদয়নগর, পদ্মনগরসহ বিভিন্ন শিবিরে মুক্তিযোদ্ধাদের সেবা-শুশ্রূষা এবং শরণার্থী ও মুক্তিযোদ্ধা শিবিরে ওষুধ ও ত্রাণ বিতরণ করতেন৷ এরপর অস্থায়ী প্রবাসী সরকার গঠিত হলে পদ্মনগর যুব শিবিরে চলে যান৷ সেই শিবিরের যাবতীয় সেবামূলক কাজের তদারকি করতেন নারগিস৷ একবার পদ্মনগর শিবিরে ব্যাপকহারে জ্বর এবং আমাশয়ের প্রকোপ দেখা দেয়৷ এসময় তাঁর নিজের শিশুটিও আমাশয়ে ভোগে৷ তবে স্রষ্টার কৃপায় কোনরকমে প্রাণে বেঁচে যায় ছোট্ট শিশুটি৷

ডয়চে ভেলের সাথে টেলিফোন সংলাপে স্বাধীনতা যুদ্ধের খণ্ডচিত্র তুলে ধরতে গিয়ে নারগিস বলেন, ‘‘আমাদের প্রতিটি দিন-রাত কেটেছে ভয়ংকর পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে৷ প্রায়ই গোলা বর্ষণ করতো পাক সেনারা৷ তখন এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় গিয়ে আশ্রয় নিতে হতো৷ কখনও মাটির নিচে বাঙ্কারে আশ্রয় নিতে হতো৷ যখন চৌদ্দগ্রাম সীমান্ত দিয়ে ভারত যাচ্ছিলাম, তখন উভয় দিক থেকেই পাক সেনারা গোলাবর্ষণ করছিল৷''

দেশ স্বাধীন হলে ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশে ফিরে আসেন নারগিস৷ শুরু করেন মুক্তিযুদ্ধ সংহত করার কাজ৷ তাঁর কর্মতৎপরতার মূল্যায়ন করে বাংলাদেশের বর্তমান রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমানের প্রয়াত স্ত্রী জননেত্রী আইভি রহমান নারগিসকে কুমিল্লা জেলা মহিলা আওয়ামী লগের সভানেত্রী মনোনীত করেন৷ এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগের সক্রিয় কর্মী হিসেবে সমাজসেবার কাজ করে চলেছেন৷ এছাড়া কুমিল্লা মডার্ন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করছেন নারগিস আফজাল৷ একজন শিক্ষক হিসেবে সুশিক্ষার প্রসার এবং ছাত্র-ছাত্রীদের চরিত্র গঠনে নিরলস ও আপোষহীনভাবে কাজ করে চলেছেন এই বীর সাহসী সংগ্রামী নেত্রী এবং শিক্ষাবিদ৷

প্রতিবেদন: হোসাইন আব্দুল হাই

সম্পাদনা: দেবারতি গুহ

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