ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মেদ বিন সালমানের সংস্কার কর্মসূচি ‘ভিশন ২০৩০' বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে সৌদি নারীরা বিভিন্ন সুবিধা পাচ্ছেন৷ কিন্তু এখনও তাদের ক্ষমতায়নের পথে অনেক বাধা আছে৷
বিজ্ঞাপন
আগামী জুন মাস থেকে গাড়ি চালাবেন সৌদি নারীরা৷ এছাড়া এখন থেকে পুরুষ সঙ্গীর অনুমতি ছাড়াই ব্যবসা শুরু করতে পারবেন তাঁরা৷ কর্মক্ষেত্রে সৌদি নারীদের অংশগ্রহণ সৌদি নারীদের অংশগ্রহণ বাড়ানোরও পরিকল্পনা করা হয়েছে৷ ২০৩০ সালের মধ্যে মোট জনশক্তির এক তৃতীয়াংশ নারী করতে চায় দেশটি৷
এ সব ছাড়াও সম্প্রতি প্রথম নারী রেস্তোরাঁ মালিক, প্রথম নারী পশু চিকিৎসক, প্রথম নারী ট্যুর গাইড পেয়েছে সৌদি আরব৷
কিন্তু তারপরও সন্তুষ্ট হতে পারছেন না সৌদি নারীরা৷ কারণ অ্যাক্টিভিস্টরা বলছেন, ‘গার্ডিয়ানশিপ' ব্যবস্থা বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত সৌদি নারীদের জীবনে পরিপূর্ণ পরিবর্তন আসবে না৷ এই ব্যবস্থার কারণে পড়ালেখা, ভ্রমণসহ সরকারি সেবা পেতে নারীদের একজন পুরুষ আত্মীয়ের অনুমতি নেয়ার প্রয়োজন হয়৷ সাধারণত এক্ষেত্রে নারীদের তাঁদের বাবা, স্বামী কিংবা ছেলের অনুমতি নিতে হয়৷
যে ১০টি অধিকার পেয়েছেন সৌদি আরবে নারীরা
ছবিঘরে দেখে নিন কবে আর কী কী অধিকার পেয়েছেন সৌদি নারীরা, সে দেশের নারী জাগরণে যা মাইলফলক হয়ে থাকবে৷
ছবি: Getty Images/AFP
১৯৫৫: মেয়েদের জন্য প্রথম স্কুল, ১৯৭০: মেয়েদের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয়
সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে এখন বিপুল সংখ্যক ছাত্রীকে স্কুলে যেতে দেখা যায়৷ কিন্তু আজ থেকে ৬২ বছর আগে চিত্রটা এমন ছিল না৷ সৌদি আরবে মেয়েদের প্রথম স্কুল দার আল হানান৷ আর রিয়াদ কলেজ অফ এডুকেশন সৌদি নারীদের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয়, যেটি চালু হয় ১৯৭০ সালে৷
ছবি: Getty Images/AFP/F. Nureldine
২০০১: নারীদের জন্য পরিচয়পত্র
একবিংশ শতাব্দীর শুরুতে এসে পরিচয়পত্র পাওয়ার ক্ষেত্রে নারীদের অগ্রাধিকার দেয়া হয়৷ সৌদি আরবে নারীদের পরিচয়পত্র নিতে হলে পুরুষ অভিভাবকের অনুমতি প্রয়োজন হতো৷ ২০০১ সালে সৌদি নারীরা পুরুষ অভিভাবকের অনুমতি ছাড়াই পরিচয়পত্র নেয়ার সুযোগ পান৷
ছবি: Getty Images/J. Pix
২০০৫: জোরপূর্বক বিয়ে নিষিদ্ধ
২০০৫ সালে সৌদি আরবে নারীদের জোরপূর্বক বিয়ে নিষিদ্ধ হয়৷
ছবি: Getty Images/A.Hilabi
২০০৯: প্রথম নারী মন্ত্রী
২০০৯ সালে বাদশাহ আব্দুল্লাহ সৌদি আরবের কেন্দ্রীয় সরকারে প্রথম নারী মন্ত্রী নিয়োগ করেন৷ নূরা আল কায়েজ নারী বিষয়ক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী হিসেবে সে বছর সরকারে যোগ দেন৷
ছবি: Foreign and Commonwealth Office
২০১২: অলিম্পিকে প্রথম নারী অ্যাথলিট
