ঢাকাসহ সারাদেশে কোনো হাসপাতালেই করোনা রোগীদের জন্য আইসিইউ বেড খালি নেই৷ রোগী বেড়ে যাওয়া ছাড়াও আগাম বুকিং এবং ভিআইপিদের চাপে এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে বলে জানা গেছে৷
বিজ্ঞাপন
আইসিইউ বেড খালি না থাকায় রোগীর স্বজনরাও যেমন উদ্বিগ্ন তেমনি চিকিৎসকরাও আছেন বিপাকে৷ কয়েকটি হাসপাতালে যোগাযোগ করে জানা যায় এক সপ্তাহ আগে থেকেই আইসিইউ বেড খালি নেই৷ প্রতিটি কোভিড হাসপাতালেই অনেক অপেক্ষমান রোগী আছেন৷ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জানান, রোগীর স্বজনরা আইসিইউ বেডের জন্য হন্যে হয়ে ঘুরছেন৷ অনেকে চিকিৎসার শুরুতেই আইসিইউ'র জন্য চাপাচাপি করছেন, তাতে সংকট আরো বাড়ছে৷
সংবাদ মাধ্যমে আইসিইউ'র অভাবে রোগী মারা যাওয়ার খবরও ছাপা হচ্ছে৷ এরকম একজন হলেন ব্যবসায়ী খন্দকার শাহেদুল ইসলাম (৪৭)৷ তিনি ৩১ মে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মারা যান৷ ২১ মে তিনি করোনা পজেটিভ নিয়ে ভর্তি হন৷ তার ভাই মনিরুল ইসলাম জানান, ‘‘তিনি শ্বাসকষ্ট নিয়ে ভর্তি হয়েছিলেন৷ শেষ দুই দিনে তার আইসিইউ সাপোর্ট দরকার ছিলো৷ চিকিৎসকরাও বলছিলেন বার বার৷ আমরা নিজেরাও বিভিন্ন পর্যায়ে যোগাযোগ করেছি৷ কিন্তু আইসিইউ পাওয়া যায়নি৷ ঢাকা মেডিক্যালে কোভিড রোগীর জন্য আইসিইউ বেড ১০টি৷ কোনো বেডই খালি ছিল না৷’’
এহতেশামুল হক চৌধুরী
তিনি জানান, ওই সময় তারা বাইরের হাসপাতালেও যোগাযোগ করেছিলেন৷ কিন্তু সেখানেও পাওয়া যায়নি৷ কোভিড চিকিৎসকদের একটি অনলাইন গ্রুপের সমন্বয়ক সুমন জাহিদ জানান, ‘‘আমরা প্রতিদিন আইসিইউ'র জন্য পাঁচ-সাতটি অনুরোধ পাই৷ কিন্তু বিভিন্ন কোভিড হাসপাতালে যোগাযোগ করে গত ১০ দিন ধরে কোনো আইসিইউ ম্যানেজ করতে পারছি না৷’’
সরকারি হিসাব অনুযায়ী সারাদেশে এখন কোভিড-১৯ এর জন্য ৩৯৯টি আইসিইউ বেড আছে৷ এর মধ্যে ঢাকায় আছে দেড়শ’র মতো৷ এছাড়া সারাদেশে সব ধরনের চিকিৎসার জন্য মোট আইসিইউ আছে এক হাজার ২০০ বা তার কিছু বেশি৷
বাংলাদেশ মেডিক্যাল এসোসিয়েশন-বিএমএ'র মহাসচিব অধ্যাপক ডা. এহতেশামুল হক চৌধুরী জানান, এর বাইরে নতুন যে বেসরকারি হাসপাতালগুলো কোভিড-১৯ চিকিৎসায় যুক্ত হয়েছে তাদের আরো হয়তো সব মিলিয়ে ৫০ টি আইসিইউ আছে৷ তার মতে, রোগী বেড়ে যাওয়ায় আইসিইউর সংকট তৈরি হয়েছে৷ আগে পরিকল্পনা করলে হয়তো এই সংকট এড়ানো যেতে৷
এই চিকিৎসক নেতা বলেন, ‘‘আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুযায়ী সাধারণ হাসপাতালে মোট বেডের শতকরা পাঁচ ভাগ এবং বিশেষায়িত হাসপাতালে ১০ ভাগ আইসিইউ বেড থাকবে৷ আমাদের এখানে এর অনেক কম৷’’ তিনি জানান, ‘‘ভেন্টিলেটর আছে আরো কম৷ যত আইসিইউ বেড তার ৪০ ভাগ বেডে ভেন্টিলেটর আছে৷’’
যেভাবে মানবদেহে আক্রমণ করে করোনা ভাইরাস
শুধু ফুসফুস নয় বরং করোনা ভাইরাসের আক্রমণে মানুষের হৃৎপিণ্ড, স্নায়ু, মস্তিষ্ক, কিডনি, ধমনি এবং ত্বক ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে৷ ঘটতে পারে মৃত্যু৷
ছবি: picture-alliance/dpa/imageBROKER
হৃৎপিণ্ড
