দক্ষিণ সৌদি আরবের তেলের টার্মিনালে বিস্ফোরক ভর্তি ড্রোন হানা। তারপরই সেখানে আগুন ধরে যায় বলে জানিয়েছে সরকার। মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, জিহানে পেট্রোলিয়াম পদার্থ বিতরণের টার্মিনালে আক্রমণ করা হয়েছে। তার ফলে টার্মিনালের একটি ট্যাঙ্কে আগুন ধরে যায়। তবে কেউ হতাহত হননি।
এই বিবৃতিতে অবশ্য জানানো হয়নি যে, আক্রমণের পিছনে কারা আছে। তবে এই আক্রমণ করা হয়েছে ইয়েমেনে সৌদির নেতৃত্বাধীন জোটের সামরিক হস্তক্ষেপের ষষ্ঠ বার্ষিকীর ঠিক আগে। সম্প্রতি হুতি বিদ্রোহীরা সৌদি আরবে বেশ কয়েকবার ড্রোন হানা চালিয়েছে। তারা সৌদির তেলের টার্মিনালেও আক্রমণ করার চেষ্টা করেছে। তারা ইয়েমেনের মারিব শহরও সৌদির নেতৃত্বাধীন জোট সরকারের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করেছে। এখানে প্রাকৃতিক গ্যাস পাওয়া যায়।
এর জবাবে সৌদি-জোটও হুতির সামরিক ঘাঁটিতে বিমানহানা করেছে। তবে ইয়েমেনে শান্তি ফিরিয়ে আনতে সম্প্রতি সৌদি আরব নতুন করে উদ্যোগী হয়েছে। তারা জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে দেশজুড়ে যুদ্ধবিরতির কথাও বলেছে। বিমান ও সমুদ্রপথ খুলে দেয়ার কথাও বলা হয়েছে। কিন্তু হুতির দাবি, এই উদ্যোগ যথেষ্ট নয়। অবরোধ পুরোপুরি তুলে নিতে হবে।
ক্ষুধা, দারিদ্র্যসহ চরম মানবিক সংকটের মধ্য দিয়ে দিন পার করছেন ইয়েমেনের মানুষ৷ সবচেয়ে বেশি বিপদে আছে শিশুরা৷
ছবি: Reuters/K. Abdullah২০১৪ সালের শেষ দিকে ইয়েমেনের প্রেসিডেন্ট আবু রাব্বু মনসুর হাদিকে উৎখাত করে দেশটির হুতি বিদ্রোহীরা৷ ২০১৫ সালের মার্চে তাঁকে আবারও ক্ষমতায় বসাতে হামলা শুরু করে সৌদি নেতৃত্বাধীন আরব জোট৷ গত ডিসেম্বরে জাতিসংঘের নেতৃত্বে যুদ্ধবিরতি ও সৈন্য ফিরিয়ে নেয়ার চুক্তি হয়েছে, কিন্তু তা এখনও বাস্তবায়ন হয়নি৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/ H. Jamaliবিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাবে সৌদি হামলার পর থেকে এখন পর্যন্ত দেশটিতে ১০,০০০ মানুষ নিহত ও ৬০,০০০ হাজার জন আহত হয়েছেন৷ তবে ‘অ্যাকশন এগেইনস্ট হাঙ্গার’ নামের একটি সংগঠনের হিসাবে নিহতের সংখ্যা ৫৭,০০০ ছাড়িয়েছে৷ আরেক সংস্থার হিসাবে ৩৩ লাখ মানুষ দেশটিতে বাস্তুচ্যূত হয়েছে৷
