প্রযুক্তি এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ফার্মগুলো সন্ত্রাসীদের কর্মকাণ্ডের ব্যাপারে পুলিশ বা কর্তৃপক্ষকে কোনোরকম সহায়তা করতে ব্যর্থ হয়েছে, জানান এক ব্রিটিশ পুলিশ কর্মকর্তা৷ তাঁর মতে, এদের আচরণ দায়িত্বহীন বাড়িওয়ালার মতো৷
বিজ্ঞাপন
গত মঙ্গলবার লন্ডনে নিরাপত্তা সম্মলনে ব্রিটেনের সন্ত্রাস-বিরোধী বিভাগের শীর্ষ পুলিশ কর্মকর্তা মার্ক রাওলি বড় বড় যোগাযোগ পরিষেবা প্রদানকারী কোম্পানিগুলোর ব্যাপক সমালোচনা করেছেন৷ তার দাবি এই কোম্পানিগুলো সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয়েছে৷ তিনি বলেন, এরা ব্রিটিশ পুলিশদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড সংক্রান্ত কোনো ধরনের তথ্য দিয়ে সহায়তা করতে পারছে না৷
রাওলি বলেন, ‘‘অনলাইন সন্ত্রাসীরা, যারা এরই মধ্যে অপরাধের জন্য সাজা পেয়েছে, তারা অনলাইনে নির্দিষ্ট জায়গা দখল করে তাদের কাজের বৈধতার ব্যবস্থা করেছে৷ তাদের ফান্ড দিয়ে সাহায্য করছে বড় বড় সম্পদশালী কর্পোরেশন৷ ''
সাইবার অপরাধের বিভিন্ন ধরন
ইন্টারনেটের ব্যবহার যত বাড়ছে তত বাড়ছে সাইবার অপরাধের ঘটনা৷ ফলে আর্থিক ক্ষতি থেকে নানা রকমের হয়রানির শিকার হচ্ছেন অনলাইন ব্যবহারকারীরা৷ এমনই কয়েকটি বিষয় তুলে ধরা হয়েছে এখানে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
পরিচয় চুরি
আজকাল অনলাইনে কেনাকাটা করছেন অনেকে৷ এরজন্য নাম, ঠিকানা, ই-মেল, ক্রেডিট কার্ডের তথ্য ইত্যাদি দিতে হয়৷ সমস্যাটা সেখানেই৷ যেসব ওয়েবসাইটের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ভালো নয়, সেখানে এই তথ্যগুলো দিলে তা অপরাধীর কাছে চলে যাবার সম্ভাবনা থাকে৷ সেক্ষেত্রে অপরাধী আপনার তথ্য ব্যবহার করে আপনার ক্রেডিট কার্ড শূন্য করে দিতে পারে৷ কারণ আপনার যে পরিচয় চুরি হয়ে গেছে!
ছবি: picture alliance/maxppp/S. Mortagne
স্প্যাম ও ফিশিং
একদিন ই-মেল খুলে দেখলেন আপনি অনেক টাকার লটারি জিতেছেন৷ সেটা পেতে আপনাকে কিছু তথ্য দিতে বলা হচ্ছে৷ হঠাৎ করে বড়লোক হওয়ার লোভে আপনি সেই তথ্যগুলো দিয়েও দিলেন৷ ব্যস, যা হবার হয়ে গেছে৷ পরে দেখলেন টাকা পাওয়ার বদলে আপনার কাছে যা আছে সেটাও চলে যাচ্ছে! অর্থাৎ আপনি ফিশিং-এর শিকার হয়েছেন৷
ছবি: picture alliance/blickwinkel/McPHOTOs
ব়্যানসমওয়্যার
উন্নত বিশ্বে এটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে৷ অপরাধীরা ম্যালওয়্যার ঢুকিয়ে অন্যের কম্পিউটারের ফাইলগুলোর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়৷ তারপর ঐ কম্পিউটার ব্যবহারকারীকে বার্তা পাঠায় এই বলে যে, ফাইল ফেরত পেতে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা দিতে হবে৷
ছবি: picture-alliance/ZB/T. Eisenhuth
সাইবার মবিং বা সাইবারবুলিং
হয়ত মজা করার জন্য কিংবা ইচ্ছে করে একজনকে কষ্ট দিতে তার বন্ধুরা একজোট হয়ে হয়রানি করে থাকে৷ বাস্তবে স্কুল-কলেজে এমনটা হয়ে থাকে৷ আজকাল ইন্টারনেট সহজলভ্য হয়ে ওঠায় ভার্চুয়াল জগতে এমন ঘটনা ঘটছে৷ কিন্তু অনেক সময় বিষয়টি আর মজার পর্যায়ে না থেকে ভয়ানক হয়ে ওঠে৷ ফলে যাকে নিয়ে মজা করা হচ্ছে সে হয়ত এমন কিছু করে ফেলে যা কারও কাম্য থাকে না৷
ছবি: Sylvie Bouchard - Fotolia.com
ম্যালভার্টাইজিং
ধরুন আপনি কোনো ওয়েবসাইটে আছেন৷ সেখানে একটি বিজ্ঞাপন দেখে ক্লিক করলেন৷ ব্যস আপনার কম্পিউটারে একটি কোড ডাউনলোড হয়ে গেল৷ এটি কোনো নিরীহ কোড নয়৷ অপরাধীরা এর মাধ্যমে আপনাকে হয়রানির পরিকল্পনা করবে৷ সুতরাং...৷
ছবি: Getty Images
ডেবিট/ক্রেডিট কার্ড স্কিমিং
