কাতারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ মোহামেদ বিন আব্দুলরহমান আল থানি সৌদি আরবের সমালোচনা করে বলেছেন, দেশটি ‘অত্র অঞ্চলকে অস্থিতিশীল' করে তুলছে৷ ডয়চে ভেলের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে এই মন্তব্য করেন তিনি৷
বিজ্ঞাপন
একটি কাতারি সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের উদ্বোধন করতে জার্মানির বার্লিনে এসেছেন কাতারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী৷ তিনি বলেন, নিরাপত্তা ইস্যুর ‘ধোঁয়া’ তুলে সৌদি আরব কাতারের অর্থনীতির ক্ষতি করছে৷
উল্লেখ্য, কাতারের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদকে সমর্থন দেয়ার অভিযোগ এনে গত জুলাইতে সৌদি আরব সহ মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশ কাতারের উপর অবরোধ আরোপ করে৷ ফলে কাতার ঐ অঞ্চলে একা হয়ে পড়ে৷ প্রয়োজনীয় খাবারের সংকট দেখা দিয়েছে, কাতার থেকে আকাশপথে চলাচল কঠিন হয়ে উঠেছে৷
Qatar 'ready for dialogue'
04:47
২০১১ সালের আরব বসন্তের সময় থেকেই মধ্যপ্রাচ্যের দু'টি প্রভাবশালী দেশের মধ্যে মতপার্থক্য দেখা দেয়৷ কাতার ঐ আন্দোলনকে সমর্থন জানালেও সৌদি আরব তার বিরোধী ছিল৷ এছাড়া ইরানের সঙ্গে কাতারের সুসম্পর্কের কারণেও সৌদি আরবের সঙ্গে কাতারের সম্পর্কে শীতলতা দেখা দিয়েছিল৷
কাতারের বিরুদ্ধে আনা সন্ত্রাসবাদের অভিযোগ অস্বীকার করে আল থানি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে কাতার আসলে সক্রিয়৷ ইসলামিক স্টেটের বিরুদ্ধে লড়তে বৈশ্বিক যে জোট গড়ে উঠেছে তার অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য কাতার৷’’
নিষেধাজ্ঞার ধাক্কা সামলাতে কতটা প্রস্তুত কাতার?
সৌদি নেতৃত্বে জোট কাতারের উপর প্রবল চাপ বজায় রাখছে৷ সে দেশ তাদের শর্ত পূরণ না করায় উত্তেজনা কমার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না৷ নিষেধাজ্ঞাসহ অন্যান্য পদক্ষেপের মুখে সে দেশ কতকাল মাথা উঁচু করে থাকতে পারবে?
ছবি: Getty Images/ANOC/M. Runnacles
একঘরে করে রাখার প্রচেষ্টা
জুন মাসের শুরুতেই কাতারের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ও পরিবহণ যোগাযোগ ছিন্ন করেছিল সৌদি আরব, বাহরিন, সংযুক্ত আরব আমিরাত৷ সন্ত্রাসবাদে মদত সহ একাধিক অভিযোগ আনা হয়েছে কাতারের বিরুদ্ধে৷ কাতার অবশ্য সব অভিযোগ অস্বীকার করেছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/K. Jaafar
শর্ত মানতে অস্বীকার
সৌদি নেতৃত্বে জোট কাতারের কাছে ১৩টি শর্ত পেশ করেছিল৷ আল জাজিরা নেটওয়ার্ক বন্ধ করে দেওয়া, ইরান ও তুরস্কের সঙ্গে সম্পর্কের মাত্রা কমানো সহ একাধিক দাবি পেশ করা হয়েছে৷ কিন্তু কাতার অনেক অভিযোগ সম্পূর্ণ উড়িয়ে দিয়েছে, বাকিগুলির ক্ষেত্রে নতি স্বীকার করতে প্রস্তুত নয়৷
ছবি: picture alliance/dpa/T.Brakemeier
নিষেধাজ্ঞার মোকাবিলা
সৌদি আরবের সঙ্গে স্থলপথে পরিবহণ যোগাযোগ ছিন্ন হবার ফলে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সরবরাহে টান পড়েছে৷ পরিস্থিতি সামাল দিতে কাতার দ্রুত সমুদ্রপথে পণ্য সরবরাহের নতুন ব্যবস্থা করে ফেলে৷ ফলে অভাব-অনটন দেখা যায়নি৷ তবে আমদানি সংক্রান্ত ব্যয় অবশ্যই বেড়েছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/shalome05
