‘ট্রাম্পের ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা অর্থহীন'
৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৭প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর থেকেই ট্রাম্প একটার পর একটা নির্বাহী আদেশে সই করছেন, দিয়ে চলেছেন একের পর এক নির্দেশ৷ তবে তার মধ্যে সবচেয়ে বিতর্কিত বোধহয় শরণার্থীদের, বিশেষ করে মুসলিম শরণার্থীদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করতে না দেওয়ার বিষয়টি৷ ‘‘এই নির্বাহী নির্দেশ একদিকে যেমন সংবিধানবিরোধী, অন্যদিকে তেমনই বিশ্বের জন্য এক অশনিসংকেত'', বলেন আরিফ জামাল৷
অ্যামেরিকার নতুন প্রেসিডেন্টের আদেশ অনুযায়ী, আগামী চার মাস দেশটিতে কোনো শরণার্থী প্রবেশ করতে পারবেন না৷ সিরীয় শরণার্থীদের ক্ষেত্রে সময়টি চার মাস নয়, অনির্দিষ্টকাল৷ এছাড়া সাতটি মুসলিমপ্রধান দেশ – ইরাক, ইরান, লিবিয়া, সোমালিয়া, সুদান, সিরিয়া ও ইয়েমেনের নাগরিকরা আগামী তিন মাস প্রবেশ করতে পারবেন না যুক্তরাষ্ট্রে৷
ট্রাম্পের দাবি, এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার অন্যতম কারণ ২০০১ সালে টুইন টাওয়ারে জঙ্গি হামলা৷ যুক্তরাষ্ট্রের জন্য তো বটেই, টুইন টাওয়ারে বিমান হামলা ছিল গোটা বিশ্বকেই পাল্টে দেওয়া একটি ঘটনা৷ অথচ আরিফ জামালের কথায়, ‘‘তারপরেও ডোনাল্ড ট্রাম্পের এই যুক্তি মেনে নেওয়া যায় না৷'' আর তার প্রধান কারণ হলো, ঐ হামলার সঙ্গে জড়িতরা যে চারটি দেশের নাগরিক (সৌদি আরব, মিশর, লেবানন, ও সংযুক্ত আরব আমিরাত) ছিল, সেই দেশগুলোর ওপর কিন্তু কোনোরকম নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়নি৷
ডয়চে ভেলে: নাইন ইলেভেনের সঙ্গে ওসামা বিন লাদেনের সহচর ৪৬ বছর বয়সি খালিদ শেখ মোহাম্মেদসহ অনেকেই জড়িত ছিল৷ এদের মধ্যে অন্যতম সৌদি আরবের নাগরিক ওয়ালিদ বিন আটাশ ও মোস্তফা আহমেদ আল-হাওয়াসউই৷ তাহলে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সৌদি আরবের ওপর কেন এই নিষেধাজ্ঞা জারি করলেন না?
আরিফ জামাল: প্রসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘স্ট্র্যাটেজি' আসলে ঠিক কী, সেটা এত তাড়াতাড়ি বোধ হয় বলা সম্ভব নয়৷ তবে একটা কারণ খুব সহজ, সেটা হলো, তিনি সেই সব দেশকে তাঁর এই নিষেধাজ্ঞার তালিকা থেকে বাদ দিয়েছেন, যাদের সঙ্গে বা যে সব দেশের সঙ্গে তাঁর বাণিজ্যিক কোনো সম্পর্ক আছে৷ আর সৌদি আরব যে সে সব দেশের অন্যতম, সেটা তো বলাই বাহুল্য৷
যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে সাম্প্রতিক সময় যে সব সন্ত্রাসী হামলা ঘটে গেছে – এই যেমন অরল্যান্ডোতে সমকামীদের একটি নৈশক্লাবে ঢুকে গুলি চালিয়ে ৫০ জনকে হত্যার ঘটনাটা – সেটা কিন্তু করেছিল আফগানিস্তান এবং পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত সন্ত্রাসীরা৷ তাহলে এ দু'টি দেশের নাগরিকদের কেন রেহাই দিলেন ট্রাম্প? পাকিস্তান আর আফগানিস্তানে তো তাঁর কোনো বিনিয়োগ নেই...৷
না নেই৷ তবে এই মুহূর্তে আফগানিস্তানের নাগরিকদের ওপর এই নিষেধাজ্ঞা জারি করা হলে মুশকিল হতো বৈকি৷ ভুলে গেলে চলবে না যে, যুদ্ধবিদ্ধস্ত এই দেশটিতে এখনও মোতায়েন রয়েছে বহু মার্কিন সেনা৷ তাই সেখান থেকে পুরোপুরি সেনা প্রত্যাহারের আগে এটা তিনি করতে পারেন না৷
পাকিস্তানের বিষয়টা আলাদা৷ পাকিস্তানের নাগরিক আলি আব্দ-আল-আজিজ আলি যে নাইন ইলেভেনের সেই হামলার সঙ্গে জড়িত ছিল, সেটা প্রমাণিত৷ তারপরও আমার মনে হয়, গোটা মুসলিম বিশ্বের জন্যই হয়ত ভবিষ্যতে কোনো একটি বিশেষ এবং চরম ‘স্ট্র্যাটেজি' বা পরিকল্পনা করেছে ট্রাম্পের প্রশাসন৷ তবে সেটা ঠিক কী – এখনই তা বলা যাচ্ছে না৷ এর জন্য আমাদের আরো কিছুটা সময় অপেক্ষা করতে হবে৷ তাছাড়া ওয়াশিংটন যদি এবার সত্যিই মস্কোর সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধে, তাহলে কিন্তু বিশ্ব রাজনীতিতে আমূল একটা পরিবর্তন আসবে, পরিবর্তন হবে ক্ষমতার কেন্দ্রেরও৷ আর সেটা হলে মধ্যপ্রাচ্য এবং দক্ষিণ এশিয়া – দু'টি এলাকাই হয়ে উঠবে গুরুত্বপূর্ণ৷
আর ইরান? ইরানের সঙ্গে সম্পর্কটা তখন কি নরম হয়ে আসবে?
হ্যাঁ, আমার তো সেটাই মনে হয়৷ সেটা করলে মধ্যপ্রাচ্য এবং দক্ষিণ এশিয়ায় ‘টেনশন' কমবে৷ আসলে এই মুহূর্তে ট্রাম্প শুধুমাত্র তাঁকে যারা এমনিতেই সমর্থন করে, তাঁদের একজোট করায় ব্যস্ত – জাতীয়তাবাদী, খ্রিষ্টান মৌলবাদী, চরমপন্থি শক্তিগুলিকে৷ এরপর তিনি কী করেন, সেটাই দেখার বিষয়৷ তবে একটা কথা বলতে পারি যে, ট্রাম্পের এই নির্বাহী আদেশের যত সমালোচনাই হোক, সৌদি আরব, মিশর বা পাকিস্তানকে বাদ দিয়ে মুসলিমবিদ্বেষ সম্ভব নয়৷ আর সেটা ডোনাল্ড ট্রাম্পও পারবেন না৷ তিনি ব্যর্থ হবেনই৷
আরিফ জামাল, যুক্তরাষ্ট্রবাসী সাংবাদিক এবং নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ
সাক্ষাৎকার: শামিল শামস/ডিজি
সম্পাদনা: আশীষ চক্রবর্ত্তী
সাক্ষাৎকারটি কেমন লাগলো? জানান আমাদের, লিখুন নীচের ঘরে৷