ওয়াশিংটন পোস্টে এক উপসম্পাদকীয়তে আসন্ন সৌদি আরব সফরের পক্ষে নিজের বক্তব্য তুলে ধরেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন৷ দেশটিকে একঘরে করার প্রতিশ্রুতির পর তার এই সফর নিয়ে চলছে ব্যাপক সমালোচনা৷
বিজ্ঞাপন
তেলসমৃদ্ধ দেশটিতে সফর করা কেন জরুরি, সেটি নিয়েই নিজের মতামত ওয়াশিংটন পোস্টে লিখেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট৷ বাইডেনের ১৩ থেকে ১৬ জুলাই মধ্যপ্রাচ্য সফরে সৌদি আরব যাওয়ার আগে ইসরায়েল এবং অধীকৃত ফিলিস্তিনি অঞ্চলেও যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে৷
বাইডেন লিখেছেন, ‘‘আমি জানি অনেকেই আমার সৌদি আরব সফরের পরিকল্পনার সঙ্গে একমত নন৷ মানবাধিকার বিষয়ে আমার অবস্থান স্পষ্ট এবং দীর্ঘস্থায়ী৷ আমি যখন বিদেশ সফরে যাই, মৌলিক স্বাধীনতার বিষয়টি সবসময়ই আলোচ্যসূচিতে থাকে৷''
২০১৮ সালে তুরস্কের আঙ্কারায় ওয়াশিংটন পোস্টের সাংবাদিক জামাল খাশোগজি হত্যার পেছনে সৌদি আরবের নেতা যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের হাত রয়েছে বলে ধারণা করা হয়৷
সৌদি আরব সফরে এর্দোয়ান
তুরস্কে সৌদির দূতাবাসে ২০১৮ সালে হত্যা করা হয় সাংবাদিক জামাল খাশগজিকে। তারপর এই প্রথম সৌদিতে পা রাখলেন এর্দোয়ান।
ছবি: TUR Presidency/ Murat Cetinmuhurdar/AA/picture alliance
১৪ বছর পর
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এর্দোয়ান ১৪ বছর পর সৌদি আরব সফরে গেলেন। এর্দোয়ানের অফিস জানিয়েছে, সৌদির রাজা সালমানের আমন্ত্রণেই তার এই সফর। উপরের ছবিটি সৌদিতে পৌঁছাবার পর বিমানবন্দরে এর্দোয়ান।
ছবি: Saudi Press Agency/dpa/picture alliance
জামাল খাশগজি হত্যার পর
২০১৮ সালে ইস্তাম্বুলে সৌদি দূতাবাসে জামাল খাশগজিকে হত্যা করা হয়। অভিযোগের আঙুল ওঠে যুবরাজ মোহাম্মেদ বিন সালমানের বিরুদ্ধেও। খাশগজিকে হত্যা নিয়ে তুরস্ক ও সৌদি আরবের বয়ান ছিল আলাদা। এই নিয়ে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি হয়। খাশগজি হত্যার পর এই প্রথম সৌদি আরব সফরে গেলেন এর্দোয়ান। উপরের ছবিতে এর্দোয়ান ও যুবরাজ সালমান।
ছবি: TUR Presidency/ Murat Cetinmuhurdar/AA/picture alliance
দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক ভালো করতে
সৌদি আরব যাওয়ার আগে এর্দোয়ান বলেছেন, তার এই সফরের উদ্দেশ্য দুই দেশের রাজনৈতিক, সামরিক ও সাংস্কৃতিক সম্পর্কের উন্নতি করা। খাশগজি হত্যার পর দুই দেশের সম্পর্ক তলানিতে ঠেকেছিল। এর্দোয়ান বলেছেন, স্বাস্থ্য, বিদ্যুৎ, খাদ্যসুরক্ষা, প্রতিরক্ষা ও আর্থিক ক্ষেত্রে দুই দেশের সহযোগিতা আরো বাড়ানোর লক্ষ্য নিয়ে তিনি যাচ্ছেন।
ছবি: Murat Kula/AA/picture alliance
অঘোষিত বয়কট উঠবে?
২০২০ সালে সৌদি আরব তুরস্কের জিনিস আমদানির উপর অঘোষিত বয়কট জারি করেছে। এর ফলে সৌদিতে তুরস্কের জিনিস আমদানি ৯৮ শতাংশ কমে গেছে। এই সফরের ফলে কি সেই বয়কট উঠবে?
