ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীরা আবার সৌদি আরবে হামলা চালালো। রোববার এই হামলা হয় বলে সরকারি মিডিয়া জানিয়েছে।
বিজ্ঞাপন
ইয়েমেনে এখন সৌদির নেতৃত্বাধীন জোটের সঙ্গে ইরানের মদতপুষ্ট হুতি বিদ্রোহীদের লড়াই চলছে। গত সপ্তাহেই আলোচনার প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছে হুতি।
সৌদির সরকারি মিডিয়া জানিয়েছে, অন্তত চারটি জায়গা লক্ষ্য করে হুতি বিদ্রোহীরা আক্রমণ চালায়। তবে কেউ মারা যাননি। কয়েকটি গাড়ি ও বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
কিছুদিন আগেও সৌদিতে ক্ষেপণাস্ত্র-হামলা করেছিল হুতি। তাদের লক্ষ্য ছিল সৌদির তেল ও গ্যাসের সঙ্গে যুক্ত সংস্থা ও পরিকাঠামো। রোববারও তারা একই উদ্দেশ্য নিয়ে হামলা করেছিল বলে অভিযোগ।
সৌদির নেতৃত্বাধীন জোটের তরফে জানানো হয়েছে, দক্ষিণ সৌদি আরবে জিযানে রাষ্ট্রায়ত্ত্ব তেল কোম্পানির পরিকাঠামো লক্ষ্য করে আক্রমণ করে হুতি। সৌদি প্রেস এজেন্সি জানিয়েছে, আল শাকিকে একটি ডিস্যালিনেশন প্ল্যান্ট এবং অন্য দুইটি শহরে বিদ্যুৎকেন্দ্র ও গ্যাস ফেসিলিটিও তারা আক্রমণ করে।
সামাজিক মাধ্যমে আপলোড করা ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, বিদ্যুৎকেন্দ্রে আগুন জ্বলছে। দমকল বাহিনী তা নেভানোর চেষ্টা করছে।
‘আমাদের দেশ এখন মরুভূমি হবার পথে’
একদিকে যুদ্ধ, অন্যদিকে চরম অনাহার- এর মাঝে মরুভূমিতে পরিণত হবার মুখে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ইয়েমেন৷
ছবি: Khaled Abdullah/REUTERS
অর্থনীতির কোপ
১২ বছর বয়সি ভাগ্নেকে সাথে নিয়ে আলি কয়েক ঘণ্টা ধরে একটি বাবলা গাছ কাটার চেষ্টা চালাচ্ছে। এককালে এই আলির রোজগার চলতো চাষ ও ঘরামির কাজ করে। ইয়েমেনের পড়ন্ত অর্থনীতি বন্ধ করেছে সেই সুযোগ।
ছবি: Khaled Abdullah/REUTERS
জ্বালানির অভাব
এক সময় ইয়েমেনের বেশির ভাগ চুলা জ্বলত গ্যাসে। কিন্তু যুদ্ধের কারণে ধসে পড়া অর্থনীতির ফলে সেই জায়গা দখল করেছে কাঠ ও পাথর। ফলে বাজারে দামি পণ্য বলতে কাঠই, যা বিক্রি করছে আলির মতো অসংখ্য জীবিকা-হারানো মানুষ।
ছবি: Khaled Abdullah/REUTERS
অনাহার
সাত সন্তানের পিতা আলি বলেন, ‘‘যদি বেশি করে কাঠ আমরা জোগাড় করতে পারি, তাহলে আমাদের দুমুঠো খাবার জোটে। কিন্তু আজকাল গাছের অভাব চোখে পড়ার মতো। কী হবে জানি না। হয় একসাথে বাঁচবো, বা একসাথে মরবো।’’
ছবি: Khaled Abdullah/REUTERS
কেন এই অভাব
টানা ছয় বছর ধরে চলা সংঘর্ষের কারণে ইয়েমেনের আশি শতাংশ মানুষ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে দেশের সম্পদ ও শস্য থেকে। গবেষণা বলছে, দেশটির বেশির ভাগ জনতার জীবন নির্ভর করছে বৈদেশিক সহায়তার ওপর। ইয়েমেনের মূল বন্দর হোদেইদাহ হুতিপন্থি গোষ্ঠীদের নিয়ন্ত্রণে থাকায় দেশটির জ্বালানি খাত বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ছবি: Khaled Abdullah/REUTERS
ঝুঁকিতে ইয়েমেন
রাজধানী সানাতেই প্রতি বছর প্রয়োজন হয় আট লাখ ৮৬হাজার গাছের কাঠ। গত তিন মাসেই কাটা হয়েছে ৫০ লাখের বেশি গাছ, জানাচ্ছেন স্থানীয় পরিবেশকর্মী আবদুল্লাহ আবদুল-ফুতুহ।
