মনোবিজ্ঞানী অধ্যাপক ডা. মোহিত কামাল মনে করেন সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে তরুণরা সমাজে ভালো-মন্দ দু'ধরনের ভূমিকাই রাখছে৷ তবে দুশ্চিন্তার বিষয় হলো, দিনের খুব বড় একটা সময় এই মাধ্যমে ব্যস্ত থাকায় তরুণদের অলসতা বাড়ছে৷
বিজ্ঞাপন
ডয়চে ভেলে: তরুণ প্রজন্ম সোশ্যাল মিডিয়ার দিকে ঝুঁকছে কেন?
অধ্যাপক ডা. মোহিত কামাল: এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ৷ আমরা ছোটবেলায় মাঠে যেতাম৷ এখন মাঠ নেই৷ শিশুরা ঘরে থাকে৷ এখন তাদের বিনোদনের মাধ্যম বলতে সোশ্যাল মিডিয়া৷ সেখানে তারা চ্যাট করছে, আড্ডা দিচ্ছে৷ এর ফলে ব্যক্তি যোগাযোগ ভয়ংকরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে৷ এর কিছু ভালো দিক আছে৷ যেমন এবারের বইমেলায় আমার চারটি বই বের হয়েছে৷ সেটা আমি সোশ্যাল মিডিয়ায় দিয়ে দিলাম, আমার পাঁচ হাজার বন্ধু সেটা দেখল, তারা বইটা নিয়ে সমালোচনা করল, আলোচনা করল, তাতে আমি সমৃদ্ধ হলাম৷ তবে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে আবেগের চাপ থাকলে সেটা একটু রিলিজ করে৷ আর অপজিট সেক্সের প্রতি দুর্বলতা আমাদের সহজাত প্রবণতা৷
এই সোশ্যাল মিডিয়ায় খুব সহজেই মেয়েবন্ধু পাওয়া যায়, ছেলেবন্ধু পাওয়া যায়৷ এই যোগাযোগের কারণে মানুষের আবেগ একটা জায়গায় আবদ্ধ থাকছে না৷ চেঞ্জ হয়ে যাচ্ছে৷ এই সম্পর্ক ব্যক্তি জীবনকে ক্ষতিগ্রস্ত করে৷ আরো ভালো উদাহরণও আছে৷ এই সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমেই আমাদের গণজাগরণ মঞ্চের তৈরি হয়েছিল৷
সব জায়গায় খারাপ গ্রুপ আছে, এখানেও আছে৷ ওই গ্রুপগুলো মেয়েদের টার্গেট করে, গৃহবধুদের টার্গেট করে৷ দীর্ঘদিন ধরে একটা সম্পর্ক তৈরি করে, এরপর তারা অনৈতিক সম্পর্ক করে এবং সেটা ভিডিও করে পরে ব্ল্যাকমেল করছে৷ এমন একজন নারী আমার কাছে এসেছিলেন তিনি ওই খপ্পরে পড়ে নিজের অ্যাপার্টমেন্টটিও তাদের লিখে দিয়েছিলেন৷ তাতেও নিষ্কৃতি পাননি৷ পরে তিনি মানষিক রোগী হয়ে যান৷
সামাজিক মাধ্যমে অপরাধ সম্প্রচারের ৮ ঘটনা
ফেসবুক, টুইটারসহ অন্যান্য সামাজিক মাধ্যমে আজকাল অনেক অপরাধী তাদের অপরাধের ভিডিও আপলোড করছে৷ এর মধ্যে কোনো কোনোটি আবার সরাসরিও সম্প্রচারিত হচ্ছে৷
ছবি: imago/Schöning
‘ফেসবুক লাইভ’- এ নির্যাতন
নতুন বছরের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগোতে এক শ্বেতাঙ্গ তরুণের উপর নির্যাতন চালায় চার কৃষ্ণাঙ্গ তরুণ-তরুণী৷ পুরো ঘটনা ‘ফেসবুক লাইভ’-এর মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছিল৷ শ্বেতাঙ্গ ঐ তরুণ মানসিকভাবে অসুস্থ ছিল৷ পেটানোর পাশাপাশি তার চুল কেটে দেয়া হয়৷ অপরাধ করার সময় নির্যাতনকারীরা ট্রাম্প ও শ্বেতাঙ্গদের বিরুদ্ধে বিষোদগার করছিল৷ পুলিশ ঐ চারজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে৷ ফেসবুক ভিডিওটি মুছে ফেলে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Chicago Police Department
টুইটারে ধর্ষণের ভিডিও
২০১৬ সালের মে মাসে ব্রাজিলের রিও ডি জানেরোতে এক তরুণীকে ৩০ জনের বেশি মানুষ ধর্ষণ করে৷ তরুণীটি তার ছেলেবন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে গেলে সেখানে তাকে ওষুধ খাইয়ে অচেতন করা হয়৷ তারপর একে একে তার উপর হামলে পড়ে সবাই৷ অপরাধীদের কেউ কেউ টুইটারে ভিডিও আপলোড করেছিল৷ সেই ভিডিও ভাইরাল হয়ে গেলে পুলিশের টনক নড়ে৷
ছবি: DW/J. Weber
লাইভ-এ আত্মহত্যা!
