সৌদি আরবের একটি বিমানবন্দর লক্ষ্য করে ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীদের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় অন্তত ২৬ জন আহত হয়েছেন৷
বিজ্ঞাপন
দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের আবহা বিমানবন্দর লক্ষ্য করে বুধবার ভোরে এই হামলার কথা জানিয়েছেন সৌদি নেতৃত্বাধীন জোটের মুখপাত্র কর্নেল তুর্কি আল-মালিকি৷
তিনি জানান, আহতদের মধ্যে দুই শিশুও রয়েছে৷ আহতদের আটজনকে ভর্তি করা হয়েছে হাসপাতালে৷ হামলায় বিমানবন্দরের বিভিন্ন স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে৷
ইয়েমেন সীমান্তের কাছাকাছি বিমানবন্দরটির অবতরণ এলাকায় ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানে৷ কয়েক ঘন্টা বিমান চলাচল বন্ধ থাকার পর সেখানে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসে৷
‘‘সন্ত্রাসী হামলায় কী ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে, তা নির্ধারণে কাজ করছে নিরাপত্তা বাহিনী,'' বলেছেন আল-মালিকি৷‘বেসামরিক লোকজনকে' টার্গেট করে এ হামলাকে যুদ্ধাপরাধ হিসাবে অভিহিত করেছেন তিনি৷
ইয়েমেনের শহরটি যেন এখন মৃত্যুপুরী
তিন বছর ধরে যুদ্ধ চলছে ইয়েমেনে৷ চলছে মৃত্যুর মিছিল৷ গুলি, বোমায় মৃত্যু, অনাহারে থেকে থেকে মৃত্যু, বিনা চিকিৎসায় ভুগে ভুগে মৃত্যু৷ যারা বেঁচে আছে আতঙ্কের সঙ্গেই তাদের নিত্য বসবাস৷ মানুষ এখন মৃত্যু এড়াতে ছুটছে...
ছবি: REUTERS
জীবনে যুদ্ধ, খেলাতেও যুদ্ধ
এই কিশোরীর হাতে কিন্তু খেলনা বন্দুক! হোদাইদায় শিশু-কিশোররা এখন জেগে যুদ্ধ দেখে, স্বপ্নেও বোধহয় যুদ্ধই দেখে৷ প্রাণ হাতে নিয়ে যখন সবাই শহর ছেড়ে পালাচ্ছে এই কিশোরী কিন্তু খেলনা বন্দুকটি সঙ্গে নিতে ভোলেনি!
ছবি: REUTERS
আতঙ্কগ্রস্ত মা-মেয়ে
সম্প্রতি ইয়েমেনের বন্দর নগর হোদাইদায় জোরদার হামলা চালায় সৌদি আরবের নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট৷ গৃহহারা হয় অনেক মানুষ৷ ছবির এই মা-মেয়েও এখন ঘরছাড়া৷ হোদাইদার এক স্কুলই তাদের অস্থায় ঘর৷
ছবি: REUTERS
ক্লান্তিতে ঘুম
শহর ছেড়ে পালাচ্ছে হোদাইদার এক গৃহহারা পরিবার৷ যাত্রাপথে গাড়িতেই এক শিশুর ঘুম৷
ছবি: Reuters/M. al-Sayaghi
স্কুলই তার আশ্রয়
বাবা-মা ঘরছাড়া, তাই এই শিশুরও দিন-রাত কাটে স্কুলে৷ স্কুলই তার ক্রীড়াঙ্গন৷
ছবি: REUTERS
দৃষ্টিতে অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ
কে জানে এই মা আর শিশুর ভবিষ্যতে কী আছে!
ছবি: Reuters/K. Abdullah
কান্না কে দেখে!
আতঙ্কে, নাকি অনাহারে কাঁদছে স্কুলে আশ্রয় পাওয়া এই শিশু?
