সৌদি আরবের সঙ্গে সম্পর্ক পুনর্বিবেচনা করতে চায় ওয়াশিংটন
১২ অক্টোবর ২০২২বিশাল আদর্শগত ফারাক সত্ত্বেও সৌদি আরব ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রবহু দশক ধরে পারস্পরিক নির্ভরতার সূত্রে বাঁধা ছিল৷ সেই সম্পর্ক বিশ্ববাজারে ন্যায্য মূল্যে পেট্রোলিয়ামের ধারাবাহিক জোগান সম্ভব করেছে৷ অন্যদিকে ইরান ও ইসরায়েলের মতো দেশের সমরসজ্জা সত্ত্বেও অ্যামেরিকার সহায়তায় সৌদি আরব নিজস্ব নিরাপত্তা ও সুরক্ষা বজায় রাখতে পেরেছে৷ কিন্তু সৌদি যুবরাজ ও প্রধানমন্ত্রী মহম্মদ বিন সালমান এখন আর সেই ‘বিশেষ সম্পর্ক'-এর তোয়াক্কা করছেন না৷ এমনকি সৌদি সাংবাদিক খাশোগজির হত্যাকাণ্ডে বিন সালমানের ভূমিকা সম্পর্কে তীব্র বিতৃষ্ণা সত্ত্বেও মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন গত জুলাই মাসে সে দেশে গিয়ে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিলেও সৌদি আরব ভিন্ন পথে হাঁটছে৷ ইউক্রেন যুদ্ধের মাঝে পেট্রোলিয়ামের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে রাখতে উৎপাদন বাড়ানোর অনুরোধ সত্ত্বেও সে দেশ বরং রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিনের সঙ্গে সমঝোতার মাধ্যমে তেল বাবদ আয় আরও বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ ফলে অ্যামেরিকায় মধ্যবর্তী নির্বাচনের আগে পেট্রোলিয়ামের মূল্যবৃদ্ধির জের ধরে মূল্যস্ফীতিতে রাশ টানতে বাইডেন প্রশাসনকে আরও বেগ পেতে হচ্ছে৷
এমন পরিস্থিতিতে সৌদি আরবের সঙ্গে ‘বিশেষ সম্পর্ক' পুনর্বিবেচনা করার ইঙ্গিত দিচ্ছে ওয়াশিংটন৷ বিশেষ করে গত সপ্তাহে পেট্রোলিয়াম উৎপাদনকারী দেশগুলির গোষ্ঠী ওপেক এবং রাশিয়ার মতো কিছু দেশ মিলে উৎপাদন কমানোর সিদ্ধান্ত নেওয়ায় এমন পরিণতি অপরিহার্য বলে মনে করছেন প্রেসিডেন্ট বাইডেন৷ সিএনএন-এর সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে তিনি অবশ্য সম্ভাব্য সেই পরিকল্পনার খুঁটিনাটী বিষয় সম্পর্কে জানাতে অস্বীকার করেন৷ উল্লেখ্য, এক দিন আগে মার্কিন সংসদে ডেমোক্র্যাটিক দলের প্রভাবশালী সদস্য বব মেনেনডেস অস্ত্র বিক্রিসহ সব ক্ষেত্রে সৌদি আরবের সঙ্গে সম্পর্ক স্থগিত রাখার পক্ষে সওয়াল করেছিলেন৷ দলমতনির্বিশেষে মার্কিন কংগ্রেসের মধ্যে এ বিষয়ে ঐকমত্যের উদ্যোগ চলছে৷ আঞ্চলিক নিরাপত্তার ক্ষেত্রে ইরানের ভূমিকা মাথায় রেখেই পুনর্মূল্যায়নের উপর জোর দিচ্ছেন মার্কিন নেতারা৷
সংকটের সময়ে ওপেক প্লাস গোষ্ঠীর আচরণ অ্যামেরিকাসহ পশ্চিমা বিশ্বে ক্ষোভের সৃষ্টি করছে৷ বিশেষ করে ইউক্রেনের উপর রাশিয়ার হামলার শাস্তি হিসেবে রুশ পেট্রোলিয়াম রপ্তানির ঊর্দ্ধসীমা বেঁধে দেওয়ার উদ্যোগে সহায়তার বদলে সৌদি আরব যেভাবে পুটিনের সঙ্গে বোঝাপড়া করছে, তা চরম অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ যুবরাজ বিন সালমানই এমন আচরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, সে বিষয়ে কোনো সংশয় নেই৷ খাশোগজি হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে বাইডেনের সঙ্গে শীতল ব্যক্তিগত সম্পর্কও এ ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখছে বলে মার্কিন কর্মকর্তারা মনে করছেন৷
সৌদি আরব অবশ্য ওপেকের ১৩টি সদস্য দেশ ও ওপেক প্লাসের আওতায় আরও ১০টি পেট্রোলিয়াম উৎপাদনকারী দেশের সিদ্ধান্তের পেছনে কোনো রাজনৈতিক কারণ মানতে অস্বীকার করছে৷ সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী যুবরাজ ফয়সল বিন ফারহান বলেন, সদস্য দেশগুলি শুধুমাত্র অর্থনৈতিক কারণেই সর্বসম্মতভাবে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ ওয়াশিংটনে সৌদি দূতাবাস এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, যে অ্যামেরিকার সঙ্গে ‘কৌশলগত সম্পর্ক' গোটা মধ্যপ্রাচ্যের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা আরও মজবুত করে আসছে এবং দুই দেশের স্বার্থরক্ষা করছে৷
এসবি/কেএম (রয়টার্স/এএফপি)