করোনার প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে বিভিন্ন ব্যবস্থা নিলেও সীমান্ত বন্ধ করবেন না বলে সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছিলেন চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল৷ কিন্তু এই ঘোষণার কয়েকদিনের মধ্যে অবশেষে জার্মানিও সীমান্ত নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ শুরু করেছে৷
বিজ্ঞাপন
জার্মান সংবাদমাধ্যম বিল্ড জানিয়েছে জার্মান সময় সোমবার সকাল ৮টা থেকে ফ্রান্স, সুইজারল্যান্ড ও অস্ট্রিয়া সীমান্তে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হবে৷ তবে নিয়মিত যাত্রী ও পণ্য পরিবহন চালু থাকবে৷ পর্যটনের জন্য বা জরুরি কোনো প্রয়োজন ছাড়া কাউকে এসব সীমান্ত দিয়ে জার্মানিতে ঢুকতে দেয়া হবে না৷
এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে ফেডারেল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হোর্স্ট সেহোফার, ফেডারেল স্বাস্থ্যমন্ত্রী ইয়েনস স্পাহন, বাভারিয়া রাজ্যের প্রধানমন্ত্রী মার্কুল স্যোডার, বাডেন-ভ্যুর্টেমবের্গের প্রধানমন্ত্রী ভিনফ্রিড ক্রেটশমান, সানল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী টোবিয়াস হান্স এবং রাইনলান্ড-পালাটিনেট রাজ্যের প্রধানমন্ত্রী মালু ড্রেয়ারের সঙ্গে টেলিফোন কনফারেন্সে কথা বলেন চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল৷
কেবল করোনা সংক্রমণ নয়, অন্য দেশ থেকে আসা ব্যক্তিদের কেনাকাটা ঠেকানোও এ সিদ্ধান্তের অন্যতম কারণ বলে জানিয়েছে বিল্ড৷ ভবিষ্যতে আরো কড়াকড়ি এমন কি সীমান্ত পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়ার মতো সিদ্ধান্তও আসতে পারে৷
ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য দেশগুলোর সীমান্তে সাধারণত কোনো কড়াকড়ি থাকে না৷ তবে এরই মধ্যে ইইউ সদস্য বেশ কয়েকটি দেশ নিজেদের সীমান্তে কড়াকড়ি আরোপ করেছে৷ জার্মানিও অবশেষে সে পথেই এগুলো৷
এই সিদ্ধান্তের ফলে এখন প্রতিবেশী তিন দেশের সীমান্তে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করবে পুলিশ ও অন্যান্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থা৷ ধারণা করা হচ্ছে, সীমান্ত পেরোনোর সময় কাগজ পরীক্ষা করে অনেককেই জার্মানিতে প্রবেশ করতে না দিয়ে ফেরত পাঠানো হবে৷
জার্মান সংবাদমাধ্যম স্পিগেল জানিয়েছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ ডয়চে বান বিভিন্ন অঞ্চলের মধ্যে ট্রেন চলাচলেও কড়াকড়ি আরোপ করছে৷ কমিয়ে আনা হচ্ছে ট্রেন চলাচলের হার, চালু হয়েছে বিশেষ শিডিউল৷ সোমবার থেকে বনসহ বিভিন্ন শহরে বাসে টিকেট বিক্রি বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে৷ চালককে নিরাপদ রাখতে বন্ধ থাকবে বাসের সামনের দরজাও৷ কেবল পেছনের দরজা দিয়ে বাসে উঠতে পারবেন যাত্রীরা৷
এরই মধ্যে করোনার প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে বিভিন্ন রাজ্য ও শহর নিজেদের মতো করে ব্যবস্থা নিয়েছে৷ এর মধ্যে রয়েছে স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে দেয়া, সুইমিং পুল, ব্যায়ামাগারসহ নানা গণজমায়েতের স্থান বন্ধ করে দেয়া৷ অনেক প্রতিষ্ঠান কর্মীদের বাসা থেকে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছে৷
এডিকে/এফএস (স্পিগেল, বিল্ড)
জার্মানির জীবনযাত্রায় করোনার প্রভাব
জার্মানিতে করোনার সংক্রমণ হাজার ছাড়িয়েছে৷ যার প্রভাবে দৈনন্দিন জীবনে আনতে হচ্ছে নানা পরিবর্তন৷ দর্শকহীন ফুটবল ম্যাচ বা ফ্লাইট বাতিল, অনুষ্ঠান বা মেলা স্থগিত কিংবা গাড়ি উৎপাদন কমে যাওয়া, সবই হচ্ছে করোনার প্রভাবে৷
ছবি: Imago Images/A. Hettrich
খাদ্য সহায়তা বন্ধ
