শনিবার সোমালিয়ার রাজধানী মোগাদিসুর উত্তরপশ্চিমে আফগোয়ে এলাকায় গাড়ি বোমা হামলা করা হয়৷ সেখানে তুর্কি প্রকৌশলীরা উপস্থিত ছিলেন৷ প্রতিবেদনটি লেখা পর্যন্ত হতাহতের সংখ্যা জানা যায়নি৷
ছবি: DHA
বিজ্ঞাপন
বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে স্থানীয় পুলিশ জানিয়েছে যে এটি একটি আত্মঘাতী হামলা ছিল৷ ‘‘তুর্কি প্রকৌশলীরা কয়েকজন সোমালি পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে বসে দুপুরের খাবার খাচ্ছিলেন৷ এমন সময় প্রচণ্ড গতিতে গাড়িটি সেখানে হামলা চালায়,'' আফগোয়ে থেকে রয়টার্সকে জানিয়েছেন পুলিশ কর্মকর্তা নূর আলি৷
হামলার দায় এখনো কেউ স্বীকার না করলেও, স্থানীয়দের ধারণা জিহাদি সংগঠন আল শাবাব এই হামলা চালিয়েছে৷ তারা রয়টার্সকে জানিয়েছেন, শুক্রবার মোগাদিসু থেকে মাত্র ৩০ কিলোমিটার দূরে আফগোয়েতে জঙ্গি গোষ্ঠী আল কায়েদা ‘সমর্থিত' সংগঠনটির আরো দু'টি হামলা ঠেকিয়ে দিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী৷
সংগঠনটি এর আগেও পূর্ব আফ্রিকার দেশ সোমালিয়ায় হামলা চালিয়েছে এবং দায়ও স্বীকার করেছে৷ তারা জাতিসংঘ সমর্থিত সোমালিয়ার বর্তমান সরকারকে উৎখাত করতে চায়৷
ঘটনা সম্পর্কে স্থানীয় দোকানি ফারাহ আবদুল্লাহি রয়টার্সকে বলেন, ‘‘আমরা বোমা বিস্ফোরণের আওয়াজ পাই এবং পুরো এলাকা ধোঁয়ায় ভরে যায়৷ হামলার আগে সোমালি পুলিশের নিরাপত্তায় তুরস্কের বেশ কয়েকজন প্রকৌশলী এখানে আসেন৷'' তিনি যোগ করেন, ‘‘আমরা কয়েকজনের দেহ সেখান থেকে সরিয়ে নিতে দেখেছি৷ তারা নিহত না আহত বোঝা যাচ্ছিল না৷''
২০১১ সালের দুর্ভিক্ষের পর থেকে সোমালিয়ায় সবচেয়ে বেশি সাহায্য দিয়ে আসছে তুরস্ক৷ আফ্রিকায় সৌদি আরব ও আরব আমিরাতের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে প্রভাব রাখতে চায় আঙ্কারা৷ তুর্কি প্রকৌশলীরা সোমালিয়ায় সড়ক তৈরি করছিলেন৷
এদিকে, তুর্কি সংবাদ সংস্থা আনাদোলু জানিয়েছে, সোমালিয়ার রাজধানীর পাশে শাবেলে অঞ্চলে একটি মিলিটারি ঘাঁটিতে হামলা চালায় আল শাবাব৷ সোমালি জেনারেল মোহামেদ আহমেদ তারেদিশের বরাত দিয়ে সংবাদ সংস্থাটি বলছে, হামলা ও পালটা হামলায় চার সেনা ও ৪০ জন শাবাব সদস্য নিহত হয়েছেন৷
সোমালি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় পরে এ নিয়ে একটি বিবৃতিও প্রকাশ করে৷
বিশ্বের সবচেয়ে ভয়াবহ যত জঙ্গি হামলা
এশিয়া, অ্যামেরিকা কিংবা আফ্রিকা, বিয়েবাড়ি, অফিস বা হাসপাতাল, কোথাও নিরাপদ নয় সাধারণ মানুষ৷ জঙ্গি হামলায় প্রতি বছরই বাড়ছে মৃত্যু৷ ইতিহাসের কিছু ভয়াবহ জঙ্গি হামলার ঘটনা পড়ুন এই ছবিঘরে৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Abdiwahab
ইস্টার সানডে হামলা (শ্রীলঙ্কা, ২০১৯)
২০১৯ সালের ২১ এপ্রিল ইস্টার সানডে পালন করছিলেন খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীরা৷ এমন দিনেই কলম্বো, নেগোম্বো ও বাট্টিকালোয়া শহরের মোট আটটি গির্জা ও হোটেলে একই সময়ে আত্মঘাতী বোমা হামলা চালানো হয়৷ সরকারের দেয়া সবশেষ তথ্য অনুসারে এ হামলায় নিহত হন ২৫৩ জন৷ ২০০৯ সালে তামিল বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সঙ্গে গৃহযুদ্ধ শেষ হবার পর এটিকেই দেশটির সবচেয়ে বড় সন্ত্রাসী হামলা বলে মনে করা হয়৷ হামলার দায় স্বীকার করেছে আইএস৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
