সৌদি আরব গিয়ে ওমরাহ পালন করতে গিয়ে নিখোঁজ হয়েছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের চার শিক্ষার্থী৷ এ নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে ঢাকা মেট্টোপলিটন পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট৷
বিজ্ঞাপন
গত জানুয়ারিতে সৌদি আরবে ওমরাহ পালন করতে গিয়ে আর বাংলাদেশে ফিরে আসেননি ময়মনসিংহের বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের চার শিক্ষার্থী৷ এই ঘটনায় এরইমধ্যে ময়মনসিংহ কোতোয়ালি থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছে তাদেরকে সৌদি আরবে পাঠানো ট্রাভেল এজেন্সি৷ তদন্ত শুরু করেছে ঢাকা মেট্টোপলিটন পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটও৷ বেশ কিছু তথ্যও পেয়েছেন তারা৷
সাইফুল ইসলাম
কাউন্টার টেররিজমের উপ-কমিশনার সাইফুল ইসলাম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘বিষয়টি আমাদের নজরে আসার পর আমরা অনুসন্ধান করতে গিয়ে দেখেছি, সৌদি আরবের বিতর্কিত বক্তা মুস্তাক মুহাম্মদ আরমান খানের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ ছিল৷ বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করা মুস্তাক ঢাকায় ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স এন্ড টেকনোলজিতে কিছুদিন শিক্ষকতা করেছেন৷ বছর তিনেক আগে তিনি সপরিবারে সৌদি আরব চলে যান৷ সৌদি আরবে যাওয়ার পর তারা কোথায় আছেন, কী করছেন, সে ব্যাপারেও কোন তথ্য পাওয়া যায়নি৷’’
নিখোঁজ শিক্ষার্থীদের মধ্যে রয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষিতত্ত্ব বিভাগের ছাত্র শেখ মিজানুর রহমান, উদ্যানতত্ত্ব বিভাগের আল-আমিন, কৌলিতত্ত্ব ও উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগের ফাহিম হাসান খান৷ এই তিনজনই মাস্টার্সে অধ্যয়নরত ছিলেন৷ আরেক নিখোঁজ শিক্ষার্থী আব্দুল মোমেন কৃষি অর্থনীতি ও গ্রামীণ সমাজবিজ্ঞান অনুষদের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র বলে জানা গেছে৷ তারা সবাই বিশ্ববিদ্যালয়টির হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলে থাকতেন৷
আবুল কাশেম
নিখোঁজ শিক্ষার্থীদের একজন ফাহিম হাসানের বাবা স্কুল শিক্ষক আবুল কাশেম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘ইন্টারমিডিয়েটে কিছুদিন সে নামাজ পড়তো৷ এরপর বন্ধ করে দেয়৷ কিছুদিন আগে আবার পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ শুরু করে৷ কয়েকদিন আগে পরীক্ষার সময় সে তার মাকে জানায়, বড় ভাইদের সঙ্গে ওমরাহ করতে যাবে৷ আমি তাকে বলি, এখনও তো বয়স হয়নি৷ সে বলে ওমরাহ করার বয়স লাগে না৷ সারা জীবনে কখনও কিছুই চায়নি আমার ছেলে৷ তাই আমি একমাত্র ছেলেকে ওমরাহ করার টাকা দিয়ে দিই৷ যাওয়ার আগে সে বলেছিল, সামনে বিসিএস পরীক্ষা দেব৷ চাকরি হয়ে গেলে তোমার আর কষ্ট করতে হবে না৷ এখন তো যা শুনছি, তাতে সবকিছু ওলটপালট হয়ে গেছে৷ আমি সরকারের কাছে অনুরোধ জানাই, আমার ছেলেকে যেন ফিরিয়ে এনে দেয়৷’’
