বর্তমান প্রযুক্তি সৌরশক্তিকে পুরোপুরি কাজে লাগাতে অক্ষম৷গবেষকেরা এবার ভিন্ন উপকরণ ও কৌশল কাজে লাগিয়ে সোলার সেলের কার্যকারিতা বাড়ানোর উদ্যোগ নিচ্ছেন৷সাফল্য এলে সৌরশক্তি দিয়ে বিমান চালানো সম্ভব হবে৷
বিজ্ঞাপন
ভবিষ্যতে বাণিজ্যিক বিমানের উড়াল ও বিদ্যুতের ব্যবহার কমানোর উদ্দেশ্যে আমাদের সূর্যের শক্তি কাজে লাগাতে হলে আরও অনেক গবেষণার প্রয়োজন৷গবেষকরা পুরোদমে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন৷নতুন এক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ফ্লোরিয়ান গেয়ারলিশ সূর্য থেকে আরও বেশি পরিমাণ শক্তি আহরণ করতে চান৷‘ইনসোলাইট’ কোম্পানির সহ প্রতিষ্ঠাতা ফ্লোরিয়ান গেয়ারলিশ বলেন, ‘‘সাধারণ সিলিকন সোলার সেল ল্যাবে বড়জোর ২৬ থেকে ২৭ শতাংশ শক্তি কাজে লাগাতে পারে৷তার বদলে আমরা অন্য উপকরণ ব্যবহার করছি, যেটির ক্ষমতা ৪৭ শতাংশের বেশি৷তবে সেটির দাম অত্যন্ত বেশি৷’’
এই দামী সেলের উপর গেয়ারলিশ লেন্স বসিয়ে এমন ব্যবস্থা করেছেন, যাতে সারাদিন সূর্যের আলো নিখুঁতভাবে সরাসরি সেলের উপর পড়ে৷ফলে ২৯ শতাংশ বা প্রায় রেকর্ড মাত্রার দক্ষতা অর্জন করা সম্ভব হচ্ছে৷গেয়ারলিশ বলেন, ‘‘আলো নিখুঁতভাবে সোলার সেলের উপর নিক্ষেপ করাই হলো সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ৷কারণ আলো সেই লক্ষ্যভ্রষ্ট হলে একেবারেই কোনো শক্তি উৎপাদিত হয় না৷’’
গবেষণাগারে সেই পার্থক্য স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে৷ গেয়ারলিশ সেখানে গোটা প্রক্রিয়া স্পষ্ট করে তুলেছেন৷ লেন্সের স্তর আলোর রশ্মি একত্র করে নির্দিষ্ট ব্যাসের মধ্যে সুপার সেলের উপর নিক্ষেপ করছে৷ ক্ষুদ্র এই সেলের আকার মাত্র এক বর্গ মিলিমিটার৷ ফ্লোরিয়ান গেয়ারলিশ জানান, ‘‘প্রত্যেক বর্গমিটার জায়গায় প্রায় ১০,০০০ সেল রয়েছে৷প্রত্যেকটি সেলের ভালো টলারেন্স ক্ষমতা থাকা অত্যন্ত জরুরি৷’’
বিশ্বের সবচেয়ে সবুজ সাত শহর
নিজেদের কার্বন ফুটপ্রিন্ট কমিয়ে আনতে উদ্যোগী হয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন শহর৷ চলুন এখন অবধি সফল কয়েকটি শহরের কথা জেনে নেয়া যাক৷
ছবি: picture alliance/GES/M. Gilliar
কোপেনহেগেন, ডেনমার্ক
২০২৫ সাল নাগাদ বিশ্বের প্রথম কার্বন-নিরপেক্ষ শহর হতে চায় কোপেনহেগেন৷ ১৯৯৫ সাল থেকে এখন অবধি শহরটি কার্বন নির্গমণের হার অর্ধেকে কমিয়ে এনেছে৷ শহরের একটি বড় অংশকে গাড়িমুক্ত করে এবং উচ্চমানে গণপরিবহন এবং সাইকেল আরোহীদের জন্য আলাদা লেন গড়ে ক্রমশ সবুজ শহরে পরিণত হচ্ছে ডেনমার্কের এই রাজধানী৷
