ভারতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়কে পশ্চিমবঙ্গের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর করা হলো।
বিজ্ঞাপন
কলকাতায় মঙ্গলবার থেকে বিশ্ব বঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলন শুরু হয়েছে। সেখানেই বক্তৃতার শেষে নাটকীয়ভাবে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায় বলেন, ''আমি একটা ঘোষণা করতে চাই। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় পশ্চিমবঙ্গের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর হবেন।''
তারপর মুখ্যমন্ত্রী সৌরভকে মঞ্চে ডেকে নেনে। তিনি বলেন, ''আমি কোনো না শুনব না। সবকিছু ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখতে হবে।'' তিনি এরপর সৌরভের হাতে একটা চিঠিও তুলে দেন।
ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর হওয়ার জন্য সৌরভ কোনো অর্থ নেবেন না। এর আগে অভিনেতা শাহরুখ খানকে পশ্চিমবঙ্গের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়। এবার করলেন সৌরভকে।
সৌরভ দুই রাজ্যের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর
মাস ছয়েক আগে ত্রিপুরা সরকারও সৌরভকে পর্যটনের ক্ষেত্রে ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর করেছে। ত্রিপুরায় বিজেপি সরকার। এবার পশ্চিমবঙ্গ সরকারও তাকে রাজ্যের জন্য ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর করলো। ফলে সৌরক্ষ একই সঙ্গে দুইটি রাজ্যের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর হলেন। একটি রাজ্য তৃণমূল শাসনাদীন, অন্যটি বিজেপি-র।
নিজে থেকে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের অধিনায়কের পদ থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন বিরাট কোহলি। আমিরাতে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ চলার সময় তিনি এই ঘোষণা করেন। তিনি বলেছেন, বোর্ডকে আগে সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছিলেন, রোহিত শর্মাকেও জানিয়েছিলেন। সেইসময়ের কোচ রবি শাস্ত্রীর সঙ্গেও তার কথা হয়েছিল। বিরাট জানিয়ে দেন, তিনি টেস্ট এবং একদিনের ক্রিকেটে অধিনায়কত্ব করবেন।
ছবি: AFP/D. Sarkar
কোহলির জায়গায় রোহিত
এরপর কোহলির জায়গায় রোহিত শর্মাকে প্রথমে ভারতের টি-টোয়েন্টি টিমের অধিনায়ক করা হয়। কিছুদিন পর একটা বিবৃতি দিয়ে জানানো হয়, একদিনের ক্রিকেটেও রোহিতই অধিনায়ক হবেন। বোর্ডের যুক্তি ছিল, সাদা বলের ক্রিকেটে একজনই অধিনায়ক থাকা উচিত।
ছবি: Getty Images/D. Sarkar
সৌরভের সাফাই
কোহলির কাছ থেকে এইভাবে একদিনের ক্রিকেটের অধিনায়কের পদ ছিনিয়ে নেয়ার পর প্রবল বিতর্ক শুরু হয়। তখন সৌরভ জানান, কোহলিকে জানিয়েই সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা হয়েছে। আর তিনি কোহলিকে টি-টোয়েন্টির অধিনায়কত্ব না ছাড়ার অনুরোধ করেছিলেন। কোহলি সেটা শোনেননি। সাদা বলে একজন অধিনায়ক থাকা উচিত বলে নির্বাচকরা রোহিতকে অধিনায়ক করেছেন।
ছবি: Getty Images/AFP/P. Paranjpe
বিরাটের জবাব
এরপর বোমা ফাটান বিরাট কোহলি। তিনি দক্ষিণ আফ্রিকা যাওয়ার আগে আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, সৌরভ তাকে টি-টোয়েন্টির অধিনায়কত্ব না ছাড়ার কোনো কথা বলেননি। আর একদিনের ক্রিকেটে রোহিতকে অধিনায়ক ঘোষণার দেড় ঘণ্টা আগে তাকে সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়। সেটাও দক্ষিণ আফ্রিকায় দল নির্বাচন নিয়ে তার সঙ্গে কথা বলার পর একেবারে শেষে।
ছবি: Getty Images/A. Davidson
'বোর্ড দেখছে'
প্রশ্ন হলো, কে ঠিক বলছেন, সৌরভ না বিরাট? সৌরভ এরপর জানিয়েছেন, বোর্ড বিষয়টি দেখছে। তবে অনেক বিশেষজ্ঞের মতে, দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের মাঝখানে বোর্ড কোনো সিদ্ধান্ত নেবে না। দল দেশে ফেরার পর নিতে পারে।
ছবি: privat
গাভাস্কারের মতে
