সৌদির যুবরাজ মোহাম্মদ সালমানকে প্রধানমন্ত্রী হিসাবে নিয়োগ করলেন রাজা সালমান বিন আব্দুলআজিজ। তার দ্বিতীয় ছেলে যুবরাজ খালিদকে প্রতিরক্ষামন্ত্রী করেছেন তিনি।
বিজ্ঞাপন
সৌদি আরবে যুবরাজ সালমানকেই প্রকৃত শাসক বলা হয়। তাকেই প্রধানমন্ত্রী করলেন তার বাবা ও রাজা সালমান বিন আব্দুলআজিজ। মঙ্গলবার ওই রাজকীয় নির্দেশ জারি হয়েছে।
এর আগে তিনি ছিলেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী। আর যুবরাজ খালিদ ছিলেন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী। এখন যুবরাজ খালিদকে প্রতিরক্ষামন্ত্রী করা হলো।
তার আরেক ছেলে আব্দুলআজিজ বিন সালমান আগের মতোই শক্তিমন্ত্রী আছেন।
অর্থমন্ত্রী মোহাম্মদ আল-জাদান এবং বিনিয়োগমন্ত্রী খালিদ আল-ফালিহ রাজপরিবারের সদস্য নন। কিন্তু তাদের ওই পদে বহাল রাখা হয়েছে।
রাজকীয় নির্দেশ অনুসারে ৮৬ বছর বয়সি রাজা এখনো মন্ত্রিসভার বৈঠকে সভাপতিত্ব করবেন। সৌদির সরকারি টিভি জানাচ্ছে, রাজা সালমান মঙ্গলবারের মন্ত্রিসভার বৈঠকেও সভাপতিত্ব করেন। ২০১৫ সালে রাজা ক্ষমতায় বসেছিলেন। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে খারাপ স্বাস্থ্যের জন্য তাকে একাধিকবার হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়।
সৌদি ক্ষমতাকেন্দ্রে তারুণ্য
সৌদি আরবের ভবিষ্যৎ বাদশাহ মহম্মদ বিন সালমান ‘এমবিএস’ নামেও পরিচিত৷ গত কয়েক বছরে ক্ষমতাকেন্দ্রে তাঁর উত্থান সবার নজর কেড়েছে৷ এই তরুণ নেতা সম্পর্কে এই তথ্যগুলো কি জানা আছে?
ছবি: picture-alliance/dpa/R. Jensen
বাদশাহর আস্থাভাজন
অশীতিপর বাবা বাদশাহ সালমান কার্যত দেশের ক্ষমতা প্রিয় ছেলের হাতেই তুলে দিয়েছেন বলে অনেকে মনে করেন৷ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ছাড়াও তিনি পেট্রোলিয়াম কোম্পানি আরামকো ও দেশের অর্থনৈতিক সংস্কারের দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন৷ উপ প্রধানমন্ত্রী পদও তাঁর দখলে ছিল৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/Saudi Press Agency
ঝুঁকি নিতে ভয় পান না
প্রচণ্ড পরিশ্রমী বলে পরিচিত মহম্মদ বিন সালমান সৌদি শাসকগোষ্ঠীর এতকালের ধীরস্থির ভাবমূর্তি ভেঙে দিয়েছেন৷ অর্থনৈতিক সংস্কারসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে তিনি এতদিনের নানা প্রথা ভেঙে দ্রুত পদক্ষেপ নিয়ে সবাইকে চমকে দিয়েছেন৷ তাঁর সমর্থকরা মনে করেন, বর্তমান চ্যালেঞ্জগুলির মোকাবিলা করতে দেশে এমন নেতারই প্রয়োজন৷
ছবি: picture-alliance/abaca/Balkis Press
পররাষ্ট্র নীতির পরিবর্তন
এতকালের সংযম ভেঙে ফেলে সৌদি আরব গোটা অঞ্চলে নিজস্ব স্বার্থরক্ষায় বেশ কিছু বিতর্কিত পদক্ষেপ নিচ্ছে৷ ইরানের প্রতি বৈরি মনোভাব, ইয়েমেনে সেনা অভিযান থেকে শুরু করে কাতারকে একঘরে করে ফেলার সিদ্ধান্তের পেছনেও মহম্মদ বিন সুলতানের স্বাক্ষর স্পষ্ট৷ ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার স্থপতিও তিনি৷