খেলার মাঠ আর নিরাপদ নয়৷ তাই স্কুলের ভেতরেই খেলায় মেতেছে দুই কিশোর৷
ছবি: Reuters/K. Abdullah
আশ্রয়প্রার্থীদের ভিড়
হোদাইদার এক স্কুল এখন আশ্রয়শিবির৷ সেখানে আশ্রয় পেতেও নাম,ঠিকানা লেখাতে হয়৷ তাই স্কুলের সামনে নারী-শিশুদের ভিড়৷
ছবি: Reuters/K. Abdullah
অপেক্ষা
শহর ছাড়তে হবে৷ তাই তল্পিতল্পা নিয়ে গাড়ির সামনে অপেক্ষায় কিছু আতঙ্কিত মানুষ৷
ছবি: Reuters/M. al-Sayaghi
মায়ের সুখ
যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের এক আতঙ্কের নগরীতে সন্তানের মুখে খাবার তুলে দিচ্ছেন এক মা৷ মায়ের জন্য এর চেয়ে বড় সুখ আর কী হতে পারে!
ছবি: Reuters/F. Salman
11 ছবি1 | 11
আবহা বিমানবন্দরে হামলায় ‘ক্রুজ মিসাইল' ব্যবহার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে হুতি বিদ্রোহীরা৷ ‘আত্মরক্ষার জন্য' এই হামলা চালানো হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিদ্রোহীদের মুখপাত্র মোহাম্মদ আবদেল-সালাম৷
‘‘পাঁচ বছর ধরে ইয়েমেন অবরোধ ও সানা বিমানবন্দর বন্ধ রাখায় এবং রাজনৈতিক ও শান্তিপূর্ণ সমাধানের দিকে না যাওয়ায় চালানো হয়েছে এ হামলা,'' এক টুইটে লিখেছেন তিনি৷
২০১৫ সাল থেকে হুতি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে আসছে সৌদি নেতৃত্বাধীন জোট৷ মধ্যপ্রাচ্যের এই বিদ্রোহী গোষ্ঠী ইরান থেকে অস্ত্র ও সমর্থন পেয়ে আসছে বলে অভিযোগ এই জোটের৷
সৌদি নেতৃত্বাধীন জোটের অবরোধের মধ্যে ইয়েমেনের রাজধানী সানাসহ বিভিন্ন এলাকা দখলে রেখেছে হুতি বিদ্রোহীরা৷ এর মধ্যে সানা বিমানবন্দরও আছে তাদের নিয়ন্ত্রণে৷ গত কয়েক মাসে সৌদি আরবকে লক্ষ্য করে বেশ কিছু ড্রোন ও মিসাইল হামলা পরিচালনা করেছে তারা৷
এদিকে, বুধবারের হামলার নিন্দা জানিয়েছে সৌদি আরবের মিত্র দেশ বাহরাইন৷
ইয়েমেনের মানবিক সংকট
ক্ষুধা, দারিদ্র্যসহ চরম মানবিক সংকটের মধ্য দিয়ে দিন পার করছেন ইয়েমেনের মানুষ৷ সবচেয়ে বেশি বিপদে আছে শিশুরা৷
ছবি: Reuters/K. Abdullah
সংঘাত ও হামলা
২০১৪ সালের শেষ দিকে ইয়েমেনের প্রেসিডেন্ট আবু রাব্বু মনসুর হাদিকে উৎখাত করে দেশটির হুতি বিদ্রোহীরা৷ ২০১৫ সালের মার্চে তাঁকে আবারও ক্ষমতায় বসাতে হামলা শুরু করে সৌদি নেতৃত্বাধীন আরব জোট৷ গত ডিসেম্বরে জাতিসংঘের নেতৃত্বে যুদ্ধবিরতি ও সৈন্য ফিরিয়ে নেয়ার চুক্তি হয়েছে, কিন্তু তা এখনও বাস্তবায়ন হয়নি৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/ H. Jamali
মৃত্যুর মিছিল
