সৌদি আরবের আকাশ প্রতিরক্ষায় দেশটিতে সেনা পাঠানোর অনুমোদন দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প৷ সৌদি তেল ক্ষেত্রে সাম্প্রতিক হামলার প্রেক্ষিতে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে৷
বিজ্ঞাপন
সৌদি আরব ও সংযুক্ত অরব আমিরাতে নতুন করে আরো সেনা মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র৷ শুক্রবার দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী মার্ক এসপার এই তথ্য জানিয়েছেন৷ তবে ঠিক কতজন সামরিক সদস্য আর কী পরিমান সরঞ্জাম পাঠানো হবে তা এখনও চূড়ান্ত হয়নি৷ সৌদি আরবের অনুরোধেই সিদ্ধান্তটি নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন এসপার৷
তিনি সাংবাদিকদের বলেন, "দেশটির অনুরোধের প্রেক্ষিতে প্রেসিডেন্ট সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের সেনা মোতায়েনের অনুমোদন দিয়েছেন৷ এর ধরন হবে প্রতিরক্ষামূলক আর প্রথমিক মনযোগ থাকবে আকাশ এবং মিসাইল প্রতিরক্ষায়৷”
গত ১৪ সেপ্টেম্বর সৌদি আরবের গুরুস্বপূর্ণ দুইটি তেলক্ষেত্রে ড্রোন হামলা চালানো হয়৷ এর ফলে দেশটির জ্বালানী তেলের সরবরাহ অর্ধেকে নেমে আসে৷ ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীরা এই ঘটনার দায় স্বীকার করলেও হামলার পেছনে ইরানের হাত আছে বলে দাবি করে আসছে যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরব৷
এদিকে সৌদি আরবের কাছে শান্তি প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছে ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীরা৷ শুক্রবার সকালে হুতি সুপ্রিম পলিটিক্যাল কাউন্সিলের প্রধান মাহদি আল মাসহাত জানান, তারা ড্রোন ও মিসাইল হামলায় বিরতি টেনেছেন৷ সৌদি আরব তাদের এই সংকেতের যথ৷যথ মূল্যুায়ন করবে, বিদ্রোহী দলটি এমন আশায় আছে৷
হুতি বিদ্রোহীদের দমনে ২০১৫ সাল থেকে ইয়েমেনে নির্মম হামলা চালিয়ে আসছে সৌদি আরব৷ যাকে বিশ্বের সবচেয়ে বড় মানবিক সংকট হিসেবে অভিহিত করেছে জাতিসংঘ৷
এফএস/এআই (এপি, রয়টার্স, ডিপিএ, এএফপি)
ইতিহাসে সৌদি-মার্কিন বন্ধুত্ব
যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে সবচেয়ে বেশি নিরাপত্তা পেয়ে থাকে কে? উত্তরে আসতে পারে ভূরাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ ইসরায়েল, জর্ডান বা মিসরের নাম৷ কিন্তু বিশ্বরাজনীতিতে তেলসমৃদ্ধ সৌদি আরবের সাথে মার্কিন বন্ধুত্ব একটু অন্যরকমই৷
ছবি: Bandar Algaloud/Courtesy of Saudi Royal Court/Handout/REUTERS
বিশেষ বন্ধুত্ব
১৯৪৫ সালে সৌদি আরবের প্রথম বাদশাহ আবদুল আজিজের সঙ্গে ঐতিহাসিক বৈঠক করেন তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ফ্র্যাঙ্কলিন ডি রুজভেল্ট৷ তখন থেকেই বিশেষ এক বন্ধুত্ব শুরু দুই দেশের৷ এরপর যুক্তরাষ্ট্রে ক্ষমতার পালাবদল হলেও এই বন্ধুত্বে চিড় ধরেনি৷ ১৯৭৯ সালে ইরানে মার্কিন সমর্থিত শাহের পতন ঘটলে সৌদি আরব পরিণত হয় মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় বন্ধুতে৷
