ঘটনার শুরু একটি টুইটকে ঘিরে৷ সেখানে সৌদি আরবকে তথাকথিত ‘ইসলামিক স্টেট' বা আইএস-এর সঙ্গে তুলনা করায় ঐ টুইটার ব্যবহারকারীর বিরুদ্ধে মামলা করা হবে বলে জানান সৌদি বিচার মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা৷
বিজ্ঞাপন
এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে মুখর হয়ে উঠেছেন অন্য টুইটার ব্যবহারকারীরা৷ হ্যাশট্যাগ ‘সু-মি-সৌদি' (#SueMeSaudi) ও ‘সৌদি-অ্যারাবিয়া-ইস-আইসিস' (#SaudiArabiaIsISIS) ব্যবহার করে তাঁরা প্রতিবাদ জানাচ্ছেন৷
সৌদি বিচার মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা সরকারপন্থি আল রিয়াদ পত্রিকাকে জানান, ‘‘বিচার মন্ত্রণালয় ঐ ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা করবে যে বলেছে ‘অ্যাপোসটাসি' বা ধর্মচ্যুতির জন্য একজন মানুষের বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের রায় দেয়া ‘আইসিস-এর মতো' কাজ৷''
ধর্মচ্যুতির অভিযোগে ফিলিস্তিনি কবি আশরাফ ফায়াদের বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের রায় দেয় সৌদি কর্তৃপক্ষ৷ এই রায়েরই বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছিলেন ঐ টুইটার ব্যবহারকারী৷ তবে বিচার মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা টুইটার ব্যবহারকারীর নাম কিংবা তাঁকে কী শাস্তি দেয়া হবে সেটা উল্লেখ করেননি৷
আর মহাজন নামে এক টুইটার ব্যবহারকারী অনলাইন নিউজ পোর্টাল মিডলইস্টআই.নেট-এর একটি টুইট রিটুইট করেছেন৷ ঐ টুইটে বিভিন্ন অপরাধের কারণে ইসলামিক স্টেট ও সৌদি আরব কী ধরণের শাস্তি দিয়ে থাকে তা উল্লেখ করা হয়েছে৷
‘দ্য টাইমস'-এর কার্টুনিস্ট পিটার ব্রুকস তাঁর আঁকা একটি কার্টুন টুইট করেছেন৷ এতে দেখা যাচ্ছে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার ক্ষেত্রে আইএস ও সৌদি আরব প্রায় একই উপায় ব্যবহার করে থাকে৷
কিথ স্টোরিয়ার মনে করেন আইএস বা আইসিস ও সৌদি আরবের মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে, এখনও পর্যন্ত আইসিস-এর প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন নেই৷
জেসন স্পেনসার টুইটারে একটি জরিপ আয়োজন করেছিলেন৷ তাতে ভোট পড়েছে ৯৭৩টি৷ এর মধ্যে ৭৫ শতাংশ ভোটার মনে করেন, ধর্মচ্যুতির কারণে একজনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়ে সৌদি বাদশা সালমান ‘পুরোপুরি আইসিস-জিহাদিস্ট'-এর মতো কাজ করছেন৷
আইএস কী, কোথায় এবং কেন?
প্রতিদিনই খবরে আইএস৷ কোনোদিন নৃশংস হত্যাকাণ্ডের জন্য, কোনোদিন হয়তো ইরাক বা সিরিয়ায় কোনো অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার জন্য৷ আইএস বলছে, ইসলামি খেলাফত কায়েম করার জন্য যুদ্ধে নেমেছে তারা৷ ছবিঘরে আইএস সম্পর্কে কিছু তথ্য....
ইসলামিক স্টেট বা আইএস আসলে কী?
আল কায়েদা থেকে তৈরি হওয়া সুন্নি মুসলমানদের জঙ্গি সংগঠন আইএস৷ সাদ্দাম পরবর্তী সময়ে ইরাকে এবং বাশার আল আসাদের আমলে সিরিয়ায় সুন্নিদের হতাশা থেকেই জন্ম সংগঠনটির৷ আইএস-এর পতাকায় লেখা থাকে, ‘মুহাম্মদ (সা.) আল্লাহর নবী’ এবং ‘আল্লাহ ছাড়া আর কোনো সৃষ্টিকর্তা নেই৷’
ছবি: AP
আইএস কোথায় সক্রিয়?