ছবি: DW/E. Kheny
রেকইয়াভিক, আইসল্যান্ড
আইসল্যান্ডের রাজধানীতে তাপ এবং বিদ্যুতের পর্যাপ্ত নবায়নযোগ্য সাপ্লাই রয়েছে৷ মূলত হাইড্রোপাওয়ার এবং জিওথার্মাল থেকে আসে এগুলো৷ শহরটির ৯৫ শতাংশ বাড়ির হিটিং সিস্টেম সরাসরি জেলা হিটিং নেটওয়ার্কের সঙ্গে সংযুক্ত, যা এক চমৎকার ব্যাপার৷ ২০৪০ সাল নাগাদ শহরের সকল গণপরিবহণ জীবাশ্ম জ্বালানিমুক্ত করতে হয় নগর কর্তৃপক্ষ৷ সেখানে সাধারণ মানুষকে ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহারে নিরুৎসাহিত করা হয়৷
ছবি: picture-alliance/U. Bernhart
কুরিটিবা, ব্রাজিল
ব্রাজিলের অস্টম বড় শহর কুরিটিবার ৬০ শতাংশ মানুষ শহরের বাস নেটওয়ার্কের উপর নির্ভরশীল৷ শহরটিতে আড়াইশ’ কিলোমিটার সাইকেল লেন রয়েছে৷ পাশাপাশি হাঁটার জন্যও আছে বিশেষ ব্যবস্থা৷ শহরটির প্রাকৃতিক সবুজ দেয়াল বন্যা রোধে সহায়তা করে৷
ছবি: picture alliance/GES/M. Gilliar
সান ফ্রান্সিসকো, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
সান ফ্রান্সিসকো শহরে ২০১৬ সালে এক আইন পাস করা হয় যাতে নতুন সব ভবনের ছাদে সোলার প্যানেল বসানো বাধ্যতামূলক করা হয়৷ শহরটিতে প্লাস্টিকের ব্যাগ নিষিদ্ধ সেই ২০০৭ সাল থেকে৷ ২০২০ সাল নাগাদ নিজেদের আর্বজনামুক্ত শহর ঘোষণার পরিকল্পনা করছে সান ফ্রান্সিসকো৷
ছবি: AFP/Getty Images/J. Edelson
ফ্রাংকফুর্ট, জার্মানি
২০৫০ সাল নাগাদ শতভাগ নবায়নযোগ্য জ্বালানি নির্ভর শহরে পরিণত হতে কাজ শুরু করেছে ফ্রাংকফুর্ট৷ নতুন তৈরি হওয়া ভবনগুলোকে জ্বালানি সাশ্রয়ী করতে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে৷ পিভিসির মতো বিতর্কিত সামগ্রী নিষিদ্ধ করা হয়েছে৷ শহরটি আবর্জনার পরিমাণ নাটকীয়ভাবে কমিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে এক কার্যকরী পন্থা অবলম্বন করে৷
ছবি: CC BY Epizentrum 3.0
ভ্যানকুভার, কানাডা
২০২০ সাল নাগাদ বিশ্বের সবচেয়ে সবুজ শহরে পরিণত হতে চায় ফ্রাংকফুর্ট৷ ২০০৭ সালের তুলনায় সেসময় কার্বন নির্গমণের মাত্রা ৩৩ শতাংশ কমিয়ে আনতে চায় শহরটি৷ শহরটির প্রয়োজনীয় বিদ্যুতের প্রায় সবটাই আসে হাইড্রোইলেক্ট্রনিক ড্যাম থেকে৷ তবে হিটিং এবং গণপরিবহণে এখনো গ্যাস এবং তেল ব্যবহার করে শহরটি৷
ছবি: picture-alliance/ZUMAPRESS.com/A. Chin
কিগালি, রুয়ান্ডা