বেশ কয়েকটি গবেষণায় দেখা গেছে করোনা ভাইরাসের কারণে হৃৎপিণ্ড ক্ষতিগ্রস্ত হয়৷ হৃদরোগ বা উচ্চ রক্তচাপ থাকা ব্যক্তিদের কোভিড-১৯ এ মৃত্যুর হার অনেক বেশি৷ কিন্তু যাদের হৃদরোগ নেই তারাও আক্রান্তের পর হৃৎপিণ্ডের পেশির কোষ মারা যায়৷ তবে ভাইরাসের আক্রমণে কোষ ক্ষতিগ্রস্ত হয় নাকি ভাইরাসের বিরুদ্ধে শরীরের তৈরি রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থার কারণে, তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/imageBROKER
ফুসফুস
কোভিড-১৯ এ ফুসফুস সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়৷ ফুসফুস জটিলতাতেই বেশির ভাগ মানুষের মৃত্যু হয়েছে৷ যারা সুস্থ হয়ে উঠেন তাদের ফুসফুসও দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতিগ্রস্ত হয় বলে ধারণা করা হচ্ছে৷ কারণ, সুস্থদের ফুসফুসে ঘোলাটে সাদা মেঘের মত বস্তু দেখতে পেয়েছেন চীনের গবেষকরা৷ যেটা ফুসফুসের স্থায়ী ক্ষতির ইঙ্গিত দেয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Gollnow
শ্বাসকষ্ট
ফুসফুসের এই অবস্থা হলে রক্তে অক্সিজেন পৌঁছাতে বাধা পাবে৷ ফুসফুস আড়ষ্ট হয়ে পড়বে এবং শ্বাসপ্রশ্বাস ছোট ও দ্রুত গতির হবে৷ ফলে ফুসফুসের কার্যক্ষমতা কমে যাওয়া, শ্বাসকষ্ট এবং শুকনো কফ দেখা দেবে৷ ফুসফুসের কোষ একবার ক্ষতিগ্রস্ত হলে সেটা আর ঠিক হয় না৷
ছবি: Reuters/D. Siddiqui
স্নায়ুতন্ত্র
কোভিড-১৯ আক্রান্ত ৮০ শতাংশ রোগীর ক্ষেত্রে দেখা গেছে তাদের স্বাদ এবং ঘ্রাণ শক্তি নষ্ট হয়ে গেছে৷ সংক্রমণের একেবারে শুরুর দিকেই এ উপসর্গ দেখা দেয়৷ সাধারণ ফ্লুর ক্ষেত্রে যেটা রোগের চূড়ান্ত পর্যায়ে হয়৷ ঘ্রাণ শক্তি বা অলফ্যাক্টরি নার্ভ অনুনাসিক ঝিল্লি থেকে খুলির হাড়ের মাধ্যমে সরাসরি মস্তিষ্কে পৌঁছায়৷
ছবি: Colourbox
ধমনি
জুরিখের একদল প্যাথলোজিস্ট করোনায় মারা যাওয়া কয়েকজনের ময়নাতদন্ত করে দেখেছেন কারো কারো রক্তনালি এবং লাসিকা গ্রন্থি ফুলে গিয়ে সেগুলোতে রক্তপ্রবাহ বন্ধ হয়ে গিয়েছে৷ যার ফলে হৃৎপিণ্ড, কিডনিসহ অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গ এক সঙ্গে বিকল হয়ে মানুষ মারা যায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Burgi
মস্তিষ্ক
মার্স এবং সার্স ভাইরাসের সময়ও মস্তিষ্ক ক্ষতিগ্রস্ত হতে দেখা গেছে৷ নতুন করোনা ভাইরাসের ক্ষেত্রেও আক্রান্ত অনেকের খিচুনি এবং মৃগীরোগের চিকিৎসা দিতে হয়েছে৷ এ কারণেই হয়তো আক্রান্ত অনেকের মধ্যে কোনো পূর্ব লক্ষণ ছাড়াই তীব্র শ্বাসকষ্ট শুরু হয়ে যায়৷ তবে করোনা ভাইরাসের কারণে স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ার বিষয়ে এখনো পরিষ্কার কিছু জানা যায়নি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Prefeitura Manaus/I. Anne
কিডনি
কোভিড-১৯ আক্রান্ত অনেকের শরীরে মারাত্মক নিউমোনিয়ার লক্ষণ থাকে এবং ভেন্টিলেশনের প্রয়োজন হয়৷ ফুসফুসে জমা তরল বের করতে ওই রোগীদের যে ওষুধ দেওয়া হয় তাতে তাদের পুরো শরীর থেকে তরল বের হয়ে যায়৷ ফলে কিডনিতে রক্ত সরবরাহ কমে যায় এবং কিডনি ঠিকমত কাজ করতে না পেরে অকেজো হয়ে পড়ে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Murat