রেস্টুরেন্ট, সুপারমার্কেটের বিল পরিশোধ, এটিএম থেকে টাকা তোলা, অর্থাৎ এমন কোথাও যেখানে আপনার ক্রেডিট ও ডেবিট কার্ডকে যন্ত্রের মধ্যে ঢোকাতে হয় সেখান থেকেও তথ্য চুরি হতে পারে৷ এটাই কার্ড স্কিমিং৷ স্কিমার যন্ত্রের মাধ্যমে এই তথ্য চুরি করা হয় বলে এর এমন নামকরণ হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Baltagiannis
ফোন ফ্রড
অচেনা কোনো নম্বর থেকে (বিশেষ করে বিদেশ থেকে) মিসড কল পেলে সঙ্গে সঙ্গে কলব্যাক না করাই ভালো৷ কারণ কে জানে হয়ত ফোন ফ্রড অপরাধীরা এই কলটি করেছিলেন৷ আর আপনি কলব্যাক করতে যে টাকা খরচ করলেন তার একটি অংশ পেয়ে গেল অপরাধীরা!
ছবি: picture-alliance/dpa
7 ছবি1 | 7
ব্রিটিশ এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, একজন ব্যক্তি অনলাইনে মৌলবাদকে উসকে দিচ্ছে, অবৈধ কন্টেন্ট দিচ্ছে, অন্যান্য জঙ্গিদের সাথে যোগাযোগ করছে, কাদের উপর হামলা করবে সেটা লক্ষ্য রাখছে, এমনকি বোমা বানানোর প্রক্রিয়া ডাউনলোড করছে৷ কিন্তু প্রযুক্তি এবং সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলো এই ব্যাপারগুলোর প্রতি কোনো নজর রাখছে না৷''
রাওলি এই ফার্মগুলোকে দায়িত্বজ্ঞানহীন বাড়ির মালিকের সঙ্গে তুলনা করেছেন, যারা ভাড়াটিয়ার কোনো তথ্য যাচাই-বাছাই না করে ঘর ভাড়া দেয়৷ কোনো বাড়ির মালিক যদি জানতে পারেন, তার বাড়ি জঙ্গি হামলাকে উৎসাহ দিচ্ছে বা পরিকল্পনার ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে, তাহলে তাদের দায়িত্ব হলো পুলিশ বা কর্তৃপক্ষকে জানানো৷''
ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ অনেকদিন ধরেই সন্ত্রাসবাদ রুখতে ব্যর্থতার জন্য টেক ফার্মগুলোর কর্মকাণ্ডকে দায়ী করে আসছে৷ তাদের অভিযোগ এই কোম্পানিগুলো তাদের গ্রাহকদের কর্মকাণ্ডের ব্যাপারে একেবারে অন্ধ৷
ব্রিটেনের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী গত বছর সিলিকনভ্যালি পরিদর্শন করে এ ব্যাপারে তাদের কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন৷ ২০১৭ সালে ব্রিটেনে চারটি সন্ত্রাসী হামলায় ৩৬ জন প্রাণ হারায়৷
এপিবি/ডিজি (ডিপিএ, রয়টার্স)
আপনিও কি সোশ্যাল মিডিয়াকে দায়ত্বহীন বলবেন? লিখুন নীচের ঘরে৷
সামাজিক মাধ্যমে অপরাধ সম্প্রচারের ৮ ঘটনা
ফেসবুক, টুইটারসহ অন্যান্য সামাজিক মাধ্যমে আজকাল অনেক অপরাধী তাদের অপরাধের ভিডিও আপলোড করছে৷ এর মধ্যে কোনো কোনোটি আবার সরাসরিও সম্প্রচারিত হচ্ছে৷
ছবি: imago/Schöning
‘ফেসবুক লাইভ’- এ নির্যাতন
নতুন বছরের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগোতে এক শ্বেতাঙ্গ তরুণের উপর নির্যাতন চালায় চার কৃষ্ণাঙ্গ তরুণ-তরুণী৷ পুরো ঘটনা ‘ফেসবুক লাইভ’-এর মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছিল৷ শ্বেতাঙ্গ ঐ তরুণ মানসিকভাবে অসুস্থ ছিল৷ পেটানোর পাশাপাশি তার চুল কেটে দেয়া হয়৷ অপরাধ করার সময় নির্যাতনকারীরা ট্রাম্প ও শ্বেতাঙ্গদের বিরুদ্ধে বিষোদগার করছিল৷ পুলিশ ঐ চারজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে৷ ফেসবুক ভিডিওটি মুছে ফেলে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Chicago Police Department
টুইটারে ধর্ষণের ভিডিও
২০১৬ সালের মে মাসে ব্রাজিলের রিও ডি জানেরোতে এক তরুণীকে ৩০ জনের বেশি মানুষ ধর্ষণ করে৷ তরুণীটি তার ছেলেবন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে গেলে সেখানে তাকে ওষুধ খাইয়ে অচেতন করা হয়৷ তারপর একে একে তার উপর হামলে পড়ে সবাই৷ অপরাধীদের কেউ কেউ টুইটারে ভিডিও আপলোড করেছিল৷ সেই ভিডিও ভাইরাল হয়ে গেলে পুলিশের টনক নড়ে৷
ছবি: DW/J. Weber
লাইভ-এ আত্মহত্যা!