বৈরুত ব্যারাক হামলা (লেবানন, ১৯৮৩)
১৯৮৩ সালের ২৩ অক্টোবর লেবাননের রাজধানী বৈরুতে আত্মঘাতী ট্রাক হামলা চালানো হয়৷ তখন লেবাননে গৃহযুদ্ধ চলছিল৷ ভবনগুলোতে মার্কিন ও ফরাসি শান্তিরক্ষী বাহিনীর সদস্যরা অবস্থান করছিলেন৷ দুই বিস্ফোরক বোঝাই ট্রাক ভবনে ঢুকে গেলে নিহত হন ৩০৭ জন৷ এদের মধ্যে দুই হামলাকারী ছাড়াও ২৪১ জন মার্কিন সেনা, ৫৮ ফরাসি সেনা ও ছয় জন বেসামরিক নাগরিক ছিলেন৷ ‘ইসলামিক জিহাদ’ নামের একটি গ্রুপ হামলার দায় স্বীকার করে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
সিনাই মসজিদ হামলা (মিশর, ২০১৭)
মিশরের ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ হামলা বলে মনে করা হয় এটিকে৷ ২০১৭ সালের ২৪ নভেম্বর জুম্মার নামাজ চলাকালীন ৪০ বন্দুকধারী আল-রাওদা মসজিদে হামলা চালায়৷ আল-রাওদা দেশটির অন্যতম সুফি মসজিদ৷ হামলায় নিহত হন ৩১১ জন৷ কোনো কোনো সংবাদমাধ্যম হামলার সঙ্গে ইসলামিক স্টেটের সম্পৃক্ততা খুঁজলেও আনুষ্ঠানিকভাবে দায় স্বীকার করেনি কেউ৷
ছবি: Getty Images/AFP
এয়ার ইন্ডিয়া ফ্লাইট ১৮২ (ক্যানাডা, ১৯৮৫)
১৯৮৫ সালের ২৩ জুন ভূপৃষ্ঠ থেকে ৩১ হাজার ফুট উঁচুতে আয়ারল্যান্ডের আকাশসীমায় বিধ্বস্ত হয় এয়ার ইন্ডিয়ার টরন্টো-দিল্লি ফ্লাইট৷ বিমানটিতে আগে থেকে বোমা রাখা ছিল, যা নিরাপত্তাকর্মীদের নজর এড়িয়ে যায়৷ ক্যানাডা পুলিশের দাবি, ভারতের অমৃতসরে শিখদের পবিত্র উপাসনালয় গোল্ডেন টেম্পলে সেনা অভিযানের প্রতিবাদে শিখ জঙ্গিদের সংগঠন বাবর খালসা এই বোমা হামলা করে৷ প্লেনে থাকা ৩২৯ জন যাত্রী, পাইলট, ক্রুর সবাই নিহত হন৷
ছবি: Reuters
গামবোরু এনগালা হামলা (নাইজেরিয়া, ২০১৪)
নাইজেরিয়ার পাশাপাশি দুই শহর গামবোরু ও এনগালাতে ২০১৪ সালের ৫ মে রাতে হামলা শুরু করে বোকো হারাম জঙ্গিরা৷ একে-৪৭ ও আরপিজি দিয়ে এ হামলা চালানো হয় টানা ১২ ঘণ্টা ধরে৷ হামলায় নিহত হন শহর দুটির ৩৩৬ জন বাসিন্দা৷ চিবোক শহর থেকে অপহৃত মেয়েদের খুঁজে পাওয়া গেছে– এমন গুজব ছড়িয়ে হামলার ঠিক আগে আগেই শহর দুটি থেকে মোতায়েন সেনাসদস্যদের অন্যদিকে সরিয়ে দিতে সফল হয় জঙ্গিরা৷ এরপরই ঘটে হামলার ঘটনা৷
ছবি: AMINU ABUBAKAR/AFP/Getty Images
কারাডা হামলা (ইরাক, ২০১৬)
২০১৬ সালের ৩ জুলাই স্থানীয় সময় মধ্যরাতে ইরাকের রাজধানী বাগদাদে দুটি হামলা চালানো হয়৷ শিয়া অধ্যুষিত কারাডায় রমজান মাসে ব্যস্ত এক বাজারে আত্মঘাতী ট্রাকহামলা চালানো হয়৷ একই সময়ে শা’ব এলাকায় রাস্তার পাশে রাখা আরো একটি বোমাও বিস্ফোরিত হয়৷ দুই হামলায় নিহত হন ৩৪২ জন৷ হামলার দায় স্বীকার করে আইএস৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Al-Rubaye
ত্রুয়িলো হত্যাকাণ্ড (কলম্বিয়া, ১৯৮৮-১৯৯৪)
কলম্বিয়ার ত্রুয়িলো শহরে ছয় বছর ধরে চলেছে এই হত্যাকাণ্ড৷ এজন্য দায়ী করা হয় অঞ্চলটিতে সক্রিয় বিভিন্ন আধাসামরিক বাহিনী ও দুর্ধর্ষ মাদক চোরাচালানকারী পাবলো এসকোবারের অধীনের ড্রাগ কার্টেলকে৷ এই মাদক চোরাচালান সংগঠনগুলোর সদস্যরা সামরিক বাহিনী ও পুলিশেও সক্রিয় ছিলেন৷ ধারণা করা হয়, ছয় বছরে অন্তত ৪০০ মানুষকে হত্যা করেছে মাদক ব্যবসায়ীরা৷ হত্যার পর মরদেহ ফেলে দেয়া হতো পাশ দিয়ে বয়ে চলা কাউকা নদীতে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/G. Ismar