ছবি: Khaled Abdullah/REUTERS
মরুভূমি হবে ইয়েমেন
কাঠবিক্রেতা সুলাইমান বলেন, ‘‘কাঠের চাহিদা আরো বাড়ে যখন হোদেইদাহ বন্দরে জাহাজ আসে। কিন্তু আমরা ভয় পাচ্ছি যে, খুব শিগগিরই এই দেশটা মরুভূমি হয়ে যাবে। এখনই সেই প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে। আগে যে ঘন সবুজ দেখা যেতো পাহাড়ের গায়ে, তা আজ আর নেই।’’
ছবি: Khaled Abdullah/REUTERS
কাঠের বাজার
গাছের মালিকের কাছ থেকে একশ মার্কিন ডলার সমান দামে একটি বাবলা গাছ কিনতে পারেন কাঠুরেরা। তারপর সেই গাছের কাঠ ট্রাকে ভরে নিয়ে যাওয়া হয় রাজধানী সানাসহ অন্যান্য শহরে। এক ট্রাক কাঠ থেকে আয় হয় তিনশ থেকে সাতশ মার্কিন ডলার।
ছবি: Khaled Abdullah/REUTERS
7 ছবি1 | 7
স্থানীয় সংবাদমাধ্যম আল আইন পরে জানিয়েছে, দক্ষিণ সৌদির কাছের এলাকা থেকে পাঠানো নয়টি ড্রোন ধ্বংস করা হয়েছে। এগুলিরও লক্ষ্য ছিল সৌদির তেল পরিকাঠামোর উপর আক্রমণ। সরকারি টিভি জানিয়েছে, বন্দর শহর ইয়ানবুতে এলএনজি কারখানার উপরও আক্রমণের চেষ্টা হয়েছিল।
হুতির তরফ থেকে এই আক্রমণের দায় স্বীকার করে নেয়া হয়েছে। তারা এটাকে সৌদির গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্যবস্তুর উপর সামরিক হামলা বলে অভিহিত করেছে। গত ১০ মার্চ রিয়াধে তেল শোধনাগারের উপর ড্রোন হামলা হয়। হুতি তারও দায় স্বীকার করেছিল।
আলোচনার প্রস্তাব
ছয় দেশের গালফ কোঅপারেশন কাউন্সিল(জিসিসি) হুতি বিদ্রোহীদের ইয়েমেন গিয়ে আলোচনার আমন্ত্রণ জানিয়েছে। তারা বলেছে, রিয়াধে আগামী ২৯ মার্চ এই আলোচনা হবে। কিন্তু হুতির তরফ থেকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে, নিরপেক্ষ কোনো জায়গায় আলোচনা হলে, তারা সেখানে যেতে রাজি আছে।
সৌদি আরব, ইরান, ইসরায়েল কার শক্তি কেমন?
সৌদি আরবের তেলক্ষেত্রে হামলার পর অস্থির হয়ে উঠেছে মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতি৷ হুতি বিদ্রোহীরা এর দায় নিলেও ইরানকে দায়ী মনে করছে যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরব৷ এ নিয়ে চলছে হুমকি-পাল্টা হুমকি৷ কিন্তু সামরিক শক্তিমত্তা কার বেশি?
ছবি: picture-alliance/EPA/TSGT
আকাশে সৌদি আরব
সামরিক খাতে সৌদি আরব ২০১৮ সালে ৬ হাজার ৭৬০ কোটি ডলার খরচ করেছে৷ ব্যয়ের দিক থেকে তাদের অবস্থান গোটা বিশ্বে তৃতীয় আর উপসাগরীয় দেশগুলোর মধ্যে শীর্ষে৷ বিশ্বের সামরিক যন্ত্রপাতির সবচেয়ে বড় ক্রেতাও তারা৷ বর্তমানে সৌদির মোট সামরিক সদস্য ২ লাখ ৩০ হাজার৷ আছে ৮৪৮ টি যুদ্ধবিমান, ২৫৪ টি হেলিকপ্টার, ১০৬২ টি ট্যাংক ও ৫৫ টি যুদ্ধ জাহাজ৷ তবে নেই কোনো সাবমেরিন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সমুদ্র আর সৈন্যে ইরান