রক্তপিণ্ড
কোভিড-১৯ এ গুরুতর আক্রান্ত ব্যক্তিদের শরীরে অনেক সময় রক্ত জমাট বেধে রক্তনালি বন্ধ হয়ে যায়৷ এটার কারণেও অনেক সময় কিডনিতে রক্ত সরবরাহ বন্ধ হয়ে এ অঙ্গটি অকেজো হয়ে পড়ে৷
করোনা ভাইরাসের কারণে মানুষের ত্বকও ক্ষতিগ্রস্ত হয়৷ অনেক দেশে কোভিড-১৯ আক্রান্তদের ত্বকে ক্ষত বা র্যাশ সৃষ্টির খবর পাওয়া গেছে৷ রক্ত জমাট বাধার কারণে ত্বকের নিচে এ ধরনের র্যাশ দেখা যায়৷
ছবি: Getty Images/AFP/J. Wessels
9 ছবি1 | 9
আইসিইউ বেডের স্বল্পতার পাশাপাশি আতঙ্কের কারণেও এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করেন তিনি৷ ‘‘কার আইসিইউ প্রয়োজন তা চিকিৎসক সিদ্ধান্ত নেবেন৷ কিন্তু হাসপাতালে ভর্তি করানোর পরই পরই রোগীর স্বজনর আইসিইউ'র জন্য চাপ দেন৷ তারা মনে করেন রোগীকে আইসিইউতে না নিলে হয়তো বাঁচানো যাবেনা৷ কিন্তু এটা ঠিক না,’’ বলেন এহতেশামুল হক চৌধুরী৷
এই চিকিৎসক জানান করোনা আক্রান্ত রোগীদের শতকরা ৮০ ভাগ বাসায় থেকেই ভালো হয়ে যান৷ ২০ ভাগকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়৷ আর চার-পাঁচ ভাগ রোগীর আইসিইউ’র প্রয়োজন হয় যাদের অবস্থা খুবই খারাপ থাকে৷
শাহাব উদ্দিন আহমেদ
এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে ঢাকার কয়েকটি প্রাইভেট কোভিড হাসপাতালের কিছু বেড বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান আগেই বুকিং দিয়ে রেখেছে৷ আর প্রভাবশালীরা হাসপাতালে ভর্তি হলেই প্রয়োজন না হলেও আইসিইউতে থাকছেন৷ ফলে যাদের প্রভাব বা অর্থ নেই তারা আছেন সংকটে৷ তবে এইসব বিষয়ে দায়িত্বশীল কেউ নাম প্রকাশ করে সরাসরি কিছু বলতে রাজি হননি৷
কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক শাহাব উদ্দিন আহমেদও আইসিইউ স্বল্পতার কথা স্বীকার করেন৷ তিনি জানান, হাসপাতালটিতে আগের ১০টির সঙ্গে শনিবার থেকে আরো ৬টি আইসিইউ বেড যুক্ত হয়েছে৷ তারপরও তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম৷
রিজেন্ট হাসপাতালে ১৮ টি আইসিইউ বেডের একটিও খালি নেই৷ হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ শাহেদ জানান, ‘‘আমার জানামতে বাংলাদেশে এই মুহূর্তে কোভিড রোগীদের জন্য কোনো হাসপাতালে আইসিইউ খালি নেই৷ এর কারণ শুধু স্বল্পতা নয়৷ আতঙ্কের কারণে সব রোগীই আইসিইউ চায়৷’’ ডা. এহতেশামুল হক বলেন, ‘‘রোগী যেভাবে বাড়ছে তাতে ভবিষ্যতে এই সংকট আরো বাড়বে৷ তাই অল্প আইসিইইউ বেডের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে৷’’
করোনা: গুজব ও বাস্তবতা
করোনা ভাইরাস নিয়ে ভয় পাওয়াটা অস্বাভাবিক নয়৷ কিন্তু এই ভয়কে কাজে লাগিয়ে অনলাইনে ছড়িয়ে পড়ছে ভুয়া তথ্য, মিথ্যা সংবাদ৷ ডয়চে ভেলে চেষ্টা করছে বিশেষজ্ঞদের মত অনুসারে আপনাদের সঠিক তথ্য জানানোর৷
ছবি: picture-alliance/Photoshot/Xiao Yijiu
শিশুদের আশঙ্কা কি বেশি?
