সৌদি রাজার সঙ্গে মানবাধিকার এবং আইনের শাসন নিয়ে কথা বললেন জো বাইডেন।
বিজ্ঞাপন
সৌদি রাজা সালমানের সঙ্গে ফোনে দীর্ঘ কথা হলো মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের। মার্কিন প্রশাসন বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে, তাঁদের মধ্যে একাধিক বিষয়ে কথা হয়েছে। তবে বাইডেন রাজাকে জানিয়েছেন, অ্যামেরিকা আইনের শাসন এবং মানবাধিকারকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়। মনে করা হচ্ছে, সাংবাদিক জামাল খাসোগির খুনের পরিপ্রেক্ষিতেই বাইডেন এ কথা বলেছেন বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা।
ডনাল্ড ট্রাম্পের আমলে সৌদি আরবের সঙ্গে অ্যামেরিকার সম্পর্কের অত্যন্ত উন্নতি হয়েছিল। ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় সৌদির সঙ্গে ইসরায়েলের সম্পর্কও উন্নত হচ্ছিল বলে বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য। সূত্র জানিয়েছে, বৃহস্পতিবারের আলোচনায় সৌদি রাজা সে বিষয়ে বাইডেনকে জানিয়েছেন। বাইডেন তাঁকে বলেছেন, তিনিও সৌদির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রাখতে চান। কিন্তু মানবাধিকারের বিষয়ে তিনি আপস করবেন না বলেও স্পষ্ট করে দিয়েছেন বাইডেন।
জামাল খাশগজি: রহস্যময় অন্তর্ধান ও মৃত্যু
সৌদি সাংবাদিক তিনি৷ ছিলেন সরকারের সমালোচক৷ ইস্তানবুলে সৌদি দূতাবাস থেকে হঠাৎ নিখোঁজ হয়ে গেলেন৷ বারবার বদলেছে তাঁর নিখোঁজ হওয়া বা মৃত্যু নিয়ে কর্তৃপক্ষের ভাষ্য৷ ছবিঘরে দেখুন কী কী ঘটেছে এ পর্যন্ত৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Martin
যেন হাওয়ায় মিলিয়ে গেলেন
তুর্কি বাগদত্তা হাতিজে জেঙ্গিসকে বিয়ে করার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ করতে ২ অক্টোবর ইস্তানবুলের সৌদি দূতাবাসে যান সাংবাদিক জামাল খাশগজি৷ কিন্তু এরপর আর বের হননি৷ তাতেই বাইরে অপেক্ষা করতে থাকা তাঁর বাগদত্তা হাতিজে উদ্বিগ্ন হয়ে খবরটি ছড়িয়ে দেন৷
ছবি: Reuters TV
সংশয়ের ডালপালা মেলা শুরু
৩ অক্টোবর: তুর্কি ও সৌদি কর্তৃপক্ষ ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য তুলে ধরেন খাশগজি সম্পর্কে৷ দূতাবাস কর্তৃপক্ষ দাবি করে, কাজ শেষে বেরিয়ে গেছেন খাশগজি৷ তুর্কি কর্তৃপক্ষ বলে যে, দূতাবাস থেকে বেরই হননি তিনি৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/V. Mayo
হত্যার অভিযোগ
৬ অক্টোবর: তুরস্কের প্রশাসন জানায়, সৌদি দূতাবাসের ভেতর খাশগজিকে হত্যা করা হয়েছে৷ যে পত্রিকায় খাশগজি নিয়মিত লিখতেন, সেই মার্কিন পত্রিকা ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়, তাঁকে হত্যা করতে সৌদি আরব থেকে ১৫ সদস্যের একটি দল আসে ইস্তানবুলে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/H. Jamali
আঙ্কারা চায় প্রমাণ
৮ অক্টোবর: তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রেচেপ তাইয়িপ এর্দোয়ান সৌদি আরবের কাছে খাশগজি যে বেরিয়ে গেছেন সে প্রমাণ দেয়ার দাবি জানান৷ তুরস্ক দূতাবাস প্রাঙ্গন তল্লাশি করার অনুমতি চায়৷ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/T. Kovacs
অনুমতি দেয় রিয়াদ
৯ অক্টোবর: দূতাবাস প্রাঙ্গন তল্লাশির অনুমতি দেয় সৌদি আরব৷ স্থানীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যায়, ২ অক্টোবর একটি ভ্যান দূতাবাসে প্রবেশ করে৷ এরপর সেটি সৌদি রাষ্ট্রদূতের বাসায় যায়৷ এতে বিতর্ক আরো মাথাচাড়া দেয়৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/P. Giannakouris
অর্থনীতিতে ধাক্কা