জার্মানিতে করোনা ভাইরাস শনাক্তের পর সুপারশপ ও খাবারের দোকানগুলোতে লম্বা লাইন ধরে লোকজন নিত্যপণ্য কেনা শুরু করে৷ টিনজাত খাবার এবং টয়লেট পেপারের তাক তো খালিই থাকছে৷ এ অবস্থায় দেশটিতে দরিদ্রদের জন্য খাদ্য সহায়তা প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে৷ অথচ দেশটিতে ১৫ লাখের বেশি মানুষ খাদ্য সহায়তার উপর নির্ভরশীল৷
ছবি: picture-alliance/dpa/G. Matzka
ফাঁকা স্টেডিয়াম
করোনা ভাইরাস বিস্তার রোধের সবচেয়ে কার্যকর উপায় ভিড় এড়িয়ে চলা৷ যে কারণে বিশ্বজুড়ে অনেক আয়োজন বাতিল হয়ে গেছে৷ স্বাস্থ্য ‘সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ‘ বিবেচনা করে খালি স্টেডিয়ামে জার্মান ফুটবল লীগের ম্যাচ আয়োজন করতে ক্লাব ও কর্তৃপক্ষের মধ্যে আলোচনা চলছে৷
ছবি: picture alliance/dpa/O. Berg
একের পর এক অনুষ্ঠান বাতিল
করোনা ভাইরাস শনাক্তের পর জার্মানিতে একের পর এক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও মেলা স্থগিত বা বাতিল করা হচ্ছে৷ যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য লাইপৎশিশ বইমেলা, মুজিকম্যাসে ফ্রাঙ্কফুর্ট৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Woitas
এখনো খোলা স্কুল
ইটালিতে করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পর সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হয়৷ জার্মান সরকার এখনো এই সিদ্ধান্ত নেয়নি৷ যদিও দেশটির অন্তত ১০০টি স্কুল ও ডে-কেয়ার সেন্টার করোনার কারণে বন্ধ রাখা হয়েছে৷ বাডেন-ভ্যুটের্নবের্গ রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী স্কুল ফাইনাল পরীক্ষা স্থগিতের কথা ভাবছেন৷
ছবি: picture-alliance/SvenSimon/F. Hoermann
এশীয়রা বিদ্বেষের শিকার হচ্ছেন
চীনের উহান নগরীতে প্রথম করোনা ভাইরাস শনাক্ত হয়৷ যা সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে৷ করোনা আতঙ্কে পশ্চিমা দেশগুলোতে লোকজন শুধু চীন নয় বরং এশীয় রেঁস্তোরা ও দোকান এড়িয়ে চলছেন৷ এশীয় চেহারার কারণে বর্ণবিদ্বেষের শিকার হওয়ার খবরও পাওয়া যাচ্ছে৷ লাইপৎশিশে বুন্দেস লিগার ম্যাচ দেখতে যাওয়া একদল জাপানিকে স্টেডিয়াম থেকে বের করে দেওয়া হয়৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Solaro
এয়ারলাইন ব্যবসায় ভাটা
করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে বিশ্বজুড়ে পর্যটন ব্যবসায় ধস নেমেছে; বিশেষ করে এয়ারলাইনগুলোর৷ জার্মানির এয়ারলাইন লুফথান্সার ব্যবসা অর্ধেকে নেমে এসেছে৷ করোনা প্রাদুর্ভাবের পর তাদের প্রায় ১৫০ উড়োজাহাজ বসে আছে, বাতিল হয়েছে সাত হাজার ১০০র বেশি ফ্লাইট৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Kusch
গাড়ি উৎপাদনে ধস
ডিসেম্বরের শেষ দিকে উহানে করোনা ভাইরাস প্রাদুর্ভাবের পর জানুয়ারি থেকে চীনে গাড়ি তৈরির কারখানা বন্ধ আছে৷ জার্মানির গাড়ি উৎপাদন শিল্পেও করোনার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Images/J. Meyer
পর্যটক নেই
জার্মানির পর্যটন খাতে করোনার প্রভাব ভয়াবহ হবে বলে সতর্ক করেছে দেশটির হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট অ্যাসোসিয়েশন৷ সম্প্রতি এক জরিপে দেখা গেছে, করোনা ভাইরাস প্রাদুর্ভাবের পর ৭৬ শতাংশের বেশি হোটেল ও রেঁস্তোরা তাদের বুকিং বাতিল হওয়ার কথা জানিয়েছে৷ আয়ও একইভাবে হ্রাস পেয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Wurtscheid
সীমান্তে পরীক্ষা
ইটালি ও ফ্রান্সের পর ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে জার্মানিতেই সবচেয়ে বেশি করোনা ভাইরাস সংক্রমণ হয়েছে৷ সোমবার পর্যন্ত সেখানে ১১৩৯ জন সংক্রমিত হয়েছেন৷ যার প্রেক্ষিতে জার্মান সীমান্ত দিয়ে আসা গাড়ির যাত্রীদের তাপমাত্রা পরীক্ষা করা শুরু করেছে পোল্যান্ড ও চেকপ্রজাতন্ত্র৷