ছবি: Reutersশিশুদের জন্য দেশটিতে বসবাস করা নরকের সমতুল্য বলে অভিহিত করেছে ইউনিসেফ৷ তাদের নভেম্বর ২০১৮ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ৫ বছরের নীচের ১৮ লাখ শিশু পুষ্টিহীনতায় ভুগছে৷ ‘সেভ দ্যা চিলড্রেন’এর হিসাবে এপ্রিল ২০১৫ থেকে অক্টোবর ২০১৮ পর্যন্ত ৮৫,০০০ শিশু চরম পুষ্টিহীনতায় মৃত্যুবরণ করেছে৷ ছবিতে পুষ্টিহীনতায় ভোগা ১২ বছর বয়সি এক মেয়েকে হাসপাতালের বিছানার পাশে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: Reuters/K. Abdullahদারিদ্র্যের কারণে প্রতি পাঁচ মেয়ে শিশুর দুজনেরই ১৫ বছর বয়সের আগে বিয়ে হয়ে যাচ্ছে৷ তিন চতুর্থাংশের আঠারো বছরের আগে বিয়ে হচ্ছে৷ অন্যদিকে কয়েক হাজার ছেলে শিশুকে যুদ্ধে সৈনিক হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে৷
ছবি: Reuters/K. Abdullahছবির এই শিশুর নাম আফাফ৷ পুষ্টিহীনতার কারণে দুই বছর ধরে সে স্কুলে যেতে পারছে না৷ জাতিসংঘের হিসাবে, দেশটিতে তার মতো ৭০ লাখ স্কুল বয়সি শিশু আছে৷ তাদের ২০ লাখই এখন শিক্ষা বঞ্চিত৷ আড়াই হাজারের বেশি স্কুল বন্ধ৷ যার দুই তৃতীয়াংশই হামলায় বিধ্বস্ত হয়েছে৷
ছবি: Reuters/K. Abdullahখাবারের দাম বেড়ে যাওয়ায় জীবন ধারণে হিমশিম খাচ্ছেন ইয়েমেনের নাগরিকরা৷ জাতিসংঘের হিসাবে দেশটির আশিভাগ মানুষেরই এখন কোনো না কোনো মানবিক সহযোগিতা প্রয়োজন৷ ইয়েমেনের দুই তৃতীয়াংশ জেলা রয়েছে প্রাক দুর্ভিক্ষ পর্যায়ে৷
ছবি: Reuters/K. Abdullahআরব রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে ইয়েমেন অন্যতম দারিদ্র্যপীড়িত৷ যুদ্ধ সেই পরিস্থিতিকে আরো নাজুক করেছে৷ ভেঙে পড়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা৷ যার কারণে মানবিক সহায়তা, জ্বালানি, খাদ্যসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য দেশের সব জায়গায় পৌঁছানো যাচ্ছে না৷ ছবির মহাসড়কটি ইয়েমেনের রাজধানী সানাকে যুক্ত করেছে৷ যেটি বিমান হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত৷
ছবি: Reuters/K. Abdullahদেশটির মানুষ সুপেয় পানির অভাবেও ভুগছেন৷ পাম্পের মাধ্যমে ভূগর্ভস্থ পানি তুলতে হয়৷ কিন্তু জ্বালানির অভাবে সব জায়গায় পানি তোলা সম্ভব হচ্ছে না৷ যে কারণে পানির দামও বেড়ে গেছে৷ অনেক জায়গায় পুকুরের পানিই ব্যবহার করছেন মানুষ৷
ছবি: Reuters/K. Abdullah ২০১৫ সাল থেকে ইয়েমেন অশান্ত। হুতি বিদ্রোহীরা রাজধানী সানা এবং উত্তরপশ্চিম ইয়েমেনের অনেকখানি এলাকা দখল করে নিয়েছে। বাকিটা সৌদির নেতৃত্বাধীন জোটের দখলে আছে। ইয়েমেনের লড়াইকে মূলত সৌদি বনাম ইরানের সংঘাত হিসাবেই দেখা হয়। যদিও হুতিরা দাবি করে, তাদের সঙ্গে ইরানের সম্পর্ক নেই। তাদের দাবি, তারা বিদেশিদের বিরুদ্ধে লড়ছে এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করছে।
জিএইচ/এসজি(এএফপি, রয়টার্স)