মোগাদিসু হামলা (সোমালিয়া, ২০১৭)
সোমালিয়া তো বটেই, পুরো আফ্রিকা মহাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় হামলার ঘটনা মনে করা হয় এটিকে৷ নিরাপত্তাকর্মীরা একটি বোমাভর্তি ট্রাককে মোগাদিসুর ব্যস্ততম সড়কে তল্লাশির জন্য আটকালে চালক এটির বিস্ফোরণ ঘটান৷ হামলায় অন্তত ৫৮৭ জনের মৃত্যু হয়৷ আনুষ্ঠানিকভাবে কেউ দায় স্বীকার না করলেও পুলিশের ধারণা, হামলার জন্য দায়ী জঙ্গি সংগঠন আল শাবাব৷
ছবি: Reuters/F. Omar
পুলিশ কর্মকর্তাদের ওপর হামলা (শ্রীলঙ্কা, ১৯৯০)
১৯৯০ সালের ১১ জুন শ্রীলঙ্কার ইস্টার্ন প্রভিন্সে পুলিশ কর্মকর্তাদের ওপর হামলা চালায় তামিল টাইগাররা৷ কয়েকটি থানায় হামলা চালিয়ে দখল করা হয়৷ নিহতের সংখ্যা অন্তত ৬০০ থেকে ৭৭৪ জন হতে পারে বলে জানায় বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম৷
ছবি: picture-alliance/dpa/epa/str
ইয়াজিদি হত্যাকাণ্ড (ইরাক, ২০০৭)
আগস্টের ১৪ তারিখ ইরাকের মোসুল লগরীর পাশে ইয়াজিদি সম্প্রদায় অধ্যুষিত তিল এজের এবং সিবা শেখ খিদির শহরে চারটি আত্মঘাতী বোমা হামলার ঘটনা ঘটে৷ হামলায় অন্তত ৭৯৬ জন নিহত হন৷ কোনো জঙ্গি গোষ্ঠি হামলার দায় স্বীকার করেনি৷ তবে ইরাকের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জালাল তালাবানি এ হামলার জন্য সুন্নি সন্ত্রাসীদের দায়ী করেন৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
ক্রিসমাস হত্যাকাণ্ড (ডি আর কঙ্গো, ২০০৮)
২০০৮ সালের ২৪ থেকে ২৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিক অব কঙ্গোর হাউত-উয়েলে জেলার কয়েকটি গ্রামে আক্রমণ চালায় উগান্ডার বিদ্রোহী গ্রুপ লর্ডস রেজিসট্যান্স আর্মি (এলআরএ)৷ উগান্ডা ও প্রতিবেশী অপর তিন দেশের সেনাবাহিনীর সম্মিলিত অভিযানের পালটা ব্যবস্থা হিসেবে সীমান্ত পেরিয়ে সাধারণ মানুষের ওপর নির্বিচারে হামলা চালায় এলআরএ৷ নিহত হন অন্তত ৬২০ জন৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/J. Kay
ক্যাম্প স্পাইশার হত্যাকাণ্ড (ইরাক, ২০১৪)
২০১৪ সালের ১২ জুন ইরাকের তিকরিতে ক্যাম্প স্পাইশারে হামলা চালিয়ে শিয়া ইরাকি বিমান বাহিনীর ১,৫৬৬ ক্যাডেটকে হত্যা করে আইএস৷ হামলার সময় ক্যাম্পটিতে কয়েক হাজার নিরস্ত্র ক্যাডেট অবস্থান করছিলেন৷ তাঁদের মধ্য থেকে বেছে বেছে শিয়া মুসলিম ও অমুসলিমদের আলাদা করা হয়৷ তারপর গুলি চালিয়ে তাঁদের হত্যা করে আইএস জঙ্গিরা৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Al-Rubaye
৯/১১ হামলা (যু্ক্তরাষ্ট্র, ২০০১)
২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর টুইন টাওয়ারসহ যুক্তরাষ্ট্রের চারটি স্থাপনায় যুগপৎ হামলা চালায় আল কায়েদা জঙ্গি গোষ্ঠী৷ বিমান ছিনতাই করে সেটি নিয়েই টুইন টাওয়ারে আঘাত হানে ছিনতাইকারীরা৷ সরকারি তথ্যমতে, এ হামলায় মোট ২,৯৯৬ জন প্রাণ হারান৷ নিহতদের মধ্যে ১৯ জন ছিনতাইকারী বলে জানিয়েছে গোয়েন্দারা৷ প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলারের সম্পদ ক্ষতিগ্রস্ত হয় এ হামলায়৷