ইটালির রাজধানী রোম পর্যটকদের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয়৷ কিন্তু গাড়িঘোড়ার ভিড় এড়িয়ে দর্শনীয় স্থানগুলি দেখা মোটেই সহজ নয়৷ মুশকিল আসান হয়ে উঠতে পারে স্কুটার৷ একটি সংস্থা পর্যটকদের জন্য সেই ব্যবস্থাই করেছে৷
বিজ্ঞাপন
রোমে দেখার জায়গা কি কম আছে? প্রায় ২,৭০০ বছরের ইতিহাসের চিহ্ন সারা শহরে ছড়িয়ে রয়েছে৷ ভালেরিও ভ্যার্নেসি একই সঙ্গে শিল্পকলার ইতিহাসবিদ এবং গাইড৷ তাঁর ‘রোমামিরাবিলিয়া' কোম্পানি ভেসপা স্কুটারে শহরের গাইডেড ট্যুর-এর ব্যবস্থা করে৷ রোমের গাড়িঘোড়ার ভিড়ের মধ্য দিয়ে স্কুটার দিব্যি এগিয়ে যায়৷ দর্শনীয় স্থানগুলি হাতের নাগালে চলে আসে৷ যেমন খ্রীষ্টপূর্ব ৮০ সালে তৈরি কলোসিয়াম৷
‘রোমামিরাবিলিয়া' কোম্পানির ভালেরিও ভ্যার্নেসি বলেন, ‘‘স্কুটারে চেপে রোম শহরে যেতে যেতে সব সময়ে দু'টি কথা ভাবি৷ প্রথমত ভেসপার ইঞ্জিনের শব্দ বড়ই মধুর৷ দ্বিতীয়ত, এই শহরে কতই না সুন্দর জায়গা রয়েছে! কাসেল অফ দ্য হোলি এঞ্জেল, সেন্ট পিটার্স ক্যাথিড্রাল, ছোট ছোট রাস্তা আর ফোয়ারার পাশ দিয়ে যেতে যেতে ভাবি, রোম সত্যি সুন্দর শহর৷''
স্কুটারে চড়ে ঘুরে আসুন রোম
04:36
ভ্রমণের সময় ভালেরিও একটি জায়গায় অবশ্যই থামেন৷ ক্যাপিটোলাইন হিল-এর কাছে বেশ কয়েকটি মিউজিয়ামও রয়েছে৷ তিনি বলেন, ‘‘আমরা এখন ক্যাপিটোলাইন হিল-এ এসেছি৷ এখানে একাধিক যুগের ছাপ চোখে পড়ে৷ মিকেলেঞ্জেলো ও ক্ল্যাসিক রোমান যুগের নিদর্শন হিসেবে মার্কাস অরেলিয়াস-এর মূর্তি৷ এই দুই বিশাল ভাস্কর্য আসলে প্রাচীন গ্রিক যুগের নকল৷ তারপর রয়েছে মধ্যযুগের বাসিলিকা সান্টা মারিয়া৷ বিভিন্ন যুগের এই সব নিদর্শন পরস্পরের সঙ্গে সংলাপ চালিয়ে যায়৷ এটাই এই শহরের বৈশিষ্ট্য৷''
কয়েক পা এগোলেই ফোরাম রোমানাম৷ ক্ল্যাসিক রোমান যুগের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ খননের কাজ এখানেই হয়েছে৷ জুলিয়াস সিজার ও সম্রাট অগাস্টাস-এর আমলে মানুষ রোমে কীভাবে বসবাস করতো, এখানে তার একটা ধারণা পাওয়া যায়৷
ভালেরিও ভ্যার্নেসি বলেন, ‘‘রোম আসলে একইসঙ্গে প্রাচীন ও আধুনিক শহর৷ খোঁড়াখুঁড়ি করলেই রোমান আমলের ভিলা অথবা থামের উপরের অংশ বেরিয়ে পড়ে৷ এটা আমাদের মেনে নিতে হবে৷ মানতে হবে, যে রোম আসলে এমন একটা মিউজিয়াম, যা শুধু আংশিকভাবে আধুনিক যুগের সামনে উন্মোচিত হতে পারে৷''
