রাস্তা দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা গেলে কেমন হতো, কখনও ভেবেছেন? নিয়মিত সূর্যের আলো পড়ে এমন সাইকেলের রাস্তা ব্যবহার করে এবার বিদ্যুৎ উৎপাদনের একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছেন বিজ্ঞানীরা৷ প্রাথমিকভাবে ইতিবাচক সাড়াও পাওয়া গেছে৷
বিজ্ঞাপন
রাস্তাটা দেখতে হয়ত সাইকেল চালানোর আর পাঁচটা সাধারণ পাথের মতো, কিন্তু ক্রোমেনির এই লেনের নীচে রয়েছে অন্যকিছু৷ আসলে এটাই বিশ্বের প্রথম সোলার সেলযুক্ত রাস্তা৷
নেদারল্যান্ডসের সোলারোড প্রকল্পে কাজ করা স্টেন ডে উইটের মতো উদ্ভাবকরা রাস্তা দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব করতে চাচ্ছেন৷ সোলারোড-এর উদ্ভাবক স্টেন ডে উইট জানান, ‘‘নেদারল্যান্ডসে বাড়ির ছাদের তুলনায় রাস্তার সারফেসের পরিমাণ বেশি৷ আমরা যদি এই সারফেসের সোলার প্রযুক্তি যোগ করে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারি, তাহলে বাড়তি জায়গা খরচ না করে বা পরিবেশকে বিরক্ত না করেই অনেক বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব হবে৷''
২০১৬ সালের সেরা ‘ইকো’ গ্যাজেট
স্মার্টফোন, স্মার্ট টিভি সহ নানা ডিভাইস ছাড়া আজকের জীবনযাত্রা যেন অচল৷ এবারের সিইএস মেলায় ভবিষ্যতের নানা গ্যাজেট দেখা গেল৷ তার মধ্যে কয়েকটি আবার পরিবেশবান্ধব৷
ছবি: picture alliance/AP Images/G. Bull
সৌরশক্তি দিয়ে রান্না
নাম ‘গো সান স্টোভ’৷ দেখলে মনে হবে ইলেকট্রিক বার্বিকিউ৷ কিন্তু তাতে ইলেকট্রিকের কোনো চিহ্ন নেই! শুধু সৌরশক্তি দিয়ে রান্না করা যায়৷ ২০০ ডিগ্রি পর্যন্ত উত্তাপ সৃষ্টি করতে পারে এই যন্ত্র৷ প্রস্তুতকারকের দাবি, মাত্র এক ঘণ্টার মধ্যে ৮ জনের খাবার তৈরি করা যায়৷
ছবি: picture alliance/AP Images/G. Bull
‘বুদ্ধিমান’ শাওয়ার
‘হাইড্রাও’ কোম্পানির শাওয়ার দিয়ে পানি সাশ্রয় করা সহজ৷ ৫০ লিটারের বেশি পানি খরচ হলেই শাওয়ার হেডে আলো জ্বলতে থাকে৷ তারপর সে পানির ব্যবহার নথিভুক্ত করে৷ এ সব করতে তার ব্যাটারিরও প্রয়োজন পড়ে না৷ পানি চলাচল থেকেই সে তার প্রয়োজনীয় শক্তি শুষে নেয়৷
ছবি: picture alliance/AP Photo/J. Locher
ইলেকট্রিক স্পোর্টস কার
এ যেন ব্যাটমানের ‘ব্যাটমোবিল’ আর সাধারণ স্পোর্টস কারের মিশ্রণ! নাম এফএফজেডইআর০১৷ ফ্যারাডে কোম্পানির এই গাড়ির ইলেকট্রিক ইঞ্জিন রয়েছে৷ অদূর ভবিষ্যতেই এই গাড়ি পথে নামতে চলেছে৷
