মুখ খুললেন বিরাট কোহলি। জানালেন, কেউ তাকে টি-টোয়েন্টিতে অধিনায়ক থাকতে বলেননি। তার সোজাসাপটা মন্তব্যে বিপাকে বিসিসিআই।
বিজ্ঞাপন
কিছুদিন আগে বিসিসিআই-প্রধান সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় দাবি করেছিলেন, তিনি বিরাট কোহলিকে টি-টোয়েন্টির অধিনায়কত্ব ছাড়তে নিষেধ করেছিলেন। কিন্তু বিরাট শোনেননি। সাদা বলের ক্রিকেট ফরম্যাটে একজন অধিনায়কই থাকা উচিত। তাই কোহলিকে সরিয়ে রোহিতকে অধিনায়ক করা হয়েছে। কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের আগে সাংবাদিক সম্মেলনে কোহলি জানিয়ে দেন, তিনি নিজে থেকে টি-টোয়েন্টির অধিনায়কত্ব ছেড়েছেন। তিনি তার সিদ্ধান্তের কথা বোর্ডকে আগে জানিয়েছিলেন। কোহলির দাবি, তখন সকলেই সিদ্ধান্তের প্রশংসা করেছিলেন এবং বলেছিলেন, ভবিষ্যতের কথা ভেবে ঠিক কাজ করেছেন। কেউই তাকে অধিনায়কত্ব ছাড়তে নিষেধ করেননি। অধিনায়কত্ব নিয়ে বোর্ডের তরফে যা বলা হচ্ছে তা ঠিক নয়।
কোহলির এই দাবির পর গণমাধ্যমে প্রশ্ন উঠেছে, কে ঠিক বলছেন, সৌরভ না কোহলি?
এখানেই থামেননি কোহলি। তিনি রাখঢাক না করে জানিয়েছেন, তাকে একদিনের ক্রিকেটে অধিনায়কত্ব থেকে সরানোর মাত্র দেড় ঘণ্টা আগে জানানো হয়েছিল। গত ৮ ডিসেম্বর দল নির্বাচন নিয়ে বৈঠকের সময় তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। নির্বাচক কমিটির চেয়ারম্যান প্রথমে দলগঠন নিয়ে আলোচনা করেন। ফোন রাখার আগে তিনি বলেন, পাঁচ নির্বাচক একমত হয়েছেন, একদিনের ক্রিকেটে তাকে আর অধিনায়ক রাখা হবে না। কোহলি জানিয়ে দেন, ঠিক আছে।
এরপরই কোহলিকে সরিয়ে রোহিত শর্মাকে একদিনের ক্রিকেটে অধিনায়ক ঘোষণা করে বোর্ড। যে পাঁচ নির্বাচক এই সিদ্ধা্ন্ত নিয়েছেন, তারা হলেন চেতন শর্মা, অ্যাবে কুরুভিল্লা, দেবাশিস মোহান্তি, হরবিন্দর সিং এবং সুনীল জোশি।
কোহলিকে পিছনে ফেলে রেকর্ড রোহিত শর্মার
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পর বিরাট কোহলির জায়গায় ভারতের অধিনায়ক এখন রোহিত শর্মা। সবচেয়ে বেশি অর্ধশতরান করার ক্ষেত্রেও কোহলিকে পিছনে ফেলে রেকর্ড করলেন রোহিত।
ছবি: Getty Images/D. Sarkar
রোহিতের রেকর্ড
টি-টোয়েন্টিতে সব চেয়ে বেশিবার ৫০ রান করার রেকর্ড করলেন রোহিত শর্মা। ২৬ বার হাফ-সেঞ্চুরি করেছেন রোহিত। চারবার শতরান করেছেন। সবমিলিয়ে তিনি ৩০ বার অর্ধশত রান পার করেছেন। নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে সদ্যসমাপ্ত টি-টোয়েন্টি সিরিজে রোহিত দুইবার হাফ-সেঞ্চুরি করেছেন। ১১৯টি ম্যাচ খেলে রোহিত এই কৃতিত্ব অর্জন করলেন।
ছবি: picture-alliance/AP Photo/A. Rahi
বিরাট কোহলি পিছনে
