ক্রাইমিয়াকে ঘিরে রাশিয়ার সঙ্গে পশ্চিমা বিশ্বের সংঘাত কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়৷ সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাবার পর থেকে পুঞ্জীভূত ক্ষোভের বাঁধ এবার ভেঙে গেছে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন৷
বিজ্ঞাপন
ক্রাইমিয়া উপদ্বীপ ইউক্রেন না রাশিয়ার – এই সংঘাতের ক্ষেত্রে আপাতত রাশিয়ার পাল্লাভারি৷ ক্রাইমিয়ার সংসদের উদ্যোগে গণভোট ও রাশিয়ার ইতিবাচক সাড়ার পর ক্রাইমিয়া কার্যত রাশিয়ার অংশ হয়ে পড়েছে, যদিও এই প্রক্রিয়া আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পায়নি৷
১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যায়৷ তারপর থেকে রুশ ফেডারেশনের প্রতি পশ্চিমা বিশ্বের আচরণ নিয়ে মস্কোর ক্ষোভ বেড়ে চলেছে৷ এর সবচেয়ে বড় কারণ সামরিক জোট ন্যাটোর পূর্বমুখী সম্প্রসারণ৷ শুধু পোল্যান্ড ও রুমেনিয়ার মতো প্রাক্তন সহযোগী দেশ নয়, লাটভিয়া, লিথুয়েনিয়া ও এস্টোনিয়ার মতো সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের তিনটি প্রাক্তন প্রজাতন্ত্রও ন্যাটোর সদস্য হয়েছে৷ ইউরোপীয় ইউনিয়নও বাড়তে বাড়তে রাশিয়ার দোড়গড়ায় হাজির হয়েছে৷ এমনকি সহযোগিতা চুক্তির মাধ্যমে ইউক্রেনকেও কাছে টানার চেষ্টা চালিয়েছে ইইউ৷ তারপরের ঘটনা তো সবারই জানা৷
ক্রাইমিয়ায় সব শান্ত?
সবার মনোযোগ এখন ইউক্রেনের ক্রাইমিয়ার দিকে৷ ক্রাইমিয়ায় যা ঘটেছে তাকে রাশিয়ার আগ্রাসন বলা হলেও রুশ সেনাদের কিন্তু সাদরে গ্রহণ করে নিয়েছে স্থানীয়রা৷ ছবিঘরে দেখুন ক্রাইমিয়ার পরিস্থিতি৷
ছবি: DW/F. Warwick
কোসাকদের আগমন
রাশিয়ার ক্রাসনোডার থেকে এসেছে ২৫০ জনের মতো কুবান কোসাক৷ সামরিক বাহিনীর পোশাক পরেননি তাঁরা৷ সেভাস্টোপোলের রুশপন্থি কর্তৃপক্ষ কোসাকদের শপথ পাঠ করিয়েছে৷ স্বেচ্ছাসেবী কোসাকরা জানিয়েছে, ক্রাইমিয়াবাসীদের রক্ষা করার জন্য তারা স্থানীয় পুলিশের সঙ্গে কাজ করবে৷
কুবান কোসাকরা সেভাস্টোপোলের পুলিশের সঙ্গে টহলে অংশ নিচ্ছে৷ মাথায় উলের টুপি পরে রবি বার থেকে রাস্তায় টহল দিচ্ছে কোসাকরা৷ ২০০৫ সালে এথনিক সাংস্কৃতিক গোষ্ঠী এবং শক্তিশালী সামরিক শক্তি হিসেবে কোসাকদের স্বীকৃতি দেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিন৷
ছবি: DW/F. Warwick
কঠিন সময়ে নিরাপত্তা
রাশিয়া এবং ক্রাইমিয়ার টেলিভিশন চ্যানেলের সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছেন কোসাকদের নেতা কর্নেল সের্গেই সাভোনিন ইউরিয়েভিচ৷ তিনি বলেন, কোসাকরা সেভাস্টোপোলের মানুষদের রক্ষা করার জন্য এসেছে৷
ছবি: DW/F. Warwick
‘স্বায়ত্তশাসন, বিচ্ছিন্নতাবাদ নয়’
ক্রাইমিয়ায় অনেকের হাতেই দেখা যায় ক্রাইমিয়া এবং রাশিয়ার পতাকা৷ এর অর্থ এই নয় যে, ক্রাইমিয়া ইউক্রেন থেকে আলাদা হয়ে গেছে৷ সেভাস্টোপোলের এই তরুণ-তরুণীরা জানালেন, তাঁরা ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধ চাননা, কেননা ইউক্রেনকে তাঁরা ভ্রাতৃপ্রতীম রাষ্ট্র মনে করেন৷ তাঁদের দাবি একটাই – স্বায়ত্তশাসন এবং এথনিক রুশ হিসেবে প্রাপ্য মর্যাদা৷
ছবি: DW/F. Warwick
ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি?
