জার্মানির কেমনিৎস শহরে আবার বিদেশি-বিদ্বেষী বিক্ষোভের পর জার্মানির রাজনৈতিক মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে৷ পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাইকো মাস সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের উদ্দেশ্যে এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হবার ডাক দিয়েছেন৷
বিজ্ঞাপন
জার্মানির পূর্বাঞ্চলের কেমনিৎস শহরে লাগাতার এক সপ্তাহ ধরে অশান্তি চলে আসছে৷ সপ্তাহান্তেও বিদেশি-বিদ্বেষের মারাত্মক বহিঃপ্রকাশ দেখা গেল৷ শনিবার চরম দক্ষিণপন্থি এএফডি দল ও ইসলাম-বিদ্বেষী পেগিডা সংগঠনের ডাকে প্রায় ৮,০০০ মানুষ শহরে বিক্ষোভ দেখিয়েছে৷ তাদের বিরোধিতা করতে প্রায় ৩,০০০ মানুষ ছোট ছোট দলে পালটা বিক্ষোভ করে৷ রবিবার কেমনিৎস শহরে বিদেশি বিদ্বেষের বিরুদ্ধে ছোট আকারের একটি মিছিল হয়েছে৷
শনিবার চরম দক্ষিণপন্থিদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে সামাজিক গণতন্ত্রী এসপিডি ও সবুজ দলের বেশ কয়েকজন রাজনীতিকও অংশ নেন৷ এসপিডি দলের সংসদ সদস্য স্যোরেন বার্টল ক্ষুব্ধ হয়ে এক টুইট বার্তায় জানান যে, নাৎসিরা তাঁর নেতৃত্বে এক গোষ্ঠীর উপর হামলা চালিয়েছে৷ বাসের দিকে যাবার সময় তারা এসপিডি পতাকাগুলি নষ্ট করে দেয় এবং কয়েকজনের উপর হামলা চালায়৷
গত সপ্তাহে অসহায় ভূমিকার পর পুলিশ এবার যথেষ্ট তৎপরতা দেখিয়েছে৷ অন্যান্য রাজ্য থেকেও পুলিশ এনে কেমনিৎস শহরে মোতায়েন করা হয়েছে৷ তা সত্ত্বেও দুই গোষ্ঠীর মধ্যে বিচ্ছিন্ন সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে৷ সব মিলিয়ে প্রায় ১৮ জন আহত হয়েছেন বলে পুলিশ জানিয়েছে৷ তাঁদের মধ্যে ৩ জন পুলিশ কর্মীও ছিলেন৷ স্থানীয় টেলিভিশন নেটওয়ার্কের কর্মীরাও হামলার শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে৷
শহরে লাগাতার অশান্তির ফলে জার্মানির রাজনৈতিক জগত ও বৃহত্তর সমাজে অস্বস্তি বাড়ছে৷ জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাইকো মাস বিদেশি বিদ্বেষের বিরুদ্ধে কড়া অবস্থান নেবার ডাক দেন৷ জনপ্রিয় ট্যাবলয়েড দৈনিক ‘বিল্ড'-এর সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘‘আমাদের সোফার আরাম ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে মুখ খুলতে হবে৷ গোটা বিশ্বকে দেখাতে হবে যে, গণতান্ত্রকামী হিসেবে আমরাই সংখ্যাগরিষ্ঠ আর বর্ণবাদীরা সংখ্যালঘু৷ নীরব সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষকে উচ্চ কণ্ঠে সোচ্চার হতে হবে৷''
উল্লেখ্য, গত এক সপ্তাহের ঘটনার প্রেক্ষাপটে জার্মানির বিভিন্ন প্রান্তে বিদেশি-বিদ্বেষের বিরুদ্ধে অনেকেই সরব হচ্ছেন৷
জার্মানির চরম দক্ষিণপন্থি এএফডি দলের কার্যকলাপ নিয়ে রাজনৈতিক মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে৷ বিশেষ করে কোনো রাখঢাক না করে তারা যেভাবে নব্য নাৎসিদের সহযোগিতা করছে, তার ভিত্তিতে এই দলের সাংবিধানিক বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে৷ জার্মানির অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা সংস্থাকে এএফডি দলের উপর নজরদারি করতে হবে, এমন দাবিও তুলছেন অনেকে৷ তবে সংসদের প্রধান বিরোধী দল হিসেবে এএফডি-কে ‘শহিদ' না করে তোলার বিষয়েও সতর্ক করে দিচ্ছেন অনেক নেতা৷
এসবি/এসিবি (ডিপিএ, এএফপি)
জার্মানির কেমনিৎসে ডানপন্থিদের বিক্ষোভ ও প্রতিক্রিয়া