ফ্রান্সের ১৯ বছর বয়সি এক তরুণী ট্রেনের সামনে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করে৷ এই ঘটনা সে পেরিস্কোপ অ্যাপের সাহায্য সরাসরি প্রচার করেছিল৷ ঘটনাটি ২০১৬ সালের মে মাসের৷
ছবি: periscope.tv
নির্যাতিতার সঙ্গে সেলফি
২০১৪ সালে দুই ইংলিশ তরুণী ৩৯ বছরের অ্যাঞ্জেলা রাইটসনের উপর প্রায় ১৭ ঘণ্টা ধরে অত্যাচার চালায়৷ এই সময় আহতের সঙ্গে সেলফি তুলে ঐ দুই তরুণী সেই ছবি স্ন্যাপচ্যাটে শেয়ার করেছিল৷ নির্যাতনের এক পর্যায়ে মারা যান রাইটসন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Büttner
সেলফির কারণে ধরা পড়া
যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভেনিয়ায় ম্যাক্সওয়েল ম্যারিয়ন মর্টন নামের এক টিনএজার আরেক টিনএজারকে হত্যা করে তার সঙ্গে সেলফি তুলে স্ন্যাপচ্যাটে আপলোড করেছিল৷ সেই ছবির সূত্র ধরে মর্টনকে গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ৷ ঘটনাটি ২০১৫ সালের৷
ছবি: picture-alliance/dpa
বান্ধবীকে ধর্ষণ সরাসরি সম্প্রচার!
যুক্তরাষ্ট্রের ১৯ বছর বয়সি এক তরুণীকে সম্প্রতি এই অভিযোগে নয় মাসের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে৷ ২০১৬ সালে মারিনা লোনিনা (ছবি) নামের ঐ তরুণী তার বান্ধবীর সঙ্গে রেমন্ড গেটসের ফ্ল্যাটে গিয়েছিল৷ সেখানে পান করার পর এক পর্যায়ে গেটস লোরিনার বান্ধবীকে ধর্ষণ করতে শুরু করলে পেরিস্কোপ অ্যাপের মাধ্যমে ঐ ঘটনা সরাসরি সম্প্রচার করেন লোরিনা৷ গ্রেপ্তার হওয়ার পর লোরিনা বলেছিল, অপরাধের প্রমাণ রাখতে তিনি ভিডিও করেছিলেন!
ছবি: picture alliance/AP Photo/Franklin County Sheriff's Office
ধর্ষণ সম্প্রচারের আরেক ঘটনা
২০১৬ সালের ৩০ মার্চ পেরিস্কোপে ‘লাইভ সেক্স’ শিরোনাম দিয়ে একটি ভিডিও দেখানো হয়৷ ভিডিওটি যারা দেখেছে, তাদের কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে ‘বাজফিড’ জানিয়েছে, ভিডিওতে লন্ডনের একটি ফ্ল্যাটে তিন তরুণকে এক তরুণীর সঙ্গে যৌনকর্মে লিপ্ত হতে দেখা গেছে৷ তবে এটি যে বাস্তবে ধর্ষণের ঘটনা ছিল, সেটি বুঝতে কিছুটা সময় লেগেছে বলে বাজফিডকে জানান তারা৷
ছবি: Getty Images/AFP/L. Bonaventure
সরাসরি ‘আত্মহত্যা’
যুক্তরাষ্ট্রের ১২ বছর বয়সি এক মেয়ে তার আত্মহত্যার ভিডিও ইন্টারনেটে সরাসরি সম্প্রচার করেছে৷ কেটলিন নিকোল ডেভিস নামের তরুণীটি গত ৩০ ডিসেম্বর গাছের ডালের সঙ্গে দড়ি বেঁধে আত্মহত্যা করে৷ আত্মহত্যার সময় সে বলে, এক আত্মীয়ের কাছ থেকে যৌন নির্যাতনের শিকার হওয়ায় সে আত্মহত্যা করছে৷
ছবি: Fotolia/DW
8 ছবি1 | 8
সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে যে তরুণরা আগ্রহী হচ্ছে তার পেছনে কিসের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি?