এই প্রবীণ এসেছেন কোসাকদের সমর্থন জানাতে৷ রাশিয়ার প্রতি তাঁর পূর্ণ সমর্থন রয়েছে৷ পরনে রুশ সেনাবাহিনীর মতো কমলা আর কালো রংয়ের পোশাক৷ তিনি নিজেও সোভিয়েত ইউনিয়নের রেড আর্মির সাবেক কর্মকর্তা৷
ছবি: DW/F. Warwick
রাস্তায় তল্লাশি
সিমফারোপোল এবং সেভাস্টোপোলের মাঝের হাইওয়েতে গাড়ি থামিয়ে তল্লাশি চালাচ্ছে রুশপন্থি বেসামরিক বাহিনীর সদস্যরা৷
ছবি: DW/F. Warwick
ব্যবসার জন্য খারাপ সময়?
লিলিয়া ভজনুক একজন স্যুভেনির বিক্রেতা৷ রাবারের তৈরি মুখোশগুলোর মধ্যে পুটিনের চেহারার মুখোশটার এখন দারুণ কাটতি৷ তবু খুব চিন্তায় আছেন লিলিয়া৷ চলমান সংকট ব্যবসার বড় রকমের ক্ষতি করবে বলে আশঙ্কা তাঁর৷
ছবি: DW/F. Warwick
হৃদয়-মন জয় করেছে তাঁরা
সেভাস্টোপোলে গেলেই ব্ল্যাক সি ফ্লিট অঁসম্বল-এর কনসার্ট দেখতে পাবেন৷ নাচ-গানের এই স্থানীয় সংগঠনটি তাদের পরিবেশনা দিয়ে সবার মন জয় করেছে৷ রুশ লোকসংগীতে সাগরের প্রশংসা করে যেসব গান রচনা করা হয়েছে মূলত সেগুলোই পরিবেশন করে ব্ল্যাক সি ফ্লিট অঁসম্বল৷ রাশিয়ার ঐতিহ্যবাহী ইয়াব্লোচকো বা ‘ছোট্ট আপেল’ নাচটা সত্যই মনোমুগ্ধকর৷
ছবি: DW/F. Warwick
চাই শুধু স্বায়ত্তশাসন
সেভাস্টোপোলের অধিকাংশ মানুষই রুশ জাতীয়তাবাদের সমর্থক৷ ইউক্রেনীয়দের তারা অবিশ্বাস করে, মনে করে ইউক্রেনীয়রা চরম ডানপন্থি৷ সেভাস্টোপোলের মানুষ মনে করে রুশ বাহিনীর উপস্থিতি এ অঞ্চলের স্বায়ত্তশাসন এবং নিরাপত্তার রক্ষাকবচ৷
ছবি: DW/F. Warwick
10 ছবি1 | 10
গত সপ্তাহেই রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিন এক ভাষণে শীতল যুদ্ধের পরের ইতিহাস বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পরের বছরগুলিতে পশ্চিমা বিশ্ব রাশিয়ার সঙ্গে প্রতারণা করে এসেছে, রাশিয়ার স্বার্থ উপেক্ষা করেছে৷ কিন্তু সবকিছুর একটা সীমা আছে৷ ইউক্রেনের ক্ষেত্রে তা লঙ্ঘন করা হয়েছে বলে পুটিন অভিযোগ তুলেছেন৷
পশ্চিমা বিশ্বের বিশেষজ্ঞরাও গত দুই দশকে রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্কের রসায়ন বিশ্লেষণ করছেন৷ মস্কোয় প্রাক্তন মার্কিন রাষ্ট্রদূত জ্যাক এফ ম্যাটলক জুনিয়র সংবাদ সংস্থা এপি-কে বলেন, ক্রাইমিয়ার ঘটনাকে বৃহত্তর প্রেক্ষাপটে দেখতে হবে৷ পশ্চিমা বিশ্ব সোভিয়েত ইউনিয়নের ভাঙন ঘটিয়ে শীতল যুদ্ধ জিতে গেছে – এমন একটা ধারণা প্রচলিত থাকলেও তা সম্পূর্ণ ভুল৷ আসল ঘটনা হলো, আলোচনার মাধ্যমে শীতল যুদ্ধের অবসান ঘটেছিল এবং দুই পক্ষেরই সুবিধা হয়েছিল৷ কিন্তু সমস্যা হলো, অ্যামেরিকা রাশিয়াকে পরাজিত পক্ষ হিসেবে গণ্য করে এসেছে৷ বিশেষ করে ন্যাটো বাল্টিক ও বলকান এলাকার অনেক দেশকে সদস্য করে নিয়ে রাশিয়ার উপর বিশাল কূটনৈতিক আঘাত হেনেছে বলে তিনি মনে করেন৷