মার্কিন বিজ্ঞানীরা বলছেন, তারা নাকি সৌরজগতের প্রান্তে একটি নবম গ্রহের অস্তিত্বের প্রমাণ পেয়েছেন৷ তবে তার সাক্ষ্যপ্রমাণ সবই তত্ত্বগত, এখনও বাস্তব প্রমাণের প্রয়োজন আছে৷
বিজ্ঞাপন
গণিত শাস্ত্র ও কমপিউটার সৃষ্ট মডেল থেকে এই সিদ্ধান্তে এসেছেন ক্যালিফর্নিয়া ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি বা ক্যালটেক-এর দুই বিজ্ঞানী কনস্টান্টিন ব্যাটিগিন ও মাইক ব্রাউন৷ তারা নতুন আবিষ্কৃত এই গ্রহের নাম দিয়েছেন ‘প্ল্যানেট নাইন'৷ এর ‘মাস' বা বস্তুপিণ্ড পৃথিবীর প্রায় দশগুণ ও সূর্য থেকে তা এতটাই দূরে যে, সূর্য প্রদক্ষিণ করতে তার দশ থেকে ২০ হাজার বছর সময় লেগে যায়৷
ব্যাটিগিন আর ব্রাউন দেখিয়েছেন, সৌরজগতের তথাকথিত কয়পার বেল্ট এলাকার কিছু রহস্যজনক খুঁটিনাটি – যেমন নেপচুন গ্রহের পরে যে সব হিমায়িত বস্তু ও ধ্বংসাবশেষ আছে, তাদের কক্ষপথ ব্যাখ্যা করার একটি পন্থা হতে পারে এই প্ল্যানেট নাইন৷ ‘অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল জার্নাল'-এর সর্বাধুনিক ইস্যুতে সেই কথাই বলেছেন ব্যাটিগিন ও ব্রাউন, নীচের টুইটটা দেখলেই যা বোঝা যায়৷
ক্যালটেক-এর ওয়েবসাইটে ব্যাপারটা বোঝানোর চেষ্টা করা হয়েছে: ‘বিজ্ঞানীদের বহুদিনের ধারণা যে, সৌরজগৎ সূচনায় চারটি নির্মীয়মান গ্রহকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছিল৷ এই চারটি গ্রহের বীজ চারপাশের সব গ্যাসকে টেনে নিয়ে শেষমেষ চারটি গ্যাসের গ্রহ সৃষ্টি করে, যেগুলি হলো বৃহস্পতি, শনি, ইউরেনাস ও নেপচুন৷ প্ল্যানেট নাইন তাদের মধ্যে পঞ্চম হয়ে থাকতে পারে৷ হয়ত বৃহস্পতি বা শনির বড় কাছাকাছি এসে পড়ার ফলে তাকে তার দূর কক্ষপথে নির্বাসিত হতে হয়৷'
প্ল্যানেট নাইন যদি আজ তার কক্ষপথের দূরতম প্রান্তে থাকে, সেক্ষেত্রেও অন্তত দু'টি টেলিস্কোপ, ডাব্লিউ এম কেক অবজারভেটরি আর হাওয়াই-এর মানুয়া কিয়াতে সুবারু টেলিস্কোপ তাকে খুঁজে বার করার ক্ষমতা রাখে বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে৷ আর কাছাকাছি থাকলে তো কথাই নেই, বহু টেলিস্কোপে প্ল্যানেট নাইন ধরা পড়বে – বলে মাইক ব্রাউন মন্তব্য করেছেন৷
ব্যাটিগিন বলেছেন, প্ল্যানেট নাইন যে পৃথিবীর মতো একটা নিতান্ত সাধারণ গ্রহ, তা-তেই তিনি খুশি৷ অন্যদিকে ব্রাউন প্লুটোকে গ্রহ থেকে বামন গ্রহের পর্যায়ে নামিয়ে এনে নাম করেছেন – টুইটারে তিনি নিজের নাম দিয়েছেন ‘‘প্লুটো-কিলার'' বা প্লুটো হন্তারক৷ কাজেই তিনি টুইট করেছেন: ‘ঠিক আছে, ঠিক আছে, আমি এখন স্বীকার করতে রাজি৷ আমি সত্যিই বিশ্বাস করি যে সৌরজগতে ন'টি গ্রহ আছে৷'
প্ল্যানেট নাইন-কে ধরে!
পৃথিবীর বুকে মঙ্গল অভিযান!