আর্থিক ও অর্থনৈতিক প্রস্তুতি
আচমকা নিষেধাজ্ঞার ফলে দেশের আর্থিক ও অর্থনৈতিক কাঠামোয় কিছু রদবদল করতে হয়েছে কাতারকে৷ স্থানীয় ব্যাংকে কোটি কোটি ডলার জমা দিয়ে এবং এলএনজি গ্যাসের উৎপাদন ৩০ শতাংশ বাড়িয়ে আপাতত পরিস্থিতি সামাল দিয়েছে ছোট্ট অথচ বিত্তশালী এই দেশটি৷ অতএব অদূর ভবিষ্যতে নিষেধাজ্ঞার ফলে তেমন ক্ষতির আশঙ্কা নেই৷
ছবি: imago/Photoshot/Construction Photography
নতুন নিষেধাজ্ঞার কালো ছায়া
সৌদি নেতৃত্বে জোট কাতারের উপর বাড়তি নিষেধাজ্ঞার ইঙ্গিত দিয়েছে৷ এর আওতায় ব্যাংকিং সম্পর্ক ছিন্ন করা হতে পারে৷ তাছাড়া যে সব কোম্পানি কাতারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখবে, তাদের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করতে পারে এই জোট৷ কাতার সেই ধাক্কা সামলানোরও প্রস্তুতি নিচ্ছে৷ এক্ষেত্রে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা ডাব্লিউটিও কাতারের সহায়তায় এগিয়ে আসতে পারে৷
ছবি: Imago/H. Sobik
নিষেধাজ্ঞার সম্ভাব্য পরিণতি
বিপুল অংকের অর্থ ও সম্পদের ফলে কাতার প্রাথমিক ধাক্কা সামলে নিতে পারবে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন৷ গ্যাস ও অন্যান্য পণ্য বিক্রির পথে বাধা না এলে কিছু ধাক্কা সত্ত্বেও কাতারের অর্থনীতিও চালু থাকবে বলে তাঁদের ধারণা৷ সে দেশের সরকার এখন থেকেই নানা পদক্ষেপের কথা ভাবছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/E. Munoz Alvarez
ব্যাংকিং ব্যবস্থায় ঝুঁকি
বর্তমান সংকটের ফলে কাতারের ব্যাংকিং ব্যবস্থা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে৷ কারণ ব্যাংকগুলি অর্থের জন্য বিদেশের উপর বড় নির্ভরশীল৷ গত মে মাসে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলির প্রায় ৩৬ শতাংশ লায়াবিলিটি ছিল বিদেশিদের হাতে৷ সেই অর্থে টান পড়লে কাতারকে নানাভাবে ঘাটতি পূরণ করতে হবে৷ বিশেষ করে বিদেশে কাতারের কিছু সম্পত্তি বিক্রি করতে হতে পারে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
7 ছবি1 | 7
তিনি বলেন, কাতারের সঙ্গে মধ্যপ্রাচ্যের অন্য দেশগুলোর যে সমস্যা দেখা দিয়েছে তা নিয়ে আলোচনা করতে আগ্রহী তাঁর দেশ৷ কিন্তু সৌদি আরব ও আরব আমিরাত আলোচনা করতে চায় না বলে অভিযোগ করেন কাতারি পররাষ্ট্রমন্ত্রী৷ তিনি বলেন, কথা বলতে না চাওয়ার অর্থ হচ্ছে, তারা যে নিরাপত্তা ইস্যুর বিষয়টি সামনে নিয়ে এসেছে তা ঠিক নয়৷ কারণ তারা যদি সত্যিই নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত থাকত তাহলে সমস্যার সমাধানে বৈঠকে বসত৷
আল থানি বলেন, মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশ অবরোধ আরোপ করায় সাধারণ মানুষের সমস্যা হচ্ছে৷ ‘‘শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের করে দেয়া হচ্ছে, পরিবারের সদস্যদের বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হচ্ছে, খাবার ও ওষুধের মতো প্রয়োজনীয় পণ্য পাওয়া সাধারণ মানুষের জন্য কঠিন হয়ে উঠেছে,’’ বলেন তিনি৷ ‘‘সৌদি আরব, ইউএই ও বাহরাইন ২৬ হাজারের বেশি মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটিয়েছে,’’ অভিযোগ করেন কাতারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী৷