সুনীল মনোহর গাভাস্কার মনে করেন, বিরোধের কারণ, কোহলির বিবৃতি। টি-টোয়েন্টির অধিনায়কত্ব ছাড়ার সময় কোহলি বলেছিলেন, তিনি টেস্ট ও একদিনের ক্রিকেটে অধিনায়ক থাকবেন। তার বলা উচিত ছিল, এই দুই ফরম্যাটে অধিনায়ক থাকতে তার কোনো অসুবিধা নেই। কোহলির কথায় বোর্ড চটেছে বলে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
ছবি: picture alliance/AP Photo
অশ্বিন বনাম শাস্ত্রী
ভারতীয় স্পিনারদের মধ্যে অন্যতম রবিচন্দ্রন অশ্বিন। তিনি সম্প্রতি ক্রিকইনফোডটকমে বলেছেন, ২০১৮-১৯-এর অস্ট্রেলিয়া সফরের সময় কোচ রবি শাস্ত্রীর একটি কথায় ভেঙে পড়েছিলেন। সে সময় একটি টেস্টে স্পিনার কুলদীপ যাদব পাঁচ উইকেট নেয়ার পর রবি শাস্ত্রী বলেছিলেন, কুলদীপই এখন ভারতের সেরা স্পিনার। ভারতীয় টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে অন্যতম সফল বোলার অশ্বিন এই কথাটা মেনে নিতে পারেননি বলে একেবারে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন।
ছবি: Getty Images/AFP/P. Parks
শাস্ত্রীর জবাব
রবি শাস্ত্রী ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেছেন, সবার টোস্টে মাখন মাখানো একজন কোচের কাজ নয়। তার কাজ, কোনো এজেন্ডা ছাড়া ঠিক তথ্য পরিবেশন করা। কুলদীপ সেই টেস্টে অসাধারণ বল করেছিলেন এবং পাঁচ উইকেট নিয়েছিলেন। তিনি এত ভালো বল করেছিলেন বলেই ওই কথাগুলো বলেছিলেন বলে জানিয়েছেন শাস্ত্রী।
ছবি: dapd
শাস্ত্রী খুশি
শাস্ত্রীর বক্তব্য, তার ওই মন্তব্যের ফলে অশ্বিন আরো ভালোভাবে নিজের কাজটা করেছেন। তাই তিনি খুশি। শাস্ত্রীর দাবি, তার মন্তব্যের পরই অশ্বিন নতুন কিছু করার চেষ্টা করেছেন। উপরের ছবিতে মহম্মদ শামির সঙ্গে শাস্ত্রী।
ছবি: IANS
9 ছবি1 | 9
সৌরভকে নিয়ে রাজনৈতিক টানাপোড়েন বশ কিছুদিন ধরেই আছে। গত বিধানসভা নির্বাচনের আগে বিজেপি তাকে দলে পাওয়ার জন্য প্রবল চেষ্টা করেছিল বলে বিরোধীরা অভিয়োগ করেছিলেন। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ সৌরভের বাড়িতে এসেছিলেন। নৈশভোজও করেছিলেন তিনি।
কিন্তু সৌরভ বিজেপি-তে যোগ দেননি। সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রী লগ্নি টানার জন্য বিদেশ সফরে গিয়েচিলেন। সৌরভ সেখানে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে যোগ দেন। তিনি জানান, রাজ্যে তিনি ইতিমধ্য়ে একটা ইস্পাত কারখানা করেছেন। আরেকটি কারখানা করছেন। তারপরই বাণিজ্য সম্মেলনে তাকে ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর বলে ঘোষণা করে দেয়া হলো।
ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডরের কাজ কী?
এর আগে বলিউড তারকা শাহরুখ খানকে ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর করা হয়। এবার সৌরভকে করা হলো। কিন্তু ভারতে ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডরের কাজ কী?
প্রবীণ সাংবাদিক শুভাশিস মৈত্র ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, ''এমনিতে ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডরের সেরকম কোনো কাজ নেই। কিছু সরকারি অনুষ্ঠানে তিনি উপস্থিত থাকেন। কিছু বিজ্ঞাপনে তাকে ব্যবহার করা যেতে পারে।''
তাহলে কেন এই তারকাদের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর করা হয়? শুভাশিস মনে করেন, ''আসলে এই তারকাদের একটা জনপরিচিতি আছে। তাদের এই জনপ্রিয়তাকে রাজ্য সরকার কাজে লাগাতে চায়।''
আরেক প্রবীণ সাংবাদিক জয়ন্ত ভট্টাচার্য ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, ''এক্ষেত্রে তারকাদের আকর্ষণী ক্ষমতাকে ব্যবহার করাটাই হলো আসল উদ্দেশ্য. কোনো প্রডাক্ট বিক্রি করতে গেলে যেমন ভালো প্যাকেজিংয়ের দরকার হয়, তেমনই মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে গেলে, এই ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডরদের কাজে লাগে। পশ্চিমবঙ্গ তথা ভারতে সৌরভের জনপ্রিয়তা নিয়ে তো কোনো কথা হবে না। তাই তাকে ব্র্যান্ড অ্য়াম্বাসাডর করা হলো।''