এতদিন এই রেকর্ড ছিল টি-টোয়েন্টিতে ভারতের সাবেক অধিনায়ক বিরাট কোহলির দখলে। তিনি ২৯টি অর্ধশত রান করেছেন। কিন্তু এবার নতুন অধিনায়ক রোহিত তাঁকে পিছনে ফেলে দিলেন। নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে কোহলি খেলেননি। বিশ্রামে ছিলেন। কোহলি অবশ্য ৯৫টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছেন। তার মোট রান রোহিতের থেকে বেশি।
ছবি: Getty Images/A. Davidson
নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে
নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে রোহিত খুবই ভালো ফর্মে ছিলেন। তিনটি ম্যাচে করেছেন ১৫৯ রান। তার মধ্যে দুইটি হাফ-সেঞ্চুরি আছে। তিনি প্লেয়ার অফ দ্য সিরিজও হয়েছেন।
ছবি: Reuters/A. Boyers
পঞ্চাশটি ছয়
টি-টোয়েন্টিতে অধিনায়ক হিসাবেও পঞ্চাশটি ছয় মেরেছেন রোহিত শর্মা। ৫৩৩ বল খেলে এই কৃতিত্ব অর্জন করেছেন তিনি। এটাও রেকর্ড। অধিনায়ক হিসাবে সব চেয়ে তাড়াতাড়ি তিনি ৫০টি ছয় মারলেন।
ছবি: Getty Images/A. Davidson
তিন নম্বরে বাবর আজম
পাকিস্তানের অধিনায়ক বাবর আজম এই তালিকায় তিন নম্বরে আছেন। তিনি ২৫টি হাফ-সেঞ্চুরি করেছেন। সদ্যসমাপ্ত বিশ্বকাপে বাবর আজম খুবই ভালো ফর্মে ছিলেন। বাবর আজম মাত্র ৬৯টি ম্যাচ খেলে এতগুলি হাফ সেঞ্চুরি করছেন।
ছবি: Francois Nel/Getty Images
চারে অস্ট্রেলিয়ার ওয়ার্নার
অর্ধশত রান করার তালিকায় চার নম্বরে আছেন অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটার ডেভিড ওয়ার্নার। তিনি ২২বার পঞ্চাশ বা তার বেশি রান করেছেন টি-টোয়েন্টিতে। বিশ্বকাপে ওয়ার্নারও খুব ভালো ফর্মে ছিলেন। অস্ট্রেলিয়াকে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন করার ক্ষেত্রে তার যথেষ্ট অবদান আছে।
ছবি: Getty Images/AFP/P. Ellis
আছেন গাপটিলও
নিউজিল্যান্ডের মারকুটে ব্যাটসম্যান মার্টিন গাপটিলও ২২টি অর্ধশত রান করেছেন। তিনি এই তালিকায় ওয়ার্নারের সঙ্গে যুগ্মভাবে চতুর্থ স্থানে আছেন।
ছবি: Reuters/Action Images/A. Boyers
7 ছবি1 | 7
রোহিত শর্মা প্রসঙ্গে
কোহলি জানিয়েছেন, রোহিত শর্মা খুবই ভালো এবং যোগ্যতাসম্পন্ন নেতা। দেশের হয়ে রোহিত যখনই নেতৃত্ব দিয়েছেন, তখনই তা বোঝা গেছে। কোচ রাহুল দ্রাবিড়ের ম্যান ম্যানেজমেন্ট খুব ভালো। দুজনকেই তিনি একশ শতাংশ সহযোগিতা করবেন বলে জানিয়েছেন।
রোহিতের সঙ্গে বিরাটের সম্পর্ক নিয়ে গত কয়েকদিন ধরে ভারতীয় মিডিয়ায় প্রচুর লেখালিখি হয়েছে। সাংবাদিক সম্মলনে এই বিষয়ে প্রশ্ন করা হয় বিরাটকে। তার জবাব, ''আমার পুরনো ভূমিকার কোনো পরিবর্তন হবে না। আমি এই কথাটা বলতে বলতে ক্লান্ত যে, আমি যতদিন খেলব, ততদিন দলবিরোধী কাজ করার কথা ভাবতেই পারব না। ভারতীয় ক্রিকেটের প্রতি আমার পূর্ণ দায়বদ্ধতা আছে।''
ক্রিকেট: অধিনায়ক হিসেবে সবচেয়ে বেশি ডাবল সেঞ্চুরি
