মুসলিম দুনিয়ার দ্বিতীয় পবিত্রতম স্থান, নবী মোহম্মদের মসজিদের কাছে এক আত্মঘাতী বোমা হামলায় সোমবার রাত্রে আততায়ী ছাড়া চারজন পুলিশ কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন৷ এদিন কাতিফ ও জেদ্দাতেও আক্রমণ ঘটে৷
বিজ্ঞাপন
রমজান শেষ হবার আগের দিন সৌদি আরবে তিন-তিনটি আত্মঘাতী বোমা আক্রমণ দুনিয়া এবং মুসলিম দুনিয়াকে সচকিত করেছে৷ সৌদি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত ‘সবক' নিউজ সাইটের খবর অনুযায়ী পুলিশ কর্মচারীরা রোজার শেষে ইফতার করার সময় আততায়ী তাদের উপর আক্রমণ চালানোর পরিকল্পনা করছিল৷ কিন্তু মসজিদে নববির পাশের গাড়ি রাখার জায়গায় তাকে দেখে পুলিশের সন্দেহ জাগে ও পুলিশ তাকে চ্যালেঞ্জ করে৷ তখন আততায়ী তার বোমাটি ফাটায়, বলে জানিয়েছেন সৌদি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র জেনারেল মনসুর আল-তুর্কি৷ বিস্ফোরণে চারজন পুলিশ কর্মকর্তা নিহত হওয়া ছাড়াও আরো পাঁচজন আহত হন৷
পুবের শিয়া অধ্যুষিত শহর কাতিফেও আক্রমণ ঘটে প্রায় একই সময়ে৷ ‘সবক'-এর খবর অনুযায়ী এখানে দু'জন আত্মঘাতী বোমারু ফারাজ আল-ওমরান মসজিদটির কাছে নিজেদের উড়িয়ে দেয়, যদিও আল-তুর্কি একজন আত্মঘাতী বোমারুর কথা বলেছেন, আবার এ-ও বলেছেন যে, অকুস্থলে তিনজন ব্যক্তির দেহাবশেষ পাওয়া গিয়েছে৷
সোমবার সকালেই জেদ্দার মার্কিন কনস্যুলেটের কাছে এক আত্মঘাতী বোমারু নিরাপত্তা কর্মীদের আসতে দেখে নিজেকে উড়িয়ে দেয়; ফলে দু'জন নিরাপত্তা কর্মী আহন হন৷
সৌদি আরবে সন্ত্রাসী আক্রমণ বিশেষ আলোড়ন সৃষ্টি করলেও, একটির পর একটি মুসলিম দেশ যে আপাতত সন্ত্রাসবাদের শিকার হচ্ছে, সেটা অনেকেরই নজর এড়ায়নি – যেমন বাংলাদেশ, তুরস্ক, ইরাক ও সৌদি আরবের পরে ইন্দোনেশিয়াতেও পুলিশ ফাঁড়ির উপর আত্মঘাতী বোমা আক্রমণ৷ যদিও এখানে আহত হন শুধু একজন৷
ওদিকে সৌদি কর্তৃপক্ষ জেদ্দার আত্মঘাতী বোমারুর নাম ইতিমধ্যেই প্রকাশ করেছেন৷ ৩৫ বছর বয়সি আবদুল্লাহ কালজার খান পেশায় ছিলেন ড্রাইভার; স্ত্রী ও বাবা-মাকে নিয়ে গত ১২ বছর ধরে জেদ্দায় বাস করছিলেন৷
অপরদিকে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রামে যৌথ প্রচেষ্টার প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছেন৷
সুন্নি অধ্যুষিত সৌদি আরবের মূল আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বী শিয়া অধ্যুষিত ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ জাভদ জরিফ টুইটার করেছেন, ‘‘সন্ত্রাসবাদীদের জন্য আর কোনো সীমানা বাকি রইল না৷ সুন্নি, শিয়া, সকলেই তার শিকার হবে, যদি না আমরা একত্রিত হই৷''