২০১২ সালে প্রথমবারের মতো অলিম্পিকে অংশ নেন সৌদি নারীরা৷ তাঁদের মধ্যে সারাহ আত্তার নারীদের ৮০০ মিটার দৌড়ে লন্ডন অলিম্পিকের ট্র্যাকে নেমেছিলেন হিজাব পড়ে৷ আসর শুরুর আগে নারীদের অংশগ্রহণ করতে না দিলে সৌদি আরবকে অলিম্পিক থেকে বাদ দেয়ার কথা জানিয়েছিল আইওসি৷
ছবি: picture alliance/dpa/J.-G.Mabanglo
২০১৩: সাইকেল ও মোটরসাইকেল চালানোর অনুমতি
ঐ বছর সাইকেল ও মোটরসাইকেল চালানোর অনুমতি পান সৌদি নারীরা৷ তবে কিছু নির্দিষ্ট এলাকায় এবং ইসলামি রীতিতে পুরো শরীর ঢেকে এবং কোনো পুরুষ আত্মীয়ের উপস্থিতিতে তা চালানোর অনুমতি দেয়া হয়৷
ছবি: Getty Images/AFP
২০১৩: শুরায় প্রথম নারী
২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে বাদশাহ আব্দুল্লাহ সৌদি আরবের রক্ষণশীল কাউন্সিল ‘শুরা’য় প্রথমবারের মতো ৩০ জন নারীকে শপথ বাক্য পাঠ করান৷
ছবি: REUTERS/Saudi TV/Handout
২০১৫: ভোট দেয়া এবং নির্বাচনে অংশ নেয়ার অধিকার
২০১৫ সালে সৌদি আরবের পৌরসভা নির্বাচনে নারীরা প্রথমবারের মতো ভোট দেয়ার এবং নির্বাচনে অংশ নেয়ার সুযোগ পান৷ বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে নিউজিল্যান্ড নির্বাচনে নারীদের অংশ গ্রহণ নিশ্চিত করেছিল ১৮৯৩ সালে, জার্মানিতে তা চালু হয় ১৯১৯ সালে৷ ২০১৫ সালে সৌদি আরবের ঐ নির্বাচনে ২০ জন নারী নির্বাচিত হয়েছিলেন৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/A. Batrawy
২০১৭: সৌদি স্টক এক্সচেঞ্জে প্রথম নারী
২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে সৌদি আরব দেশটির স্টক এক্সচেঞ্জের চেয়ারপার্সন হিসেবে সারাহ আল সুহাইমির নাম ঘোষণা করে আরেক ইতিহাস রচনা করে৷
ছবি: pictur- alliance/abaca/Balkis Press
২০১৮: গাড়ি চালানোর অনুমতি
গত ২৬শে সেপ্টেম্বর সৌদি আরব নারীদের গাড়ি চালানোর অনুমতি সংক্রান্ত এক আদেশ জারি করে৷ ২০১৮ সালের জুন মাসে এই আদেশ কার্যকর হয়েছে৷ এর ফলে নারীদের আর কোনো পুরুষ অভিভাবকের অনুমতি নিতে হবে না এবং স্বতন্ত্র লাইসেন্স পাচ্ছেন তারা৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/H. Jamali
10 ছবি1 | 10
এক নারী বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেছেন, তাঁর বাবা অসুস্থ হয়ে কোমায় থাকায় তিনি তাঁর পাসপোর্টের মেয়াদ বাড়াতে পারেননি৷ এমনকি অভিভাবক না থাকায় অনেক নারী কয়েদি মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পরও কারাগার থেকে ছাড়া পাননি৷
এসব কারণে এক সৌদি অ্যাক্টিভিস্ট এএফপিকে বলেন, ‘‘আমি যদি গাড়ি চালানোর অনুমতি আর গার্ডিয়ানশিপ বিলুপ্ত করার মধ্যে একটি পছন্দ করতে পারি তাহলে আমি পরেরটিই বেছে নেব৷''
