1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

স্কুলে ফিরতে পারবে না অনেক শিক্ষার্থী!

১২ সেপ্টেম্বর ২০২১

বাংলাদেশে দেড় বছর পর স্কুল-কলেজ খুলেছে৷ কিন্তু এই করোনার কারণে বিভিন্ন পর্যায়ের অনেক শিক্ষার্থী ঝরে পড়তে পারে এমন আশঙ্কা করা হচ্ছে৷ এজন্য পরিকল্পনামাফিক কৌশল হাতে নেওয়ার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের৷

Bangladesch I Schulen öffnen nach Corona-Lockdown
ছবি: Mortuza Rashed/DW

ঝরে পড়ার প্রধান কারণ বলা হচ্ছে দারিদ্র্য৷ তাছাড়া বাল্য বিয়ে এবং তথ্য প্রযুক্তিতে গ্রামের শিক্ষার্থীদের তেমন অংশগ্রহণ না থাকার ফলে অনেক শিক্ষার্থী ঝরে পড়ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে৷

রবিববার স্কুল খোলার প্রথম দিনে কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ঘুরে গড়ে ৫০ ভাগ শিক্ষার্থীর উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে৷ তবে কোনো কোনো স্কুলে ৮০-৯০ ভাগ শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন৷ কোথাও আবার ২০-৩০ ভাগ৷ শিক্ষার্থী এবং শিক্ষক কর্মচারীদের স্বাস্থ্যবিধি মানতে দেখা গেছে৷ 

পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা নীতি ঠিকমত না মানায় আজিমপুর গার্লস স্কুল ও কলেজের অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে৷

তবে গ্রামাঞ্চলের অনেক স্কুল বন্যার পানিতে ডুবে থাকায় খোলা জায়গায় ক্লাস নেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে৷ আবার অনেক স্কুলে সাঁকো ও নৌকা দিয়ে শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকদের ক্লাসে হাজির হতে হয়েছে৷ দেড় বছর পর স্কুল খোলার উদ্বেগের বিষয় হলো যে, শেষ পর্যন্ত কতভাগ শিক্ষার্থী ক্লাসে ফিরতে পারবে৷

এরইমধ্যে করোনাকালে ড্রপআউট (ঝরে পড়া) শিক্ষার্থীদের তালিকা তৈরির কাজ করছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচি৷ জানা গেছে, অনলাইন ক্লাসে অনুপস্থিতি সংখ্যা বিবেচনায় নিয়ে একটি বেসরকারি সংস্থার সহযোগিতায় এ তালিকা করা হয়৷

‘পরিকল্পিতভাবে কাজ না করলে ড্রপআউট ঠেকানো যাবেনা’

This browser does not support the audio element.

এ বিষয়ে মংলা উপজেলা শিক্ষা অফিসার (প্রাথমিক) সুমন্ত পোদ্দার জানান, ‘‘আমাদের কাছে যে তালিকা পাঠানো হয়েছে তাতে প্রাথমিকে শতকরা ৫০ ভাগের মত ড্রপ আউট দেখানো হয়েছে৷ এখন আমরা এটা সরেজমিন পরীক্ষা করে দেখছি৷ তবে এই সংখ্যা এত হবেনা৷ কারণ তাদের জরিপে ভুল আছে৷ এখন পর্যন্ত যা পেয়েছি তাতে ১৫-২০ ভাগ হবে৷ আমরা এখনো প্রতিবেদন পাঠাইনি৷ কাজ শেষ করতে আরো কিছু দিন সময় লাগবে৷''

দেশের ৬৪ জেলার ৩৪৫টি উপজেলা, সব সিটি কর্পোরেশন এবং ১৫টি শহরে এই কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে৷

বেসরকারি সংস্থা গণস্বাক্ষরতা অভিযান তাদের ‘এডুকেশন ওয়াচ' রিপোর্টে বলেছে, করোনার সময় দেশের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে শকরা ৬৯.৫ ভাগ শিক্ষার্থী অলাইন ক্লাসে অংশ নিতে পারেনি৷ টেলিভিশনে প্রদান করা ক্লাসেও অংশগ্রহণ করতে পারেনি অনেকে৷ অংশগ্রহণ না করার এই হার শহরের চেয়ে গ্রামাঞ্চলে বেশি৷ তাদের জরিপ বলছে, শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া এবং অনুপস্থিতি বাড়বে৷