ছবি: picture alliance / AP Photo
রাজপরিবারে উত্থান
সৌদি রাজপরিবারের জটিল ক্ষমতার কাঠামোর মধ্যে সম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দ্বীদের কোণঠাসা করে বাদশাহর ঠিক পরে শীর্ষ স্থানে পৌঁছানোর মতো অসাধ্যসাধন করেছেন ‘এমবিএস’৷ শুধু তাই নয়, এতকাল মনোনীত ‘ক্রাউন প্রিন্স’ মহম্মদ বিন নায়েফ (বামে) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও উপাধি খুইয়েও তাঁর প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করেছেন৷
ছবি: Reuters/Saudi Press Agency
ব্যতিক্রমী জীবন
সৌদি রাজপরিবারের সন্তানরা সাধারনত বিদেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করেন, কমপক্ষে মাস্টার্স ডিগ্রি পর্যন্ত পৌঁছে যান৷ মহম্মদ বিন সালমান সেই পথে না গিয়ে দেশে থেকেই আইন নিয়ে পড়েছেন এবং বাবার কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত থেকেছেন৷ বাদশাহ সালমান যখন নিজে ক্রাউন প্রিন্স ছিলেন, তখনও তিনি বাবার রাজসভার দায়িত্বে ছিলেন৷
ছবি: Getty Images
পেট্রোলিয়ামের উপর নির্ভরতা
সৌদি অর্থনীতি এতকাল তার বিশাল পেট্রোলিয়াম ভাণ্ডারের উপর নির্ভর করে ছিল৷ মহম্মদ বিন সালমান অর্থনীতির খোলনলচে বদলে ২০৩০ সালের মধ্যে সেই পরিস্থিতি বদলানোর উদ্যোগ শুরু করেছেন৷ ভরতুকিসহ অনেক সুযোগসুবিধা বন্ধ করে তিনি বেশ কিছু অপ্রিয় সিদ্ধান্তও নিয়েছেন৷
ছবি: Reuters/Ali Jarekji
ধর্মীয় অনুশাসন
সৌদি আরবের প্রভাবশালী ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গে এখনো কোনো বড় সংঘাতে যাননি মহম্মদ বিন সালমান৷ তবে দেশের বিশাল যুবসমাজের কথা ভেবে তিনি সংগীতের জলসা, অ্যামিউজমেন্ট পার্ক ইত্যাদির ব্যবস্থা করেছেন৷ সেইসঙ্গে ধর্মীয় অনুশাসনের তত্ত্বাবধায়ক পুলিশের দৌরাত্ম্য কিছুটা কমিয়েছেন৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Hilabi
7 ছবি1 | 7
যুবরাজ সালমানের ভাবমূর্তি
যুবরাজ সালমান সৌদি আরবের জন্য ভিশন ২০৩০ পরিকল্পনা নিয়ে চলেছেন। তিনি দেশের অর্থনীতি ও পরিকাঠামোর আমূল বদল চান। তিনি শর্তসাপেক্ষে মেয়েদের গাড়ি চালানোর অনুমতি দিতে চান।
কিন্তু এই আধুনিকমনস্ক যুবরাজের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি বিক্ষোভ বরদাস্ত করেন না, সমালোচনা সহ্য করতে পারেন না। তিনি নাগরিক অধিকার দিতে রাজি নন।
সৌদি সাংবাদিক জামাল খাসোগির হত্যার অভিযোগও ছিল তার বিরুদ্ধে। এই কারণে একসময় পশ্চিমা দেশগুলি যুবরাজ সালমানের সঙ্গে সম্পর্ক রাখত না। কিন্তু এখন সময় বদলেছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন গিয়ে যুবরাজের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। জার্মান চ্যান্সেলর শলৎস গত সপ্তাহে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলি সফরে গেছিলেন। তিনিও যুবরাজ সালমানের সঙ্গে কথা বলেছেন।