মধ্যপ্রাচ্যে গত পাঁচ বছরে অস্ত্র আমদানি দ্বিগুণেরও বেশি বেড়েছে বলে জানিয়েছে সুইডেনভিত্তিক সংস্থা ‘স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইন্সটিটিউট' বা সিপ্রি৷ সৌদি আরবে অস্ত্র আমদানি ২২৫ শতাংশ বেড়েছে বলে জানায় সংস্থাটি৷
বিজ্ঞাপন
সোমবার প্রকাশিত সিপ্রির প্রতিবেদনে বলা হয়, সৌদি আরব ২০১৩-২০১৭ মেয়াদে ২০০৮-২০১২ সময়কালের তুলনায় ২২৫ শতাংশ বেশি অস্ত্র কিনেছে৷ গত কয়েক বছর ধরে ইয়েমেনে ইরান-সমর্থিত হুথি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছে দেশটি৷
সিপ্রির গবেষণা বলছে, সৌদি আরব বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অস্ত্র আমদানিকারক৷ গত সপ্তাহে দেশটি ব্রিটেন থেকে ৪৮টি অত্যাধুনিক ফাইটার জেট কেনার চুক্তি করেছে৷ মানবাধিকার কর্মীদের অভিযোগ, পশ্চিমা বিশ্বের কাছে থেকে কেনা অস্ত্র দিয়ে সৌদি আরব ইয়েমেনে নিরীহ মানুষ হত্যা করছে৷ এদিকে, চলতি বছরের শুরুতে জার্মান সরকার জানিয়েছে, তারা ইয়েমেন যুদ্ধে লিপ্ত কারও কাছে অস্ত্র বিক্রির অনুমোদন দেবে না৷ উল্লেখ্য, জার্মানি বিশ্বের চতুর্থ অস্ত্র বিক্রেতা৷ গত পাঁচ বছরে জার্মানির অস্ত্র বিক্রি আগের পাঁচ বছরের তুলনায় ১৪ শতাংশ কমলেও মধ্যপ্রাচ্যে অস্ত্র বিক্রি বেড়েছে ১০৯ শতাংশ৷
অন্যদিকে, অস্ত্রবিক্রেতা হিসেবে এখনও শীর্ষে আছে যুক্তরাষ্ট্র৷ গত পাঁচ বছরে তাদের অস্ত্র বিক্রি বেড়েছে প্রায় ২৫ শতাংশ৷ এই পাঁচ বছরে সারা বিশ্বে বিক্রি হওয়া মোট অস্ত্রের এক-তৃতীয়াংশই করেছে যুক্তরাষ্ট্র৷ এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের মোট অস্ত্র বিক্রির অর্ধেকই গেছে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে৷ সিপ্রির কর্মকর্তা অডে ফ্লরান্ট বলছেন, ‘‘ওবামা প্রশাসনের সময় স্বাক্ষরিত হওয়া চুক্তির আওতায় ২০১৩-১৭ মেয়াদে যে পরিমাণ অস্ত্র বিক্রি করা হয়েছে তা নব্বই দশকের শেষে যত অস্ত্র বিক্রি করা হয়েছিল, তার তুলনায় বেশি৷
ভারতকে ছাড়িয়ে সবার ওপরে সৌদি আরব
স্টকহোমের আন্তর্জাতিক শান্তি বিষয়ক গবেষণা প্রতিষ্ঠান (সিপ্রি)-র প্রতিবেদনে শঙ্কা জাগানো ইঙ্গিত৷ সারা বিশ্বে অস্ত্রের ক্রয়-বিক্রয় বেড়েই চলেছে৷ চলুন দেখা যাক ২০১৫ সালে অস্ত্র খাতে ব্যয়ে কোন দেশ কোন অবস্থানে৷
ছবি: picture alliance/ZUMA Press/Xinhua/P. Thapa
অস্ত্র কেনায় ২০১৫-র সেরা সৌদি আরব
মধ্যপ্রাচ্যের এই দেশটিতে গণতন্ত্র নেই৷ মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিয়েও প্রশ্ন ওঠে নিয়মিত৷ তবে মধ্যপ্রাচ্যে সামরিক শক্তি হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করার ক্ষেত্রে সৌদি আরব সরকারের উদ্যোগ এবং আগ্রহ নিয়ে প্রশ্ন তোলার সুযোগ নেই৷ অস্ত্র ক্রয়ে ৩ হাজার ১৬১ মিলিয়ন ডলার ব্যয় করে ২০১৫ সালের শীর্ষ অস্ত্র আমদানিকারক দেশ হয়ে গেছে সৌদি আরব৷ ২০১৪ সালে এ তালিকায় শীর্ষে ছিল ভারত, সৌদি আরব ছিল দ্বিতীয় স্থানে৷
ছবি: AFP/Getty Images