মানুষ মঙ্গলগ্রহ অভিযানের প্রস্তুতি নিচ্ছে৷ কিন্তু তার মহড়া তো চাই! মঙ্গলগ্রহের সঙ্গে মিল থাকার কারণে বিজ্ঞানীরা অস্ট্রিয়ার এক হিমবাহে সেই কাজ চালাচ্ছেন৷
ছবি: Imago//K.-P. Wolf
আমাডি-১৫
অস্ট্রিয়ার মহাকাশ ফোরাম এই নামে কাউয়ার্ন উপত্যকার হিমবাহে দুই সপ্তাহের প্রকল্প শুরু করেছে৷ বার্লিনের কারমেন ক্যোলার ও স্পেনের ইনিয়োগো মুনিয়োস ‘মহাকাশচারী’ হিসেবে তাতে অংশ নিচ্ছেন৷ বিশ্বের অন্য কোথাও নাকি এমন ‘মঙ্গল’-জনক পরিবেশ পাওয়া যায় না৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Röder
ভারী পোশাক
স্পেস সুটের নিজস্ব ওজনই ৪৮ কিলো! অগ্নিনিরোধক সিন্থেটিক ফাইবার ‘কেভলার’ দিয়ে তৈরি এই বিশেষ পোশাকে অ্যালুমিনিয়ামের স্তরও রয়েছে৷ কারমেন জানালেন, এই পোশাক পরে ওঠাবসা করা খুবই কঠিন৷ শুধু এই পোশাক পরার অধিকার পেতে তাঁকে ৫ মাসের প্রশিক্ষণ নিতে হয়েছে৷ কারমেন পেশায় গণিতবিদ ও আবহাওয়াবিদ৷
ছবি: Imago/Eibner Europa
মঙ্গলের মতোই বরফ ও নুড়িপাথরে ঢাকা
গ্রীষ্মে এই হিমবাহের উপরিভাগ জমাট বরফ ও নুড়িপাথরের স্তরে ঢাকা থাকে৷ ফলে মঙ্গলগ্রহের মতোই সেখানে চলাফেরা করা কঠিন৷ তবে এমন ‘আদর্শ পরিবেশ’ পেয়ে গবেষকরা আহ্লাদিত৷ তার উপর এবার দুটি ‘মার্স-রোভার’-ও পরীক্ষামূলকভাবে চালানো হবে৷ বড় পাথরের টুকরোও এই যানকে থামাতে পারে না৷
ছবি: Imago/Eibner Europa
পিস্টেনবুলি-র বদলে রোভার
রিমোট কন্ট্রোলের সাহায্যে যে গাড়িটি চালানো হচ্ছে, সেটি অবিকল ‘অপারচুনিটি’ রোভার-এর মতো দেখতে৷ ২০১২ সালে ‘কিউরিয়সিটি’ মহাকাশযান মঙ্গলগ্রহে নামার পর প্রায় ১১ বছর ধরে এই রোভার সেখানে কাজ করে চলেছে৷ তবে পৃথিবীর বুকে এমন পরীক্ষা চালানো অনেক সহজ৷ মঙ্গলগ্রহে সিগনালের আদানপ্রদান করতে ২০ মিনিট লেগে যায়৷
ছবি: Imago/Eibner Europa
দাঁতের ব্যথা হলেই মুশকিল!
মঙ্গলগ্রহে মানুষের অভিযান চলবে প্রায় ৩ বছর ধরে৷ এই সময়ে কত কিছুই না ঘটে পারে৷ ফলে বিজ্ঞানীরা অনেক দৈনন্দিন সমস্যা নিয়েও মাথা ঘামাচ্ছেন৷ যেমন মহাকাশে হঠাৎ দাঁতে ব্যথা হলে কী হবে? কোনো চিন্তা নেই৷ মহাকাশযানের থ্রিডি প্রিন্টার নকল দাঁত বানিয়ে দেবে৷ তবে হ্যাঁ, শরীর ভালো রাখতে স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে হবে৷
ছবি: Imago/Eibner Europa
বাষ্প দিয়ে স্নান
প্রায় ১৯টি দেশের ১০০ গবেষক এমন অভিযানের নানা দিক নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছেন৷ ১২টি বিভিন্ন পরীক্ষা কর্মসূচির পরিকল্পনা রয়েছে৷ যেমন বাষ্প দিয়ে স্নান করার এক শাওয়ারের কার্যকারিতা পরীক্ষা করা৷ এতকাল মহাকাশে ভিজে টিস্যু দিয়েই শরীর পরিষ্কার করতে হতো৷
ছবি: Imago/Eibner Europa
মহাকাশযানের বদলে কেবেল কার
যন্ত্রপাতি, সাজসরঞ্জাম ও মানুষ স্কি-লিফট-এ করে কয়েক মিনিটের মধ্যেই হিমবাহের উপর পাঠানো হচ্ছে৷ আসল মঙ্গল অভিযানে গন্তব্যে পৌঁছাতে লাগবে প্রায় এক বছর৷ তখন মাঝপথে হেলমেট খুলে জিরিয়ে নেবার উপায় থাকবে না বলেই মনে হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Röder
মঙ্গলগ্রহে তুষারপাত হয় না
গ্রীষ্মের মাসগুলিতেই গবেষকদের এই প্রকল্পের কাজ সারতে হবে৷ তার ঠিক পরেই হিমবাহে বরফ পড়তে শুরু করবে৷ মার্স রোভারও তখন এমন গুঁড়ো বরফের উপর অচল হয়ে পড়বে৷ এই অভিযান সম্পর্কে আরও জানতে উপরে ডানদিকের লিংক ক্লিক করুন৷