ছবি: Saudi Press Agency/dpa/picture alliance
তুরস্কের স্বার্থ
তুরস্কের অর্থনীতি রীতিমতো চাপে আছে। রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাতের আগে থেকেই তুরস্কে জিনিসের দাম ভয়ংকরভাবে বেড়েছে। এর্দোয়ানের আর্থিক নীতি সমালোচনার মুখে পড়েছে। ২০২১-এর পর থেকে এর্দোয়ান যে নীতি নিয়ে চলেছেন, তার ফলে মুদ্রাস্ফীতি ৬০ শতাংশ বেড়েছে। রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাতের পর অর্থনীতির উপর চাপ আরো বেড়েছে। এর্দোয়ানের সফরের ফলে সৌদি আর্থিক ক্ষেত্রে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেবে বলে আশা করছে তুরস্ক।
ছবি: Murat Kula/AA/picture alliance
তুরস্কের আশা
এর্দোয়ানের সফরের ফলে তুরস্কে সৌদির বিনিয়োগ বাড়বে বলে তুরস্কের আশা। তাছাড়া সিরিয়া, লিবিয়া নিয়ে তুরস্ক আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বেশ কিছুটা কোণঠাসা। এই অবস্থায় সৌদির সমর্থন তাদের কাছে জরুরি বলে মনে করা হচ্ছে।
6 ছবি1 | 6
কী লিখেছেন বাইডেন?
জো বাইডেন যুক্তি দিয়েছেন, পূর্বসূরি ডনাল্ড ট্রাম্পের তুলনায় তার পররাষ্ট্রনীতি মধ্যপ্রাচ্যকে আরো স্থিতিশীল করে তুলেছে৷ রুশ আগ্রাসন এবং চীনের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতার ক্ষেত্রে তিনি মার্কিন নিরাপত্তার বিষয়টিকেও যুক্ত করেছেন৷ এবং এ কাজে সৌদি আরব গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন বাইডেন৷
তিনি লিখেছেন, ‘‘প্রেসিডেন্ট হিসাবে আমাদের দেশকে শক্তিশালী ও সুরক্ষিত রাখাই আমার কাজ৷ আমাদের রাশিয়ার আগ্রাসন মোকাবিলা করতে হবে, চীনের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ভালো আবস্থানে যেতে হবে এবং বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ একটি অঞ্চলে আরো বেশি স্থিতিশীলতার জন্যও কাজ করে যেতে হবে৷''
বাইডেনের মতে, ‘‘এই কাজগুলো করার জন্য এমন সব দেশের সঙ্গে আমাদের সরাসরি সম্পৃক্ত হতে হবে, যারা ফল নির্ধারণে প্রভাব রাখতে পারে৷ সৌদি আরব এসব দেশের মধ্যে একটি৷ শুক্রবার যখন আমি সৌদি নেতাদের সঙ্গে দেখা করবো, আমার লক্ষ্য থাকবে মৌলিক মার্কিন মূল্যবোধের প্রতিও সৎ থেকে পারস্পরিক স্বার্থ এবং দায়িত্বের ভিত্তিতে কৌশলগত অংশীদারত্ব জোরদার করা৷''
মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ঘাঁটিগুলো
ইরাক থেকে তুরস্ক, মধ্যপ্রাচ্যের বেশিরভাগ দেশেই রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ঘাঁটি৷ আছে হাজারো সৈন্য৷ এই ঘাঁটিগুলো দিয়ে ইরানকে চারপাশ থেকে ঘিরে রেখেছে যুক্তরাষ্ট্র৷
ছবি: imago/StockTrek Images
ইরাক
ইরাকে বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের ৫,২০০ সৈন্য রয়েছে৷ তবে তা ক্রমান্বয়ে কমিয়ে আনার পরিকল্পনা করেছে পেন্টাগন৷ এর অংশ হিসেবে বেশ কয়েকটি ক্যাম্প থেকে এরিমধ্যে সৈন্য প্রত্যাহারও করা হয়েছে৷ বর্তমানে গ্রিন জোন, বাগদাদের কূটনৈতিক এলাকা, আল আসাদ বিমান ঘাঁটিতে দেশটির সেনাসদস্য রয়েছে৷ গত নভেম্বরে আল আসাদ বিমান ঘাঁটিতে সৈন্যদের সঙ্গে দেখা করেছেন ভাইস প্রেসিডেন্ট পেন্স৷
ছবি: imago/StockTrek Images
কুয়েত
মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম মিত্র কুয়েত৷ দুই দেশের মধ্যে রয়েছে প্রতিরক্ষা সহায়তা চুক্তি৷ দেশটিতে রয়েছে বেশ কয়েকটি মার্কিন ঘাঁটি৷ যেখানে প্রায় ১৩ হাজার সৈন্য রয়েছে৷
ছবি: Getty Images/S. Nelson
সিরিয়া
সিরিয়ার কোথায় যুক্তরাষ্ট্রের কত সংখ্যক সৈন্য রয়েছে সে বিষয়টি প্রকাশিত নয়৷ অক্টোবরে সেখান থেকে সৈন্য প্রত্যাহার শুরু করেছে ট্রাম্প প্রশাসন৷ তার আগ পর্যন্ত দেশটিতে প্রায় ২০০০ সৈন্য ছিল, বর্তমানে যা ৮০০ জনে নেমে এসেছে৷ যেসব ঘাঁটি চালু আছে তার একটি সিরিয়ান-জর্ডান সীমান্তে৷ এর কাছেই রয়েছে ইরানীয় আর তাদের সমর্থিত বাহিনী৷