স্কুটারে চেপে রোম ভ্রমণের সুবিধা হলো, শহরের কেন্দ্রস্থলে যানবাহনের ভিড় দ্রুত এড়িয়ে চলা যায়৷ জানিকোলো পাহাড় থেকে শহরের দৃশ্য উপভোগ করা যায়৷ ভ্যার্নেসি বলেন, ‘‘সারাদিন খাটাখাটনির পর রোমের মানুষ এখানে এসে একটু জিরিয়ে নেন৷ বিশেষ করে রবিবার আমরা বিভিন্ন পার্কে যাই, যেগুলি এখান থেকে দেখা যায়৷ দূরে কিছুটা সমতল গম্বুজ দেখা যাচ্ছে৷ সেটা প্যান্থিয়ন-এর৷ ২,০০০ বছরের ইতিহাস৷ তার পেছনে বামে দুটি টাওয়ার বিশিষ্ট গির্জা রয়েছে স্প্যানিশ স্টেপস-এর সামনে৷ তার নাম ট্রিনিটা ডেই মন্টি৷ আরেকটু দূরে ভিলা মেদিচি৷''
রোম শহরের কেন্দ্রস্থলে সাধারণ গাড়িঘোড়ার প্রবেশ নিষেধ৷ ভেসপা স্কুটার অবশ্য প্রবেশ করতে পারে৷ কিন্তু পথিকদের জন্য নির্দিষ্ট জায়গায় সেই অনুমতি নেই৷ পর্যটকদের কাছে জনপ্রিয় ট্রেভি ফোয়ারা পৌঁছাতে হেঁটে যাওয়াই ভালো৷ ‘রোমামিরাবিলিয়া' কোম্পানির ভালেরিও ভ্যার্নেসি বলেন,‘‘এই ফোয়ারায় ১৯৬০-এর দশকের সবচেয়ে সুন্দরী নারী স্নান করেছিলেন৷ ফেডেরিকো ফেলিনি পরিচালিত ‘লা দলচে ভিতা' ছবিতে আনিটা একবার্গ-এর পাশে ছিলেন মার্চেলো মাস্ত্রোইয়ানি৷ এই ফোয়ারায় ছবির শুটিং হয়েছিল৷ তাই রোম বেড়াতে এলে মানুষ সেই ছবির স্মৃতি রোমন্থন করতে আসেন৷''
যে এক দিন ভেসপা স্কুটারে চেপে রোম ঘুরেছে, সে জানে যে শহরটি ভালোভাবে চিনতে বেশ কয়েক দিন সময় লাগবে৷
স্বপ্নের বিদেশযাত্রা: দশটি সেরা গন্তব্য
স্বপ্নের বিদেশযাত্রার দশটি সেরা গন্তব্য খুঁজে বার করেছে ‘লোনলি প্ল্যানেট’, যে ট্র্যাভেল গাইডটি বিশেষ করে ব্যকপ্যাকারদের খুব প্রিয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/R.B. Fishman
১০. দূর বহু দূর... সেন্ট হেলেনা
দক্ষিণ অতলান্তিকের সবচেয়ে দূর দ্বীপগুলির মধ্যে পড়ে সেন্ট হেলেনা৷ অ্যাঙ্গোলার উপকূল থেকে দু’হাজার কিলোমিটার দূরে সেন্ট হেলেনায় এতদিন পর্যন্ত শুধু সমুদ্রপথে যাওয়া যেতো৷ আগামী বছর থেকে একটি বিমানবন্দর যুক্ত হতে চলেছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Merker
৯. ব্রাজিলের সবুজ উপকূল
রিও ডি জানিরোর দক্ষিণে ব্রাজিলের কোস্টা ভার্দে বা সবুজ উপকূল৷ এখানে পাওয়া যাবে গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অরণ্য ও সেই সঙ্গে বিশ্বের কিছু অপরূপ সমুদ্রসৈকত৷ ‘লোনলি প্ল্যানেট’ এবার তাদের তালিকা তৈরি করার সময় এমন সব গন্তব্যের খোঁজ করেছে, যেগুলি এখন পর্যন্ত নজর এড়িয়ে গেছে৷
ছবি: Imago/Westend61
৮. বাভেরিয়ার মানুষজন
নয়শোয়ানস্টাইন ক্যাসল থেকে শুরু করে রাজধানী মিউনিখ অবধি, জার্মানির বাভেরিয়া রাজ্যে দর্শনীয় বস্তু বা আকর্ষণের কোনো অভাব নেই৷ যেমন ধরা যাক বিখ্যাত অক্টোবরফেস্ট...
