সৌদি আরব থেকে অনেক বাংলাদেশি নারী শ্রমিক নির্যাতিত হয়ে ফিরেছেন৷ এসব অভিযোগের মুখে এবার ১৬৬টি রিক্রুটিং এজেন্সি বন্ধ করেছে বাংলাদেশ সরকার৷
বিজ্ঞাপন
সরকারের মুখপাত্র মনিরুস সালেহীন বুধবার এএফপিকে বলেন, অভিবাসী শ্রমিকদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ এজেন্সিগুলো বন্ধ করা হয়েছে৷ তাঁদের কেউ কেউ অভিযোগ করার পরও শ্রমিকদের নিয়োগকর্তার কাছে ফেরত যেতে বাধ্য করেছে৷ তিনি বলেন, ‘‘আমাদের এ ব্যবস্থা গ্রহণ চলবে৷’’
সম্প্রতি সৌদি আরবে, বিশেষ করে গৃহকর্মে নিযুক্ত নারী শ্রমিকদের নির্যাতনের নানা অভিযোগ নিয়ে বাংলাদেশে রীতিমতো সমালোচনার ঝড় উঠেছে৷
বাংলাদেশ সরকারের দেওয়া তথ্যানুযায়ী, ১৯৯১ সাল থেকে দেশটির নারীরা সৌদি আরবসহ বিশ্বের নানা দেশে শ্রমিক হিসেবে যাওয়া শুরু করেন৷ কিন্তু নারী শ্রমিক পাঠানোর বিষয়ে কোনো দেশের সরকারের সঙ্গে চুক্তি না থাকায় বাংলাদেশে পুরো প্রক্রিয়াটি দালালদের নিয়ন্ত্রণে ছিল৷
যে ১০ দেশে বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি নারী শ্রমিক গেছেন
জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো বা বিএমইটি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশ থেকে যাওয়া নারী শ্রমিকের সংখ্যা নিয়মিত প্রকাশ করে থাকে৷ ছবিঘরে ১৯৯১ থেকে ২০১৯ সালের অক্টোবর পর্যন্ত তথ্য থাকছে৷
ছবি: Imago Images/Zuma/M. Hasan
১. সৌদি আরব
জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো, বিএমইটি-র হিসেবে, বাংলাদেশ থেকে সবচেয়ে বেশি নারী শ্রমিক গেছেন সৌদি আরবে৷ ১৯৯১ থেকে ২০১৯ সালের অক্টোবর পর্যন্ত সংখ্যাটি ছিল তিন লাখ ৩২ হাজার ২০৪ জন৷ ২০১৯ সালের প্রথম দশ মাসে ৫৩ হাজার ৭৬২ জন নারী সৌদি আরব গেছেন৷ ২০১৭ সালে সর্বোচ্চ সংখ্যক (৮৩ হাজার ৩৫৪ জন) নারী শ্রমিক সে দেশে গেছেন৷
ছবি: Imago Images/Zuma/M. Hasan
২. জর্ডান
ইসরায়েলের প্রতিবেশী এই দেশে যাওয়া নারী শ্রমিকের সংখ্যা এক লাখ ৫৫ হাজার ৪১১ জন৷ সর্বোচ্চ সংখ্যক গেছেন ২০১৬ সালে, ২২ হাজার ৬৮৯ জন৷
ছবি: Imago/blickwinkel
৩. সংযুক্ত আরব আমিরাত
২০১৫ সালে সর্বোচ্চ ২৪ হাজার ৩০৭ জন নারী শ্রমিক সেই দেশে গিয়েছেন৷ সবমিলিয়ে দেশটিতে যাওয়া নারী শ্রমিকের সংখ্যা এক লাখ ৩০ হাজার ৫৭১ জন৷
ছবি: picture-alliance/J. Schwenkenbecher
৪. লেবানন
১৯৯১ থেকে ২০১৯ সালের অক্টোবর পর্যন্ত সিরিয়ার প্রতিবেশী দেশ লেবাননে গেছেন এক লাখ ছয় হাজার ৮৪০ জন নারী শ্রমিক৷
ছবি: Imago
৫. ওমান
ওমানে যাওয়া বাংলাদেশি নারী শ্রমিকের সংখ্যা ৮৬ হাজার ১৩২ জন৷
ছবি: Getty Images/C. Jackson
৬. কাতার