সামরিক শক্তি বাড়িয়েই চলেছে ভারত
বরাবরের মতো এখনো রাশিয়ার কাছ থেকেই সবচেয়ে বেশি অস্ত্র ক্রয় করে ভারত৷ সিপ্রি-র প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১০ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে সবচেয়ে বড় অস্ত্র আমদানিকারক দেশও ভারত৷ ২০১৫ সালেও এই খাতে ৩ হাজার ৭৮ মিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছে তারা৷ ২০১৪ সালে ৩ হাজার ৪৮৭ মিলিয়ন ডলার ব্যয় করে এক বছরের শীর্ষ অস্ত্র আমদানিকারক দেশের তালিকায় সবার ওপরে ছিল ভারত৷ এবার শীর্ষে উঠে এসেছে সৌদি আরব৷
ছবি: Getty Images
অবাক করেছে অস্ট্রেলিয়া
আগের বছরের শীর্ষ অস্ত্র আমদানিকারকদের তালিকায় অষ্টম স্থানে ছিল অস্ট্রেলিয়া৷ কিন্তু ২০১৫ সালে ১ হাজার ৫৭৪ মিলিয়ন ডলার ব্যয় করে তৃতীয় স্থানে উঠে এসেছে তারা৷
ছবি: U.S. Navy photo/courtesy Lockheed Martin/Getty Images
চতুর্থ মিশর
মিশরও দীর্ঘদিন ধরে অশান্ত৷ সে দেশে উল্লেখযোগ্য হারে অস্ত্র ক্রয়ও বাড়ছে৷ ২০১৫ সালে অস্ত্র ক্রয়ে ১ হাজার ৪৭৫ মিলিয়ন ডলার খরচ করে সে বছরের সর্বোচ্চ অস্ত্র আমদানিকারক দেশগুলোর তালিকায় চতুর্থ স্থানে উঠে এসেছে মিশর৷ এক বছর আগে ২২তম স্থানে তারা!
ছবি: dapd
পঞ্চম স্থানে সংযুক্ত আরব আমিরাত!
সৌদি আরব, ভারত, অস্ট্রেলিয়া আর ফ্রান্সের পরই আছে সংযুক্ত আরব আমিরাত৷ ২০১৫ সালে অস্ত্র ক্রয়ে তাদের মোট ব্যয় ১ হাজার ২৮৯ মিলিয়ন ডলার৷ ব্যয় বাড়িয়ে এক বছরে ১১ তম স্থান থেকে এক লাফে পঞ্চম স্থানে উঠে এসেছে তারা৷
ছবি: picture alliance/dpa/Ecpad Handout
ইরাকও আছে অস্ত্র ক্রয়ের প্রতিযোগিতায়
ইরাকের মানুষ রক্তপাতহীন একটি দিন কবে পাবে কে জানে! এখন যে যুদ্ধ চলছে সেখানে ইরাকি সেনাবাহিনীর প্রতিপক্ষ সুন্নি মুসলমানদের তথাকথিত জঙ্গি সংগঠন আইএস৷ ফলে অস্ত্র ক্রয় আরো বেড়েছে৷ ২০১৫ সালেই এই খাতে মোট ১ হাজার ২১৫ মিলিয়ন ডলার খরচ করেছে ইরাক৷ ফলে ২০১৪ সালের শীর্ষ আমদানিকারক দেশগুলোর তালিকায় ১৫তম স্থান পাওয়া ইরাক ২০১৫ সালে ৯ ধাপ এগিয়ে উঠে এসেছে ষষ্ঠ স্থানে৷
ছবি: Reuters/T. Al-Sudani
চীন পিছিয়েছে
২০১৪ সালে সবচেয়ে বেশি অস্ত্র আমদানি করা দেশগুলোর তালিকার চতুর্থ স্থানে ছিল চীন৷ পরের বছর ১ হাজার ২১৪ মিলিয়ন ব্যয় করেও সপ্তম স্থানে নেমে গেছে তারা৷ এটা অবশ্য শুধু এক বছরে অস্ত্র আমদানিতে মোট ব্যয়ের হিসেব৷ চীন শুধু অস্ত্র আমদানি করে না, বিক্রিও করে৷ শীর্ষ অস্ত্র রপ্তানিকারক দেশের তালিকায় যুক্তরাষ্ট্র আর রাশিয়ার পরই তাদের স্থান৷
ছবি: picture-alliance/AP Images/Color China Photo/Z. Lei
ভিয়েতনামও আছে
২০১৪ সালে এক বছরে অস্ত্রখাতে সবচেয়ে বেশি ব্যয় করা দেশগুলোর তালিকায় সপ্তম স্থানে ছিল ভিয়েতনাম৷ উন্নয়নশীল এই দেশটি ২০১৫ সালে ৮৭০ মিলিয়ন ডলার ব্যয় করেও এক ধাপ পিছিয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/Russian Look
অস্ত্র ক্রয়ে সমস্যা নেই গ্রিসের!