সৌদি আরবের সামাজিক ব্যবস্থাও এখনও নারীদের অগ্রগতি মেনে নিতে পারছেনা৷ তার একটি প্রমাণ দিয়েছে এএফপি৷ তাদের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মারভাত বুখারি নামের ৪৩ বছরের এক সৌদি নারী যখন গত অক্টোবরে একটি গ্যাস স্টেশনে চাকরি পেয়েছিলেন তখন সামাজিক মাধ্যমে তাঁকে অপমান আর বিদ্রূপ সহ্য করতে হয়েছিল৷ বুখারিকে অপমান করতে একটি হ্যাশট্যাগও চালু হয়েছিল৷ হ্যাশট্যাগটি ছিল এরকম ‘সৌদি নারীরা গ্যাস স্টেশনে কাজ করে না'৷ এমনকি বুখারির সবচেয়ে ছোট ছেলে ছাড়া অন্য সন্তানেরাও গ্যাস স্টেশনে তাঁদের মায়ের কাজ করা নিয়ে সন্তুষ্ট ছিল না৷
পরিস্থিতি সামাল দিতে বুখারি জানিয়েছিলেন তিনি গ্যাস স্টেশনের ব্যবস্থাপনা বিভাগে কাজ করবেন, গ্যাসের পাইপ নিয়ে কাজ করবেন না৷
জেডএইচ/ডিজি (এএফপি, এপি)
সৌদি আরবে বক্সিং শিখছেন নারীরা
সৌদি আরবের নারীরা অন্যান্য দেশের নারীদের মতো অনেক কিছু করতে পারেন না৷ তবে সম্প্রতি এক সৌদি নারী অন্য মেয়েদের বক্সিং প্রশিক্ষণ দেয়া শুরু করেছেন৷
জেদ্দায় জন্ম নেয়া হালা আল-হামরানি তাঁর শহরে ‘এফএলএজিবক্সিং’ নামে একটি ব্যক্তিগত জিম (শরীরচর্চা কেন্দ্র) চালু করেছেন৷ এফএলএজি মানে হচ্ছে ‘ফাইট লাইক এ গার্ল’৷ সেখানে মেয়েদের বক্সিং শেখান তিনি৷
স্কুলে পড়ার সময় ১২ বছর বয়সে প্রথম মার্শাল আর্টের প্রতি আকৃষ্ট হন আল-হামরানি৷ এরপর যুক্তরাষ্ট্রে পড়তে গিয়ে বক্সিংয়ের প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠেন৷ সেখানে প্রশিক্ষণ নিয়ে প্রশিক্ষক হিসেবে স্বীকৃতি পান তিনি৷ ফলে সৌদি আরবের প্রথম নারী বক্সিং প্রশিক্ষক হচ্ছেন আল-হামরানি৷
ন্যাশনাল জিওগ্রাফি চ্যানেলে আল-হামরানির কাজ নিয়ে প্রতিবেদন প্রচারিত হয়েছে৷ তাছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সাহায্যেও তাঁর কর্মকাণ্ডের খবর বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে৷ ফলে অন্য অনেক মেয়েও এখন বক্সিংয়ের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠেছে৷
এখন নিজের ব্যক্তিগত জিমে মেয়েদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন আল-হামরানি৷ তবে ভবিষ্যতে সৌদি সরকার মেয়েদের জন্য জিম প্রতিষ্ঠার লাইসেন্স বা অনুমতি দিলে দেশের অন্যান্য অঞ্চলেও জিম খোলার ইচ্ছা আছে তাঁর৷
জেদ্দা শহরের যেখানে জিমটি অবস্থিত তার আশেপাশের বেশিরভাগ মানুষ তাঁর কাজ সমর্থন করেন বলে মনে করেন আল-হামরানি৷ অবশ্য রক্ষণশীল মানুষরাও আছেন, যাঁরা এর বিরোধিতা করেন৷ তবে এসব বিরোধিতা তাঁকে দমাতে পারেনি৷
২০১২ সালের লন্ডন অলিম্পিকে সৌদি নারীরা প্রথমবারের মতো অংশ নেয়৷ ভবিষ্যতে সৌদি নারী বক্সারদের আন্তর্জাতিক বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে সহায়তা করতে চান আল-হামরানি৷
আল-হামরানি বলেন, একটা সময় ছিল যখন সৌদি আরবে মেয়েদের বেড়ে ওঠার সময় খেলাধুলা করাটাকে ততটা গুরুত্ব দেয়া হত না৷ তবে দিন বদলাচ্ছে৷ এখনকার মেয়েরা মনে করছে, স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের জন্য নিয়মিত খেলাধুলা প্রয়োজন৷ তাই তারা বক্সিংসহ অন্যান্য খেলার প্রতি আগ্রহী হচ্ছে৷