সামরিক খাতে গত বছর ইরানের ব্যয় ছিল ১ হাজার ৩২০ কোটি ডলার, যা ২০১৭ সালের তুলনায় সাড়ে নয় ভাগ কম৷ অবরোধ আর অর্থনৈতিক মন্দায় গত এক দশকে দেশটির অস্ত্র আমদানির পরিমাণও কমেছে৷ ২০০৯-১৮ সালের মধ্যে তা্দের আমদানিকৃত অস্ত্রের পরিমাণ সৌদি আরবের মাত্র সাড়ে তিনভাগ৷ বর্তমানে দেশটির সামরিক সদস্য আট লাখ ৭৩ হাজার৷ ৫০৯ টি যুদ্ধ বিমান, ১৫৬ টি হেলিকপ্টার, ১৬৩৪ টি ট্যাংক, ৩৯৮ টি নৌযান, ৩৪ টি সাবমেরিনের মালিক তারা৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/E. Noroozi
ইসরায়েল নিজেই অস্ত্র তৈরি করে
২০১৮ সালে সামরিক খাতে এক হাজার ৫৯৫ কোটি ডলার ব্যয় করেছে ইসরায়েল৷ দেশটি নিজেই সামরিক অস্ত্র তৈরি করে, তাই তেমন একটা আমদানি করতে হয় না৷ গত বছর সর্বসাকুল্যে ১০৩ কোটি ডলারের অস্ত্র কিনেছে যুক্তরাষ্ট্র আর জার্মানির কাছ থেকে৷ দেশটির সামরিক বাহিনীর সদস্য সংখ্যা ৬ লাখ ১৫ হাজার৷ তাদের বহরে আছে ৫৯৫ টি যুদ্ধবিমান, ১৪৬ টি হেলিকপ্টার, ২৭৬০ টি ট্যাংক, ৬ টি সাবমেরিন৷
ছবি: Reuters
প্রতাপশালী তুরস্ক
২০১৮ সালে তুরস্কের সামরিক ব্যয়ের পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৮৯৭ কোটি ডলার৷ এর মধ্যে ১১১ কোটি ডলার খরচ করেছে যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, স্পেন, ইতালিসহ ৬টি দেশের কাছ থেকে অস্ত্র ক্রয়ে৷ তুরস্কের সামরিক বাহিনীর সদস্য ৭ লাখ ৩৫ হাজার৷ যুদ্ধবিমান আছে ১০৬৭ টি৷ আছে ৪৯২ টি হেলিকপ্টার, ৩২০০ ট্যাংক, ১৯৪ টি যুদ্ধজাহাজ, ১২ টি সাবমেরিন৷
ছবি: Getty Images/AFP/B. Kilic
উপসাগরের ছোট শক্তি কাতার
কাতারের সবশেষ সামরিক ব্যয়ের হিসাবটি ২০১০ সালের৷ সে বছর তাদের বাজেট ছিল ২১৭ কোটি ডলারের৷ দেশটির সামরিক সদস্য সংখ্যা ১২ হাজার৷ আছে ১০০ টি এয়ারক্রাফট, ৪২ টি হেলিকপ্টার, ৯৫ টি ট্যাংক, ৮০ টি যুদ্ধজাহাজ৷
ছবি: Getty Images/AFP/K. Jaafar
পড়ন্ত শক্তির ইরাক
গেল বছর সামরিক বাহিনীর পেছনে প্রায় ৬৩২ কোটি ডলার খরচ করেছে ইরাক৷ এর মধ্যে ১৫৬ কোটি ডলার ব্যয় করেছে অস্ত্র ক্রয়ে৷ তাদের আছে ১ লাখ ৬৫ হাজার সৈন্য, ৩২৭ টি যুদ্ধবিমান, ১৭৯ টি হেলিকপ্টার, ৩০৯ টি ট্যাংক, ৬০ টি যুদ্ধজাহাজ৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/A. Abdul Hassan
এবং যুক্তরাষ্ট্র
গত বছর যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাজেট ছিল ৬৪ হাজার ৮৮০ কোটি ডলারের৷ প্রায় সাড়ে ২১ লাখ সামরিক সদস্যের বিশাল বাহিনী তাদের৷ ১৩,৩৯৮ টি যুদ্ধবিমান, ৫৭৬০টি হেলিকপ্টার, ৬২৮৭টি ট্যাংক, ৪১৫টি যুদ্ধজাহাজ, ৬৮টি সাবমেরিন আছে এই পরাশক্তির বহরে৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Pizzoli
7 ছবি1 | 7
তাদের দাবি, ইয়েমেনের বন্দর ও সানা বিমানবন্দরের উপর জারি করা নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করতে হবে।
২০১৪ থেকে ইয়েমেনে গৃহযুদ্ধ চলছে। সেই বছর হুতি রাজধানী সানা সহ ইয়েমেনের উত্তরের অংশ দখল করে। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে স্বীকৃত সরকার দক্ষিণ ইয়েমেনে চলে যেতে বাধ্য হয়। ২০১৫ সাল থেকে সৌদির নেতৃত্বাধীন জোট হুতির সঙ্গে লড়াই করছে। তারপর থেকেই ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন দিয়ে সৌদিতে বিভিন্ন লক্ষ্যবস্তুর উপর আক্রমণ চালায় হুতি।