1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সোনার হরিণ আইসিইউ

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
৭ জুন ২০২০

ঢাকাসহ সারাদেশে কোনো হাসপাতালেই করোনা রোগীদের জন্য আইসিইউ বেড খালি নেই৷ রোগী বেড়ে যাওয়া ছাড়াও আগাম বুকিং এবং ভিআইপিদের চাপে এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে বলে জানা গেছে৷

আইসিইউ
ফাইল ছবিছবি: bdnews24

আইসিইউ বেড খালি না থাকায় রোগীর স্বজনরাও যেমন উদ্বিগ্ন তেমনি চিকিৎসকরাও আছেন বিপাকে৷ কয়েকটি হাসপাতালে যোগাযোগ করে জানা যায় এক সপ্তাহ আগে থেকেই আইসিইউ বেড খালি নেই৷ প্রতিটি কোভিড হাসপাতালেই অনেক অপেক্ষমান রোগী আছেন৷ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জানান, রোগীর স্বজনরা আইসিইউ বেডের জন্য হন্যে হয়ে ঘুরছেন৷ অনেকে চিকিৎসার শুরুতেই আইসিইউ'র জন্য চাপাচাপি করছেন, তাতে সংকট আরো বাড়ছে৷

সংবাদ মাধ্যমে আইসিইউ'র অভাবে রোগী মারা যাওয়ার খবরও ছাপা হচ্ছে৷ এরকম একজন হলেন ব্যবসায়ী খন্দকার শাহেদুল ইসলাম (৪৭)৷ তিনি ৩১ মে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মারা যান৷ ২১ মে তিনি করোনা পজেটিভ নিয়ে ভর্তি হন৷ তার ভাই মনিরুল ইসলাম জানান, ‘‘তিনি শ্বাসকষ্ট নিয়ে ভর্তি হয়েছিলেন৷ শেষ দুই দিনে তার আইসিইউ সাপোর্ট দরকার ছিলো৷ চিকিৎসকরাও বলছিলেন বার বার৷ আমরা নিজেরাও বিভিন্ন পর্যায়ে যোগাযোগ করেছি৷ কিন্তু আইসিইউ পাওয়া যায়নি৷ ঢাকা মেডিক্যালে কোভিড রোগীর জন্য আইসিইউ বেড ১০টি৷ কোনো বেডই খালি ছিল না৷’’ 

এহতেশামুল হক চৌধুরী

This browser does not support the audio element.

তিনি জানান, ওই সময় তারা বাইরের হাসপাতালেও যোগাযোগ করেছিলেন৷ কিন্তু সেখানেও পাওয়া যায়নি৷ কোভিড চিকিৎসকদের একটি অনলাইন গ্রুপের সমন্বয়ক সুমন জাহিদ জানান, ‘‘আমরা প্রতিদিন আইসিইউ'র জন্য পাঁচ-সাতটি অনুরোধ পাই৷ কিন্তু বিভিন্ন কোভিড হাসপাতালে যোগাযোগ করে গত ১০ দিন ধরে কোনো আইসিইউ ম্যানেজ করতে পারছি না৷’’ 

সরকারি হিসাব অনুযায়ী সারাদেশে এখন কোভিড-১৯ এর জন্য ৩৯৯টি আইসিইউ বেড আছে৷ এর মধ্যে ঢাকায় আছে দেড়শ’র মতো৷ এছাড়া সারাদেশে সব ধরনের চিকিৎসার জন্য মোট আইসিইউ আছে এক হাজার ২০০ বা তার কিছু বেশি৷

বাংলাদেশ মেডিক্যাল এসোসিয়েশন-বিএমএ'র মহাসচিব অধ্যাপক ডা. এহতেশামুল হক চৌধুরী জানান, এর বাইরে নতুন যে বেসরকারি হাসপাতালগুলো কোভিড-১৯ চিকিৎসায় যুক্ত হয়েছে তাদের আরো হয়তো সব মিলিয়ে ৫০ টি আইসিইউ আছে৷ তার মতে, রোগী বেড়ে যাওয়ায় আইসিইউর সংকট তৈরি হয়েছে৷ আগে পরিকল্পনা করলে হয়তো এই সংকট এড়ানো যেতে৷

এই চিকিৎসক নেতা বলেন, ‘‘আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুযায়ী সাধারণ হাসপাতালে মোট বেডের শতকরা পাঁচ ভাগ এবং বিশেষায়িত হাসপাতালে ১০ ভাগ আইসিইউ বেড থাকবে৷ আমাদের এখানে এর অনেক কম৷’’ তিনি জানান, ‘‘ভেন্টিলেটর আছে আরো কম৷ যত আইসিইউ বেড তার ৪০ ভাগ বেডে ভেন্টিলেটর আছে৷’’

আইসিইউ বেডের স্বল্পতার পাশাপাশি আতঙ্কের কারণেও এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করেন তিনি৷ ‘‘কার আইসিইউ প্রয়োজন তা চিকিৎসক সিদ্ধান্ত নেবেন৷ কিন্তু হাসপাতালে ভর্তি করানোর পরই পরই রোগীর স্বজনর আইসিইউ'র জন্য চাপ দেন৷ তারা মনে করেন রোগীকে আইসিইউতে না নিলে হয়তো বাঁচানো যাবেনা৷ কিন্তু এটা ঠিক না,’’ বলেন এহতেশামুল হক চৌধুরী৷

এই চিকিৎসক জানান করোনা আক্রান্ত রোগীদের শতকরা ৮০ ভাগ বাসায় থেকেই ভালো হয়ে যান৷ ২০ ভাগকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়৷ আর চার-পাঁচ ভাগ রোগীর আইসিইউ’র প্রয়োজন হয় যাদের অবস্থা খুবই খারাপ থাকে৷ 

শাহাব উদ্দিন আহমেদ

This browser does not support the audio element.

এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে ঢাকার কয়েকটি প্রাইভেট কোভিড হাসপাতালের কিছু বেড বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান আগেই বুকিং দিয়ে রেখেছে৷ আর প্রভাবশালীরা হাসপাতালে ভর্তি হলেই প্রয়োজন না হলেও আইসিইউতে থাকছেন৷ ফলে যাদের প্রভাব বা অর্থ নেই তারা আছেন সংকটে৷ তবে এইসব বিষয়ে দায়িত্বশীল কেউ নাম প্রকাশ করে সরাসরি কিছু বলতে রাজি হননি৷

কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক শাহাব উদ্দিন আহমেদও আইসিইউ স্বল্পতার কথা স্বীকার করেন৷ তিনি জানান, হাসপাতালটিতে আগের ১০টির সঙ্গে শনিবার থেকে আরো ৬টি  আইসিইউ বেড যুক্ত হয়েছে৷ তারপরও তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম৷

রিজেন্ট হাসপাতালে ১৮ টি আইসিইউ বেডের একটিও খালি নেই৷ হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ শাহেদ জানান, ‘‘আমার জানামতে বাংলাদেশে এই মুহূর্তে কোভিড রোগীদের জন্য কোনো হাসপাতালে আইসিইউ খালি নেই৷ এর কারণ শুধু স্বল্পতা নয়৷ আতঙ্কের কারণে সব রোগীই আইসিইউ চায়৷’’ ডা.  এহতেশামুল হক বলেন, ‘‘রোগী যেভাবে বাড়ছে তাতে ভবিষ্যতে এই সংকট আরো বাড়বে৷ তাই অল্প আইসিইইউ বেডের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে৷’’

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