ভারতীয় ক্রিকেটার বিরাট কোহলি দুই বছরে টেস্ট ক্রিকেটে ৬টি ডাবল সেঞ্চুরি করে রেকর্ড গড়েছেন৷ ছবিঘরে থাকছে সেইসব ক্রিকেটারদের কথা, যাঁরা অধিনায়ক থাকাকালীন সবচেয়ে বেশি দ্বি-শতক হাঁকিয়েছেন৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/A. Rahi
বিরাট কোহলি
অধিনায়ক হিসেবে টেস্ট ক্রিকেটে ৬টি ডাবল সেঞ্চুরি করে নতুন রেকর্ড গড়েছেন ভারতের বিরাট কোহলি৷ অবিশ্বাস্য ধারাবাহিকতায় ৪৯৯ দিনের মধ্যেই এ ডানহাতি করলেন ৬টি ডাবল সেঞ্চুরি৷ এজন্য তাঁকে খেলতে হয়েছে ৩২টি ম্যাচ এবং ৫০ ইনিংস৷ এর আগে স্যার ডন ব্র্যাডম্যানের প্রথম থেকে ষষ্ঠ ডাবল সেঞ্চুরিতে সময় লেগেছিল ৫৮১ দিন৷ ব্র্যাডম্যান সেই ডাবল সেঞ্চুরির সবগুলো অবশ্য অধিনায়ক থাকা অবস্থায় করেননি৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/A. Rahi
ব্রায়ান লারা
কোহলির আগে টেস্ট ক্রিকেটে অধিনায়ক হিসেবে সবচেয়ে বেশি ডাবল সেঞ্চুরির রেকর্ডটি ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের কিংবদন্তি ব্যাটসম্যান ব্রায়ান লারার দখলে৷ অধিনায়ক থাকা কালে পাঁচটি ডাবল সেঞ্চুরি করেছিলেন তিনি৷ তখন তাঁকে খেলতে হয়েছিল ৪৭টি ম্যাচ, ৮৫টি ইনিংস৷
ছবি: Getty Images/F. Nel
ডন ব্র্যাডম্যান
অস্ট্রেলিয়ার কিংবদন্তি ক্রিকেটার স্যার ডন ব্র্যাডম্যান অধিনায়ক থাকাকালীন ৪টি ডাবল সেঞ্চুরি করেছিলেন৷ এজন্য তাঁকে ২৪টি টেস্টের ৩৮টি ইনিংসে ব্যাট করতে হয়েছিল৷
ছবি: Getty Images/Allsport Hulton
গ্রায়েম স্মিথ
দক্ষিণ আফ্রিকার সাবেক অধিনায়ক গ্রায়েম স্মিথও অধিনায়ক থাকা কালে ৪টি ডাবল সেঞ্চুরি করেছেন৷ এজন্য তাঁকে ১০৯ টা ম্যাচ, ১৯৩টি ইনিংস খেলতে হয়েছে৷
ছবি: AP
মাইকেল ক্লার্ক
ব্র্যাডম্যান এবং গ্রায়েম স্মিথের মতো অস্ট্রেলিয়ার মাইকেল ক্লার্কও অধিনায়কের দায়িত্বে থাকার সময় ৪টি ডাবল সেঞ্চুরি করেছেন৷ ওই ৪ ডাবল সেঞ্চুরি পেতে তাঁকে খেলতে হয়েছিল ৪৭টি ম্যাচের ৮৬টি ইনিংস৷
ছবি: Reuters/P. Brown
5 ছবি1 | 5
গাভাস্কারের মত
সাবেক ক্রিকেটার সুনীল গাভাস্কার মনে করেন, গত সেপ্টেম্বরে কোহলি যে বিবৃতি দিয়েছিলেন, তার ফলেই তাকে একদিনের ক্রিকেটের অধিনায়কত্ব হারাতে হয়েছে। ইন্ডিয়া টুডে-কে গাভাস্কার বলেছেন, সেপ্টেম্বরে কোহলি বলেছিলেন, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পর তিনি আর অধিনায়ক থাকবেন না। তবে টেস্ট ক্রিকেট ও একদিনের ক্রিকেটে তিনি অধিনায়ক থাকবেন। এই কথায় সম্ভবত বোর্ড কর্তারা অসন্তুষ্ট হয়েছিলেন।
গাভাস্কারের মতে, কথাটা একটু অন্যভাবে বলা যেত। কোহলি বলতে পারতেন, টেস্ট ও একদিনের ক্রিকেটে অধিনায়কত্ব দেয়ার ক্ষেত্রে তার কোনো অসুবিধা নেই। বিবৃতিটা একটু অন্যভাবে লিখলে সমস্যা হতো না। তার মতে, কোহলির নেতৃত্ব নিয়ে অখুশি হওয়ার কোনো কারণ নেই। কারণ, তিনি দেশে ও বিদেশে জিতেছেন। অধিনায়ক হিসাবে তিনি যথেষ্ট দক্ষ।