পাটের প্রাচুর্যের কারণে একটা সময় বাংলাদেশকে বলা হতো সোনালি আঁশের দেশ৷ সেই পাটের আঁশ থেকে একরকম পলিব্যাগ আবিষ্কার করেছেন বাংলাদেশের একজন পরমাণুবিজ্ঞানী৷ নাম দিয়েছেন সোনালী ব্যাগ৷ বলা হচ্ছে, শতভাগ পরিবেশবান্ধব এই ব্যাগ৷
ছবি: DW/M. M. Rahman
বিজ্ঞাপন
বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার উপকন্ঠে বনশ্রীতে রয়েছে একটি কাঁচাবাজার৷ স্বাভাবিকভাবেই ব্যস্ততম অংশটি মাছের বাজার৷ দোকানিরা যেমন জমিয়ে নানান মাছের পসার বসান, তেমনি বাজার জুড়ে ছড়াছড়ি আরেকটি বস্তুর৷ স্থানীয়ভাবে বস্তুটি পরিচিত পলিথিন ব্যাগ হিসেবে৷ কোথায় নেই তা!
এই পলিথিন ব্যাগগুলো পরিবেশের জন্য কতটা ভয়াবহ তা বোঝা যাবে বাজারের ঠিক উল্টো পাশের খালটি দেখলে, যেন পাহাড় জমেছে পলিথিনের৷ পলিথিনে দূষিত এই খালটি থেকে বের হচ্ছে পচা গন্ধ৷
বাংলাদেশে পলিথিন ব্যাগ নিষিদ্ধ৷ কিন্তু এর ব্যবহার বন্ধ করতে পারেনি সরকার৷ অনেকেই মনে করেন পলিথিনের মতো হালকা ও সস্তা অথচ পরিবেশবান্ধব বিকল্প না থাকাই এর কারণ৷
বাংলাদেশ বিশ্বের প্রায় এক তৃতীয়াংশ পাট উৎপাদন করে৷ বাজারে পরিবেশবান্ধব পাটের ব্যাগও পাওয়া যায়৷ কিন্তু এর ব্যবহার অনেক কম৷ এ অবস্থায় পরমাণু বিজ্ঞানী মুবারক আহমেদ খান ভাবছেন ভিন্নভাবে৷ কয়েক বছর কঠিন সাধনা করে তিনি পাটের আঁশ দিয়ে পরিবেশবান্ধব পলিব্যাগ তৈরি করেছেন৷
পলিথিনের বিকল্প পাটের ব্যাগ
05:22
This browser does not support the video element.
নানা পরীক্ষা নিরীক্ষার মধ্য দিয়ে মুবারক তাঁর সহযোগীদের নিয়ে ব্যাগটি তৈরি করেছেন৷ পলিথিন পোড়ালে তা গলে গলে পড়ে৷ কিন্তু সোনালী ব্যাগ পোড়ে কাগজের মতো৷
শুকনো পাট বা এর ক্যাডিজ থেকেই মূলত পলিথিনের মতো দেখতে এই ব্যাগ তৈরি করা হয়৷ কাসাভা নামের শস্য থেকে কিংবা আখের ছোবড়া থেকে এ ধরনের ব্যাগ আগে তৈরি করা হয়েছে৷ কিন্তু মুবারকের দাবি, তাঁর ব্যাগই কেবল শতভাগ প্রাকৃতিক৷
প্রাথমিকভাবে এটি বাণিজ্যিকভাবে বাজারজাত করার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বাধা হলো, এই ব্যাগ উৎপাদনে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির নকশা ও বাণিজ্যিক উৎপাদনের খরচ৷ বাংলাদেশ সরকার এতে বিদেশি বিনিয়োগ আশা করছেন বলে জানান মুবারক৷
সোনালি আঁশের সাম্রাজ্য
একসময় ছিল যখন পাট মানেই শুধু দড়ি আর বস্তা৷ কিন্তু সে চিত্র পালটে গেছে অনেক আগেই৷ জুতা, শাড়ি ছাড়াও নানা ধরনের পোশাক, এমনকি তৈরি হচ্ছে পাটের চা-ও৷
ছবি: DW/M. M. Rahman
শাড়ি
আহসান হাবীবের ‘ইচ্ছা’ কবিতার কথা মনে আছে? ওই যে, মনা নামের খোকা মাছ ধরতে যায়৷ ‘বোনকে দেবো পাটের শাড়ি, মাকে দেবো রঙীন হাড়ি’, মনে পড়ছে? বাংলায় এই পাটের শাড়ির চল অনেক আগে থেকেই৷ কিন্তু যুগের সাথে পছন্দ ও ফ্যাশনও পরিবর্তন হয়েছে৷ এখন তাই পাটের শাড়িতেও আসছে নানা বৈচিত্র্য৷