ছবি: picture alliance/akg-images
ইরানে ইসলামী বিপ্লব
১৯৭৯ সালে শাহকে সরিয়ে আয়াতুল্লাহ খোমেনি ইরানের ক্ষমতায় আসেন৷ অ্যামেরিকাকে ‘গ্রেট শয়তান’ আখ্যা দেন খোমেনি৷ তেহরানে মার্কিন দূতাবাসে জিম্মি সংকট ও উদ্ধার অভিযানে ব্যর্থতার ফলে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার আর পুনর্নির্বাচিত হতে পারেননি৷ আঞ্চলিক শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠায় বরাবরই ইরানের বিপক্ষে সৌদি আরবের পাশে দাঁড়িয়েছে যুক্তরাষ্ট্র৷
ছবি: imago/Christian Ohde
কুয়েত আক্রমণ
১৯৯০ সালের আগস্টে কুয়েত দখল করে সাদ্দাম হোসেনের ইরাক৷ সে সময় কুয়েতের রাজপরিবারকে আশ্রয় দেয় সৌদি আরব৷ যুক্তরাষ্ট্র কুয়েতকে ইরাকি বাহিনীর দখলমুক্ত করতে অভিযান চালায়৷ সে সময় সরাসরি যুদ্ধে অংশ না নিলেও মার্কিন বাহিনীকে নিজেদের ঘাঁটি ব্যবহারের অনুমতি দেয় সৌদি আরব৷
ছবি: Getty Images/AFP/P. Guyot
টুইন টাওয়ার হামলা
সৌদি বাদশাহ ফাহাদ এবং পরবর্তীতে বাদশাহ আবদুল্লাহর সঙ্গে বিশেষ বন্ধুত্ব ছিল মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশের৷ ওসামা বিন লাদেনের আল কায়েদা ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর টুইন টাওয়ারে হামলা চালানোর পরও এ বন্ধুত্বে ফাটল ধরেনি৷ ২০০৩ সালে মার্কিন বাহিনীর ইরাক আক্রমণেও সহায়তা করে সৌদি আরব৷
ছবি: Imago/ZUMA Press
ইয়েমেন সংকট
হুথি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে এবং প্রেসিডেন্ট মনসুর হাদির সমর্থনে সৌদি আরব নেতৃত্বাধীন জোট ২০১৫ সালে ইয়েমেনে বোমা হামলা শুরু করে৷ তিন বছর ধরে চলা এ হামলায় হাজার হাজার বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন৷ মানবাধিকার লংঘনের অভিযোগও উঠেছে৷
ছবি: Reuters/K. Abdullah
কাতার
আরব বসন্তের পর থেকে এক সময়ের বন্ধু সৌদি আরবের সঙ্গে সম্পর্ক শিথিল হয় কাতারের৷ অনেকটা বিপ্লবীদের পক্ষে কাতারের অবস্থান থাকলেও সৌদি আরব অবস্থান নেয় বিপক্ষে৷ তবে দুই দেশই বন্ধুপ্রতীম হওয়ায় বিরোধে পক্ষ নেয়নি যুক্তরাষ্ট্র৷ তবে ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর ২০১৭ সালে ইরান ও মুসলিম ব্রাদারহুডের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে সহায়তার অভিযোগে কাতারকে একঘরে করে দেয়া হলে যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ণ সমর্থন পায় সৌদি আরব৷
ছবি: picture-alliance
খাশগজি
তুরস্কের সৌদি কনস্যুলেটে সাংবাদিক জামাল খাশগজি হত্যার অভিযোগে বেশ বিপাকে পড়েছে সৌদি আরব৷ আন্তর্জাতিক নিন্দার মুখে এবং খাশগজি যুক্তরাষ্ট্রেই স্বেচ্ছা নির্বাসনে থাকায় বন্ধুর বিরুদ্ধে মুখ খুলতে বাধ্য হয় যুক্তরাষ্ট্রও৷ তবে শেষ পর্যন্ত সৌদি আরবকে এ বিপদ থেকেও উদ্ধারচেষ্টার অভিযোগ উঠেছে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে৷ কোন প্রমাণ ছাড়াই খাশগজি ‘দুর্বৃত্তের’ হাতে নিহত হয়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন তিনি৷