সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় সম্ভবত আর ভারতের ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি থাকছেন না। তার জায়গায় সভাপতি হতে পারেন রজার বিনি। জয় শাহ আগের মতোই বোর্ডের সম্পাদক থাকবেন।
বিজ্ঞাপন
আগামী ১৮ অক্টোবর ক্রিকেট বোর্ডের বার্ষিক সাধারণ সভা। তার আগেই নতুন সভাপতির নাম ঘোষণা হবে। তার দিন সাতেক আগে সংবাদসংস্থা পিটিআই সূত্রকে উদ্ধৃত করে জানাচ্ছে, সৌরভ আর বোর্ডের সভাপতি থাকবেন না। নতুন সভাপতি হতে পারেন রজার বিনি। ১৯৮৩ সালের বিশ্বকাপ জয়ী টিমের সদস্য ছিলেন অলরাউন্ডার বিনি। এর আগে তিনি কর্ণাটক ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতিও ছিলেন।
গত কয়েক সপ্তাহ ধরে পরবর্তী বোর্ড সভাপতির নাম নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা চলছেো। দিল্লিতে বেশ কয়েকটি বৈঠক হয়েছে। সূত্র জানাচ্ছে, গত এক সপ্তাহ ধরে তৎপরতা তুঙ্গে উঠেছে। দিল্লিতে এক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর বাড়িতে বৈঠক হয়েছে। সেখানেই ৬৭ বছর বয়সি বিনিকে বোর্ড সভাপতি করা হবে বলে ঠিক হয়েছে। পিটিআই জানাচ্ছে, একজন প্রভাবশালী কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা নিয়েছিলেন। শেষ মুহূর্তে নাটকীয় কোনো পালাবদল না হলে বিনিই পরবর্তী বোর্ড সভাপতি হতে চলেছেন।
বোর্ড সভাপতি হিসাবে মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার শেষ তারিখ ১২ অক্টোবর। ১৩ তারিখ তা পরীক্ষা করে দেখা হবে।
নিজে থেকে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের অধিনায়কের পদ থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন বিরাট কোহলি। আমিরাতে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ চলার সময় তিনি এই ঘোষণা করেন। তিনি বলেছেন, বোর্ডকে আগে সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছিলেন, রোহিত শর্মাকেও জানিয়েছিলেন। সেইসময়ের কোচ রবি শাস্ত্রীর সঙ্গেও তার কথা হয়েছিল। বিরাট জানিয়ে দেন, তিনি টেস্ট এবং একদিনের ক্রিকেটে অধিনায়কত্ব করবেন।
ছবি: AFP/D. Sarkar
কোহলির জায়গায় রোহিত
এরপর কোহলির জায়গায় রোহিত শর্মাকে প্রথমে ভারতের টি-টোয়েন্টি টিমের অধিনায়ক করা হয়। কিছুদিন পর একটা বিবৃতি দিয়ে জানানো হয়, একদিনের ক্রিকেটেও রোহিতই অধিনায়ক হবেন। বোর্ডের যুক্তি ছিল, সাদা বলের ক্রিকেটে একজনই অধিনায়ক থাকা উচিত।
ছবি: Getty Images/D. Sarkar
সৌরভের সাফাই
কোহলির কাছ থেকে এইভাবে একদিনের ক্রিকেটের অধিনায়কের পদ ছিনিয়ে নেয়ার পর প্রবল বিতর্ক শুরু হয়। তখন সৌরভ জানান, কোহলিকে জানিয়েই সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা হয়েছে। আর তিনি কোহলিকে টি-টোয়েন্টির অধিনায়কত্ব না ছাড়ার অনুরোধ করেছিলেন। কোহলি সেটা শোনেননি। সাদা বলে একজন অধিনায়ক থাকা উচিত বলে নির্বাচকরা রোহিতকে অধিনায়ক করেছেন।
ছবি: Getty Images/AFP/P. Paranjpe
বিরাটের জবাব
