তুরস্ক দাবি করেছে, এক নিখোঁজ সৌদি সাংবাদিককে ইস্তানবুলে সৌদি কনস্যুলেটের মধ্যে এক বিশেষ ‘হিট স্কোয়াড’ হত্যা করেছে৷ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সুপরিচিত সেই সংবাদভাষ্যকারকে সর্বশেষ কনস্যুলেটে প্রবেশ করতে দেখা গিয়েছিল৷
বিজ্ঞাপন
তুরস্কের সরকারি কর্মকর্তারা বিশ্বাস করেন, সৌদি সাংবাদিক জামাল খাসোগিকে সবচেয়ে বড় তুর্কি শহর ইস্তানবুলে অবস্থিত সৌদি কনস্যুলেটের মধ্যে সম্ভবত হত্যা করা হয়েছে৷ একাধিক সংবাদমাধ্যম রবিবার এই তথ্য প্রকাশ করেছে৷
গোপন সূত্রের বরাত দিয়ে বার্তাসংস্থা রয়টার্স এবং এপি জানিয়েছে, তুর্কি পুলিশের প্রাথমিক মূল্যায়ন হচ্ছে, খাসোগিকে সৌদি কনস্যুলেটের মধ্যে হত্যা করা হয়েছে৷ এই হত্যাকাণ্ড ছিল পূর্বপরিকল্পিত এবং হত্যার পর তাঁর মরদেহ কনস্যুলেট থেকে সরিয়ে ফেলা হয়েছে৷
কয়েকটি ঝুঁকিপূর্ণ পেশার কথা
ঝুঁকিপূর্ণ পেশা বললেই সাংবাদিকতার কথা মনে হতে পারে৷ কিন্তু এ ছাড়াও বিশ্বে এমন অনেক পেশা আছে, যেখানে একটু ভুলের কারণে জীবনটা চলে যেতে পারে৷ ছবিঘরে থাকছে তেমনই কিছু কাজের কথা৷
ছবি: AP
জানালা পরিষ্কার
নিজ বাড়ির জানালা পরিষ্কার করাটা হয়ত ঝুঁকিপূর্ণ নয়৷ কিন্তু সেটা যদি হয় উঁচু কোনো ভবনের, তাহলেই সমস্যা৷ জার্মানির মতো দেশে সুউচ্চ ভবনগুলোর বাইরের দিকটা পরিষ্কারের সময় তাই বেশ কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়৷ তবুও দুর্ঘটনা তো ঘটতেই পারে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
যুদ্ধ
বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যুদ্ধ চলছে৷ আর যুদ্ধ মানেই প্রাণহানি৷ তাই যুদ্ধে অংশ নেয়াটা যে-কোনো সৈন্যের জন্যই যে মারাত্মক হুমকির, তা বলাই বাহুল্য৷
ছবি: picture-alliance/dpa
পাইলট
ছোটবেলায় হয়ত সবারই ইচ্ছা হয় বড় হয়ে পাইলট হবার৷ আকাশে একটা আস্ত বিমান চালিয়ে নিয়ে যাওয়া রোমাঞ্চকরই মনে হয়৷ কিন্তু সমস্যা হলো, আকাশে বিমান দুর্ঘটনা হলে বাঁচার সম্ভাবনা শূন্যই বলা যায়৷ আর পাইলটদের ক্ষেত্রে নিজের কোনো ভুলের কারণে দুর্ঘটনা হলে নিজ জীবনের পাশাপাশি চলে যেতে পারে শত শত যাত্রীর জীবনও৷
ছবি: picture-alliance/dpa
দমকলকর্মী
আগুন লাগা মানেই সেখানে ছুটে যেতে হয় দমকলকর্মীদের৷ কিন্তু আগুনের হাত থেকে মানুষকে বাঁচাতে গিয়ে প্রাণ যেতে পারে নিজেরও৷
ছবি: picture-alliance/dpa
পুলিশ
জনসাধারণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশকে প্রায়ই সন্ত্রাসীদের পেছনে ছুটতে হয়৷ তাদের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে লিপ্ত হতে হয়৷ ফলে মৃত্যুর সম্ভাবনাতো থেকেই যায়৷ এছাড়া দ্রুতগতিতে গাড়ি চালিয়ে সন্ত্রাসী কিংবা মাস্তানদের ধাওয়া করতে গিয়ে দুর্ঘটনা ঘটলে – অবাক হওয়ার কিছু নেই৷
ছবি: picture-alliance/dpa
গভীর সমুদ্রে মাছ ধরা
প্রাকৃতিক দুর্যোগ তো আর বলে কয়ে আসে না৷ তাই গভীর সমুদ্রে মাছ ধরার সময় কখন যে সমুদ্র উত্তাল হয়ে উঠবে, তার কোনো নিশ্চয়তা নেই৷ অবশ্য আধুনিক প্রযুক্তির কল্যাণে এখন আগে থেকেই অনেক কিছু জানা সম্ভব৷ তবে এরপরও ঝুঁকি তো থেকেই যায়৷
ছবি: picture alliance/landov
বাড়ির ছাদ ঠিক করা
বাংলাদেশে টিনের বাড়ি দেখতে যেমন হয় জার্মানির অনেক বাড়িও সেরকম৷ শুধু পার্থক্য হচ্ছে, টিনের পরিবর্তে জার্মানিতে ‘টাইলস’ বসানো হয়৷ আর সেই কাজ করতে গিয়ে দুর্ঘটনাও ঘটে৷ তাই এই কাজ শুরুর আগে একটা জীবন বিমা করাটা অতি আবশ্যক৷
ছবি: picture-alliance/dpa
গাছ কাটা
জার্মানিতে গাছ কাটতে যে যন্ত্রটি ব্যবহার করা হয়, সেটা যদি কোনোভাবে শরীরের সংস্পর্শে চলে আসে তাহলেই শেষ! ঘটতে পারে বড় কোনো দুর্ঘটনা৷ আর যে গাছ কাটা হচ্ছে সেটা কোনদিকে হেলে পড়তে পারে সেটা বুঝতে অনেকসময় ভুল হওয়াটা অস্বাভাবিক নয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
8 ছবি1 | 8
ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকার জন্যও কাজ করতেন খাসোগি৷ পত্রিকাটি গোপন সূত্রের বরাতে লিখেছে, এই সাংবাদিককে হত্যা করার জন্য সৌদি আরব থেকে ১৫ সদস্যের একটি টিম ইস্তানবুলে এসেছিল৷ হত্যাকাণ্ডটি পূর্ব পরিকল্পতি ছিল৷
এদিকে, ফরাসি বার্তাসংস্থা এএফপিকে একটি সূত্র জানিয়েছে, তুর্কি পুলিশের প্রাথমিক তদন্ত বলছে, সৌদি আরব থেকে আসা একটি দল সাংবাদিককে হত্যা করেছে এবং সেদিনই দলটি দেশে ফিরে গেছে৷
জার্মান বার্তাসংস্থা ডিপিএ-ও একই ধরনের সংবাদ প্রকাশ করেছে৷ খাসোগির এক ঘনিষ্ঠ বন্ধু পুলিশের বরাতে বার্তাসংস্থাটিকে জানিয়েছেন যে, সৌদি সাংবাদিকের মরদেহ কেটে টুকরো টুকরো করা হয়েছে৷
খাসোগিকে অপহরণ করা হয়েছে এমন সব খবর প্রত্যাখান করেছেন সৌদি আরবের কনসসাল-জেনারেল৷ তিনি বরং বার্তাসংস্থা রয়টার্সের কাছে দাবি করেছেন, আলোচিত সাংবাদিককে খুঁজে বের করতে সহায়তা করছে সৌদি আরব৷
সৌদি ক্ষমতাকেন্দ্রে তারুণ্য
সৌদি আরবের ভবিষ্যৎ বাদশাহ মহম্মদ বিন সালমান ‘এমবিএস’ নামেও পরিচিত৷ গত কয়েক বছরে ক্ষমতাকেন্দ্রে তাঁর উত্থান সবার নজর কেড়েছে৷ এই তরুণ নেতা সম্পর্কে এই তথ্যগুলো কি জানা আছে?