ছবি: -picture alliance/AP Photo/Z. Garbarino
জডার্ন
ইরাক, সিরিয়া, ইসরায়েল, আর সৌদি আরবের সঙ্গে সীমান্ত রয়েছে জডার্নের৷ কৌশলগত দিক থেকে তাই মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভৌগলিক অবস্থান এটি৷ দেশটির মুভাফফাক ছালটি বিমান ঘাঁটি থেকে সিরিয়ায় আইএস বিরোধী হামলা চালানো হয়েছে৷ অবশ্য কিং ফয়সাল বিমান ঘাঁটিতে ২০১৬ সালে তিন মার্কিন সেনা নিহত হয়েছিল জডার্নের বিমান বাহিনীর গুলিতে৷
ছবি: AP
সৌদি আরব
সৌদি আরবে বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের তিন হাজার সেনাসদস্য রয়েছে৷ অক্টোবরে সৌদি তেলক্ষেত্রে হামলার পর ইরানের সঙ্গে সৌদি আরবের সংঘাতের শঙ্কায় সেখানে আরো সৈন্য পাঠানোর ঘোষণা দিয়েছে তারা৷
ছবি: Getty Images/AFP/F. Nureldine
বাহরাইন
বাহরাইনে যুক্তরাষ্ট্রের একটি নৌ ঘাঁটি রয়েছে৷ দ্বীপ রাষ্ট্রটি বরাবরই সৌদি আরবের মিত্র৷ ইরানের বিরুদ্ধে ট্রাম্পের পদক্ষেপের সমর্থকও তারা৷ বর্তমানে সেখানে সাত হাজার মার্কিন সৈন্য রয়েছে৷
ছবি: AP
ওমান
ওমানের অবস্থান হরমুজ প্রণালীর কাছে আরব উপকূলে, যা জ্বালানি পরিবহনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পথ৷ ২০১৯ সালের মার্চে যুক্তরাষ্ট্রেকে বিমান ও সমুদ্র বন্দর ব্যবহারের অনুমতি দেয় ওমান৷ বর্তমানে সেখানে ৬০০ মার্কিন সৈন্য রয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/E. Noroozi
সংযুক্ত আরব আমিরাত
হরমুজ প্রণালীর পাশে থাকা আরেক দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাত৷ তাদেরও যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরবের সাথে ভাল সম্পর্ক বিদ্যমান৷ সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সেখানে পাঁচ হাজার সৈন্য পাঠিয়েছে পেন্টাগন৷
ছবি: picture-alliance/AP/K. Jebreili
কাতার
মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় সামরিক ঘাঁটিটি কাতারের আল উদিদে৷ এর আধুনিকায়নে ২০১৮ সালে ১৮০ কোটি ডলারে একটি প্রকল্প ঘোষণা করেছে কাতার৷ বর্তমানে সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের ১৩ হাজার সৈন্য নিযুক্ত রয়েছে৷
ছবি: Reuters/N. Zeitoon
তুরস্ক
যুক্তরাষ্ট্রের সৈন্য রয়েছে তুরস্কেও৷ দেশটির ইনজিরলিক বিমান ঘাঁটিসহ বেশ কিছু জায়গায় মার্কিন সেনা অবস্থান করছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
10 ছবি1 | 10
সৌদি আরব কেন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য গুরুত্বপূর্ণ?
বাইডেন লিখেছেন, ৮০ বছর ধরে এই অঞ্চলের অন্যতম কৌশলগত অংশীদার দেশের সঙ্গে সম্পর্কে ‘বিচ্ছেদ নয়, পুনর্নির্মাণ' চান তিনি৷
তেল রপ্তানিকারক দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম সৌদি আরব৷ বিশ্বজুড়ে বাড়তে থাকা তেলের মূল্যে লাগাম টানতে দৈনিক তেল উৎপাদন বাড়ানোর কথাও বাইডেন বলতে পারেন বলে আশা করা হচ্ছে৷
প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারণার সময় খাশোগজি হত্যার পরিপ্রেক্ষিতে সৌদি আরবকে একঘরে করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন বাইডেন৷ কিন্তু সম্প্রতি, বিশেষ করে ইয়েমেন যুদ্ধ শেষ করার সৌদি উদ্যোগের পর, তার মুখ থেকে রিয়াদের প্রশংসাই শোনা গেছে৷ সৌদি আরব সম্প্রতি ইয়েমেনে যুদ্ধবিরতির সময়ও বাড়িয়েছে৷
অঞ্চলটিতে ইরানের প্রভাব বিস্তার ঠেকিয়ে ওয়াশিংটনেরও স্বার্থ রক্ষা করছে রিয়াদ৷ ইয়েমেন এবং ইরাকে নিজেদের প্রভাব বিস্তার নিয়ে দীর্ঘদিন মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছে ইরান ও সৌদি আরব৷