১২ অক্টোবর: খাশগজির ঘটনায় ব্রিটিশ বিলিওনেয়ার রিচার্ড ব্রানসন তাঁর ভার্জিন গ্রুপের মহাকাশ প্রকল্পে সৌদি আরবের এক বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের বিষয়ে আলোচনা থামিয়ে দেন৷ রিয়াদে অনুষ্ঠেয় বিনিয়োগ সম্মেলন যোগ দেয়াও বাতিল করেন তিনি৷ উবার, জেপি মর্গানসহ বড় বড় কোম্পানির বিনিয়োগকারীরাও একই সিদ্ধান্ত নেন৷
ছবি: picture alliance/dpa
অনুসন্ধান বন্ধ নেই
১৫ অক্টোবর: তুর্কি তদন্তকারী দল দূতাবাসে তল্লাশি চালায়৷ প্রায় আট ঘন্টা ধরে এই তল্লাশি চলে এবং তদন্তকারীরা ভবন, বাগানের মাটি ও একটি ধাতব দরজা থেকে কিছু নমুনা নিয়ে আসেন৷
ছবি: Reuters/M. Sezer
হাতাহাতি থেকে মৃত্যু
১৯ অক্টোবর: সৌদি আরব এবার খাশগজির মৃত্যুর বিষয়টি স্বীকার করে৷ তারা বলে যে, হাতাহাতি করতে গিয়ে দূতাবাসে মারা যান খাশগজি৷ তুরস্কের ক্ষমতাসীন দল কঠোর ভাষায় জানিয়ে দেয় যে, ‘হত্যার কোনো আষাঢ়ে গল্প’ মেনে নেবে না আঙ্কারা৷ জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল রিয়াদের ব্যাখ্যা ‘অপর্যাপ্ত’ বলে আখ্যা দেন৷
ছবি: Getty Images/C. McGrath
‘চরম ভুল’
২১ অক্টোবর: সৌদি আরব এবার আবার কথা পাল্টায়৷ তারা বলে, ওই সাংবাদিকের মৃত্যু দুর্বৃত্তদের কারণে হয়৷ এটাকে ‘বিরাট ও চরম ভুল’ বলে আখ্যা দেয় তারা৷ সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান এই ঘটনা সম্পর্কে কিছুই জানতেন না বলে দাবি করে তারা৷ রিয়াদ বলে যে, সাংবাদিকদের লাশ কোথায় তা তাদের জানা নেই৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/C. Owen
অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ করে দেয় জার্মানি
২১ অক্টোবর: আঙ্গেলা ম্যার্কেল ঘোষণা দেন যে, জামাল খাশগজির হত্যার সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত সৌদি আরবে অস্ত্র রপ্তানি করবে না জার্মানি৷ যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন ও ফ্রান্সের পর সৌদি আরবে সবচেয়ে বেশি অস্ত্র রপ্তানি করে জার্মানি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Sauer
10 ছবি1 | 10
সাংবাদিক জামাল খাশগজি নিয়ে একটি মার্কিন রিপোর্ট পড়েছেন বাইডেন। রিপোর্টটি এখনো প্রকাশিত হয়নি। সেখানে সাংবাদিকের হত্যার পিছনে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের হাত আছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে। ২০১৮ সালে ইস্তানবুলে সৌদি দূতাবাসে সাংবাদিককে হত্যা করা হয়েছিল। সৌদি যুবরাজের নির্দেশেই এই ঘটনা ঘটে বলে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়। কিন্তু স্বাভাবিক ভাবেই সৌদি প্রশাসন তা অস্বীকার করে।
পরে সৌদি আরব জানায়, কয়েকজন এজেন্ট এ কাজ করেছে। সম্প্রতি ওই হত্যায় জড়িত অভিযোগে পাঁচজনকে ২০ বছরের সাজাও দিয়েছে সৌদি আদালত।
বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, মানবাধিকার এবং আইনের শাসনের কথা বলে বাইডেন রাজা সালমানকে ওই ঘটনার কথাই মনে করিয়ে দিতে চেয়েছেন। যদিও সাংবাদিক জামালের নাম নেননি বাইডেন। তবে সম্প্রতি সৌদি যে একাধিক মার্কিন মানবাধিকার কর্মীকে তাদের জেল থেকে মুক্তি দিয়েছে, সে বিষয়ে সালমানকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন বাইডেন। এক নারী মানবাধিকার কর্মীকে মুক্তি দেওয়া নিয়েও তাঁদের মধ্যে আলোচনা হয়েছে।
পাশাপাশি দুই দেশের দীর্ঘ সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা হয়েছে দুই রাষ্ট্রপ্রধানের। আগামী দিনেও তা যাতে বজায় থাকে, তা সুনিশ্চিত করা হবে বলে দুই রাষ্ট্রপ্রধানই আশ্বাস দিয়েছেন।