ভারতকে ছাড়িয়ে সবার ওপরে সৌদি আরব
স্টকহোমের আন্তর্জাতিক শান্তি বিষয়ক গবেষণা প্রতিষ্ঠান (সিপ্রি)-র প্রতিবেদনে শঙ্কা জাগানো ইঙ্গিত৷ সারা বিশ্বে অস্ত্রের ক্রয়-বিক্রয় বেড়েই চলেছে৷ চলুন দেখা যাক ২০১৫ সালে অস্ত্র খাতে ব্যয়ে কোন দেশ কোন অবস্থানে৷
ছবি: picture alliance/ZUMA Press/Xinhua/P. Thapa
অস্ত্র কেনায় ২০১৫-র সেরা সৌদি আরব
মধ্যপ্রাচ্যের এই দেশটিতে গণতন্ত্র নেই৷ মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিয়েও প্রশ্ন ওঠে নিয়মিত৷ তবে মধ্যপ্রাচ্যে সামরিক শক্তি হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করার ক্ষেত্রে সৌদি আরব সরকারের উদ্যোগ এবং আগ্রহ নিয়ে প্রশ্ন তোলার সুযোগ নেই৷ অস্ত্র ক্রয়ে ৩ হাজার ১৬১ মিলিয়ন ডলার ব্যয় করে ২০১৫ সালের শীর্ষ অস্ত্র আমদানিকারক দেশ হয়ে গেছে সৌদি আরব৷ ২০১৪ সালে এ তালিকায় শীর্ষে ছিল ভারত, সৌদি আরব ছিল দ্বিতীয় স্থানে৷
ছবি: AFP/Getty Images
সামরিক শক্তি বাড়িয়েই চলেছে ভারত
বরাবরের মতো এখনো রাশিয়ার কাছ থেকেই সবচেয়ে বেশি অস্ত্র ক্রয় করে ভারত৷ সিপ্রি-র প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১০ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে সবচেয়ে বড় অস্ত্র আমদানিকারক দেশও ভারত৷ ২০১৫ সালেও এই খাতে ৩ হাজার ৭৮ মিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছে তারা৷ ২০১৪ সালে ৩ হাজার ৪৮৭ মিলিয়ন ডলার ব্যয় করে এক বছরের শীর্ষ অস্ত্র আমদানিকারক দেশের তালিকায় সবার ওপরে ছিল ভারত৷ এবার শীর্ষে উঠে এসেছে সৌদি আরব৷
ছবি: Getty Images
অবাক করেছে অস্ট্রেলিয়া
আগের বছরের শীর্ষ অস্ত্র আমদানিকারকদের তালিকায় অষ্টম স্থানে ছিল অস্ট্রেলিয়া৷ কিন্তু ২০১৫ সালে ১ হাজার ৫৭৪ মিলিয়ন ডলার ব্যয় করে তৃতীয় স্থানে উঠে এসেছে তারা৷
ছবি: U.S. Navy photo/courtesy Lockheed Martin/Getty Images
চতুর্থ মিশর
মিশরও দীর্ঘদিন ধরে অশান্ত৷ সে দেশে উল্লেখযোগ্য হারে অস্ত্র ক্রয়ও বাড়ছে৷ ২০১৫ সালে অস্ত্র ক্রয়ে ১ হাজার ৪৭৫ মিলিয়ন ডলার খরচ করে সে বছরের সর্বোচ্চ অস্ত্র আমদানিকারক দেশগুলোর তালিকায় চতুর্থ স্থানে উঠে এসেছে মিশর৷ এক বছর আগে ২২তম স্থানে তারা!
ছবি: dapd
পঞ্চম স্থানে সংযুক্ত আরব আমিরাত!
