সৌদি রাষ্ট্রীয় সূত্রমতে, সৌদি আরবে বিশ্বের বৃহত্তমসৌর বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রকল্পনির্মাণের পরিকল্পনা আপাতত স্থগিত রাখা হয়েছে৷ পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির উন্নয়নে সৌদি আরবের আরো অনেক বৃহত্তর ও কার্যকর কৌশল নিশ্চিত করা বাকি বলেই এমন সিদ্ধান্ত৷ সৌর প্রকল্পটির ২০৩০ সালের মধ্যে প্রায় ২০০ গিগাওয়াট শক্তির উৎপাদন করার কথা ছিল, দেশটির দৈনিক চাহিদার চেয়ে যা তিনগুণ বেশি৷
মার্কিন পত্রিকা ওয়াল স্ট্রিট জার্নালকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সৌদি সরকারের এক উপদেষ্টা জানান, ‘‘কোনো নতুন প্রকল্প আকর্ষণীয় হলেও তাকে সঠিকভাবে নির্বাহ করা কঠিন৷ পাশাপাশি এই প্রকল্পে কেউ সক্রিয়ভাবে কাজও করছিল না৷''
সুবিশাল মরুভূমি এবং প্রচুর রোদ থাকা সত্ত্বেও, সৌদি আরবেরসৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতাবর্তমানে পর্যাপ্ত নয়৷ মূলত জীবাশ্ম জ্বালানী থেকেই তার প্রয়োজনীয় শক্তি উৎপাদন করে সৌদি আরব৷ তবে যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের নেতৃত্বে তেলের উপর নির্ভরতা কমিয়ে অর্থনীতির অন্যান্য দিকে জোর দিচ্ছে বর্তমান সৌদি রাষ্ট্র৷
লন্ডন ভিত্তিক ‘ওয়ার্ল্ড এনার্জি কাউন্সিল’ বা ডাব্লিউইসি-এর ‘বিশ্ব জ্বালানি সম্পদ ২০১৬’ প্রতিবেদনে কোন জ্বালানি কী পরিমাণ ব্যবহত হচ্ছে তার হিসেব প্রকাশ করা হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpaলন্ডন ভিত্তিক ‘ওয়ার্ল্ড এনার্জি কাউন্সিল’ এর ‘বিশ্ব জ্বালানি সম্পদ ২০১৬’ প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হওয়া জ্বালানি হচ্ছে তেল৷ মোট ব্যবহৃত জ্বালানির প্রায় ৩২.৯ শতাংশই হচ্ছে তেল৷ আর তেল উৎপাদনে শীর্ষ তিন দেশ হচ্ছে সৌদি আরব (বছরে ৫৬৯ মিলিয়ন টন), যুক্তরাষ্ট্র (বছরে ৫৬৭ মিলিয়ন টন) ও রাশিয়া (বছরে ৫৪১ মিলিয়ন টন)৷
ছবি: picture-alliance/dpa২৯ শতাংশ নিয়ে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হওয়া জ্বালানির তালিকায় তেলের পরেই আছে কয়লা৷ তবে নব্বই দশকের পর ২০১৪ এবং ২০১৫ সালে প্রথমবারের মতো কয়লা উৎপাদন কমেছে৷ বিশ্বের মোট বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রায় ৪০ ভাগ কাজে কয়লা ব্যবহৃত হয়৷ শীর্ষ তিন উৎপাদনকারী দেশ হচ্ছে চীন (বছরে ২ দশমিক ৬২ হাজার এমটিওই), যুক্তরাষ্ট্র (৫৬৯ এমটিওই) ও ভারত (৪৭৪ এমটিওই)৷ উল্লেখ্য, এমটিওই মানে হচ্ছে এক মিলিয়ন মেট্রিক টন অফ ওয়েল ইকুইভ্যালেন্ট৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Roland Weihrauchতিন নম্বরে আছে গ্যাস (প্রায় ২৪ শতাংশ)৷ আর বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহৃত জ্বালানির তালিকায় কয়লার (৪০ শতাংশ) পরে আছে গ্যাস (২২ শতাংশ)৷ শীর্য তিন গ্যাস উৎপাদনকারী দেশ হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র (বছরে ৬৯১ এমটিওই), রাশিয়া (বছরে ৫১৬ এমটিওই) ও ইরান (বছরে ১৭৩ এমটিওই)৷