আমরা সবাই কিন্তু নিজের কথাটা অন্যের কাছে বলতে চাই৷ এই শেয়ার করার প্রবণতা আগেও ছিল৷ আগে হয়ত এটা বন্ধু-বান্ধবের কাছে বলত৷ এখন সেটা সে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে দিয়ে দিচ্ছে৷ সেটা দেখে অনেকে কমেন্ট করছে, অনেক রকম মন্তব্য হচ্ছে৷ সবার হাতেই যেহেতু এখন স্মার্টফোন আছে, সেই ফোনের ব্যবহার এক্ষেত্রে বেশি হচ্ছে৷ মোবাইল ফোনের সহজলভ্যতার কারণে আমাদের অনুভূতি যুগে যুগে যেটা ছিল, সেটা দুর্বল হয়ে যাচ্ছে৷
সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে তরুণরা কি উপকার পাচ্ছে? এর ক্ষতিকর প্রভাবটা কী?
হ্যাঁ, অবশ্যই উপকার পাচ্ছে৷ এখানে যারা বই পড়ে, তাদের একটা গ্রুপ আছে৷ ওই বইগুলোতে কী আছে সেগুলো নিয়ে তারা আলোচনা করছে৷ আমি নিজেও এই ধরনের গ্রুপে ঢুকে ওদের আলোচনাগুলো দেখি৷ ওরা এমন সব বই পড়েছে যে বইগুলো দুর্লভ৷ আমি তাদের আলোচনা দেখে সমৃদ্ধ হই৷ আবার এর খারাপ প্রভাবও আছে, কারণ, তরুণরা এমন সব ওয়েবে ঢুকে যাচ্ছে, সেখানে পেশাদার নারী-পুরুষের রঙ্গলীলা তারা দেখছে৷ এতে করে তাদের বাস্তব জৈবিক চাহিদা বিকৃত হচ্ছে৷ আমি তো বলব এইসব সাইটে ঢুকে ছেলেদের চেয়ে মেয়েদের ক্ষতিটা হচ্ছে বেশি৷ কারণ এ সব দেখার কারণে একটা মেয়ের স্বাভাবিক পিরিয়ড শুরু হওয়ার সময় ১৩ থেকে ১৫ বছর, এখন সেটা ৮ থেকে ৯ বছরেই হয়ে যাচ্ছে৷ এতে করে তার মধ্যে একটা যৌন চাহিদা তৈরি হচ্ছে৷ তখন সে হয়ত খারাপ খপ্পরে পড়ে ভয়াবহ বিপর্যয়ে পড়ে যাচ্ছে৷
মোবাইল ফোনে আসক্ত? বুঝবেন যেভাবে...
স্মার্টফোনে অতি আসক্তি এক ধরণের রোগ৷ যাঁরা মোবাইল হাতে না থাকলে অস্থির হয়ে যান, বিজ্ঞানীরা বলছেন তাঁরা ‘নোমোফোবিয়া’-য় আক্রান্ত৷ চিনে নিন এ রোগের কিছু লক্ষণ৷
ছবি: Fotolia/Picture-Factory
ব্যাটারির চার্জ ফুরালেই আতঙ্ক
যুক্তরাষ্ট্রের আইওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা কিছু মানুষের মধ্যে স্মার্টফোনের আসক্তির এমন তীব্রতা লক্ষ্য করেছেন যা রীতিমতো বিস্ময়কর৷ তাঁরা দেখেছেন, কিছু লোক মোবাইলের চার্জ শেষ হয়ে যাচ্ছে দেখলেই আতঙ্কিত হয়ে পড়েন, যেন মোবাইল বন্ধ হয়ে গেলে জীবনই অচল৷ এমন হলে বুঝতে হবে আপনিও নোমোফোবিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন বা অচিরেই হবেন৷
ছবি: picture-alliance/chromorange
ইন্টারনেট-নির্ভরতা
কিছু লোক ইন্টারনেট সংযোগ ছাড়া এক মুহূর্তও থাকতে নারাজ৷ স্মার্টফোনের ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে জানলেই ওয়াই-ফাই জোন-এ যাওয়ার জন্য তাঁরা হা-হুতাশ শুরু করেন৷ এমন সবারও মোবাইল আসক্তি বাড়তে বাড়তে ‘নোমোফোবিয়া’-র সীমা ছুঁয়েছে বলে ধরে নেয়া যায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Schutt
ইন্টারনেট থাকতেই হবে?