কিগালিকে বলা হয় আফ্রিকার সবচেয়ে পরিষ্কার শহর৷ এটি পথচারী এবং সাইকেল আরোহীদের জন্য আলাদা লেন করার পরিকল্পনা করেছে৷ সেখানে প্লাস্টিক নিষিদ্ধ আর নগরের বাসিন্দারা মাসে একদিন নগর পরিষ্কারের কাজ করেন৷ তবে নগর পরিষ্কার রাখতে গিয়ে নগরের বাসিন্দাদের উপর বাড়াবাড়িরকম চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে বলে দাবি করেছে বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন৷
ছবি: Imago/robertharding
লিবিয়ানা, স্লোভেনিয়া
ইউরোপের সবুজ রাজধানী ২০১৬ খেতাবজয়ী এই শহরে বিদ্যুতের উৎস হাইড্রোপাওয়ার৷ গণপরিবহণ, পথচারীদের এবং সাইকেল আরোহীদের জন্য আলাদা লেনের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে শহরটি৷ ইউরোপের প্রথম শজর হিসেবে আবর্জনার মাত্রা শূণ্যতে নামিয়ে আনার লক্ষ্যে কাজ করছে শহরটি, ইতোমধ্যে আবর্জনার ৬০ শতাংশ রিসাইকেল করতে সক্ষম হয়েছে শহরটি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/R.Kaufhold
8 ছবি1 | 8
এবার ইঞ্জিনিয়াররা ল্যাবের সীমানা পেরিয়ে বাস্তব জগতে সেই প্রযুক্তি প্রয়োগ করতে চান৷ফ্লোরিয়ান বলেন, ‘‘এখনো আমরা প্রায় হাতে করেই সবকিছু জোড়া দিচ্ছি৷ ল্যাবের বদলে এবার শিল্পক্ষেত্র, অর্থাৎ কারখানায় বড় আকারে উৎপাদন শুরু করা জরুরি৷রোবট বা যন্ত্রের সাহায্যে কীভাবে কয়েক মিনিটের মধ্যে একটি মডিউল তৈরি করা সম্ভব? এবার আমরা বড় এই পদক্ষেপ নিতে চলেছি৷’’
বর্তমানে লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারি প্রচলণ বেশি৷সুইজারল্যান্ডের এক গবেষণা প্রতিষ্ঠান এমন ব্যাটারির বিপদ হাতেনাতে দেখিয়ে দিচ্ছে৷ লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারির ‘আইসোলেশন’ বা বাইরের স্তরে ক্ষতি হলে এবং পয়সার মতো ধাতু দিয়ে তৈরি কোনো বস্তুর সংস্পর্শে এলে বিস্ফোরণ ঘটে৷ইলেকট্রোলাইট স্থিতিশীল করে তুলতে অত্যন্ত ঘনীভূত লবণের দ্রবণ ব্যবহার করা হচ্ছে৷
গবেষকেরা অতি দ্রবণীয় এক লবণ তৈরি করেছেন, যেটির মাত্র কয়েক বিন্দু পানির সংস্পর্শে এলেই গলে যায়৷ একই সঙ্গে সেটি আরও পরিবাহী এবং লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারিতে আরও কম বিপজ্জনক ইলেকট্রোলাইট হিসেবে ব্যবহার করা যায়৷
বাসার সেলার অথবা বড় আকারের ব্যাটারির মধ্যে সৌরশক্তি ধারণ করার ক্ষেত্রে এমন কম বিপজ্জনক ব্যাটারি অত্যন্ত জরুরি৷ রাতের বেলায় অথবা খারাপ আবহাওয়ার সময়েও এভাবে সৌরশক্তি কাজে লাগানো সম্ভব৷
ভবিষ্যতে কুয়াশাভরা দিন অথবা রাতেও সৌর বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে হলে অনেক কম বিপজ্জনক ব্যাটারি ব্যবহার করা সম্ভব হবে৷
আরও ভালো সোলার সেলের কল্যাণে প্রচুর পরিমাণ সৌরবিদ্যুৎ মানুষের নাগালে চলে আসতে পারে৷