চরম অর্থনৈতিক সংকট চলছে গ্রিসে৷ অন্যদিকে অস্ত্র ক্রয়ে ব্যয় বাড়ানোর প্রবণতাও ভয়ংকর রূপ নিয়েছে৷ ২০১৫ সালে অস্ত্র ক্রয়ে ৭৬২ মিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছে গ্রিস৷ ফলে এক বছরে অস্ত্র খাতে সবচেয়ে বেশি ব্যয় করা দেশগুলোর তালিকায় নবম স্থানে উঠে এসেছে তারা৷ আগের বছর ৩৩তম স্থানে ছিল গ্রিস৷
ছবি: Reuters/R. Zvulun
এক ধাপ পিছিয়েছে পাকিস্তান
২০১৫ সালে অস্ত্র ক্রয়ে মোট ৭৩৫ মিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছে পাকিস্তান৷ বৈরি প্রতিবেশী দেশ ভারতের চেয়ে দু’হাজার মিলিয়নের চেয়েও কম ব্যয় করে তারা এখন তালিকার দশম স্থানে৷ ২০১৪ সালে নবম স্থানে ছিল পাকিস্তান৷
ছবি: picture alliance/ZUMA Press/Xinhua/P. Thapa
10 ছবি1 | 10
‘‘এ সব চুক্তি এবং ২০১৭ সালে আরও যত চুক্তি সই হয়েছে তাতে ধরে নেয়া যায়, আগামী কয়েক বছরেও যুক্তরাষ্ট্র অস্ত্র বিক্রির তালিকায় শীর্ষে থাকবে,'' বলেন সিপ্রির ঐ কর্মকর্তা৷
ভারত শীর্ষে
বিশ্বের সবচেয়ে বড় অস্ত্র আমদানিকারক হচ্ছে ভারত৷ বিশ্বে যত অস্ত্র বিক্রি হয় তার ১২ শতাংশের ক্রেতা দেশটি৷ ভারত সবচেয়ে বেশি অস্ত্র কেনে রাশিয়া থেকে, প্রায় ৬২ শতাংশ৷ যুক্তরাষ্ট্র থেকেও ভারতের অস্ত্র আমদানি প্রায় ছয়গুণ বেড়েছে৷ ‘‘পাকিস্তান ও চীনের সঙ্গে উত্তেজনার কারণে ভারতে (যারা এখন অস্ত্র তৈরি করতে সমর্থ হয়নি) অস্ত্রের চাহিদা বাড়ছে,'' বলেন সিপ্রির গবেষক সিমোন ভেজেমান৷ ‘‘অন্যদিকে চীন নিজেদের অস্ত্র তৈরির সামর্থ্য বাড়িয়ে যাচ্ছে এবং এর মাধ্যমে পাকিস্তান, বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের সঙ্গে সম্পর্ক মজবুত করছে,'' বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি৷
কার, কতগুলো পারমাণবিক বোমা আছে
স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট এর ২০২০ সালের জানুয়ারিতে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন বলছে, বিশ্বের নয়টি দেশের কাছে বর্তমানে ১৩,৪০০টি আণবিক বোমা আছে৷ তবে এ সব বোমার সংখ্যা কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/KCNA
রাশিয়ার কাছে সবচেয়ে বেশি
স্টকহোম আন্তর্জাতিক শান্তি গবেষণা ইনস্টিটিউট সিপ্রি-র তথ্য অনুসারে রাশিয়ার কাছে বর্তমানে সবচেয়ে বেশি আণবিক বোমা রয়েছে৷ দেশটিতে এ ধরনের বোমার সংখ্যা ৬,৩৭৫টি৷ ১৯৪৯ সালে রাশিয়া প্রথম পারমাণবিক পরীক্ষা করেছিল৷