কোথাও বেড়াতে যাওয়ার আগে সবার আগে কী কী জানতে চান? ‘‘ওখানে ইন্টারনেট আছে?-’’এই প্রশ্ন করেন? যদি মনে হয়, যেখানে ইন্টারনেট সংযোগ নেই সেখানে বেড়াতে যাওয়া একদম উচিত নয়, তাহলে ‘নোমোফোবিয়া’ আপনাকেও গ্রাস করছে৷
ছবি: Colourbox
‘স্ট্যাটাস’ না দিতে পারলে হতাশ
ফেসবুক বা সামাজিক যোগাযোগের অন্যান্য মাধ্যমে প্রতিদিন ‘স্ট্যাটাস’ না লিখলেও অনেকের একদমই চলে না৷ মনে হয়, খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা কাজ করা হয়নি৷ এমন হওয়াটাও খারাপ কথা, তখন বুঝতে হবে ‘নোমোফোবিয়া’ আপনাকেও পেয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Lei
আরেক ‘সর্বনাশ’
ধরুন, ফোন করতে পারছেন না, এসএমএস-ও না, ফোন বা এসএমএস আসছেনওনা আপনার কাছে৷ কী হয় তখন? স্বাভাবিক পরিস্থিতিতেও খুব অসহায় লাগে? তাহলে আপনাকে নিয়েও চিন্তা আছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
রিচার্জ করাতে পারেননি....
প্রি-পেইড সিম ব্যবহার করেন এমন অনেকে ফোনের ‘ক্রেডিট’ শেষ হলে, অর্থাৎ ফোন বা এসএমএস করার উপায় না থাকলেই মহাদুশ্চিন্তায় পড়ে যান৷ তখন মনে রাখতে হবে, মোবাইল ফোন ছাড়া এক সময় পৃথিবীর সবারই জীবন চলতো, এ যুগেও কয়েক ঘণ্টা বা কয়েকটা দিন নিশ্চয়ই চলবে৷
ছবি: PeJo/Fotolia
ঘুমের সময় অন্তত অন্য কিছু ভাবুন.....
স্মার্টফোনে মানুষ এতটাই নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে যে কারো কারো রাতে মোবাইল ফোনে একটা হাত না রাখলে ঠিকমতো ঘুমই হয় না৷ নোমোফোবিয়া-র চূড়ান্ত লক্ষণ এটা৷ সুতরাং এই অভ্যাস ছাড়ুন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/T. Marttila/Lehtikuva
7 ছবি1 | 7
আমাদের সোশ্যাল মিডিয়া কি তরুণ সমাজের মনকে তুষ্ট করতে পারছে?
সোশ্যাল মিডিয়ার সবই যে খারাপ তা তো নয়৷ এখানে ভালো-খারাপ দু'টোই আছে৷ তবে সবচেয়ে খারাপ যেটা, সেটা হলো, আমাদের তরুণরা অলস হয়ে যাচ্ছে৷ তাদের শরীরের কর্মক্ষমতা অনেক কমে যাচ্ছে৷ তাদের উল্লাস করার ক্ষমতা বা হইচই করার ক্ষমতা কমে যাচ্ছে৷ তাদের মানসিক শক্তি কমে যাচ্ছে৷ যখনই তারা কোনো স্ট্রেসে পড়ে, সেটা থেকে উঠতে পারে না৷ আমরা যখন ছোটবেলায় মাঠে খেলতে গেছি, তখন হেরে গেলে সেটা সহ্য করার শক্তি অর্জন করেছি, আবার জিতে গেলে সেটা ধারণ করার শক্তিও অর্জন করেছি৷ এখন যেটা হচ্ছে, আমাদের ক্রিকেট দল হেরে গেলে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ভয়ংকরভাবে গালিগালাজ করা হচ্ছে৷ আবার জিতে গেলে রাস্তায় মিছিল নিয়ে বের হচ্ছে৷ মানে, এই হার-জিতের মধ্যে কোনো ভারসাম্য নেই৷ বিশেষ করে পরাজয় বরণ করার মতো কোনো শক্তিই তাদের মধ্যে নেই৷ খেলাধুলার মাধ্যমে ছোটবেলা থেকে হার-জিতের শক্তি সঞ্চিত হয়৷ এই সঞ্চয় তরুণ প্রজন্মের কম হচ্ছে৷ এতে করে তারা যে কোনো ছোটখাটো বিপর্যয়েও ভেঙে পড়ছে৷
সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারের আগে ও পরে কী ধরনের পার্থক্য দেখা যায়?