গত ২৫ জানুয়ারিতে তারা সৌদি আরবের উদ্দেশ্যে রওনা হন৷ আল-আমিন ও মিজানুর রহমান যান ময়মনসিংহের সাদমান ট্রাভেল এজেন্সির মাধ্যমে৷ আর ফাহিম ও আব্দুল মোমেনকে পাঠায় বিএসএস ট্রাভেল এজেন্সি৷ সৌদি আরব পৌঁছানোর পর ওমরাহ না করে অন্য কোথাও চলে যান তারা৷ ২২ ফেব্রুয়ারি তাদের ভিসার মেয়াদ শেষ হলেও তারা দেশে ফেরেননি৷
গোলাম মসিহ
ফাহিম হাসানের মা সানজিদা খানম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘ওমরাহ যাওয়ার আগে সবশেষ কথা হয়েছিল৷ এরপর থেকে আর কোনো কথা হয়নি৷ কোথায় আছে, কেমন আছে আমরা কিছুই জানতে পারছি না৷ এই বিষয়টি নিয়ে পরিবারের সবাই খুবই উদ্বিগ্ন৷ আমরা সরকারের কাছে ছেলেকে ফিরিয়ে আনার দাবি জানাই৷’’
সৌদি আরবে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত গোলাম মসিহ টেলিফোনে ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এমন একটা বিষয় আমরা সংবাদমাধ্যমে দেখেছি, কিন্তু পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে আমাদের কাছে কোন নির্দেশনা আসেনি৷ আমরা তো আর পত্রিকার খবর দেখে ব্যবস্থা নিতে পারি না৷ নির্দেশনা এলে অবশ্যই আমরা বিষয়টি দেখবো৷’’
সৌদি আরবে গেলে যে ১৯ কাজ করা যাবে না
পর্যটন ভিসা চালু করেছে সৌদি আরব৷ ৪৯টি দেশের নাগরিকদের সেখানে ভ্রমণের সুযোগ রয়েছে৷ তবে দেশটিতে গিয়ে কী কী করতে পারবেন না, তার একটি তালিকাও প্রকাশ করা হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/I. Fassbender
যৌনতা প্রকাশ পায় এমন আচরণ
এমন কোনো আচরণ করা যাবে না যার মাধ্যমে যৌনতা প্রকাশ পায়৷ এ ধরেনের ‘অপরাধের’ জন্য গুণতে হবে তিন হাজার সৌদি রিয়াল৷ একই অপরাধ আবার করার জন্য জরিমানা ছয় হাজার ডলার৷
ছবি: picture-alliance/dpa/I. Fassbender
উচ্চ শব্দে গান বাজানো
কোনো আবাসিক এলাকায় যথাযথ অনুমতি ছাড়া উচ্চ শব্দে গান বাজানো যাবে না৷ এক্ষেত্রে এক বা একাধিক ব্যক্তি অভিযোগ জানালে দায়ীকে শাস্তি পেতে হবে৷ প্রথমবারের জন্য ৫০০ সৌদি রিয়াল আর পরবর্তীতে প্রত্যেক বারের জন্য এক হাজার রিয়াল করে গুণতে হবে এজন্য৷
ছবি: Fotolia/Valery Sibrikov
প্রার্থনার সময়ে গান বাজানো
প্রার্থনা বা নামাযের সময় কেউ গান বাজালে ১০০০ সৌদি রিয়াল জরিমানা করা হবে৷ একই অপরাধে পরবর্তীতে দিতে হবে ২০০০ রিয়াল করে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/A. Nabil
