ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে সোমবার ব্রাসেলসে ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে ব্রিটেনের বিচ্ছেদ নিয়ে চূড়ান্ত ঐকমত্য অর্জন করতে পারলেন না৷ আগামী কয়েক দিনে অগ্রগতির আশা করছে দুই পক্ষ৷
ছবি: picture alliance/AP Photo/V. Mayo
বিজ্ঞাপন
সোমবার ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে ঐকমত্যে আসতে পারলেন না৷ বিচ্ছেদ সংক্রান্ত বিষয়গুলির এখনো নিষ্পত্তি হলো না৷ বিশেষ করে ব্রিটেনের উত্তর আয়ারল্যান্ড প্রদেশের সঙ্গে আইরিশ প্রজাতন্ত্রের সীমানা নিয়ে জটিলতা এখনো কাটছে না৷ আয়ারল্যান্ড ও ব্রিটেন এ বিষয়ে ঐকমত্যে আসতে পারলেও ব্রিটেনের জোট সরকারের এক শরিক দল সেই বোঝাপড়া মানতে চাইছে না৷ অন্যদিকে ব্রেক্সিটের পরেও সেই সীমান্তে কোনো পরিবর্তন না আনার প্রস্তাবের দৃষ্টান্ত অনুকরণ করতে চাইছে স্কটল্যান্ড ও লন্ডন শহর৷ ফলে ব্রিটেনের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি উত্তাল হয়ে উঠেছে৷
আসলে ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে ব্রিটেনের বিদায়ের সিদ্ধান্ত যতটা সহজ ছিল, বিচ্ছেদ ও ভবিষ্যৎ সম্পর্ক স্থির করার কাজ তটতাই কঠিন হয়ে উঠেছে৷ ইইউ শুরু থেকে যে যাত্রাপথ স্থির করে দিয়েছিল, তা থেকে বার বার বিচ্যুত হয়েছে ব্রিটেন৷ ইইউ-র বাকি সদস্যদের অবস্থান স্পষ্ট – আগে বিচ্ছেদের বিষয়গুলির নিষ্পত্তি করতে হবে, তারপর ভবিষ্যৎ সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা হবে৷ এর মধ্যে প্রধান বিষয় হলো ব্রিটেনের বকেয়া চাঁদা, ব্রিটেনে ইইউ নাগরিক ও ইউরোপে ব্রিটিশ নাগরিকদের অধিকার এবং আয়ারল্যান্ড ও ব্রিটেনের স্থলসীমানার ভবিষ্যৎ৷
কিন্তু ব্রিটেন এতকাল সেই বাস্তব অস্বীকার করে সিদ্ধান্ত নিতে বিলম্ব করছিল৷ সোমবার ব্রাসেলসে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে ও ইইউ কমিশন প্রধান জঁ ক্লোদ ইয়ুংকার-সহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তাদের সঙ্গে মিলিত হন৷ আগে থেকেই স্থির ছিল, যে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বিচ্ছেদ সংক্রান্ত বিষয়ে স্পষ্ট জবাব দিলে তবেই ইইউ-র সঙ্গে ভবিষ্যৎ সম্পর্ক নিয়ে আলোচনার সিদ্ধান্ত নেবেন ইইউ নেতারা৷ আগামী ১৫ই ডিসেম্বর তাঁদের শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে৷ তার আগেই ঐকমত্য অর্জন করতে হবে৷ তা না হলে কোনো চুক্তি ছাড়াই ২০১৯ সালে ব্রেক্সিট কার্যকর হবার আশঙ্কা রয়েছে৷
টেরেসা মে পড়েছেন উভয় সংকটে৷ তাঁর রাজনৈতিক দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে দলের মধ্যে কট্টর ব্রেক্সিটপন্থিরা ইইউ-কে ছাড় দেবার বিষয়ে তর্জনগর্জনকরছেন৷ অন্যদিকে ইইউ-র ধৈর্যের সীমানাও শেষ৷ অথচ ভবিষ্যৎ সম্পর্ক নিয়ে এখনই আলোচনা শুরু না করলে ২০১৯ সালের মধ্যে তা শেষ হবে না৷ ব্রিটিশ শিল্প ও বাণিজ্যজগত সেই অনিশ্চয়তার মুখে আরও ক্ষতিগ্রস্ত হবে৷
সোমবার চূড়ান্ত ঐকমত্য অর্জন করা সম্ভব না হলেও আগামী দিনগুলিতে সেই লক্ষ্য পূরণ করতে কাজ করছে দুই পক্ষ৷ ইইউ শীর্ষ সম্মেলনের আগেই তিনটি বিষয়ে চূড়ান্ত নিষ্পত্তি অর্জন করতে চায় দুই পক্ষ৷
মীমাংসা ছাড়াই ব্রেক্সিট হতে চলেছে?
