কেবল এক সপ্তাহ হয়েছে সৌদি নারীরা গাড়ি চালানোর অনুমতি পেয়েছেন৷ তাতে কী? এই সিদ্ধান্ত সৌদি নারীদের কত যুগের বঞ্চনার অবসান, তা বোঝা যাচ্ছে নীচের এই ভিডিও দেখেই৷
বিজ্ঞাপন
সৌদি নারী র্যাপার লিসা এ৷ নারীদের গাড়ি চালানোর অনুমতি দেয়ার সিদ্ধান্ত উদযাপন করতে তিনি কাজে লাগিয়েছেন নিজের প্রতিভা৷ গাড়ির চালকের আসনে বসেই গেয়েছেন আরবি র্যাপ সং ‘উই আর ড্রাইভিং'৷
যে ১০টি অধিকার পেয়েছেন সৌদি আরবে নারীরা
ছবিঘরে দেখে নিন কবে আর কী কী অধিকার পেয়েছেন সৌদি নারীরা, সে দেশের নারী জাগরণে যা মাইলফলক হয়ে থাকবে৷
ছবি: Getty Images/AFP
১৯৫৫: মেয়েদের জন্য প্রথম স্কুল, ১৯৭০: মেয়েদের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয়
সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে এখন বিপুল সংখ্যক ছাত্রীকে স্কুলে যেতে দেখা যায়৷ কিন্তু আজ থেকে ৬২ বছর আগে চিত্রটা এমন ছিল না৷ সৌদি আরবে মেয়েদের প্রথম স্কুল দার আল হানান৷ আর রিয়াদ কলেজ অফ এডুকেশন সৌদি নারীদের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয়, যেটি চালু হয় ১৯৭০ সালে৷
ছবি: Getty Images/AFP/F. Nureldine
২০০১: নারীদের জন্য পরিচয়পত্র
একবিংশ শতাব্দীর শুরুতে এসে পরিচয়পত্র পাওয়ার ক্ষেত্রে নারীদের অগ্রাধিকার দেয়া হয়৷ সৌদি আরবে নারীদের পরিচয়পত্র নিতে হলে পুরুষ অভিভাবকের অনুমতি প্রয়োজন হতো৷ ২০০১ সালে সৌদি নারীরা পুরুষ অভিভাবকের অনুমতি ছাড়াই পরিচয়পত্র নেয়ার সুযোগ পান৷
ছবি: Getty Images/J. Pix
২০০৫: জোরপূর্বক বিয়ে নিষিদ্ধ
২০০৫ সালে সৌদি আরবে নারীদের জোরপূর্বক বিয়ে নিষিদ্ধ হয়৷
ছবি: Getty Images/A.Hilabi
২০০৯: প্রথম নারী মন্ত্রী
২০০৯ সালে বাদশাহ আব্দুল্লাহ সৌদি আরবের কেন্দ্রীয় সরকারে প্রথম নারী মন্ত্রী নিয়োগ করেন৷ নূরা আল কায়েজ নারী বিষয়ক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী হিসেবে সে বছর সরকারে যোগ দেন৷
ছবি: Foreign and Commonwealth Office
২০১২: অলিম্পিকে প্রথম নারী অ্যাথলিট
২০১২ সালে প্রথমবারের মতো অলিম্পিকে অংশ নেন সৌদি নারীরা৷ তাঁদের মধ্যে সারাহ আত্তার নারীদের ৮০০ মিটার দৌড়ে লন্ডন অলিম্পিকের ট্র্যাকে নেমেছিলেন হিজাব পড়ে৷ আসর শুরুর আগে নারীদের অংশগ্রহণ করতে না দিলে সৌদি আরবকে অলিম্পিক থেকে বাদ দেয়ার কথা জানিয়েছিল আইওসি৷
ছবি: picture alliance/dpa/J.-G.Mabanglo
২০১৩: সাইকেল ও মোটরসাইকেল চালানোর অনুমতি
ঐ বছর সাইকেল ও মোটরসাইকেল চালানোর অনুমতি পান সৌদি নারীরা৷ তবে কিছু নির্দিষ্ট এলাকায় এবং ইসলামি রীতিতে পুরো শরীর ঢেকে এবং কোনো পুরুষ আত্মীয়ের উপস্থিতিতে তা চালানোর অনুমতি দেয়া হয়৷
ছবি: Getty Images/AFP
২০১৩: শুরায় প্রথম নারী
২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে বাদশাহ আব্দুল্লাহ সৌদি আরবের রক্ষণশীল কাউন্সিল ‘শুরা’য় প্রথমবারের মতো ৩০ জন নারীকে শপথ বাক্য পাঠ করান৷