শিশুদের নিয়ে আলাদা করে কোনো আশঙ্কা নাই৷ যে কোনো বয়সের মানুষ আক্রান্ত হতে পারেন৷ আক্রান্তদের পাঁচ জনের চারজনের ওপর এই ভাইরাস সাধারণ ঠান্ডা-জ্বরের মতোই প্রভাব ফেলবে৷ এখন পর্যন্ত আক্রান্ত হওয়া রোগীদের বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে শিশু ও তরুণ বয়সিরা স্বাভাবিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দিয়েই সংক্রমণ কাটিয়ে উঠতে পারেন৷ মধ্যবয়সিরা এতে আক্রান্ত হলেও পর্যাপ্ত সেবা ও চিকিৎসায় তাদেরও সেরে ওঠার সম্ভাবনা প্রায় শতভাগ৷
ছবি: Reuters/A. Jalal
কী খেলে ঠেকানো যাবে করোনা?
কোনো কিছু খেয়েই করোনা ঠেকানো যাবে না৷ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ঠিক রাখার জন্য সুষম খাবার এমনিতেই প্রয়োজন৷ অনলাইনে গুজব ছড়াচ্ছে৷ কেউ রসুন খাওয়ার কথা বলছেন, কেউ ব্লিচিং বা অন্য রাসায়নিক দ্রব্যের কথা বলছেন৷ রসুনে নানা উপাদান রয়েছে যা শরীরের জন্য ভালো৷ রসুন খেলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ বাড়াতে তা ভূমিকা রাখতে পারে৷ তবে ব্লিচিং বা অন্য রাসায়নিক শরীরে গেলে তা করোনা ভাইরাসের চেয়েও মারাত্মক পরিণতি ডেকে আনতে পারে৷
ছবি: AFP/C. De Souza
গরম বা ঠান্ডা পানি পান করা উচিত?
নিয়মিত পানি পান করলে শরীরের জন্য ভালো৷ কিন্তু ১৫ মিনিট পর পর গরম পানি পান করলে ভাইরাস মারা যাবে, এমন তথ্য সঠিক নয়৷ মুখে বা শরীরে একবার ভাইরাস প্রবেশ করলে কোনো খাবার বা পানীয় দিয়েই তা আটকানো যাবে না৷ শরীরের স্বাভাবিক রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা নিজেই এই ভাইরাসের সঙ্গে লড়াই করতে সক্ষম৷
ছবি: Colourbox/Haivoronska_Y
অ্যান্টিবায়োটিক বা কোনো ওষুধে কাজ হবে?
অ্যান্টিবায়োটিক ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের জন্য কার্যকর, ভাইরাসের জন্য নয়৷ কোনো কোনো ক্ষেত্রে অসুস্থ শরীরে ভাইরাসের পাশাপাশি ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণও হতে পারে৷ সেসব ক্ষেত্রে চিকিৎসক অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের পরামর্শ দিতে পারেন৷ এখনো নভেল করোনা ভাইরাসের ভ্যাকসিন বা প্রতিষেধক আবিষ্কার হয়নি৷ বিভিন্ন সংস্থা প্রতিষেধক আবিষ্কারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে৷ শিগগিরই হয়তো আসবে সুখবর৷
ছবি: imago/Science Photo Library
আবহাওয়া ও তাপমাত্রার কোনো প্রভাব রয়েছে?
এ বিষয়ে এখনো বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত নন৷ পরীক্ষাগারে দেখা গেছে ৬০ থেকে ৭০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ভাইরাস মারা যায়৷ কিন্তু এত উচ্চ তাপমাত্রা কোনো দেশেই থাকে না৷ অনেকে মনে করছেন গরম পানি দিয়ে স্নান করলে ভাইরাস থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে৷ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা সবসময় জরুরি৷ কিন্তু প্রচণ্ড গরম পানি দিয়ে স্নান করলেই তা করোনা ভাইরাস থেকে বাঁচাবে, এমন তথ্য সঠিক নয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/D. Lipinski
থার্মাল স্ক্যানার দিয়ে কি করোনা ভাইরাস শনাক্ত সম্ভব?