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাবে সৌদি হামলার পর থেকে এখন পর্যন্ত দেশটিতে ১০,০০০ মানুষ নিহত ও ৬০,০০০ হাজার জন আহত হয়েছেন৷ তবে ‘অ্যাকশন এগেইনস্ট হাঙ্গার’ নামের একটি সংগঠনের হিসাবে নিহতের সংখ্যা ৫৭,০০০ ছাড়িয়েছে৷ আরেক সংস্থার হিসাবে ৩৩ লাখ মানুষ দেশটিতে বাস্তুচ্যূত হয়েছে৷
ছবি: Reuters
শিশুদের জন্য নরক
শিশুদের জন্য দেশটিতে বসবাস করা নরকের সমতুল্য বলে অভিহিত করেছে ইউনিসেফ৷ তাদের নভেম্বর ২০১৮ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ৫ বছরের নীচের ১৮ লাখ শিশু পুষ্টিহীনতায় ভুগছে৷ ‘সেভ দ্যা চিলড্রেন’এর হিসাবে এপ্রিল ২০১৫ থেকে অক্টোবর ২০১৮ পর্যন্ত ৮৫,০০০ শিশু চরম পুষ্টিহীনতায় মৃত্যুবরণ করেছে৷ ছবিতে পুষ্টিহীনতায় ভোগা ১২ বছর বয়সি এক মেয়েকে হাসপাতালের বিছানার পাশে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: Reuters/K. Abdullah
বাল্য বিবাহ
দারিদ্র্যের কারণে প্রতি পাঁচ মেয়ে শিশুর দুজনেরই ১৫ বছর বয়সের আগে বিয়ে হয়ে যাচ্ছে৷ তিন চতুর্থাংশের আঠারো বছরের আগে বিয়ে হচ্ছে৷ অন্যদিকে কয়েক হাজার ছেলে শিশুকে যুদ্ধে সৈনিক হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে৷
ছবি: Reuters/K. Abdullah
শিক্ষা থেকে বঞ্চিত
ছবির এই শিশুর নাম আফাফ৷ পুষ্টিহীনতার কারণে দুই বছর ধরে সে স্কুলে যেতে পারছে না৷ জাতিসংঘের হিসাবে, দেশটিতে তার মতো ৭০ লাখ স্কুল বয়সি শিশু আছে৷ তাদের ২০ লাখই এখন শিক্ষা বঞ্চিত৷ আড়াই হাজারের বেশি স্কুল বন্ধ৷ যার দুই তৃতীয়াংশই হামলায় বিধ্বস্ত হয়েছে৷
ছবি: Reuters/K. Abdullah
মানবিক সংকট
খাবারের দাম বেড়ে যাওয়ায় জীবন ধারণে হিমশিম খাচ্ছেন ইয়েমেনের নাগরিকরা৷ জাতিসংঘের হিসাবে দেশটির আশিভাগ মানুষেরই এখন কোনো না কোনো মানবিক সহযোগিতা প্রয়োজন৷ ইয়েমেনের দুই তৃতীয়াংশ জেলা রয়েছে প্রাক দুর্ভিক্ষ পর্যায়ে৷
ছবি: Reuters/K. Abdullah
বিচ্ছিন্ন যোগাযোগ
আরব রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে ইয়েমেন অন্যতম দারিদ্র্যপীড়িত৷ যুদ্ধ সেই পরিস্থিতিকে আরো নাজুক করেছে৷ ভেঙে পড়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা৷ যার কারণে মানবিক সহায়তা, জ্বালানি, খাদ্যসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য দেশের সব জায়গায় পৌঁছানো যাচ্ছে না৷ ছবির মহাসড়কটি ইয়েমেনের রাজধানী সানাকে যুক্ত করেছে৷ যেটি বিমান হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত৷
ছবি: Reuters/K. Abdullah
পানির সংকট
দেশটির মানুষ সুপেয় পানির অভাবেও ভুগছেন৷ পাম্পের মাধ্যমে ভূগর্ভস্থ পানি তুলতে হয়৷ কিন্তু জ্বালানির অভাবে সব জায়গায় পানি তোলা সম্ভব হচ্ছে না৷ যে কারণে পানির দামও বেড়ে গেছে৷ অনেক জায়গায় পুকুরের পানিই ব্যবহার করছেন মানুষ৷