ছবি: REUTERS/Saudi TV/Handout
২০১৫: ভোট দেয়া এবং নির্বাচনে অংশ নেয়ার অধিকার
২০১৫ সালে সৌদি আরবের পৌরসভা নির্বাচনে নারীরা প্রথমবারের মতো ভোট দেয়ার এবং নির্বাচনে অংশ নেয়ার সুযোগ পান৷ বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে নিউজিল্যান্ড নির্বাচনে নারীদের অংশ গ্রহণ নিশ্চিত করেছিল ১৮৯৩ সালে, জার্মানিতে তা চালু হয় ১৯১৯ সালে৷ ২০১৫ সালে সৌদি আরবের ঐ নির্বাচনে ২০ জন নারী নির্বাচিত হয়েছিলেন৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/A. Batrawy
২০১৭: সৌদি স্টক এক্সচেঞ্জে প্রথম নারী
২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে সৌদি আরব দেশটির স্টক এক্সচেঞ্জের চেয়ারপার্সন হিসেবে সারাহ আল সুহাইমির নাম ঘোষণা করে আরেক ইতিহাস রচনা করে৷
ছবি: pictur- alliance/abaca/Balkis Press
২০১৮: গাড়ি চালানোর অনুমতি
গত ২৬শে সেপ্টেম্বর সৌদি আরব নারীদের গাড়ি চালানোর অনুমতি সংক্রান্ত এক আদেশ জারি করে৷ ২০১৮ সালের জুন মাসে এই আদেশ কার্যকর হয়েছে৷ এর ফলে নারীদের আর কোনো পুরুষ অভিভাবকের অনুমতি নিতে হবে না এবং স্বতন্ত্র লাইসেন্স পাচ্ছেন তারা৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/H. Jamali
10 ছবি1 | 10
গানটির কথায় শোনা যায় লিসা বলছেন, এখন আর তাঁকে কোথাও যেতে ট্যাক্সি নিতে হয় না, এখন তিনি প্রথমবারের মতো নিজেই গাড়ি চালিয়ে যে কোনো জায়গায় চলে যেতে পারেন৷
মাসখানেক আগে নারীদের গাড়ি চালাতে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় সৌদি সরকার৷ এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়েছে ২৪ জুন৷
লিসা অবশ্য নারীদের গাড়িচালনায় সতর্কও থাকার উপদেশ দিয়েছেন৷ অতিরিক্ত উত্তেজনা যেন কোনো বিপদ ডেকে না আনে, সে ব্যাপারেও পরামর্শ দিয়েছেন তিনি৷ গাড়ি চালানোর সব নিয়মকানুন, বিশেষ করে সবসময় সিট বেল্ট পরার ওপরও জোর দিয়েছেন লিসা৷
গান গাওয়ার সময় গাড়ির সানরুফ দিয়ে মাথা বের করে তালে তালে শরীর দুলাতেও দেখা গেছে লিসাকে৷
নিজের টুইটার অ্যাকাউন্টে পোস্ট করা এই র্যাপ গানের ভিডিওটি দেখা হয়েছে ১৩ লাখ বার৷ ইউটিবসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে ভিডিওটি শেয়ার হয়েছে৷
সৌদি নারীদের গাড়ি চালানোর সংবাদ প্রচার করতে গিয়ে কিছুদিন আগেই নারী টেলিভিশন উপস্থাপক শিরীন আল-রিফাইয়িকে সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে৷
সৌদি নারীদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক আবায়া পরে থাকলেও তার নীচ দিয়ে ট্রাউজার ও টপ দেখা যাচ্ছিল৷ সৌদি ‘জেনারেল কমিশন ফর অডিওভিজ্যুয়াল মিডিয়া' এই পোশাককে ‘অভব্য' বলে আখ্যা দিয়েছে৷ কমিশনের এক টুইটে এই বিষয়ে তদন্তের কথাও জানানো হয়েছে৷
স্থানীয় গণমাধ্যমে জানানো হয়েছে, এরই মধ্যে দেশ ছেড়ে পালাতে হয়েছে এই সৌদি নারী উপস্থাপককে৷