পোষা প্রাণীর বিষ্ঠা
পোষা প্রাণীর বিষ্ঠা পরিস্কার না করলে তা অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে৷ এজন্য প্রথবারের শাস্তি ১০০ রিয়াল জরিমানা, পরবর্তীতে ২০০ রিয়াল৷
ছবি: picture-alliance/empics
যত্রতত্র থুথু ও ময়লা ফেলা
নির্দিষ্ট স্থান ছাড়া কেউ ময়লা ফেললে কিংবা যেখানে সেখানে থুথু ফেলা হলে ৫০০ রিয়াল জরিমানা করা হবে৷ দ্বিতীয়বার একই কাজের জন্য ১০০০ রিয়াল গুণতে হবে৷
ছবি: AP
বয়স্ক আর প্রতিবন্ধীদের আসন
গণপরিবহনে ভুল করে বয়স্ক আর প্রতিবন্ধীদের জন্য সংরক্ষিত আসনে বসে গেলেই বিপদ৷ মাশুল দিতে হবে ২০০ ইউরো৷ দ্বিগুণ গুণতে হবে একই অপরাধ আবার করলে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
পাবলিক প্লেসে বাধা ডিঙ্গালে
খোলা জায়গায় কর্তৃপক্ষের ঘেরাও করা জায়গা অতিক্রম করলে একবারেই ৫০০ রিয়ালের জরিমানা৷ পরবর্তীতে হবে দ্বিগুণ জরিমানা৷
ছবি: picture-alliance/AA/S. Coskun
পাবলিক প্লেসে যথাযথ পোশাক পরা
পাবলিক প্লেসে সৌদি আরবের ‘ড্রেস কোডের’ সাথে যায় না এমন পোশাক পরা যাবে না৷ এমনকি পোশাকে ‘অপবিত্র আর অশ্লীল’ কোনো প্রতীকও থাকা চলবে না৷ কেউ অন্তর্বাস বা ঘুমানোর পোশাক পরে বাইরে বের হলেও অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে৷ এই তিনটি ক্ষেত্রেই প্রথমবার ১০০ আর পরবর্তীতে ২০০ রিয়াল করে জরিমানা দিতে হবে৷
ছবি: Getty Images/AFP
পোশাকে নগ্নতা
পাবলিক প্লেসে আপনার পোশাকে এমন কোনো ভাষা, ছবি বা প্রতীক থাকা যাবে না যা বৈষম্য ও বর্ণবাদ, পর্নগ্রাফি বা মাদকের ব্যবহার উস্কে দিতে পারে৷ এজন্য প্রথমবারই ৫০০ ইউরো গুণতে হবে৷
ছবি: Imago/Eibner Europa
গণপরিবহন ও দেয়ালে লেখালেখি
অনুমতি ছাড়া পাবলিক পরিবহন অথবা দেয়ালে লেখালেখি, আঁকাআঁকি করলে প্রথমবারের শাস্তি ১০০ রিয়াল জরিমানা৷ একই জরিমানা হবে বর্নবাদী কিংবা কোনো প্রচার সংক্রান্ত স্লোগান বা ছবি দিলেও৷ ১০০ রিয়াল মাশুল দিতে হবে বাণিজ্যিক প্রচাপত্র বিলি করার জন্যেও৷
ছবি: picture-alliance/epa
কাউকে আক্রমণ করা
শারীরিক বা মৌখিকভাবে কাউকে আক্রমণ করা যাবে না৷ এমন কর্মকাণ্ডে কেউ ভয় পেলে বা ক্ষতিগ্রস্থ হলে ১০০ রিয়াল গুণতে হবে৷
বৈদুতিক কোনো কিছু বা লেজার বিম ব্যবহার করে কাউকে ভয় দেখালে বা ক্ষতি করলে প্রথমবারের শাস্তি ১০০ রিয়াল, পরবর্তীতে ২০০ করে৷
ছবি: picture-alliance/C. Ohde
ছবি বা ভিডিও তোলা
অনুমতি ছাড়া কারো ছবি তুললে বা ভিডিও করলে বড় ধরনের অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে৷ একইভাবে অনুমতি ছাড়া তোলা যাবে না দুর্ঘটনা বা অন্য কোনো ঘটনার ছবিও৷ এসব ক্ষেত্রে প্রথমবারের শাস্তি ১০০০ রিয়াল৷ একই অপরাধ আবার করলে গুণতে হবে ২০০০ রিয়াল করে৷