Samir-Alap Interview of Pof. Dr. Mohit Kamal - MP3-Stereo
সোশ্যাল মিডিয়াতে তারা যখন বসে, তখন নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে যায়৷ ঘণ্টার পর ঘণ্টা তারা সেটা ব্যবহার করছে৷ এমনকি রাত জেগে তারা এটা ব্যবহার করছে৷ যখন তারা রাত জাগে, তখন পরের দিন সকালে স্কুলে বা কলেজে যেতে চায় না৷ এতে তাদের রেজাল্ট খারাপ হয়৷ বাবা-মা চাপ দেয়৷ তখন তারা মানসিক রোগী হয়ে যায়, আর আমাদের কাছে আসে৷ আমরা ছোটবেলায় যখন পড়তাম, তখন শুধুই পড়াশোনা করতাম৷ যখন খেলতে যেতাম, তখন খেলাধুলা করতাম৷ আর এখন তারা খেলাধুলা করে না, সারাদিন সারারাত এটার মধ্যেই বসে থাকে৷ এতে তাদের শারীরিক সক্ষমতা কমিয়ে দিচ্ছে৷ তাদের ঠিকমতো ঘুম হচ্ছে না৷ কিন্তু ব্রেনকে রাতে ঘুমাতে দিতে হবে৷ আপনি যদি ঠিকমতো না ঘুমানো, তাহলে আপনার ব্রেন ঠিক মতো কাজ করবে না৷ চাপে থাকবে৷ আপনার প্রোডাক্টটিভিটি কমে যাবে৷ আপনার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ব্যহত হবে৷
আমাদের তরুণদের একটা অংশ অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে৷ এর মধ্যে সোশ্যাল মিডিয়ার ভূমিকা কতখানি?
শুধু যে অপরাধে জড়াচ্ছে, তা নয়, আবার অপরাধের বিরুদ্ধেও তারা সোচ্চার হচ্ছে৷ কিন্তু কথা হচ্ছে, এই কারণে নারীর প্রতি বা পুরুষের প্রতি আমাদের তরুণদের শ্রদ্ধাবোধ হারিয়ে যাচ্ছে৷ একজন আরেকজনকে ছোট করে মতামত দিচ্ছে৷ তাদের মধ্যে ভোগবাদী অবস্থার সৃষ্টি হচ্ছে৷ এখানে ভোগবাদী অস্তিত্বের চেয়ে মমতা বা ভালোবাসার জায়গান থাকতে হবে৷ আমাদের তরুণদের মধ্যে বন্ধন দুর্বল হচ্ছে৷ তারা নৈতিকতা হারিয়ে ফেলছে৷ এর ফলে তারা যে কোনো ধরনের অপরাধে যুক্ত হচ্ছে, কিন্তু তারা সেটি বুঝতে পারে না৷
সোশ্যাল মিডিয়ার ক্ষতিকর দিক থেকে বের হয়ে আসার পথগুলো কী কী?