সৌদি আরব, ভারত, অস্ট্রেলিয়া আর ফ্রান্সের পরই আছে সংযুক্ত আরব আমিরাত৷ ২০১৫ সালে অস্ত্র ক্রয়ে তাদের মোট ব্যয় ১ হাজার ২৮৯ মিলিয়ন ডলার৷ ব্যয় বাড়িয়ে এক বছরে ১১ তম স্থান থেকে এক লাফে পঞ্চম স্থানে উঠে এসেছে তারা৷
ছবি: picture alliance/dpa/Ecpad Handout
ইরাকও আছে অস্ত্র ক্রয়ের প্রতিযোগিতায়
ইরাকের মানুষ রক্তপাতহীন একটি দিন কবে পাবে কে জানে! এখন যে যুদ্ধ চলছে সেখানে ইরাকি সেনাবাহিনীর প্রতিপক্ষ সুন্নি মুসলমানদের তথাকথিত জঙ্গি সংগঠন আইএস৷ ফলে অস্ত্র ক্রয় আরো বেড়েছে৷ ২০১৫ সালেই এই খাতে মোট ১ হাজার ২১৫ মিলিয়ন ডলার খরচ করেছে ইরাক৷ ফলে ২০১৪ সালের শীর্ষ আমদানিকারক দেশগুলোর তালিকায় ১৫তম স্থান পাওয়া ইরাক ২০১৫ সালে ৯ ধাপ এগিয়ে উঠে এসেছে ষষ্ঠ স্থানে৷
ছবি: Reuters/T. Al-Sudani
চীন পিছিয়েছে
২০১৪ সালে সবচেয়ে বেশি অস্ত্র আমদানি করা দেশগুলোর তালিকার চতুর্থ স্থানে ছিল চীন৷ পরের বছর ১ হাজার ২১৪ মিলিয়ন ব্যয় করেও সপ্তম স্থানে নেমে গেছে তারা৷ এটা অবশ্য শুধু এক বছরে অস্ত্র আমদানিতে মোট ব্যয়ের হিসেব৷ চীন শুধু অস্ত্র আমদানি করে না, বিক্রিও করে৷ শীর্ষ অস্ত্র রপ্তানিকারক দেশের তালিকায় যুক্তরাষ্ট্র আর রাশিয়ার পরই তাদের স্থান৷
ছবি: picture-alliance/AP Images/Color China Photo/Z. Lei
ভিয়েতনামও আছে
২০১৪ সালে এক বছরে অস্ত্রখাতে সবচেয়ে বেশি ব্যয় করা দেশগুলোর তালিকায় সপ্তম স্থানে ছিল ভিয়েতনাম৷ উন্নয়নশীল এই দেশটি ২০১৫ সালে ৮৭০ মিলিয়ন ডলার ব্যয় করেও এক ধাপ পিছিয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/Russian Look
অস্ত্র ক্রয়ে সমস্যা নেই গ্রিসের!
চরম অর্থনৈতিক সংকট চলছে গ্রিসে৷ অন্যদিকে অস্ত্র ক্রয়ে ব্যয় বাড়ানোর প্রবণতাও ভয়ংকর রূপ নিয়েছে৷ ২০১৫ সালে অস্ত্র ক্রয়ে ৭৬২ মিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছে গ্রিস৷ ফলে এক বছরে অস্ত্র খাতে সবচেয়ে বেশি ব্যয় করা দেশগুলোর তালিকায় নবম স্থানে উঠে এসেছে তারা৷ আগের বছর ৩৩তম স্থানে ছিল গ্রিস৷
ছবি: Reuters/R. Zvulun
এক ধাপ পিছিয়েছে পাকিস্তান
২০১৫ সালে অস্ত্র ক্রয়ে মোট ৭৩৫ মিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছে পাকিস্তান৷ বৈরি প্রতিবেশী দেশ ভারতের চেয়ে দু’হাজার মিলিয়নের চেয়েও কম ব্যয় করে তারা এখন তালিকার দশম স্থানে৷ ২০১৪ সালে নবম স্থানে ছিল পাকিস্তান৷