ছবি: DW/M. M. Rahman
ফ্যান্সি ড্রেস
পাটকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ছড়িয়ে দিতে চায় বাংলাদেশ৷ তাই শুধু শাড়িতে পড়ে থাকলে কি চলে? পাশ্চাত্য ঢঙেও এবার পাওয়া যাচ্ছে পাটের উপস্থিতি৷ দেখে বোঝারই উপায় নেই, সুন্দর এই পোশাকটি শুধুমাত্র পাট দিয়ে তৈরি৷
ছবি: DW/M. M. Rahman
কল্পনারও বেশি
পাটের তৈরি নাইট গাউন! ব্লেজার! ছবি না দেখলে হয়তো বিশ্বাস করতেই কষ্ট হতো৷ কিন্তু কল্পনা নয়, সত্যি৷ পাট দিয়ে এখন সব ধরনের পোশাকই তৈরি করছেন কারিগররা৷ ঠান্ডা-গরম, সব আবহাওয়াতেই সমান উপযোগী এসব পোশাক৷
ছবি: DW/M. M. Rahman
জুতা
শুনলে মনে হতেই পারে, পাটের তৈরি জুতা আর কতটাই বা টেকসই হবে! কিন্তু জুতার কারিগররা বলছেন, অন্য সব কাপড়ের জুতার মতোই সমান টেকসই হবে বাংলাদেশে তৈরি এই পাটের জুতা৷
ছবি: DW/M. M. Rahman
গয়না
পাটের শাড়ি বা জামা তো পরবেন, সাথে না হয় পাটের জুতাও পরলেন৷ কিন্তু পাটের গয়নায় যদি আপনাকে না সাজায়, তাহলে কি সাজগোজ পূর্ণতা পায়?
ছবি: DW/M. M. Rahman
হ্যান্ডব্যাগ
সাজগোজ শেষ হলে সঙ্গের জরুরি জিনিসপত্র পাটের দারুণ সব ডিজাইনের ব্যাগে ঢুকিয়ে ফেলুন৷ তারপর সেটি হাতে নিয়ে রওয়ানা হয়ে যান বাইরে ঘুরতে৷ নানা রং ও ডিজাইনের এসব ব্যাগ কেড়ে নেবে যে কারো চোখ৷
ছবি: DW/M. M. Rahman
ব্যাকপ্যাক
ছেলেদেরও মন খারাপ করার কিছু নেই৷ পাট দিয়ে এখন মজবুত ব্যাকপ্যাকও তৈরি করছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান৷ এসব ব্যাকপ্যাক টেকসই এবং কয়েক কেজি পর্যন্ত ওজন নিতে সক্ষম৷
ছবি: DW/M. M. Rahman
পুতুল
শুধু বড়রাই বা কেন পাবে পাটের সোনালি দিনের এমন সুবিধা৷ এখন তাই শিশুদের জন্য তৈরি হচ্ছে পাটের খেলনা৷ পাটের তৈরি রূপসি পুতুল যে-কোনো বিচারে হার মানায় পাশ্চাত্যের জনপ্রিয় বার্বি ডলকে৷
ছবি: DW/M. M. Rahman
খেলনা পশু
এখন অনেকেই নিজের সন্তানকে কিনে দেন বিদেশে তৈরি টেডি বিয়ার৷ নানা ধরনের পশু-পাখির আদলে তৈরি খেলনায় শিশুদের প্রকৃতির সাথে পরিচয়ও বাড়ে৷ সে কাজে এগিয়ে এসেছে পাটও৷ পাটের জেব্রা, জিরাফ, উট, সবকিছই তৈরি হচ্ছে বাংলাদেশে৷
ছবি: DW/M. M. Rahman
টব
হ্যাঁ, পাট এখন এতটাই টেকসই যে আপনি চাইলে পাটের টবে লাগাতে পারেন গাছের চারাও৷ তাতে পরিবেশের সাথে যেমন তৈরি হয় সামঞ্জস্য, বারান্দাতে পাটের উপস্থিতি ছড়াবে স্নিগ্ধতা৷
ছবি: DW/M. M. Rahman
সাজিয়ে ফেলুন ঘর
সবই যখন হলো, ঘর সাজানোর জিনিসপত্রই বা বাদ পড়বে কেন! বিছানার চাদর, বালিশের কভার, কার্পেট, ওয়াল ম্যাট, নানা ছোট শো পিস, সবই এখন মিলছে স্বল্পমূল্যে৷