ছবি: picture-alliance/dpa/R. Jensen
বাদশাহর আস্থাভাজন
অশীতিপর বাবা বাদশাহ সালমান কার্যত দেশের ক্ষমতা প্রিয় ছেলের হাতেই তুলে দিয়েছেন বলে অনেকে মনে করেন৷ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ছাড়াও তিনি পেট্রোলিয়াম কোম্পানি আরামকো ও দেশের অর্থনৈতিক সংস্কারের দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন৷ উপ প্রধানমন্ত্রী পদও তাঁর দখলে ছিল৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/Saudi Press Agency
ঝুঁকি নিতে ভয় পান না
প্রচণ্ড পরিশ্রমী বলে পরিচিত মহম্মদ বিন সালমান সৌদি শাসকগোষ্ঠীর এতকালের ধীরস্থির ভাবমূর্তি ভেঙে দিয়েছেন৷ অর্থনৈতিক সংস্কারসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে তিনি এতদিনের নানা প্রথা ভেঙে দ্রুত পদক্ষেপ নিয়ে সবাইকে চমকে দিয়েছেন৷ তাঁর সমর্থকরা মনে করেন, বর্তমান চ্যালেঞ্জগুলির মোকাবিলা করতে দেশে এমন নেতারই প্রয়োজন৷
ছবি: picture-alliance/abaca/Balkis Press
পররাষ্ট্র নীতির পরিবর্তন
এতকালের সংযম ভেঙে ফেলে সৌদি আরব গোটা অঞ্চলে নিজস্ব স্বার্থরক্ষায় বেশ কিছু বিতর্কিত পদক্ষেপ নিচ্ছে৷ ইরানের প্রতি বৈরি মনোভাব, ইয়েমেনে সেনা অভিযান থেকে শুরু করে কাতারকে একঘরে করে ফেলার সিদ্ধান্তের পেছনেও মহম্মদ বিন সুলতানের স্বাক্ষর স্পষ্ট৷ ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার স্থপতিও তিনি৷
ছবি: picture alliance / AP Photo
রাজপরিবারে উত্থান
সৌদি রাজপরিবারের জটিল ক্ষমতার কাঠামোর মধ্যে সম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দ্বীদের কোণঠাসা করে বাদশাহর ঠিক পরে শীর্ষ স্থানে পৌঁছানোর মতো অসাধ্যসাধন করেছেন ‘এমবিএস’৷ শুধু তাই নয়, এতকাল মনোনীত ‘ক্রাউন প্রিন্স’ মহম্মদ বিন নায়েফ (বামে) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও উপাধি খুইয়েও তাঁর প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করেছেন৷
ছবি: Reuters/Saudi Press Agency
ব্যতিক্রমী জীবন
সৌদি রাজপরিবারের সন্তানরা সাধারনত বিদেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করেন, কমপক্ষে মাস্টার্স ডিগ্রি পর্যন্ত পৌঁছে যান৷ মহম্মদ বিন সালমান সেই পথে না গিয়ে দেশে থেকেই আইন নিয়ে পড়েছেন এবং বাবার কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত থেকেছেন৷ বাদশাহ সালমান যখন নিজে ক্রাউন প্রিন্স ছিলেন, তখনও তিনি বাবার রাজসভার দায়িত্বে ছিলেন৷
ছবি: Getty Images
পেট্রোলিয়ামের উপর নির্ভরতা
সৌদি অর্থনীতি এতকাল তার বিশাল পেট্রোলিয়াম ভাণ্ডারের উপর নির্ভর করে ছিল৷ মহম্মদ বিন সালমান অর্থনীতির খোলনলচে বদলে ২০৩০ সালের মধ্যে সেই পরিস্থিতি বদলানোর উদ্যোগ শুরু করেছেন৷ ভরতুকিসহ অনেক সুযোগসুবিধা বন্ধ করে তিনি বেশ কিছু অপ্রিয় সিদ্ধান্তও নিয়েছেন৷
ছবি: Reuters/Ali Jarekji
ধর্মীয় অনুশাসন
সৌদি আরবের প্রভাবশালী ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গে এখনো কোনো বড় সংঘাতে যাননি মহম্মদ বিন সালমান৷ তবে দেশের বিশাল যুবসমাজের কথা ভেবে তিনি সংগীতের জলসা, অ্যামিউজমেন্ট পার্ক ইত্যাদির ব্যবস্থা করেছেন৷ সেইসঙ্গে ধর্মীয় অনুশাসনের তত্ত্বাবধায়ক পুলিশের দৌরাত্ম্য কিছুটা কমিয়েছেন৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Hilabi
7 ছবি1 | 7
প্রসঙ্গত, গত মঙ্গলবার ইস্তানবুলে সৌদি কনস্যুলেটে প্রবেশের পর থেকে নিঁখোজ রয়েছেন খাসোগি৷ সৌদি কর্তৃপক্ষ অবশ্য দাবি করেছে, তিনি সেদিন কনস্যুলেট থেকে বের হয়ে গিয়েছিলেন৷ কিন্তু তুর্কি কর্তৃপক্ষ বলছে, এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত সব তথ্যপ্রমাণই এই ইঙ্গিত দেয় যে, তিনি কনস্যুলেট থেকে বের হননি৷ সাংবাদিকের পরিনতি জানতে শনিবার ভোর থেকে তদন্ত শুরু করেছে আঙ্কারা৷
উল্লেখ্য, ২০১৭ সাল থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে স্বেচ্ছা নির্বাসনে ছিলেন সৌদি রাজপরিবারের সমালোচক হিসেবে পরিচিত জামাল খাসোগি৷ তিনি আশঙ্কা করছিলেন যে, তাঁর লেখালেখির কারণে সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান তাঁকে গ্রেপ্তার করতে পারেন৷ তুর্কি সঙ্গিনীকে বিয়ে করতে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ করতে মঙ্গলবার সৌদি কনস্যুলেটে গিয়েছিলেন তিনি৷ এরপর থেকে তাঁর কোনো হদিশ পাওয়া যাচ্ছে না৷