বিএমইটির হিসেবে ১৯৯১ থেকে ২০১৯ সালের অক্টোবর পর্যন্ত মোট আট লাখ ৮৭ হাজার ৪৩২ জন নারী শ্রমিক বিভিন্ন দেশে গেছেন৷ এই সময়ে কাতারে গেছেন ৩২ হাজার ২৫৯ জন৷
ছবি: DW/M. Kos
৭. মরিশাস
পর্যটনের জন্য বিখ্যাত এই দ্বীপরাষ্ট্রে ১৭ হাজার ৯২৩ জন নারী শ্রমিক গেছেন৷ ভারত মহাসাগরঘেঁষা এই দেশটিতে বাংলাদেশি নারী শ্রমিকরা গার্মেন্ট ও মাছ প্রক্রিয়াজাতকরণে যুক্ত আছেন বলে জানা গেছে৷ এছাড়া হোটেল-রেস্তোরাঁতেও তাঁরা কাজ করছেন৷
ছবি: Imago Images/Zuma/M. Hasan
৮. কুয়েত
শীর্ষ দশ দেশের মধ্যে আটটিই মধ্যপ্রাচ্যের৷ এর মধ্যে কুয়েতে যাওয়া বাংলাদেশি নারী শ্রমিকের সংখ্যা নয় হাজার ১৯ জন৷
ছবি: Imago Images
৯. মালয়েশিয়া
এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে মালয়েশিয়ায় সবচেয়ে বেশি নারী শ্রমিক গেছেন৷ সংখ্যাটি ছয় হাজার ৬৩৮ জন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Lyn
১০. বাহরাইন
মধ্যপ্রাচ্যের এই দ্বীপরাষ্ট্রে গেছেন চার হাজার ২৯০ জন নারী শ্রমিক৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Naamani
10 ছবি1 | 10
২০১৫ সালে বাংলাদেশ চুক্তির ভিত্তিতে সৌদি আরবে গৃহকর্মের জন্য নারী শ্রমিক পাঠানো শুরু করে৷ গত পাঁচ বছরে বাংলাদেশ থেকে প্রায় দুই লাখ নারী গৃহকর্মী হিসেবে সৌদি আরব গেছেন৷ বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্যের এই দেশটিতেই সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশি নারী শ্রমিক কাজ করছেন৷
কিন্তু গত কয়েক মাসে ওই শ্রমিকদের বড় একটি অংশ দেশে চলে আসেন এবং নিয়োগকর্তাদের বিরুদ্ধে যৌন নির্যাতনসহ নানা শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ করেন৷
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ সংক্রান্ত কয়েকটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে৷ সেখানে দু-একজনের শরীরে নির্যাতনের চিহ্নও দেখা যায়৷
গৃহকর্মী নির্যাতন বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গহণের জন্য রিয়াদে উভয় দেশের কর্মকর্তাদের মধ্যে বৈঠক হয়েছে৷ বৈঠকে নারী শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে একটি অনলাইন ডেটাবেজ তৈরি করে সেখানে নিয়মিত তথ্য প্রদানের সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশের শ্রমকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা৷
সৌদি পুলিশও নির্যাতনথেকে বাঁচতে পালিয়ে যাওয়া নারীদের নিয়োগকর্তার হাতে তুলে না দিতে রাজি হয়েছেন বলেও জানান তারা৷
এছাড়া সৌদি নিরাপত্তা ও সহযোগিতা অধিদপ্তর ‘বিপদে পড়া নারী শ্রমিকদের উদ্ধারে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণে আশ্বাস দিয়েছে’ বলে জানিয়েছে বাংলাদেশের শ্রমকল্যাণ মন্ত্রণালয়৷