এক জার্মান-কিউবান নাগরিকের হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে জার্মানির কেমনিৎস শহরে বিদেশিদের উপর হামলা হয়েছে৷ জার্মান প্রেসিডেন্ট ও চ্যান্সেলরসহ অনেক নেতা হামলার নিন্দা জানিয়েছেন৷
ছবি: Getty Images/O. Andersen
জার্মান-কিউবানের মৃত্যু
রবিবার ভোরে জার্মানির কেমনিৎস শহরে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে ডানিয়েল এইচ. নামে ৩৫ বছর বয়সি এক জার্মান-কিউবান নাগরিক ছুরিকাঘাতে প্রাণ হারান৷ পুলিশ বলছে, বিভিন্ন দেশের প্রায় ১০ জন মানুষ এই বিবাদে জড়িত ছিলেন৷ হত্যাকাণ্ডের অভিযোগে ২২ বছর বয়সি এক ইরাকি ও ২৩ বছর বয়সি এক সিরীয় নাগরিককে আটক করা হয়েছে৷ ‘যুক্তিসঙ্গত কোনো কারণ ছাড়াই’ তারা ডানিয়েলকে কয়েকবার ছুরিকাঘাত করেন বলে অভিযোগ৷
ছবি: DW/B. Knight
বিক্ষোভ ও বিদেশিদের উপর হামলা
ডানিয়েল এইচ. স্থানীয় কয়েকটি রাজনৈতিক গোষ্ঠীর সঙ্গে জড়িত ছিলেন৷ ফলে তাঁর মৃত্যুর প্রতিবাদে রবিবার বিকালে প্রায় ৮০০ মানুষ জড়ো হয়েছিলেন৷ এদের মধ্যে চরম ডানপন্থিরাও ছিলেন৷ বিক্ষোভকারীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে বোতল ছোড়েন এবং তাঁরা পুলিশের কাজে সহযোগিতা করেননি বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে৷ পরিস্থিতি সামাল দিতে অতিরিক্ত পুলিশ ডেকে আনা হয়৷ এই সময় বিক্ষোভকারীরা পথেঘাটে বিদেশিদের উপর নির্বিচারে হামলাও চালায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Woitas
সোমবারও বিক্ষোভ এবং তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ
সোমবারও কেমনিৎস শহর উত্তপ্ত ছিল৷ সন্ধ্যার সময় প্রায় ২,০০০ চরম দক্ষিণপন্থি বিক্ষোভে নামেন৷ আর তাঁদের বিক্ষোভের প্রতিবাদে মাঠে নামেন প্রায় ১,০০০ মানুষ (ছবিতে তাঁদের একাংশকে দেখা যাচ্ছে), যাদের মধ্যে বামপন্থিরাও ছিলেন৷ চরম দক্ষিণপন্থি ও বামপন্থিদের মধ্যে সংঘর্ষে কমপক্ষে ৬ জন আহত হন৷ দুই পক্ষ একে অপরের উপর আতসবাজিসহ নানা বস্তু নিক্ষেপ করে৷ ৪ জন চরম দক্ষিণপন্থি বিক্ষোভকারীর উপর হামলার ঘটনাও ঘটে৷
ছবি: Getty Images/AFP/O. Andersen
সরকারের প্রতিক্রিয়া
চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলসহ অনেকে রবি ও সোমবারের ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন৷ ম্যার্কেল বলেন, দেশে আইন-শৃঙ্খলার ভিত্তিতে যে শাসনব্যবস্থা রয়েছে, তার সঙ্গে এমন আচরণ খাপ খায় না৷ প্রেসিডেন্ট ফ্রাংক ভাল্টার স্টাইনমায়ার বলেন, ছুরিকাঘাতের ঘটনার ফায়দা তুলে বিদেশিবিদ্বেষ ও হিংসা ছড়ানো হয়েছে৷ সরকারের এক মুখপাত্র বলেন, জনতা ভিন্ন চেহারার মানুষকে বাছাই করে হামলা চালাবে, এমন আচরণ বরদাস্ত করা হবে না৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Kappeler
তাণ্ডবের পেছনে ‘ভুয়া খবর’
‘ভুয়া খবর ছড়িয়ে কেমনিৎসে দাঙ্গার পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হয়েছিল বলে জানিয়েছে স্যাক্সোনি রাজ্য প্রশাসন৷ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, শুধু স্থানীয় চরম দক্ষিণপন্থিরা নয়, ইন্টারনেট ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভুয়া খবর ছড়িয়ে অনেক রাজ্য থেকে সমমনস্ক মানুষকে কেমনিৎসে আকর্ষণ করা হয়েছে৷ নিহত ডানিয়েল এইচ. নাকি এক নারীর সম্মানরক্ষার জন্য হস্তক্ষেপ করেছিলেন বলে ভুয়া খবর ছড়ানো হয়েছে বলে পুলিশ দাবি করছে৷