করোনা সংকটের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের জন্য দ্রুত আর্থিক সহায়তা দিতে শুরু করছে জার্মানি৷ তবে আডিডাসের মতো বহুজাতিক কোম্পানির আচরণে জার্মান সরকার বিরক্তি প্রকাশ করছে৷
বিজ্ঞাপন
করোনা সংকটের ফলে সাধারণ মানুষের আর্থিক অনিশ্চয়তা কাটাতে জার্মানির ফেডারেল ও রাজ্য সরকারগুলি রোববার এক বোঝাপড়ায় এসেছে৷ এর আওতায় প্রায় পাঁচ হাজার কোটি ইউরো অবিলম্বে ভুক্তভোগীদের কাছে পাঠানোর ব্যবস্থা শুরু হবে৷ সোমবার থেকেই রাজ্য সরকারগুলি বিশেষ তহবিল থেকে সেই সব মানুষ ও ছোট প্রতিষ্ঠানের কাছে অর্থ হস্তান্তর করবে, করোনা সংকটের ফলে যাদের আয় কার্যত বন্ধ হয়ে গেছে৷
করোনা সংকটের জের ধরে বিশ্বের অন্যান্য অনেক প্রান্তের মতো জার্মানিতেও জনজীবন প্রায় স্তব্ধ হয়ে গেছে৷ দৈনিক আয়ের উপর নির্ভরশীল মানুষ দুশ্চিন্তায় পড়েছেন৷ সব বড় অনুষ্ঠান বাতিল হয়ে যাওয়ার কারণে শিল্পী, কলাকুশলী ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের আয়ের পথ বন্ধ হয়ে গেছে৷ ছোট আকারের কোম্পানি ও স্বনির্ভর মানুষও দিশাহারা হয়ে পড়েছে৷ খুব কম মানুষ অসুস্থতা বা অনুষ্ঠান বাতিল হওয়ার কারণে ক্ষতিপূরণ পাচ্ছেন৷
যে সব মানুষের পক্ষে ধারদেনা করে অথবা অন্য কোনোভাবে অর্থ সংগ্রহ করা সম্ভব নয়, মূলত তাদের সাহায্য করতে এগিয়ে এসেছে জার্মান সরকার৷ যে সব ছোট আকারের কোম্পানির সর্বোচ্চ পাঁচ জন পর্যন্ত কর্মী রয়েছে, সেগুলি আপাতত তিন মাস পর্যন্ত ৯,০০০ ইউরো সাহায্য পাবে৷ ১০ জন কর্মী থাকলে ১৫,০০০ ইউরো পর্যন্ত সরকারি সহায়তা দেওয়া হবে৷ তবে তার জন্য বর্তমান সংকটের আগে কোম্পানির আর্থিক অবস্থা ভালো ছিল, এম প্রমাণ দিতে হবে৷ জার্মানির অর্থনীতি বিষয়ক মন্ত্রী পেটার আল্টমায়ার বলেন, চাষিরাও এই সহায়তা পাবেন৷
জার্মানির সরকার বড় আকারের কোম্পানিগুলিকে সাহায্য করতে জন্য সহজ শর্তে ঋণ, সরকারি মালিকানার সুযোগ ইত্যাদি পদক্ষেপের ঘোষণা করেছে৷ কিন্তু কিছু কোম্পানির আচরণে সরকার অত্যন্ত বিরক্ত হয়ে পড়ছে৷ আডিডাস ও এইচঅ্যান্ডএম-এর মতো বহুজাতিক কোম্পানি একতরফাভাবে দোকানের ভাড়া দেওয়া বন্ধ করে দেবে বলে জানিয়েছে৷ করোনা সংকটের ফলে বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে দোকান থেকে কোনো আয় হচ্ছে না, এই যুক্তি দেখিয়েছে কোম্পানিগুলি৷ জার্মানির অর্থমন্ত্রী ওলাফ শলৎস এমন বেপরোয়া পদক্ষেপ থেকে বিরত থাকার আবেদন জানিয়েছেন৷ তাঁর মতে, এর ফলে সম্পত্তির মালিকদের ক্ষতি হবে৷ তার বদলে মালিক ও ভাড়াটিয়াদের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে সমাধানসূত্র খোঁজার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি৷ উল্লেখ্য, সরকার সাধারণ মানুষ ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের ভাড়ার সংকটের সমস্যা মেটাতেও সাময়িক সহায়তা করছে৷
আইনমন্ত্রী ক্রিস্টিনে লামব্রেশট এই সুযোগের অপব্যবহারের বিষয়ে সতর্ক করে দিয়েছেন৷ তাঁর মতে, বিশেষ করে যথেষ্ট আর্থিক বলশালী কোম্পানি এমন সংকটের সময়ে ভাড়া দেওয়া বন্ধ রাখলে তা একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয়৷ উল্লেখ্য, আডিডাস ২০১৯ সালে ২০০ কোটি ইউরো মুনাফা করেছিল৷ আত্মপক্ষ সমর্থনে সেই কোম্পানির এক মুখপাত্র সংবাদ সংস্থা ডিপিএ-কে জানিয়েছেন, যে দোকানের মালিকদের জানিয়েই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে৷ তাদের সঙ্গে সমঝোতার মাধ্যমে সমাধানসূত্রেরও আশা প্রকাশ করেছেন তিনি৷
এসবি/কেএম (ডিপিএ, এএফপি)
করোনা ভাইরাসের কারণে স্তব্ধ ইউরোপ
সামাজিক দূরত্ব ও ভ্রমণের উপর নিষেধাজ্ঞার কারণে ইউরোপের বড় শহরগুলির রাজপথ প্রায় খালি৷ করোনা ভাইরাসের প্রসার থামাতে ইউরোপে একের পর এক কড়া পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/T. Camus
প্যারিসে লকডাউন
গত মঙ্গলবার দেশজুড়ে লকডাউন জারি করার পর প্যারিসের ব্যস্ত রাজপথ জনশূন্য হয়ে পড়েছে৷ কেনাকাটা, ডাক্তারের কাছে বা কাজে যাওয়া ছাড়া বাসার বাইরে যাবার নিয়ম নেই৷ বিশ্বজুড়ে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা বেড়ে চলায় প্যারিসের মেয়র অবশ্য আরও কড়া পদক্ষেপের ডাক দিয়েছেন৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/T. Camus