এসএসএল/এসিবি (এএফপি)
যেসব দেশে সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশি
প্রতি বছরই বাংলাদেশিরা কাজ নিয়ে পাড়ি জমাচ্ছেন বিশ্বের কোনো না কোনো দেশে৷ বৈধপথে বিদেশে যাওয়া এসব প্রবাসীর হিসাব রাখে সরকারের জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো বা বিএমইটি৷
ছবি: DW
এক কোটি প্রবাসী
বাংলাদেশের ঠিক কতজন নাগরিক প্রবাসে আছেন তার সঠিক পরিসংখ্যান নেই৷ বিএমইটি-র হিসাবে ১৯৭৬ সাল থেকে এখন পর্যন্ত এক কোটি ৩০ লাখ মানুষ কর্মসংস্থানের জন্য দেশের বাইরে পাড়ি জমিয়েছেন৷ তবে কতজন ফিরে এসেছেন সেই পরিসংখ্যান নেই সেখানে৷
ছবি: Positive light
১৪ লাখ কোটি টাকা
দেশের অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি প্রবাসীদের আয়৷ এর কারণে বাংলাদেশের রিজার্ভের অঙ্কটাও এখন বেশ শক্তিশালী৷ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ১৯৭৬ সালে মাত্র ২৪ লাখ ডলার বা প্রায় ৩৬ কোটি টাকার রেমিটেন্স এসেছিল দেশে৷ সেই তুলনায় রেমিটেন্স অনেক বেড়েছে৷ শুধু গত বছরই এসেছে ১৮৩৫ কোটি ডলার বা এক লাখ ৫৫ হাজার কোটি টাকা৷ সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত ২১ হাজার ৭০৫ কোটি ডলার বা ১৫ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা৷
ছবি: AFP
এক তৃতীয়াংশ সৌদি আরবে
বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি প্রবাসীর গন্তব্য সৌদি আরব, যেখানে ২০২০ সালের মে পর্যন্ত ৪১ লাখ ৮৪ হাজার বাংলাদেশি পাড়ি জমিয়েছেন৷ ১৯৭৬ সালে মাত্র ২১৭ জন দিয়ে এই শ্রমবাজারের যাত্রা শুরু৷ ২০১৭ সালে সর্বোচ্চ ৫ লাখ ৫১ হাজার কাজ নিয়ে গেছেন মধ্যপ্রাচ্যের দেশটিতে৷ আর চলতি মে পর্যন্ত পাড়ি জমিয়েছেন এক লাখ ৩৪ হাজার জন৷
ছবি: picture-alliance/NurPhoto/N. Economou
আরব আমিরাতের মন্দা বাজার
শুরুর দিকে সংযুক্ত আরব আমিরাতই ছিল বাংলাদেশের বড় বাজার৷ ২০০৮ সালে দেশটিতে একবছরে সবচেয়ে বেশি ৪ লাখ ১৯ হাজার জন বাংলাদেশি গেছেন৷ তবে ২০১৩ সালের পর থেকে এই বাজারটিতে মন্দা চলছে৷ গতবছর মাত্র তিন হাজার ৩১৮ জন দেশটিতে পাড়ি জমানোর সুযোগ পেয়েছেন৷ ১৯৭৬ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ২৩ লাখ ৭২ হাজার বাংলাদেশির গন্তব্য ছিল আরব আমিরাত, যা মোট জনশক্তি রপ্তানির ১৮ ভাগের কিছু বেশি৷
ছবি: picture-alliance/J. Schwenkenbecher
পড়তিতে ওমান
প্রবাসীদের গন্তব্যের দিক থেকে তৃতীয় অবস্থানে আছে পারস্য উপসাগরের দেশ ওমান৷ ১৫ লাখ ১৮ হাজার বাংলাদেশি কাজ নিয়ে গেছেন সেখানে৷ তবে গত ৩ বছর ধরে এই বাজারটিতেও প্রবাসী যাওয়ার সংখ্যা কমছে৷ ২০১৬ সালে যেখানে এক লাখ ৮৮ হাজার জন ওমানে পাড়ি জমিয়েছেন, গেল বছর তা নেমে এসেছে ৭২ হাজার ৬৫৪ জনে৷ আর চলতি বছর মে পর্যন্ত গেছেন মাত্র ১৭ হাজার ৪০০ জন৷