২০১৯ সালের মার্চ মাসে ব্রিটেন ইউরোপীয় ইউনিয়ন ত্যাগ করছে৷ অথচ তার আগে দুই পক্ষের মধ্যে বোঝাপড়ার আশা কমেই চলেছে৷ শেষ পর্যন্ত কোনো রফা ছাড়াই এই বিচ্ছেদ সম্পূর্ণ হবে – এমন আশঙ্কা আরও দানা বাঁধছে৷
ছবি: Getty Images/L Neal
আগে বিচ্ছেদ, তারপর ভবিষ্যৎ সম্পর্ক
ইউরোপীয় ইউনিয়ন শুরু থেকেই স্পষ্ট করে দিয়েছে, যে সবার আগে ‘ব্রেক্সিট’ বা বিচ্ছেদ সংক্রান্ত বিষয়গুলির ক্ষেত্রে দুই পক্ষকে বোঝাপড়ায় আসতে হবে৷ যথেষ্ট অগ্রগতি হলে তবেই ভবিষ্যৎ সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা হবে৷ কিন্তু ব্রিটেন দু’টি বিষয় নিয়ে একসঙ্গে দর কষাকষি করতে আগ্রহী, যা ইইউ-র কাছে একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয়৷
ছবি: Reuters/File Photo/Y. Herman
একই আলোচনা, ভিন্ন মূল্যায়ন
২০১৭ সালের আগস্ট মাসে তৃতীয় দফার আলোচনার শেষে ইইউ-র শীর্ষ প্রতিনিধি মিশেল বার্নিয়ে বলেন, বিচ্ছেদ সংক্রান্ত আলোচনায় যথেষ্ট অগ্রগতি ঘটেনি৷ ফলে আপাতত দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা শুরু হচ্ছে না৷ অন্যদিকে ব্রেক্সিট মন্ত্রী ডেভিড ডেভিস কিছু ক্ষেত্রে স্পষ্ট অগ্রগতির উল্লেখ করেন৷
তৃতীয় দফার আলোচনার আগে ভবিষ্যৎ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের বিষয়ে ব্রিটেন যে অবস্থান প্রকাশ করেছে, তাকে ‘অসম্ভব’ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন ইইউ-র মিশেল বার্নিয়ে৷ বিচ্ছেদের পরেও একক বাজারে প্রভাব, ইউরোপীয় আদালতের এক্তিয়ার নিয়ে ‘অবাস্তব’ প্রস্তাব নিয়ে বিরক্ত ইইউ প্রতিনিধিরা৷
ছবি: Reuters/F. Lenoir
আয়ারল্যান্ডে ইইউ-র বহির্সীমানা
ব্রেক্সিটের পর আইরিশ প্রজাতন্ত্র ও ব্রিটেনের উত্তর আয়ারল্যান্ডের সীমান্ত ইইউ-র বহির্সীমানা হয়ে উঠবে৷ তার ফলে দুই অংশের মধ্যে নিবিড় অর্থনৈতিক সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, শান্তি প্রক্রিয়ার জন্য যা বড় এক হুমকি৷ দুই পক্ষই একটা সমাধানসূত্র চাইলেও এখনো এই প্রশ্নে যথেষ্ট অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে না৷
ছবি: Getty Images/AFP/P. Faith
নাগরিকদের অধিকার
ব্রিটেনে বসবাসরত ইইউ নাগরিকরা ব্রেক্সিটের কারণে চরম অনিশ্চয়তায় ভুগছেন৷ ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ তাঁদের সুবিচারের আশ্বাস দিলেও তাঁদের অধিকারের প্রশ্নে চূড়ান্ত নিশ্চয়তা দেখা যাচ্ছে না৷ ইইউ দেশগুলিতে বসবাসরত ব্রিটিশ নাগরিকদের অধিকার নিয়েও অনিশ্চয়তা রয়ে গেছে৷ জটিল এই প্রশ্নের স্থায়ী সমাধানসূত্র চাইছে ইইউ৷
ছবি: picture-alliance/dpa/B. Pedersen
‘ডিভাইড অ্যান্ড রুল’?
ব্রাসেলসে আলোচনায় অগ্রগতির অভাবে ব্রিটেন সরাসরি ফ্রান্স ও জার্মানির মতো ইইউ সদস্য দেশের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তির সম্ভাবনা নিয়ে ব্রিটেনের ‘দ্য ডেলি টেলিগ্রাফ সংবাদপত্রের ইঙ্গিত পুরোপুরি উড়িয়ে দিয়েছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁ৷ তাঁর স্পষ্ট অবস্থান: ইইউ-র প্রধান মধ্যস্থতাকারী মিশেল বার্নিয়ে ব্রেক্সিট সংক্রান্ত আলোচনার একমাত্র সহযোগী৷