সৌরবিদ্যুতের প্রয়োগ বাড়ছে বটে, কিন্তু এখনও তাকে ‘বিকল্প জ্বালানি’ হিসেবেই ধরা হয়৷ তবে ভবিষ্যতে এই প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে যে আকাশপথে গোটা পৃথিবী প্রদক্ষিণ করা সম্ভব, সেটাও এবার দেখিয়ে দিচ্ছে সুইজারল্যান্ডের তৈরি এক বিমান৷
বিজ্ঞাপন
ডানার ব্যাপ্তি বোয়িং-৭৪৭ জাম্বো জেটের থেকেও বেশি৷ এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত প্রায় ৭২ মিটার৷ কিন্তু ওজন বড় একটা গাড়ির মতো৷ ২.৩ মেট্রিক টন৷ নাম ‘সোলার ইমপাল্স ২'৷ তবে গতি বেশি নয়৷ ঘণ্টায় মাত্র ১৪০ কিলোমিটার৷ গোটা পৃথিবী প্রদক্ষিণ করতে কমপক্ষে ৫ দিন, ৫ রাত লাগার কথা৷
কাগজে-কলমে এই বিমান অনন্তকাল আকাশে থাকতে পারে, এক মাস তো বটেই৷ নেহাত আরোহীদের বেশি দিন বিমানের ছোট পরিসরে রাখা চলে না বলেই সে রকম কিছু ভাবা হচ্ছে না৷ অবশ্য পাইলটদের সর্বক্ষণ ককপিটে বসে না থাকলেও চলে৷ কারণ তাতে অটোপাইলট-এরও ব্যবস্থা রয়েছে৷ আছে একটি টয়লেট, বিজনেস ক্লাসের মতো বসার সিট, যা হেলিয়ে দিয়ে ঘুমিয়ে দেওয়া চলে৷ শরীর চাঙ্গা রাখতে একটু-আধটু ব্যায়াম করাও যেতে পারে৷ ফ্লাইট সিমুলেটারে বসে দীর্ঘ সময় ধরে একই জায়গায় বসে থাকার অনুশীলন করতে পারলে তবেই পাইলটের পক্ষে এমন সাহস দেখানো সম্ভব৷ দিনে সব মিলিয়ে দু'ঘণ্টা ঘুম, এক-একবারে ২০ মিনিট করে ঘুমানোর সুযোগ পাওয়া যাবে৷
ভবিষ্যতের বিমান
দিন দিন বাড়ছে জ্বালানি খরচ৷ এই অবস্থায় টিকে থাকতে আরো দক্ষ বিমান তৈরির চেষ্টা চলছে, যেটা জ্বালানি কম খরচ করবে৷
ছবি: Bauhaus-Luftfahrt e.V.
সবুজ এভিয়েশন
বিশ্বের মোট নির্গত কার্বন-ডাই-অক্সাইডের প্রায় তিন শতাংশ আসে বিমান চলাচল থেকে৷ ইউরোপীয় কমিশনের কাছে পরিমাণটা অনেক বেশি৷ তাই ২০৫০ সালের মধ্যে সংখ্যাটা ২৫ শতাংশ কমিয়ে আনার পরিকল্পনা করছে তারা৷ এ জন্য প্রয়োজন নতুন ধরণের বিমান৷ বিশেষজ্ঞরা সেই চেষ্টাই করছেন৷ এই যেমন ছবির প্লেনটি বিদ্যুতের সাহায্যে আকাশে ওড়ে৷
ছবি: Bauhaus-Luftfahrt e.V.