ফ্রান্সের ১৯ বছর বয়সি এক তরুণী ট্রেনের সামনে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করে৷ এই ঘটনা সে পেরিস্কোপ অ্যাপের সাহায্য সরাসরি প্রচার করেছিল৷ ঘটনাটি ২০১৬ সালের মে মাসের৷
ছবি: periscope.tv
নির্যাতিতার সঙ্গে সেলফি
২০১৪ সালে দুই ইংলিশ তরুণী ৩৯ বছরের অ্যাঞ্জেলা রাইটসনের উপর প্রায় ১৭ ঘণ্টা ধরে অত্যাচার চালায়৷ এই সময় আহতের সঙ্গে সেলফি তুলে ঐ দুই তরুণী সেই ছবি স্ন্যাপচ্যাটে শেয়ার করেছিল৷ নির্যাতনের এক পর্যায়ে মারা যান রাইটসন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Büttner
সেলফির কারণে ধরা পড়া
যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভেনিয়ায় ম্যাক্সওয়েল ম্যারিয়ন মর্টন নামের এক টিনএজার আরেক টিনএজারকে হত্যা করে তার সঙ্গে সেলফি তুলে স্ন্যাপচ্যাটে আপলোড করেছিল৷ সেই ছবির সূত্র ধরে মর্টনকে গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ৷ ঘটনাটি ২০১৫ সালের৷
ছবি: picture-alliance/dpa
বান্ধবীকে ধর্ষণ সরাসরি সম্প্রচার!
যুক্তরাষ্ট্রের ১৯ বছর বয়সি এক তরুণীকে সম্প্রতি এই অভিযোগে নয় মাসের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে৷ ২০১৬ সালে মারিনা লোনিনা (ছবি) নামের ঐ তরুণী তার বান্ধবীর সঙ্গে রেমন্ড গেটসের ফ্ল্যাটে গিয়েছিল৷ সেখানে পান করার পর এক পর্যায়ে গেটস লোরিনার বান্ধবীকে ধর্ষণ করতে শুরু করলে পেরিস্কোপ অ্যাপের মাধ্যমে ঐ ঘটনা সরাসরি সম্প্রচার করেন লোরিনা৷ গ্রেপ্তার হওয়ার পর লোরিনা বলেছিল, অপরাধের প্রমাণ রাখতে তিনি ভিডিও করেছিলেন!
ছবি: picture alliance/AP Photo/Franklin County Sheriff's Office
ধর্ষণ সম্প্রচারের আরেক ঘটনা
২০১৬ সালের ৩০ মার্চ পেরিস্কোপে ‘লাইভ সেক্স’ শিরোনাম দিয়ে একটি ভিডিও দেখানো হয়৷ ভিডিওটি যারা দেখেছে, তাদের কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে ‘বাজফিড’ জানিয়েছে, ভিডিওতে লন্ডনের একটি ফ্ল্যাটে তিন তরুণকে এক তরুণীর সঙ্গে যৌনকর্মে লিপ্ত হতে দেখা গেছে৷ তবে এটি যে বাস্তবে ধর্ষণের ঘটনা ছিল, সেটি বুঝতে কিছুটা সময় লেগেছে বলে বাজফিডকে জানান তারা৷
ছবি: Getty Images/AFP/L. Bonaventure
সরাসরি ‘আত্মহত্যা’
যুক্তরাষ্ট্রের ১২ বছর বয়সি এক মেয়ে তার আত্মহত্যার ভিডিও ইন্টারনেটে সরাসরি সম্প্রচার করেছে৷ কেটলিন নিকোল ডেভিস নামের তরুণীটি গত ৩০ ডিসেম্বর গাছের ডালের সঙ্গে দড়ি বেঁধে আত্মহত্যা করে৷ আত্মহত্যার সময় সে বলে, এক আত্মীয়ের কাছ থেকে যৌন নির্যাতনের শিকার হওয়ায় সে আত্মহত্যা করছে৷