বাংলাদেশি গৃহকর্মী নির্যাতনের ঘটনা নিয়ে তোলপাড়
২৭ আগস্ট ২০১৭ভাইরাল হওয়া ওই ইউটিউব ভিডিওর তথ্য অনুযায়ী প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছে বাংলাদেশের সংবাদ মাধ্যমে৷ তাতে বলা হয়েছে, সাত মাস আগে গৃহকর্মী হিসেবে সৌদি আরবে গিয়ে নির্যাতনের ক্ষত নিয়ে দেশে ফিরেছেন বাংলাদেশি এক নারী৷ মঙ্গলবার রিয়াদ বিমানবন্দরে উড়োজাহাজে বসে এক আরবকে ওই নির্যাতনের বর্ণনা দিয়েছেন তিনি৷ তাঁর বক্তব্য ভিডিও করেছেন ওই আরব৷
ভিডিওতে ওই নারীর এক হাতে ক্ষতচিহ্ন, আরেক হাতে গোটা গোটা ফোস্কা দেখা যায়৷ এক প্রশ্নের জবাবে ওই নারী বলেন, সৌদি আরবে কাজে আসার পর প্রতিদিন তাকে ছয় থেকে সাতবার গরম কিছু দিয়ে ছ্যাঁকা দেওয়া হত৷ ওই ছ্যাঁকাতেই হাতে ফোস্কা হয়েছে৷
কেন নির্যাতন করা হত জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাংলাদেশে কারও সাথে, বিশেষ করে স্বামীর সাথে কথা বলতে চাইলে মালিক দিত না৷ দেশে ফিরতে চাইলে নির্যাতন করা হত৷ এভাবে নির্যাতনের পর সৌদি মালিক তাঁকে বিমানবন্দরে রেখে চলে যায়৷ ওই নারী বলেন, এই কয় মাসে তাঁকে কোনো বেতন দেওয়া হয়নি৷ কিন্তু বিমানবন্দরে রেখে যাওয়ার সময় বেতন নিয়েছেন মর্মে স্বাক্ষর নিয়ে গেছেন মালিক৷ ভিসা ও পাসপোর্টের তথ্য অনুযায়ী, নির্যাতিত ওই বাংলাদেশি নারীর বাড়ি চুয়াডাঙ্গায়৷ তিনি গত ২২ জানুয়ারি সৌদি আরব যান৷ সৌদিতে তার নিয়োগকর্তা আজিজা নাশহাত মোহাম্মদ আলী কাকা৷
এই বিষয়ে বাংলাদেশ দূতাবাসের শ্রম কাউন্সিলর সরওয়ার আলম ডয়চে ভেলে বলেন, ‘‘আমরা ওই নারীকে নির্যাতনের ভিডিও সম্পর্কে জেনে তদন্ত শুরু করেছি৷ আমরা বাংলাদেশ এবং সৌদি আরব দু'জায়গায়ই যোগাযোগ করেছি৷ আমরা এখন ওই নারী গৃহকর্মীর বক্তব্য গ্রহণ করব৷''
তিনি বলেন, ‘‘তিনি এখন বাংলাদেশেই তাঁর গ্রামের বাড়িতে আছেন৷ তাঁর বক্তব্য নেয়া হচ্ছে৷ আর আমরা সরকারের সঙ্গেও যোগাযোগ করেছি৷''
সৌদি আরবে বাংলাদেশি গৃহকর্মী নির্যাতনের আরো অভিযোগ আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘আমরা কিছু অভিযোগ এর আগেও পেয়েছি৷'' এদিকে, চুয়াডাঙ্গার স্থানীয় সাংবাদিক মেহেদি হাসান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘নির্যাতিত ওই নারীর নাম সালমা৷ তিনি গ্রামে ফিরে আসার পর তাঁকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে৷ তাঁর শরীরে নির্মম নির্যাতনের চিহ্ন রয়েছে৷ তিনি শুধু বলেছেন আমার ওপর যে নির্যাতন হয়েছে তা বললে আপনারা স্তব্ধ হয়ে যাবেন৷''
সৌদি আরব এ পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে প্রায় ৮০ হাজারের মতো নারী গৃহকর্মী নিয়েছে৷ এর মধ্যে প্রায় ৫০ শতাংশ বা ৪০ হাজার নারী গৃহকর্মীকে ইতোমধ্যে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে৷ নিয়োগকারীরা কারণ হিসেবে তাদের কাজে অনীহার কথা বললেও একাধিক আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম জানাচ্ছে, ‘‘বাংলাদেশি গৃহকর্মীদের কাজে অনীহার কারণ ভিন্ন৷ তাঁরা নির্যাতনের শিকার এবং তাঁদের বেতনও খুব কম দেয়া হয়৷''
গতবছর রিয়াদে অবস্থিত বাংলাদেশি দূতাবাসের এক কর্মকর্তা জানিয়েছিলেন, তিনটি কারণে নারী গৃহকর্মীরা তাদের কাজ ছেড়ে পালাচ্ছেন৷ কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে, গৃহকর্মীদের দিয়ে কঠিন কাজ করানো, গৃহকর্মীদের নিজের বাড়ির প্রতি দুর্বলতা থাকা এবং গৃহকর্তার কাছ থেকে নানা দুর্ব্যবহার ও নির্যাতনের শিকার হওয়া৷
কেবল বাংলাদেশি নারী গৃহকর্মীরাই নয়, সৌদি নাগরিকদের বিরুদ্ধে গৃহকর্মী নির্যাতনের অভিযোগ অন্য দেশগুলোও করেছে৷ ২০১৫ সালে সৌদি আরবে নারী গৃহকর্মীর ওপর যৌন নির্যাতনের একটি খবর আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে নিন্দার ঝড় তুলেছিল৷ সেবার গৃহকর্মীর ওপর যৌন নির্যাতন চালাতে গিয়ে স্ত্রীর কাছে হাতেনাতে ধরা পড়েন এক সৌদি নাগরিক৷ স্বামীর আচরণে ক্ষুব্ধ হয়ে সেই নারী ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ছড়িয়ে দেন৷
একই বছর এক ভারতীয় গৃহকর্মী তার কাজ থেকে মুক্তি চাইলে গৃহকর্তা তার ওপর হামলে পড়েন৷ কেবল তাই নয়, ক্ষুব্ধ হয়ে গৃহকর্তা একটি ছুরি দিয়ে ওই গৃহকর্মীর হাত কেটে ফেলেন৷
আপনি কি সৌদি আরবে থাকেন? সেখানে কাজের পরিবেশ কেমন? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