জার্মানির রাজধানীতে জনজীবন স্তব্ধ
চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল রবিবার জার্মানিতে আরও কড়া পদক্ষেপের ঘোষণা করেছেন৷ প্রকাশ্যে দুই জনের বেশি একসঙ্গে চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে সরকার৷ নয় দফার এই পদক্ষেপের আওতায় মানুষের মধ্যে কমপক্ষে দেড় মিটার দূরত্ব বজায় রাখতে হবে৷ রেস্তোরাঁ, সেলুন ইত্যাদি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে৷ করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত এক ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগের কারণে রোববার ম্যার্কেল নিজে কোয়ারেন্টাইনে যেতে বাধ্য হয়েছেন৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/M. Schreiber
বিদেশিরা অনাকাঙ্ক্ষিত, সীমান্ত বন্ধ
দেশের মধ্যে মানুষের চলাচলের উপর কড়া নিয়ম চালু করার পাশাপাশি জার্মানি দেশে বিদেশিদের প্রবেশ কার্যত বন্ধ করে দিয়েছে৷ সে কারণে দেশের ব্যস্ততম বিমানবন্দর ফ্রাংকফুর্টে কার্যকলাপ অনেক কমে গেছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/M. Probst
বাভেরিয়ার মানুষ গৃহবন্দি
করোনা ভাইরাসের মোকাবিলা করতে জার্মানির দক্ষিণে বাভেরিয়া রাজ্যে গত সপ্তাহে লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে৷ কমপক্ষে দুই সপ্তাহের জন্য নির্ধারিত পদক্ষেপের আওতায় মানুষের জমায়েত নিষিদ্ধ৷ রেস্তোরাঁসহ অনেক দোকানপাট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে৷
ছবি: Imago Images/Zuma/S. Babbar
ব্রিটেনে সামাজিক দূরত্বের আবেদন
করোনা ভাইরাসের হুমকি রুখতে ব্রিটেন সব বার, পাব ও রেস্তোরাঁ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে৷ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন সব নাগরিকের উদ্দেশ্যে অতি প্রয়োজনীয় নয়, এমন ভ্রমণ বন্ধ রাখার আবেদন করেছেন৷ সেইসঙ্গে অনির্দিষ্ট কালের জন্য মানুষে-মানুষে সরাসরি যোগাযোগ এড়িয়ে চলতে বলেছেন জনসন৷
ছবি: AFP/T. Akmen
মহামারির কেন্দ্রস্থল মিলান
সাম্প্রতিক কালে বিশ্বজুড়ে করোনা ভাইরাসের কেন্দ্রস্থল চীন থেকে ইটালিতে স্থানান্তরিত হয়েছে৷ সে দেশে ভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃতদের সংখ্যা মারাত্মক হারে বেড়ে গেছে৷ ১০ই মার্চ ইটালিতে লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/L. Bruno
ভ্যাটিকানের দরজা বন্ধ
ইটালির উত্তরে লম্বার্ডি অঞ্চলে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা অস্বাভাবিক হারে বাড়ার পর দেশের বাকি অংশেও জনজীবন স্তব্ধ হয়ে গেছে৷ রোম ও ভ্যাটিকান সিটিতে মানুষের সমাবেশের উপর কড়া নিষেধাজ্ঞা চাপানো হয়েছে৷ সেন্ট পিটার্স চত্বরের মতো পর্যটকদের কাছে জনপ্রিয় এলাকা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে৷
ছবি: Imago Images/Zuma/E. Inetti
স্পেনের অবস্থা গুরুতর
রোববার স্পেনের সরকার দেশে জরুরি অবস্থার মেয়াদ আগামী ১১ই এপ্রিল পর্যন্ত বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে৷ ফলে ১৪ই মার্চ থেকে প্রায় এক মাস পর্যন্ত স্পেনেল জনজীবন স্তব্ধ থাকবে৷ ইউরোপে ইটালির পর স্পেনেই করোনা ভাইরাস সবচেয়ে মারাত্মক আকার ধারণ করেছে৷ বিশেষ করে বার্সেলোনা ও মাদ্রিদ শহরে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা বেড়ে চলেছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/X. Bonilla
অস্ট্রিয়ায় সংক্রমণের হার কমছে
সপ্তাহান্তে অস্ট্রিয়ায় করোনা ভাইরাসে আক্রান্তদের সংখ্যা প্রায় ১৫ শতাংশ বেড়ে গেছে৷ তবে এর আগে ৪০ শতাংশ সংক্রমণের হারের তুলনায় তা অনেক কম৷ সরকার দেশজুড়ে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে কড়া পদক্ষেপ নেবার ফলে সুফল দেখা যাচ্ছে৷ আগামী তিন সপ্তাহের মধ্যে সংক্রমণের হার আরও কমানোর লক্ষ্যমাত্রা স্থির করেছে কর্তৃপক্ষ৷