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Gebert
৭. ব্লু হাওয়াই
না, সেটা তো ছিল এলভিস প্রেসলি-র ১৯৬১ সালের ছবি৷ হাওয়াই হল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৫০তম রাজ্য৷ হনোলুলু’র ওয়াইকিকি বেলাভূমির নাম শোনেননি, এমন কেউ আছেন কি? পলিনেশিয়ান সংস্কৃতির ছোঁয়াচ লেগে রয়েছে এই ‘আলোহা স্টেটে’৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Nelson
৬. ফ্রান্সের ওভার্নিয়ে’র আগ্নেয়গিরি অঞ্চল
প্যারাগ্লাইডারদের কাছে খুবই প্রিয়৷ সর্বোচ্চ চূড়াটি হল পুই দ্য ডোম, যেখান থেকে প্যারাগ্লাইডাররা তাদের উড়াল শুরু করেন৷ নয়তো ট্রেকিং গোত্রীয় অন্যান্য প্রকৃতি-ঘেঁষা গতিবিধির কোনো অভাব নেই৷
ছবি: picture-alliance/dpa/O. Hoslet
৫. নিউজিল্যান্ডের ওয়াইহেকে দ্বীপ
অকল্যান্ড শহর থেকে মাত্র ১৪ কিলোমিটার দূরে৷ নানা ধরনের গোপন খাড়ি আর সোনালি বালুচর৷ ওয়াইহেকে হিচহাইকারদের কাছে যেমন জনপ্রিয়, তেমনই যারা ওয়াইন পছন্দ করেন, তাদের প্রিয় - কেননা দ্বীপটিতে আঙুরচাষ আর ওয়াইন তৈরি, দু’টি প্রথাই বর্তমান৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M.Williams-Ellis
৪. ইটালির ফ্রিউলি অঞ্চল মানে শুধু ওয়াইন নয়
উত্তর-পূর্ব ইটালির এই অঞ্চলটি তার হোয়াইট ওয়াইনের জন্য বিখ্যাত৷ আল্পস পর্বতমালা আর এড্রিয়াটিক সাগরের মধ্যে অবস্থিত এলাকাটির মৃদু আবহাওয়া, ডলোমাইট পর্বতাঞ্চলের প্রাকৃতিক দৃশ্য, সেই সঙ্গে সাগরের তীরে প্রশস্ত বেলাভূমি টুরিস্টদের টানে ও টানবে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/U. Bernhart
৩. কিউবা’র ভালিয়ে দে ভিনিয়ালেস
রাজধানী হাভানা’র পশ্চিমে অবস্থিত এই দশ কিলোমিটার লম্বা, চার কিলোমিটার চওড়া উপত্যকাটি ইউনেস্কো’র স্বীকৃতি পায় ১৯৯৯ সালে৷ ছোটচাষিরা আজও এখানে তামাকের চাষ করে থাকেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Büttner
২. আইসল্যান্ডের পশ্চিমাঞ্চল
প্রকৃতিপ্রেমীদের স্বর্গ৷ আগ্নেয়গিরি, ফিয়র্ড, সমুদ্রসৈকত, কি নেই এখানে৷ ‘গুইডলফস’ বা গোল্ডেন ফলস বিশ্বের সবচেয়ে চমকপ্রদ জলপ্রপাতগুলির মধ্যে পড়ে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Trumpf
১. ড্র্যাকুলার বাড়ি যেখানে
রোমানিয়া’র ট্র্যান্সিলভানিয়া এলাকার মূল আকর্ষণ আজ আর রক্তচোষা কাউন্ট ড্র্যাকুলা নন, বরং নেকড়ে, ভাল্লুক ইত্যাদি বন্যপ্রাণী৷ কার্পেথিয়ান পর্বতমালার এই অংশে আজও ঘোড়ায় টানা গাড়ি দেখতে পাওয়া যায়৷ গা ছমছম করা ক্যাসল ছাড়াও ট্র্যান্সিলভানিয়ায় আজ শিল্পকলা, সংস্কৃতি বা আমোদপ্রমোদ, কোনো কিছুরই অভাব নেই৷