পাখায় অবস্থান
এখন যেমন বিমানে যাত্রীদের বসার জায়গা আর বিমানের দুটো পাখা একদম আলাদা, ভবিষ্যতের এই বিমানে তেমনটা থাকবে না৷ তখন পাখার মধ্যেও যাত্রীদের বসার ব্যবস্থা থাকবে৷ পাখাটা এভাবে তৈরি করার কারণ, এর ফলে কম জ্বালানি ব্যবহার করেই প্লেন চালানো যাবে৷ অর্থাৎ বিমানের আকারটা এখানে মুখ্য৷
ছবি: DLR
জেট ইঞ্জিনের বদলে খোলা ‘রোটর’
আধুনিক জেট ইঞ্জিনের চেয়েও বেশি দক্ষ খোলা ‘রোটর’৷ জার্মান এভিয়েশন সেন্টারের হিসেব বলছে, রোটর ব্যবহার করে ২০ শতাংশ পর্যন্ত জ্বালানি ব্যবহার কমানো যায়৷
ছবি: DLR
রোটরের সমস্যা
জ্বালানির ব্যবহার কমানো গেলেও রোটরের দুটো সমস্যা আছে৷ এক, এর ফলে এখনকার বিমানের চেয়ে রোটর সমৃদ্ধ বিমানের গতি ধীর হয়ে যাবে৷ আর দু’নম্বর সমস্যা হলো, রোটরে শব্দ হয় অনেক৷
ছবি: DLR
সৌরশক্তিচালিত বিমান
‘সোলার ইমপালস’ নামের এই বিমানটি নিয়ে ইতিমধ্যে অনেক আলোচনা হয়েছে৷ কারণ এটা চলে সূর্যের আলোর উপর নির্ভর করে৷ বিমানটি এখনো পরীক্ষামূলক উড্ডয়ন চালিয়ে যাচ্ছে৷ তবে সমস্যা হলো, প্লেনটি মাত্র ৭০ কিলোমিটার বেগে চলতে পারে৷ আর কোনো পণ্য বহন করতে পারে না এটি৷
ছবি: Reuters
‘বাইপ্লেন’-এ ফিরে যাওয়া
বাইপ্লেন মানেই হলো যার দুটো পাখা একটা আরেকটার উপর থাকে৷ লুফৎহানসার এই বিমানটিও দেখতে অনেকটা সেরকম৷ প্লেনের এমন ডানা বিমানকে দ্রুতগতি ও সাশ্রয়ীভাবে চলতে সহায়তা করে৷
ছবি: Bauhaus-Luftfahrt e.V.
দ্রুতগতির প্লেন
যাঁদের আকাশে বেশি সময় দেয়ার উপায় নেই, যাঁরা দ্রুত এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যেতে চান তাঁদের জন্য জার্মান এভিয়েশন সেন্টারের এই ‘স্পেসলাইনার’ বিমান৷ রকেট ইঞ্জিনচালিত এই প্লেনের কারণে ইউরোপ থেকে অস্ট্রেলিয়া যেতে মাত্র দেড় ঘণ্টা লাগতে পারে৷ ২০৫০ সাল নাগাদ সেটা সম্ভব হতে পারে৷
ছবি: DLR
7 ছবি1 | 7
কোথা থেকে এত শক্তি পায় ‘সোলার ইমপাল্স ২'? প্রথমত, এর ব্যাটারি বেশ শক্তিশালী৷ বিমানের বিশাল শরীর জুড়ে প্রায় ১৭,২০০ সোলার সেল লাগানো আছে৷ সেখান থেকে পাওয়া সৌরশক্তি জমিয়ে রাখতে হয়৷ ইলেকট্রিক মোটর বা ইঞ্জিনও বেশ কর্মক্ষম৷
আগামী বছরই এই বিমান নিয়ে পৃথিবী পরিক্রমার প্রচেষ্টা চালানো হবে৷ হিসাব অনুযায়ী শুধু আকাশেই কাটাতে হবে প্রায় ২০ দিন৷ সব মিলিয়ে তিন মাস লাগবে অভিযান শেষ করতে৷ চলতি বছরের মে-জুন মাসেই পরীক্ষামূলকভাবে আকাশে উড়বে ‘সোলার ইমপাল্স ২'৷
এই প্রকল্পের উদ্যোক্তা ব্যার্ত্রঁ পাকার ও আন্দ্রে বর্শব্যার্গ৷ তাঁরা এর আগে ‘সোলার ইমপাল্স ১' তৈরি করে হাত পাকিয়েছিলেন৷ দ্বিতীয় সংস্করণে প্রথমটির অনেক দুর্বলতা কাটিয়ে তোলা সম্ভব হয়েছে৷ গত সপ্তাহে সুইজারল্যান্ডে তাঁরা তাঁদের পরিকল্পনা তুলে ধরেছেন৷