ছবি: Reuters/S. Marcus
প্যান্টের পকেটে মিনি বিদ্যুৎ কেন্দ্র
বিদ্যুৎ ছাড়াই মোবাইল ফোন চার্জ করতে ভবিষ্যতে ‘জাক মাই এফসি’ ব্যবহার করা যাবে৷ আকারে-আয়তনে ডিভাইসটি স্মার্টফোনেরই মতোই দেখতে৷ লবণ, পানি ও মেটাল অক্সাইড দিয়ে হাইড্রোজেন উৎপাদন করা হয় এই যন্ত্রের মধ্যে৷ এক ফুয়েল সেল সেই হাইড্রোজেনকে বিদ্যুতে রূপান্তরিত করে৷ ফলে বাইরের বিদ্যুতের আর প্রয়োজনই থাকবে না৷
ছবি: MyFC
বুদ্ধিমান রেফ্রিজারেটর
ফ্রিজে দুধ আছে কি? চিজ কতদিন পর বাসি হয়ে যাবে? বাজারে গিয়ে এই সব প্রশ্ন মনে এলে সাহায্য করতে পারে ‘ফ্যামিলি হাব রেফ্রিজারেটর’৷ ফ্রিজের বাইরে বিশাল ডিসপ্লে, ভেতরে ক্যামেরা৷ মোবাইল অ্যাপ দিয়ে দূর থেকেও সেই দৃশ্য ‘লাইভ’ দেখা যায়৷ একটি বারকোড স্ক্যানার সেইসঙ্গে খাবারের এক্সপায়ারি ডেট বা পচনের তারিখও মোবাইলে পাঠিয়ে দেয়৷ ফলে অপচয় এড়ানো সহজ হয়৷
ছবি: picture alliance/AP Photo/J. Locher
সবজান্তা কফি মেশিন
বার্লিনের স্টার্টআপ কোম্পানি ‘বোনাভ্যার্ডে’-র পরিবেশবান্ধব কফি মেশিন শুধু কফি তৈরি করে না, কফি বিন ভাঙিয়ে, রোস্ট করে নিতেও পারে৷ মেশিনের মালিক কোম্পানি অনুমোদিত চাষির কাছ থেকে কাঁচা, সবুজ কফি বিন কিনতে পারেন৷ এমন ব্যবস্থার ফলে আলাদা করে কফি রোস্ট করার প্রয়োজন পড়ে না৷ দীর্ঘ পরিবহণের প্রয়োজন কমে যাবে৷
ছবি: Bonaverde
চটজলদি ইলেকট্রিক স্কুটার
‘গোগোরো’ কোম্পানির ইলেকট্রিক স্কুটার এতকাল শুধু তাইওয়ানের রাজধানী তাইপেতেই দেখা যেত৷ এবার ইউরোপেও সেটি পাওয়া যাবে৷ এর বিশেষত্ব হলো, মালিককে কয়েক ঘণ্টা ধরে ব্যাটারি চার্জ করতে হবে না৷ তার বদলে তিনি গোগোরো চেঞ্জিং স্টেশনে গিয়ে খালি ব্যাটারি জমা দিয়ে চার্জ করা ব্যাটারি নিয়ে যেতে পারবেন৷ ফলে দূরপাল্লা পাড়ি দিতে পারবে এই স্কুটার৷ সিইএস মেলা সম্পর্কে আরও জানতে উপরের ডান দিকের লিংকে ক্লিক করুন৷
ছবি: Gogoro
7 ছবি1 | 7
এই পাথটি ৭০ মিটার লম্বা যা তৈরিতে দু'বছর লেগেছে৷ রাস্তার সারফেসটির তিনটি স্তর রয়েছে৷ সবার নীচে কংক্রিট, তার উপর সোলার সেল আর সেসবের উপরে বিশেষ ধরনের গ্লাস৷ এই পাথের উপর পরা সূর্যের আলো সোলার সেলগুলো শুষে নেয় এবং বিদ্যুতে পরিণত করে৷
এই পাথের কয়েক মিটার দূরে রয়েছে একটি ছোট বাক্স৷ এখানে, ডে উইট দেখতে পান কী পরিমাণ বিদ্যুৎ তৈরি হচ্ছে৷ ২০১৪ সালে স্থাপনের পর থেকে এখন অবধি দশ হাজার কিলোওয়াট ঘণ্টা বিদ্যুৎ এখানে উৎপাদন হয়েছে যা তিনটি পরিবারের জন্য যথেষ্ট৷