থার্মাল স্ক্যানার দিয়ে শরীরে তাপমাত্রা বোঝা সম্ভব, ভাইরাসের উপস্থিতি নিশ্চত করা সম্ভব না৷ সেক্ষেত্রে কারো শরীরে জ্বর বা অন্য উপসর্গ দেখা দেয়ার আগ পর্যন্ত তার শরীরে ভাইরাসের উপস্থিতি বোঝা যাবে না৷ সাধারণত ভাইরাস শরীরে ঢোকার ১ থেকে ১৪ দিনের মধ্যে করোনা ভাইরাসের উপসর্গ দেখা দেয়৷ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ৫ দিনের মধ্যেই তা টের পাওয়া যায়৷ তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে ১৪ দিনের পরও ভাইরাস শরীরে কর্মক্ষম থাকতে পারে৷
ছবি: Reuters/P. Mikheyev
টাকার মাধ্যমে কী করোনা ছড়ায়?
শরীরের বাইরে করোনা ভাইরাস কয়েক মিনিট থেকে কয়েক ঘণ্টা বেঁচে থাকতে পারে৷ ফলে আমদানি করা কোনো পণ্য বা চিঠির মাধ্যমে করোনা ভাইরাস ছড়ানোর আশঙ্কা নেই বললেই চলে৷ ময়লা টাকা থেকে যেকোনো জীবাণুই ছড়াতে পারে৷ ফলে টাকা লেনদেনের পর ভালো করে হাত ধুয়ে নেয়া উচিত৷ যত বেশি সম্ভব হাত-মুখ-নাক-কানে হাত নেয়া থেকে বিরত থাকতে হবে৷
ছবি: DW
মশা বা অন্য পশুর মাধ্যমে ছড়াতে পারে?
সার্স ভাইরাস ছড়িয়েছিল এক ধরনের বেড়াল থেকে৷ মার্স ছড়িয়েছিল উট থেকে৷ নভেল করোনা ভাইরাস কিভাবে ছড়ালো বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত নন৷ ধারণা করা হচ্ছে, বাদুড় থেকে অন্য কোনো মাধ্যম হয়ে মানুষের মধ্যে এটি ছড়িয়েছে৷ তবে মশা বা অন্য কোনো প্রাণীর মাধ্যমে এটি আপনার মধ্যে ছড়াবে না৷ সতর্কতা হিসেবে মাছ-মাংস খাওয়ার আগে ভালোভাবে রান্না করতে হবে৷ অর্ধেক সিদ্ধ মাছ-মাংস বা পোচ করা ডিম থেকে যেকোনো জীবাণুই ছড়াতে পারে৷
ছবি: picture-alliance/blickwinkel/A. Rose
কিভাবে থাকবো নিরাপদ?
সবচেয়ে জরুরি হাত পরিষ্কার রাখা৷ সাবান দিয়ে হাত ভালো করে ২০ সেকেন্ড পরিষ্কার করতে হবে৷ যদি সাবান না থাকে, ব্যবহার করতে পারেন অ্যালকোহলযুক্ত হ্যান্ড স্যানিটাইজার৷ হাঁচি-কাশি দেয়ার সময় টিস্যু ব্যবহার করে তা ডাস্টবিনে ফেলুন, হাত ধুয়ে নিন৷ অথবা হাতের কনুইয়ে মুখ ঢাকুন৷ হাতের তালুতে হাঁচি-কাশি দিলে সেখান থেকে ভাইরাস ছড়িয়ে আক্রান্ত হতে পারেন অন্য়রা৷ হ্যান্ডশেক বা হাত মেলানো ও কোলাকুলি থেকেও বিরত থাকুন৷
ছবি: AFP/N. Almeida
আমি কী মারা যাবো?
করোনায় আক্রান্ত হলেই আপনি মারা যাবেন, এমন আশঙ্কা একেবারেই কম৷ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকার চেষ্টা করুন৷ চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ মেনে চলুন৷ অনলাইনে যা দেখবেন, সব বিশ্বাস না করে নির্ভরযোগ্য তথ্যের সন্ধান করুন৷ সাবান, স্যানিটাইজার নিজে কিনে জমিয়ে রাখবেন না৷ আপনি নিরাপদ থাকলেও আপনার আশেপাশের মানুষ নিরাপদ না থাকলে সহজেই তার কাছ থেকে ছড়াবে ভাইরাস৷ ফলে নিজে নিরাপদ থাকুন, অন্যদেরও থাকার সুযোগ দিন৷