ছবি: picture-alliance/A. Farnsworth
আকর্ষণীয় মালয়েশিয়া
বাংলাদেশিদের কাছে মালয়েশিয়া আকর্ষণীয় হয়ে উঠতে শুরু করে মূলত ১৯৯০ সালের পর থেকে৷ ২০০৭ সালে সেখানে সবচেয়ে বেশি ২ লাখ ৭৩ হাজার জনের বেশি শ্রমিক কাজের জন্যে গেছেন এশিয়ার দেশটিতে৷ মাঝে এই প্রবণতা কমলেও সম্প্রতি আবার বেড়েছে৷ ২০১৮ সালে দেশটিতে গেছেন প্রায় এক লাখ ৭৬ হাজার জন আর ২০১৯ এ মাত্র ৫৪৫ জন৷ সব মিলিয়ে মালয়েশিয়ায় বৈধভাবে পাড়ি জমিয়েছেন সাড়ে ১০ লাখ ৫৭ হাজারের বেশি বাংলাদেশি৷
ছবি: picture-alliance/FOTOGRAMMA/M. Alberico
সম্ভাবনার কাতার
২০০৬ সাল পর্যন্তও কাতারের বাজার বাংলাদেশের শ্রমশক্তি রপ্তানিতে ততটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল না৷ তবে মধ্যপ্রাচ্যের তেলসমৃদ্ধ এই দেশটিও এখন বিদেশ গমনেচ্ছুদের কাছে আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে৷ কাতারের বিশ্বকাপ আয়োজন সেখানে অনেক বাংলাদেশির জন্যেই কাজের সুযোগ তৈরি করেছে৷ এখন পর্যন্ত আট লাখ ১১ হাজার বাংলাদেশি দেশটিতে কাজ নিয়ে গেছেন৷
ছবি: picture-alliance
দক্ষ শ্রমিকের বাজার সিঙ্গাপুর
দেশের দক্ষ শ্রমিকদের জন্য পছন্দের এক গন্তব্য সিঙ্গাপুর৷ এশিয়ার উদীয়মান অর্থনীতির দেশটিতে এখন পর্যন্ত চাকরি নিয়ে ৭ লাখ ৯২ হাজার বাংলাদেশি পা রেখেছেন, যা মোট প্রবাসীর ছয় ভাগের কিছু বেশি৷ এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৬০ হাজার জন গেছেন ২০১৩ সালে৷
ছবি: picture-alliance/Global Travel Images
কুয়েতে ৫ ভাগ
বাংলাদেশিদের জন্য কুয়েতের মতো গুরুত্বপূর্ণ এক শ্রমবাজার প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছিল বলা চলে৷ ২০০৮ থেকে ২০১৩— এই সময়ে মাত্র ৪১৪ জন দেশটিতে পাড়ি জমিয়েছিলেন৷ ২০১৪ সাল থেকে তা বাড়তে শুরু করলেও গত দুই বছর ধরে আবার পড়তির দিকে৷ সব মিলিয়ে ছয় লাখ ৩০ হাজার বাংলাদেশি গেছেন কুয়েতে, যা মোট প্রবাসীর প্রায় ৫ ভাগ৷
ছবি: picture-alliance/robertharding/G. Hellier
পারস্য উপসাগরের দ্বীপে
চার লাখ ১০ হাজার বাংলাদেশির গন্তব্যের দেশ বাহরাইন৷ ২০১৬ সালে সর্বোচ্চ ৭২ হাজার মানুষ কাজ নিয়ে পাড়ি জমিয়েছেন পারস্য উপসাগরের দ্বীপ রাষ্ট্রটিতে৷ তবে ২০১৯ সালে গেছেন মাত্র ১৩৩ জন৷
ছবি: Getty Images/AFP/M.Al-Shaikh
ইউরোপে সর্বোচ্চ ইটালিতে
ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশি রয়েছে ইটালিতে৷ ২০০২ সাল থেকে সেখানে পাড়ি জমানোর তথ্য আছে বিএমইটির কাছে৷ সে অনুযায়ী এখন পর্যন্ত সাড়ে ৫৫ হাজার বাংলাদেশি বৈধ পথে গেছেন পশ্চিম ইউরোপের দেশটিতে৷