ডে উইট-এর কথায়, ‘‘ভবিষ্যতে আমরা যেখানে বিদ্যুৎ তৈরি হচ্ছে এবং যেখানে ব্যবহার হচ্ছে – এই দুই জায়গার মধ্যে আরো ভালো যোগাযোগ তৈরি করতে চাই৷ কেননা রাস্তার সামনে দিকে যেতে থাকে বা সংযোগের পরিবেশ তৈরি করে যেখানে অনেক বিদ্যুৎ ব্যবহার করা হয়৷ ভবিষ্যতে হয়ত রাস্তার উপর দিয়ে চলা ইলেকট্রিক কার বা ই-বাইক রাস্তা থেকেই প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ পাবে৷''
তবে সাধারণ রাস্তায় সোলার সেল ব্যবহার করতে হলে সেই সারফেসের শুধু সাইকেল বা স্কুটার নয়, বড় যানবাহন সহ্য করার ক্ষমতা থাকতে হবে৷
এই সমস্যা সমাধানে ক্রেমেনি থেকে ৭০ কিলোমিটার দূরে ডেল্ফটের টিএনও ল্যাবরেটরিতে কাজ চলছে৷
একটু আলোর জন্য
নরওয়ের একটি শহরের বাসিন্দারা বছরের ছয়মাস রোদের আলোর ছোঁয়া থেকে বঞ্চিত ছিলেন এতদিন৷ অভিনব এক উপায় বের করে সে সমস্যার সমাধান করেছেন তাঁরা৷
ছবি: picture-alliance/dpa
অন্ধকারে ছয়মাস
নরওয়ের রাজধানী অসলো থেকে ১৮০ কিলোমিটার দূরের ছোট্ট শহর রুকন৷ মাত্র সাড়ে তিন হাজার মানুষের বাস সেখানে৷ চারদিকে পাহাড় দিয়ে ঘেরা থাকায় শীতকালে সেখানে রোদ পৌঁছতে পারে না৷ ফলে বছরের অর্ধেকটা সময় (সেপ্টেম্বর থেকে মার্চ) সেখানকার অধিবাসীরা রোদের দেখা পান না৷
ছবি: picture-alliance/dpa
শত বছর আগে
রুকনের বাসিন্দাদের জন্য আলোর ব্যবস্থা করতে প্রায় একশো বছর আগে স্যাম আয়ডে নামের এক ব্যবসায়ী একটি অভিনব পরিকল্পনার কথা বলেছিলেন৷ কিন্তু প্রযুক্তির অভাবে সেটার বাস্তবায়ন করা যাচ্ছিল না৷ তাই বিকল্প হিসেবে, বছরের ঐ সময়টা অধিবাসীরা যেন রোদ পান, তাই তাদের কেবল কার-এ করে পাহাড়ে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছিল৷
ছবি: MEEK, TORE/AFP/Getty Images
বিশাল আয়না স্থাপন
স্থানীয় মার্টিন অ্যান্ডারসেন ২০০৫ সালে শত বছর আগের সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেন৷ এর আওতায় সমতল থেকে প্রায় সাড়ে চারশো মিটার উপরে পাহাড়ের গায়ে তিনটি বড় আয়না স্থাপন করা হয়৷ শীতকালে রোদ সেই আয়নাগুলোতে প্রতিফলিত হয়ে শহরের গায়ে ঢোলে পড়ে৷
ছবি: MEEK, TORE/AFP/Getty Images
কম্পিউটার চালিত