ছবি: Getty Images/AFP/N. Kolesnikova
দ্বিতীয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রথম পারমাণবিক বোমা বানিয়েছে এবং একমাত্র দেশ যারা যুদ্ধেও এই অস্ত্র ব্যবহার করেছে৷ দেশটির কাছে এখন ৫,৮০০ টি পারমাণবিক বোমা রয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/H. Jamali
চীনও পিছিয়ে নেই
৩২০টি পারমাণবিক বোমা আছে চীনের৷ রাশিয়া বা যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় সংখ্যাটা কম হলেও দেশটি ধীরে ধীরে এই সংখ্যা বাড়াচ্ছে৷ যেমন ২০১৯ সালেই তাদের কাছে ২৯০ টি বোমা ছিল৷ স্থল, আকাশ বা সমুদ্রপথে সেগুলো ছোঁড়া সম্ভব৷
ছবি: Getty Images
সাবমেরিনে পারমাণবিক বোমা
ফ্রান্সের কাছে পারমাণবিক ওয়ারহেড আছে ২৯০টি৷ এগুলোর অধিকাংশই রয়েছে সাবমেরিনে৷ দেশটির অন্তত একটি সাবমেরিন সবসময় পারমাণবিক বোমা নিয়ে টহল দেয়৷
ছবি: AP
যুক্তরাজ্যেরও আছে পারমাণবিক বোমা
২১৫টি পারমাণবিক বোমা রয়েছে যুক্তরাজ্যের কাছে৷ জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য এই দেশটি ১৯৫২ সালে প্রথম পারমাণবিক পরীক্ষা চালায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Kaminski
দক্ষিণ এশিয়ায় এগিয়ে পাকিস্তান
ইতোমধ্যে তিনবার প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে যুদ্ধে জড়িয়েছে পাকিস্তান৷ দেশটির আছে ১৬০টি আণবিক বোমা৷ সাম্প্রতিক সময়ে পারমাণবিক বোমার সংখ্যা বাড়িয়েছে দেশটি৷ অনেকে আশঙ্কা করেন, প্রতিবেশীর সঙ্গে দেশটির লড়াই কোন এক সময় পারমাণবিক যুদ্ধে রূপ নিতে পারে৷
ছবি: picture-alliance/AP
থেমে নেই ভারত
পারমাণবিক বোমার সংখ্যা বাড়াচ্ছে ভারতও৷ দেশটি প্রথম পারমাণবিক পরীক্ষা চালায় ১৯৭৪ সালে৷ সিপ্রির তথ্য অনুযায়ী, তাদের কাছে এখন ১৫০টি বোমা রয়েছে৷ ভারত অবশ্য জানিয়েছে, তারা আগে কোনো দেশকে আঘাত করবে না, আর যেসব দেশের পারমাণবিক বোমা নেই, সেসব দেশের বিরুদ্ধে তারা এ ধরনের বোমা ব্যবহার করবে না কোনোদিন৷
ছবি: Reuters
ইসরায়েল সম্পর্কে তথ্য কম
ইসরায়েল অবশ্য নিজের দেশের পরমাণু কর্মসূচি সম্পর্কে তেমন কিছু জনসমক্ষে প্রকাশ করে না৷ যদিও দেশটির নব্বইটি পারমাণবিক ‘ওয়ারহেড’ আছে বলে উল্লেখ করেছে সিপ্রি৷
ছবি: Reuters/B. Ratner
উত্তর কোরিয়া সবার নীচে
পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ে গোপনীয়তা অবলম্বন করে উত্তর কোরিয়াও৷ এখন দেশটির কাছে থাকা বোমার সংখ্যা আনুমানিক ৩০ থেকে ৪০টি৷