আমাদের টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম এটা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছেন৷ আমি বলব, আমরা যদি আমাদের আকাশসীমাটা নিয়ন্ত্রণ করতে পারি, তাহলে অনেক উপকার পাওয়া যাবে৷ ভালো জিনিসই শুধু আমরা ঢুকতে দেব, খারাপগুলো ঢুকতে দেব না৷ তাহলে অনেক কিছুই ঠিক হয়ে যাবে৷ বাজে ওয়েবসাইট ঢুকতে দেব না৷ কিছু নিয়মনীতি যদি থাকে, মিডিয়াতে অন্যকে অপদস্থ করা যাবে না৷ কেউ কিছু করলে তার জন্য আইনগত ব্যবস্থা নেয়া যাবে৷ কিন্তু হুট করেই সামাজিক যোগাযোগে কিছু বলা যাবে না৷ যেমন ধরুন, রাজন হত্যার বিষয়টি নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়াতেই জনমত গড়ে উঠেছে৷ খারাপ জিনিস নিয়ন্ত্রণ করতে পারলেই সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে সারা বিশ্ব আমাদের হাতের মুঠোয় থাকবে৷
ফেসবুকে জনপ্রিয় যাঁরা
বাস্তব জীবনে ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্ডো সেরা ফুটবলার কিনা – তা নিয়ে বিতর্ক থাকতে পারে৷ তবে ফেসবুকে তিনি অন্যতম সেরা৷ ভক্তের সংখ্যা দশ কোটির বেশি৷ ফেসবুক এবং টুইটারে জনপ্রিয় এরকম আরো কয়েক তারকাকে নিয়ে ছবিঘর৷
ছবি: Reuters
সবার সেরা রোনাল্ডো
ফেসবুকে বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় ক্রীড়াবিদ হচ্ছেন ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্ডো৷ রেয়াল মাদ্রিদের হয়ে খেলা এই পর্তুগিজ তারকার ফেসবুক ভক্তের সংখ্যা দশ কোটির বেশি৷ টুইটারে তাঁর অনুসারী তিন কোটি৷
ছবি: picture-alliance/dpa
টুইটার মেসির বিষয় নয়
আর্জেন্টিনার ফুটবল তারকা লিওনেল মেসি গত বছর ফিফার বিশ্বসেরা খেতাবটি জিততে পারেননি৷ সেটা নিয়েছেন রোনাল্ডো৷ ফেসবুকেও মেসি তাঁর পেছনে রয়েছেন৷ ভক্তের সংখ্যা সাড়ে সাত কোটির মতো৷ তবে টুইটারে মেসির ভক্ত মাত্র ২০ লাখ৷
ছবি: Reuters
এগিয়ে যাচ্ছেন নেইমার
রোনাল্ডো বা মেসির পর্যায়ে না পৌঁছালেও দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছেন নেইমার৷ ২২ বছর বয়সি এই ব্রাজিলীয় ফুটবল তারকার ভক্তের সংখ্যা প্রায় পাঁচ কোটি৷ টুইটারে চতুর্থ জনপ্রিয় ক্রীড়াবিদ তিনি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/R. Ghement
অনলাইনে জনপ্রিয় কাকা
ফুটবল ক্যারিয়ারের ভালো সময়গুলো সম্ভবত ইতোমধ্যে পার করে ফেলেছেন কাকা (ছবিতে স্ত্রী ক্যারোলিনের সঙ্গে কাকা)৷ ৩২ বছর বয়সি এই তারকার টুইটার অনুসারীর সংখ্যা দুই কোটির বেশি৷ মাইক্রো ব্লগিং সাইটটিতে দ্বিতীয় জনপ্রিয় ক্রীড়াবিদ তিনি৷ আর ফেসবুকে তাঁর ভক্তের সংখ্যা প্রায় চার কোটি৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ব্যতিক্রমী কিং জেমস
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জনপ্রিয়দের তালিকায় শুরুর দিকে অধিকাংশই ফুটবলার৷ ব্যতিক্রম শুধু এনবিএ সুপারস্টার লিব্রন৷ ফেসবুকে তাঁর ভক্তের সংখ্যা সোয়া দুই কোটির মতো, আর টুইটারে দেড় কোটির বেশি৷
ছবি: Getty Images
ও্যাজিলও কম যান না
প্রথমে খারাপ ছিল ফর্ম, এখন ইনজুরির কবলে৷ বিশ্বকাপ জয়ী জার্মান দলের তারকা মেসুত ও্যজিল বর্তমানে সম্ভবত কঠিন সময় পার করছেন৷ তবে সময়টা তিনি দিব্যি কাটিয়ে দিতে পারেন অনলাইন ভক্তদের সঙ্গে৷ ফেসবুকে তাঁর ভক্তের সংখ্যা প্রায় তিন কোটি, টুইটারে প্রায় ১ কোটি৷
ছবি: picture-alliance/dpa
অনলাইনে মন্থর বোল্ট
বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুততম মানব ইউসেইন বোল্ট অনলাইন জগতে বেশ পিছিয়ে আছেন৷ ফেসবুকে তাঁর ভক্তের সংখ্যা মাত্র ১৬ মিলিয়ন! আর টুইটারে সাড়ে তিন মিলিয়নের মতো৷
ছবি: Getty Images
বেকহাম এখনো জনপ্রিয়
ফুটবল মাঠে খেলোয়াড়ের বেশে এখন আর দেখা যাচ্ছে না ডেভিড বেকহামকে৷ তবে তাই বলে ইংল্যান্ড দলের সাবেক এই অধিনায়কের ফেসবুক জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়েনি৷ ফেসবুকে পাঁচ কোটি ভক্ত রয়েছে তাঁর৷