এদিকে করোনার সময়ে দেশের অনেক কিন্ডারগার্টেন এবং নন-এমপিও স্কুল বন্ধ হয়ে গেছে৷ এসকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীদের একটি অংশ ঝরে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে৷ দেশে বাংলা মাধ্যমের কিন্ডার গার্টেন আছে ৪০ হাজার৷ এর বেশিরভাগই প্রত্যন্ত অঞ্চলে৷ এরমধ্যে করোনার সময়ে আর্থিক দুরবস্থার কারণে ১০ হাজার স্কুল বন্ধ হয়ে গেছে৷

বাংলাদেশ কিন্ডার গার্টেন অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব জিএম জাহাঙ্গীর কবির রানা বলেন, ‘‘এগুলো ইংশিশ স্কুল নয়৷ নিম্নমধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত এবং গরিব ঘরের সন্তানরাই এইসব কিন্ডার গার্টেনে পড়াশুনা করে৷ বন্ধ হয়ে যাওয়া এই ১০ হাজার স্কুলের শিক্ষার্থীদের অনেকেই আর স্কুলে ফিরবে কিনা সন্দেহ৷ আর আজকে (রবিবার) চালু স্কুল গুলোতে সর্বোচ্চ ৩০ ভাগ শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলো৷’’

‘বন্ধ হয়ে যাওয়া স্কুলের শিক্ষার্থীদের অনেকেই আর ফিরবে কিনা সন্দেহ’

This browser does not support the audio element.

বেসরকারি সংস্থা সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম) বলছে, করোনায় বাংলাদেশ দারিদ্র্যের হার বেড়ে ৪২ শতাংশ হয়েছে৷ আগে এটা ছিলো ২০.৫ শতাংশ৷ চরম দরিদ্র অবস্থার মধ্যে আছেন ২৮.৫ শতাংশ মানুষ৷ করোনায় বাল্য বিয়েও বেড়েছে৷

এই সবগুলোর অভিঘাতই পড়েছে শিক্ষার উপর৷ বাংলাদেশে সাধারণভাবে প্রাথমিক পর্যায়ে ড্রপআউট শতকরা ১৭ ভাগ৷ মাধ্যমিক পর্যায়ে ৩৭ ভাগ৷ করোনায় এটা বাড়বে৷ তাই পাঠ্যপুস্তক বোর্ডও আগামী শিক্ষাবর্ষে বিনামূল্যের ৭৭ লাখ বই কম ছাপানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. সিদ্দিকুর রহমান মনে করেন, দারিদ্র্যের কারণে ড্রপআট তেমন বাড়বেনা৷ কারণ দরিদ্র হলেও বাংলাদেশের মানুষের শিক্ষার প্রতি ব্যাপক আগ্রহ তৈরি হয়েছে৷

তবে তিনি বলেন, ‘‘করোনার সময় বাল্য বিয়ে বেড়ে যাওয়া, পড়াশুনার অভ্যাস নষ্ট হয়ে যাওয়া এবং সবার কাছে তথ্য প্রযুক্তি, ইন্টারনেট ও গ্যাজেট না থাকার কারণে ড্রপআউট বাড়তে পারে৷’’

তার মতে, যাদের তথ্য প্রযুক্তির সুবিধা ছিলো তারা অনলাইনে ঠিকমত শিখতে পারেনি৷ যাদের ছিলোনা তারা তো শিখেইনি৷ আর এই দেড় বছর ঘরে থাকার কারণে অনেকের লেখাপড়ার প্রতি অনাগ্রহ তৈরি হয়েছে৷ করোনায় স্কুল পড়ুয়া মেয়েকে ঘরে বসিয়ে না রেখে অনকে বিয়ে দিয়ে তাদের শিক্ষাজীবন শেষ করে দিয়েছে৷ ফলে এসব নিয়ে পরিকল্পিতভাবে কাজ না করলে ড্রপআউট ঠেকানো যাবেনা৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

বাংলাদেশ