এরপর বোমা ফাটান বিরাট কোহলি। তিনি দক্ষিণ আফ্রিকা যাওয়ার আগে আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, সৌরভ তাকে টি-টোয়েন্টির অধিনায়কত্ব না ছাড়ার কোনো কথা বলেননি। আর একদিনের ক্রিকেটে রোহিতকে অধিনায়ক ঘোষণার দেড় ঘণ্টা আগে তাকে সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়। সেটাও দক্ষিণ আফ্রিকায় দল নির্বাচন নিয়ে তার সঙ্গে কথা বলার পর একেবারে শেষে।
ছবি: Getty Images/A. Davidson
'বোর্ড দেখছে'
প্রশ্ন হলো, কে ঠিক বলছেন, সৌরভ না বিরাট? সৌরভ এরপর জানিয়েছেন, বোর্ড বিষয়টি দেখছে। তবে অনেক বিশেষজ্ঞের মতে, দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের মাঝখানে বোর্ড কোনো সিদ্ধান্ত নেবে না। দল দেশে ফেরার পর নিতে পারে।
ছবি: privat
গাভাস্কারের মতে
সুনীল মনোহর গাভাস্কার মনে করেন, বিরোধের কারণ, কোহলির বিবৃতি। টি-টোয়েন্টির অধিনায়কত্ব ছাড়ার সময় কোহলি বলেছিলেন, তিনি টেস্ট ও একদিনের ক্রিকেটে অধিনায়ক থাকবেন। তার বলা উচিত ছিল, এই দুই ফরম্যাটে অধিনায়ক থাকতে তার কোনো অসুবিধা নেই। কোহলির কথায় বোর্ড চটেছে বলে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
ছবি: picture alliance/AP Photo
অশ্বিন বনাম শাস্ত্রী
ভারতীয় স্পিনারদের মধ্যে অন্যতম রবিচন্দ্রন অশ্বিন। তিনি সম্প্রতি ক্রিকইনফোডটকমে বলেছেন, ২০১৮-১৯-এর অস্ট্রেলিয়া সফরের সময় কোচ রবি শাস্ত্রীর একটি কথায় ভেঙে পড়েছিলেন। সে সময় একটি টেস্টে স্পিনার কুলদীপ যাদব পাঁচ উইকেট নেয়ার পর রবি শাস্ত্রী বলেছিলেন, কুলদীপই এখন ভারতের সেরা স্পিনার। ভারতীয় টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে অন্যতম সফল বোলার অশ্বিন এই কথাটা মেনে নিতে পারেননি বলে একেবারে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন।
ছবি: Getty Images/AFP/P. Parks
শাস্ত্রীর জবাব
রবি শাস্ত্রী ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেছেন, সবার টোস্টে মাখন মাখানো একজন কোচের কাজ নয়। তার কাজ, কোনো এজেন্ডা ছাড়া ঠিক তথ্য পরিবেশন করা। কুলদীপ সেই টেস্টে অসাধারণ বল করেছিলেন এবং পাঁচ উইকেট নিয়েছিলেন। তিনি এত ভালো বল করেছিলেন বলেই ওই কথাগুলো বলেছিলেন বলে জানিয়েছেন শাস্ত্রী।
ছবি: dapd
শাস্ত্রী খুশি
শাস্ত্রীর বক্তব্য, তার ওই মন্তব্যের ফলে অশ্বিন আরো ভালোভাবে নিজের কাজটা করেছেন। তাই তিনি খুশি। শাস্ত্রীর দাবি, তার মন্তব্যের পরই অশ্বিন নতুন কিছু করার চেষ্টা করেছেন। উপরের ছবিতে মহম্মদ শামির সঙ্গে শাস্ত্রী।
ছবি: IANS
9 ছবি1 | 9
জয় শাহ সচিব থাকছেন
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের ছেলে জয় শাহ আগের মতোই সচিব থাকবেন। মাঝে শোনা গিয়েছিল, জয় শাহই পরবর্তী বোর্ড প্রেসিডেন্ট হবেন। কিন্তু এখন ঠিক হয়েছে, তিনি দ্বিতীয়বারের জন্য সম্পাদকই থাকবেন।
সৌরভ কী করবেন?
সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় আরও একবার বোর্ড সভাপতি হিসাবে থাকতে পারতেন। কিন্তু তিনি আর সভাপতি থাকছেন না। সূত্র জানাচ্ছে, তিনি আইসিসি-র চেয়ারম্যানের পদে লড়তে পারেন।
সোমবার সৌরভ মুম্বই গেছেন। তিনি বোর্ডের বিভিন্ন পদাধিকারীর সঙ্গে আলোচনা করছেন।