শরিয়া আইন অনুযায়ী পরিচালিত হবে এমন রাষ্ট্র, বা ইসলামি খেলাফত প্রতিষ্ঠা করতে চায় আইএস৷ সিরিয়া এবং ইরাকেই প্রত্যক্ষভাবে সক্রিয় তারা৷ দুটি দেশেই রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার সুযোগে বেশ বড় অঞ্চল দখল করে নিয়েছে আইএস৷
আইএস কেন আলাদা?
মূলত নিষ্ঠুরতার জন্য৷ শত্রুপক্ষ এবং নিরীহ মানুষের মনে আতঙ্ক ছড়াতে তারা এমন বর্বরতা এবং নিষ্ঠুরতা প্রদর্শন করে যা আগে কেউ করেনি৷ জবাই করে ভিডিও প্রচার, পুড়িয়ে মারা, বাবার সামনে মেয়েকে জবাই করা এবং তার তার ভিডিও প্রচার, মেয়েদের যৌনদাসী বানানো আর পণ্যের মতো বিক্রি করা – এসব নিয়মিতভাবেই করছে আইএস৷ কোনো অঞ্চল দখলে নেয়ার পর সেখানে শাসন প্রতিষ্ঠায় মন দেয় আইএস৷
ছবি: gebphotography - Fotolia.com
অন্য জঙ্গি সংগঠনগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক
আইএস যদিও শুধু সিরিয়া এবং ইরাকেই সক্রিয়, তবে বিশ্বের অন্যান্য ইসলামি জঙ্গি সংগঠনগুলো থেকে বিচ্ছিন্ন নয়৷ নাইজেরিয়ার জঙ্গি সংগঠন বোকো হারাম কয়েকদিন আগেই জানিয়েছে, আইএস-কে তারা সমর্থন করে৷ দুটি সংগঠনের মধ্যে একটি জায়গায় মিলও আছে৷ আইএস-এর মতো বোকো হারামও নিষ্ঠুরতা এবং বর্বরতার প্রতিভূ হয়ে উঠেছে৷ অন্য ধর্মের নারীদের প্রতি দুটি সংগঠনের দৃষ্টিভঙ্গি এবং আচরণই মধ্যযুগীয়৷
ছবি: Getty Images/A. Katib
আইএস-এর অনুসারী কারা?
অনুসারী সংগ্রহের সাফল্যেও আইএস অন্য সব জঙ্গি সংগঠনের চেয়ে আলাদা৷ এ পর্যন্ত অন্তত ২০ হাজার বিদেশী যোদ্ধা আইএস-এ যোগ দিয়েছে৷ তাদের মধ্যে ৪ হাজারই পশ্চিম ইউরোপ এবং উত্তর অ্যামেরিকার৷
আইএস-কে রুখতে অন্য দেশগুলো কী করছে?
যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে বেশ কিছু পশ্চিমা এবং আরব দেশ সিরিয়া ও ইরাকে আইএস ঘাঁটির ওপর বিমান থেকে বোমা হামলা চালাচ্ছে৷ বিবিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী, এ পর্যন্ত সিরিয়ায় ১৪২২ এবং ইরাকে ২২৪২ বার হামলা হয়েছে৷ কোনো কোনো সরকার দেশের অভ্যন্তরেও কিছু ব্যবস্থা নিচ্ছে৷ সিরিয়া ফেরত অন্তত ৩০ জন সন্দেহভাজন জঙ্গির বিচার শুরু করবে জার্মানি৷ গত মাসে সৌদি পুলিশও ৯৩ জন সন্দেহভাজন আইএস জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করেছে৷
6 ছবি1 | 6
সংকলন: জাহিদুল হক
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ
প্রিয় পাঠক, আপনারও কি সৌদি আরবকে আইএস-এর মতো মনে হয়? আপনার ভাবনা অন্যদের জানাতে পারেন নীচে মন্তব্যের ঘরে৷