একটি কম্পিউটার প্রোগ্রামের মাধ্যমে আয়নাগুলো সূর্যের পথ বুঝে এদিক-সেদিক নড়াচড়া করে৷ এভাবে রুকন শহরের প্রায় ৬০০ বর্গমিটার এলাকায় রোদ পৌঁছে দেয়া সম্ভব হচ্ছে৷ এজন্য খরচ হয়েছে ছয় লক্ষ ২০ হাজার ইউরো, অর্থাৎ প্রায় ছয় কোটি ৫৪ লক্ষ টাকা৷
ছবি: MEEK, TORE/AFP/Getty Images
ইটালিতেও একই ব্যবস্থা
রুকনের আগে আলপ্সের কাছে ইটালির একটি গ্রামে ২০০৬ সালে এই আয়নাটি বসানো হয়৷ এর ফলে ভিগানেলা গ্রামে শীতকালে রোদের ব্যবস্থা করা সম্ভব হয়েছে৷
ছবি: Andreas Solaro/AFP/Getty Images
জার্মানির একটি পরিবার
জার্মানির দক্ষিণের ভিল্ডগুটাখের ছোট্ট এক গ্রামের একটি পরিবার এতদিন মধ্য অক্টোবর থেকে মধ্য ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত রোদের দেখা পেত না৷ সে সমস্যার সমাধানে তাঁরা ২০১০ সালে ছোট্ট এই আয়নার ব্যবহার শুরু করে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
আশার আলো
নরওয়ের রুকনের মতো এত বেশি আলো না পেলেও জার্মানির পরিবারটি যে আলো পাচ্ছে তাতেই তাঁরা সন্তুষ্ট৷ ছবিতে পরিবারের এই নারী সদস্যের মুখের হাসিই তার প্রমাণ৷
ছবি: picture-alliance/dpa
7 ছবি1 | 7
প্রধান ইঞ্জিনিয়ার স্টান ক্লার্কস এবং তাঁর টিম এমন রোড সারফেস তৈরির চেষ্টা করছেন যা ভবিষ্যতে আরো ভালো কাজ করবে৷ তিনি জানান, ‘‘সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে আমাদের এমন এক লেয়ার তৈরি করতে হবে যেটার উপর দিয়ে নিরাপদে গাড়ি চালানো সম্ভব৷ এজন্য টায়ার ধরে রাখার উপাদান দিতে হবে, আবার একইসঙ্গে সেটিকে যতটা সম্ভব স্বচ্ছ রাখতে হবে যাতে সূর্যের আলো সোলার অবধি পৌঁছায়৷ এটা মাথায় রেখেই সারফেস তৈরির চেষ্টা করছি আমরা৷''
সারফেসের সক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি বিজ্ঞানীরা ফ্লাট সারফেস পরিহার করতে চাচ্ছেন বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদনের আশায়৷ কেননা কোনাকুনিভাবে স্থাপিত সোলার সেলে বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়৷ সেই সেলের আবার ট্রাক বা বাসের চাপ নেয়ার ক্ষমতা থাকতে হবে৷
ইঞ্জিনিয়ার স্টান ক্লার্কস বললেন, ‘‘সোলার সেল অত্যন্ত ভঙ্গুর যা সহজেই ভেঙ্গে যেতে পারে৷ তাই শুধু দশবার নয়, অসংখ্যবার সেটির উপর দিয়ে গাড়ি চালালে কী হবে দেখতে হচ্ছে৷''
আগামী দু'বছরের মধ্যে সাধারণ রাস্তার উপযোগী সোলার সিস্টেম তৈরি করতে চাচ্ছেন গবেষকরা৷ এটা সম্ভব হলে, শুধু নেদারল্যান্ডস নয় আরো অনেক দেশে তা ব্যবহার করা যাবে৷