ছবি: Imagoনবায়নযোগ্য জ্বালানির বিভিন্ন উৎসের মধ্যে পানি বা জলবিদ্যুতের ব্যবহার সবচেয়ে বেশি৷ ২০১৫ সালে উৎপাদিত মোট নবায়নযোগ্য বিদ্যুতের প্রায় ৭১ শতাংশই এসেছে জলবিদ্যুৎ থেকে৷ আর বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হওয়া জ্বালানির তালিকায় তেল (৩৩ শতাংশ), কয়লা (২৯ শতাংশ) ও গ্যাসের (২৪ শতাংশ) পরেই আছে পানিবিদ্যুৎ (প্রায় ৭ শতাংশ)৷ শীর্ষ তিন উৎপাদনকারী চীন (বছরে ৯৬.৯ এমটিওই), ব্রাজিল (৩২.৯ এমটিওই) ও ক্যানাডা (৩২.৩ এমটিওই)৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Jourdierবিশ্বের সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হওয়া জ্বালানির তালিকায় পাঁচ নম্বরে আছে এটি (৪ দশমিক ৪ শতাংশ)৷ অর্থাৎ নবায়নযোগ্য জ্বালানির একটি উৎস পানিবিদ্যুতের (প্রায় ৭ শতাংশ) চেয়েও এর ব্যবহার কম৷ ইউরেনিয়াম উৎপাদনে শীর্ষ তিন দেশ হচ্ছে কাজাখস্তান (বছরে ২২ দশমিক ৮ হাজার টন), ক্যানাডা (৯ দশমিক ১৪ হাজার টন) ও অস্ট্রেলিয়া (৪ দশমিক ৯৮ হাজার টন)৷
ছবি: Kerry Skyringবিশ্বের মোট বিদ্যুতের ৭ শতাংশ আসে বায়ুবিদ্যুৎ থেকে৷ ২০১৫ সালে ৪৩২ গিগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয়েছিল৷ এর মধ্যে ৪২০ গিগাওয়াট অনশোর (ভূমি) ও ১২ গিগাওয়াট অফশোর, অর্থাৎ সাগরে বসানো টারবাইনের মাধ্যমে উৎপাদিত হয়৷ বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হওয়া জ্বালানির তালিকায় ছয়ে আছে এটি (১.৪৪ শতাংশ)৷ শীর্ষ তিন বায়ুশক্তি উৎপাদনকারী দেশ যুক্তরাষ্ট্র (বছরে ১৫.৮ এমটিওই), চীন (১৩.৬ এমটিওই) এবং জার্মানি (৪.৯৩ এমটিওই)৷
ছবি: Getty Images/AFP/J. Vaughn২০১৫ সালে সারা বিশ্বে মোট সৌরশক্তি উৎপাদনের পরিমাণ দাঁড়িয়েছিল ২২৭ গিগাওয়াটে৷ ফলে মোট বিদ্যুতের এক শতাংশ এসেছিল সৌরশক্তি থেকে৷ সৌরশক্তি উৎপাদনে শীর্ষ তিন দেশ চীন (৪৩ দশমিক ১ গিগাওয়াট), জার্মানি (৩৯ দশমিক ৬ গিগাওয়াট) ও জাপান (৩৩ দশমিক ৩ গিগাওয়াট)৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Guptaজিওথার্মাল, ই-স্টোরেজ, মেরিন এনার্জি, বর্জ্য থেকে শক্তি, বায়োএনার্জি (যেমন বায়োমাস) ইত্যাদি সহ আরও অনেক উৎস দিয়েও জ্বালানি উৎপাদন করা হয়ে থাকে৷ ছবিতে আইসল্যান্ডের একটি জিওথার্মাল পাওয়ার স্টেশন দেখা যাচ্ছে৷ ডাব্লিউইসি-র প্রতিবেদনটি পড়তে ক্লিক করুন উপরের ‘+’ চিহ্নে৷
ছবি: picture-alliance/blickwinkel/McPHOTO সরকারের সাথে হাত মিলিয়ে জাপানি সংস্থা, সফটব্যাঙ্ক, ইতিমধ্যেই সৌদি আরবের পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি ও তার প্রযুক্তিতে বিনিয়োগ বাড়িয়ে তুলতে ১০০ বিলিয়ন ডলারের ‘ভিশন ফান্ড' নামের একটি উদ্যোগ তৈরি করেছে৷ প্রকল্পটির প্রথম পর্যায়ে এক বিলিয়ন মার্কিন ডলার খরচ করা সত্ত্বেও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে সৌদির ‘সৌর-স্বপ্ন'৷
সৌদি কর্মকর্তাদের মতে, রাষ্ট্রের পক্ষে এখনো ভূমি অধিগ্রহণ, উন্নয়নের পরিকাঠামো বা ভর্তুকি বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়নি৷ এর পরিবর্তে, অক্টোবরের শেষের দিকে ঘোষণা করার জন্য একটি বৃহত্তর কৌশল প্রণয়ন করছে সরকার, যা সৌদি আরবের পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি বিষয়ক লক্ষ্য ব্যাখ্যা করতে সাহায্য করবে৷ সে ক্ষেত্রে সফটব্যাঙ্ক ভবিষ্যতে ২০০ গিগাওয়াটের এই সৌরপ্রকল্প নির্মাণে জড়াবে কি না, তা এখনো পু্রোপু্রি স্পষ্ট নয়৷
উভে হেসলার/এসএস