মার্কিন .ব্যাপসংগীত শিল্পী নিকি মিনাজ সৌদি আরবে তার প্রতিশ্রুত কনসার্টটি করছেন না৷ সৌদি আরবে নারী ও সমকামীদের অধিকার প্রতিষ্ঠার দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়ে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি৷
বিজ্ঞাপন
মঙ্গলবার এই সিদ্ধান্তের কথা জানান এই সংগীত তারকা৷ আগামী ১৮ জুলাই জেদ্দায় হতে যাওয়া সাংস্কৃতিক উৎসবে যোগ দেবার কথা ছিল তাঁর৷ উৎসবে তাঁর যোগ দেবার খবর প্রচারিত হবার পর থেকে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েন নিকি৷ বার্তা সংস্থা এএফপিকে পাঠানো বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘‘সবকিছু বিবেচনা করে জেদ্দা ওয়ার্ল্ড ফেস্ট-এ কনসার্টটি বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমি৷''
‘‘খুব চাইছিলাম সৌদি আরবে আমার ফ্যানদের সামনে শো করি৷ কিন্তু সেখানকার পরিস্থিতি ভালোভাবে জানার পর দেশটির নারী ও সমকামীদের অধিকার এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতার দাবির পক্ষে সমর্থন জানানো বেশি জরুরি মনে হয়েছে,'' বিবৃতিতে জানান নিকি৷
নিকি না গেলেও উৎসবে অংশ নেবেন ব্রিটিশ সংগীতশিল্পী লিয়াম পেইন ও মার্কিন ডিজে স্টিম আওকি৷
নিকির কনসার্টে যোগ দেবার খবর প্রচারিত হবার পর নিউইয়র্ক ভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশন তাঁর উদ্দেশে একটি খোলা চিঠি লেখে৷ তারা সৌদি প্রশাসনের অর্থ না নেয়ার জন্য এবং নিকি'র জনপ্রিয়তা কাজে লাগিয়ে সেখানকার আটক নারী অধিকারকর্মীদের মু্ক্তির দাবি জোরালো করার জন্য আহ্বান জানায়৷
এ বিষয়ে একটি টুইটবার্তা প্রকাশ করেছেন নিকি৷ তিনি লিখেছেন, ‘‘ফ্যানরা আত্মহত্যা করতে চান, এমন মেসেজ পেতে পেতে আমি ক্লান্ত৷ আপনারা কখনোই জানতে পারবেন না, তারা ব্যক্তিগতভাবে কত কিছু বলেন আমাকে৷ নিজের মত প্রকাশের জন্য একজনও যদি গ্রেফতার বা প্রহার করা হতো, তাহলে আমি ভেঙে পড়তাম৷'' তবে সৌদি সরকারের প্রতি তিনি অসম্মান প্রদর্শন করছেন না বলে জানান নিকি৷
এই মার্কিন শিল্পী তাঁর 'খোলামেলা' গানের কথা ও মিউজিক ভিডিওর জন্য পরিচিত৷
মূলত অর্থনৈতিক কারণে সামাজিক বিনোদনের ওপর কয়েক দশকের কড়াকড়ি থেকে সম্প্রতি বের হয়ে আসতে চাচ্ছে অতিরক্ষণশীল দেশ সৌদি আরব৷ সৌদি প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান বেশ কিছু দিন ধরে কট্টর রক্ষণপন্থা থেকে সৌদি আরবকে একটি উদারপন্থি রূপ দেয়ার চেষ্টা করছেন৷
মেয়েরা গাড়ি চালানোর অনুমতি পেয়েছেন৷ বিভিন্ন খেলার অনুষ্ঠানেও মেয়েরা যাওয়ার সুযোগ পেয়েছেন৷ নিকি মিনাজের জেদ্দায় আমন্ত্রণকে অনেকে এর অংশ হিসেবেই দেখছেন৷
তবে নিকির সিদ্ধান্তে দুঃখ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তাঁর সৌদি ফ্যানেরা৷ তারা টুইটারে এই সিদ্ধান্তের জন্য সমালোচনা করেছেন মার্কিন শিল্পীর৷
যে ১০টি অধিকার পেয়েছেন সৌদি আরবে নারীরা
ছবিঘরে দেখে নিন কবে আর কী কী অধিকার পেয়েছেন সৌদি নারীরা, সে দেশের নারী জাগরণে যা মাইলফলক হয়ে থাকবে৷
ছবি: Getty Images/AFP
১৯৫৫: মেয়েদের জন্য প্রথম স্কুল, ১৯৭০: মেয়েদের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয়
সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে এখন বিপুল সংখ্যক ছাত্রীকে স্কুলে যেতে দেখা যায়৷ কিন্তু আজ থেকে ৬২ বছর আগে চিত্রটা এমন ছিল না৷ সৌদি আরবে মেয়েদের প্রথম স্কুল দার আল হানান৷ আর রিয়াদ কলেজ অফ এডুকেশন সৌদি নারীদের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয়, যেটি চালু হয় ১৯৭০ সালে৷
ছবি: Getty Images/AFP/F. Nureldine
২০০১: নারীদের জন্য পরিচয়পত্র
একবিংশ শতাব্দীর শুরুতে এসে পরিচয়পত্র পাওয়ার ক্ষেত্রে নারীদের অগ্রাধিকার দেয়া হয়৷ সৌদি আরবে নারীদের পরিচয়পত্র নিতে হলে পুরুষ অভিভাবকের অনুমতি প্রয়োজন হতো৷ ২০০১ সালে সৌদি নারীরা পুরুষ অভিভাবকের অনুমতি ছাড়াই পরিচয়পত্র নেয়ার সুযোগ পান৷
ছবি: Getty Images/J. Pix
২০০৫: জোরপূর্বক বিয়ে নিষিদ্ধ
২০০৫ সালে সৌদি আরবে নারীদের জোরপূর্বক বিয়ে নিষিদ্ধ হয়৷
ছবি: Getty Images/A.Hilabi
২০০৯: প্রথম নারী মন্ত্রী
২০০৯ সালে বাদশাহ আব্দুল্লাহ সৌদি আরবের কেন্দ্রীয় সরকারে প্রথম নারী মন্ত্রী নিয়োগ করেন৷ নূরা আল কায়েজ নারী বিষয়ক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী হিসেবে সে বছর সরকারে যোগ দেন৷
ছবি: Foreign and Commonwealth Office
২০১২: অলিম্পিকে প্রথম নারী অ্যাথলিট
২০১২ সালে প্রথমবারের মতো অলিম্পিকে অংশ নেন সৌদি নারীরা৷ তাঁদের মধ্যে সারাহ আত্তার নারীদের ৮০০ মিটার দৌড়ে লন্ডন অলিম্পিকের ট্র্যাকে নেমেছিলেন হিজাব পড়ে৷ আসর শুরুর আগে নারীদের অংশগ্রহণ করতে না দিলে সৌদি আরবকে অলিম্পিক থেকে বাদ দেয়ার কথা জানিয়েছিল আইওসি৷
ছবি: picture alliance/dpa/J.-G.Mabanglo
২০১৩: সাইকেল ও মোটরসাইকেল চালানোর অনুমতি
ঐ বছর সাইকেল ও মোটরসাইকেল চালানোর অনুমতি পান সৌদি নারীরা৷ তবে কিছু নির্দিষ্ট এলাকায় এবং ইসলামি রীতিতে পুরো শরীর ঢেকে এবং কোনো পুরুষ আত্মীয়ের উপস্থিতিতে তা চালানোর অনুমতি দেয়া হয়৷
ছবি: Getty Images/AFP
২০১৩: শুরায় প্রথম নারী
২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে বাদশাহ আব্দুল্লাহ সৌদি আরবের রক্ষণশীল কাউন্সিল ‘শুরা’য় প্রথমবারের মতো ৩০ জন নারীকে শপথ বাক্য পাঠ করান৷
ছবি: REUTERS/Saudi TV/Handout
২০১৫: ভোট দেয়া এবং নির্বাচনে অংশ নেয়ার অধিকার
২০১৫ সালে সৌদি আরবের পৌরসভা নির্বাচনে নারীরা প্রথমবারের মতো ভোট দেয়ার এবং নির্বাচনে অংশ নেয়ার সুযোগ পান৷ বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে নিউজিল্যান্ড নির্বাচনে নারীদের অংশ গ্রহণ নিশ্চিত করেছিল ১৮৯৩ সালে, জার্মানিতে তা চালু হয় ১৯১৯ সালে৷ ২০১৫ সালে সৌদি আরবের ঐ নির্বাচনে ২০ জন নারী নির্বাচিত হয়েছিলেন৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/A. Batrawy
২০১৭: সৌদি স্টক এক্সচেঞ্জে প্রথম নারী
২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে সৌদি আরব দেশটির স্টক এক্সচেঞ্জের চেয়ারপার্সন হিসেবে সারাহ আল সুহাইমির নাম ঘোষণা করে আরেক ইতিহাস রচনা করে৷
ছবি: pictur- alliance/abaca/Balkis Press
২০১৮: গাড়ি চালানোর অনুমতি
গত ২৬শে সেপ্টেম্বর সৌদি আরব নারীদের গাড়ি চালানোর অনুমতি সংক্রান্ত এক আদেশ জারি করে৷ ২০১৮ সালের জুন মাসে এই আদেশ কার্যকর হয়েছে৷ এর ফলে নারীদের আর কোনো পুরুষ অভিভাবকের অনুমতি নিতে হবে না এবং স্বতন্ত্র লাইসেন্স পাচ্ছেন তারা৷