নতুন স্কুল বছরের শুরুতে জার্মানির বেশ কয়েকটি রাজ্য স্কুলে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করার পরিকল্পনা করছে ৷ তবে এ নিয়ে রাজ্যভেদে নানা বিতর্ক চলছে৷
বিজ্ঞাপন
মেকগ্লেনবুর্গ-ফোরপম্যার্ন
গ্রীষ্মের ছুটি শেষে স্কুলের প্রথমদিনেই মেকলেনবুর্গ ফোরপম্যান রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী বেটিনা মার্টিন তার রাজ্যে আরো বেশি নিরাপত্তার জন্য ক্লাসের বাইরেও শিক্ষার্থীদের মাস্ক পরার পক্ষে আবেদন জানান৷ মেকলেনবুর্গ ফোরপম্যান রাজ্যে সোমবার থেকে আবার স্কুল শুরু হয়েছে৷ সেখানে কয়েকটিক্লাসের ছাত্রদের গ্রুপ ভাগ করে ক্লাস করার কারণে সংক্রমণ হওয়ার আশঙ্কা বেশি৷
নর্থরাইন ওয়েস্টফালিয়া রাজ্যের ক্লাসরুমে প্রবেশের আগে থেকে এবং ক্লাস চলাকালীন সময়েও শিক্ষার্থীদের মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করা হলে ছাত্র প্রতিনিধিদের পক্ষ থেকে এর সমালোচনা করা হয়৷
নর্থরাইন ওয়েস্টফালিয়া রাজ্যে স্কুল শুরু হবে ১২ আগস্ট থেকে আর তখন থেকে ছাত্রদের স্কুল এলাকা এবং ক্লাসের ভেতরে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক৷ রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ইভন গেবাউয়ার বলেন, প্রয়োজনে প্রথম শ্রেণি থেকে চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রদের ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম হতে পারে৷ শিশুদের স্কুলের ভেতরে এবং ক্লাসের সিটে বসা পর্যন্ত মাস্ক পরতেই হবে৷ তবে এ নিয়ম আপাতত ৩১ আগস্ট পর্যন্ত৷ স্কুলের শিক্ষক, ছাত্র ও অন্যান্য সকলের জন্যই স্বাস্থ্যবিধি মানা এবং মাস্ক পরা প্রযোজ্য৷
করোনার মাঝেই খুলছে স্কুল জার্মানিতে
গ্রীষ্মকালীন ছুটি প্রায় শেষ, কিন্তু শেষ নয় করোনা সংকট৷ এর মধ্যে কীভাবে স্কুলে ফিরছে জার্মান শিশুরা, দেখুন ছবিঘরে...
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Büttner
পথ দেখাচ্ছে যে রাজ্য
জার্মানির মেকলেনবুর্গ-পশ্চিম পমেরানিয়ান রাজ্যে করোনা সংকটের মধ্যেই খুরচে স্কুল৷ উত্তরপূর্ব জার্মানির এই রাজ্যে গ্রীষ্মকালীন ছুটির শেষে অবশেষে একে একে স্বাভাবিক জীবনে ফিরবেন পড়ুয়ারা৷
ছবি: picture-alliance/dpa/C. Charisius
কতগুলি স্কুল খুলছে
এই রাজ্যের মোট ৫৬৩টি স্কুলে পড়েন মোট এক লাখ ৫২ হাজার ৭০০জন শিক্ষার্থী৷ মার্চ মাসে করোনা সংকটের শুরু থেকে বন্ধ ছিল এই স্কুলগুলি৷
ছবি: Imago Images/N. Schmidt
কীভাবে হবে ক্লাস?
সাধারণভাবে সোম থেকে শুক্রবার পর্যন্ত টানা চলে ক্লাস এই স্কুলগুলিতে৷ কিন্তু বর্তমানের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে তা সম্ভব হবে না৷ বদলে, সপ্তাহে চার থেকে পাঁচ ঘন্টার ক্লাসে ফিরতে চান রাজ্য কর্তৃপক্ষ৷
ছবি: Getty Images/AFP/J. Schlueter
যে কারণে সম্ভব হচ্ছে এটা
রাজ্য সরকারের মতে, এই অঞ্চলে তুলনামূলকভাবে কম সংক্রমণের হারই এই সিদ্ধান্তের কারণ৷ বারবার হাত ধোয়া, যথাযথ দূরত্ব মেনে চলা ও মাস্ক পরার পরামর্শের মাধ্যমে স্কুল চত্বরে সবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে কর্তৃপক্ষ৷ স্কুলের ওপরেও নিয়মিত পরিচ্ছন্নতা ও জীবাণুমুক্তকরণের দায়িত্ব রয়েছে৷ পাশাপাশি, শিক্ষকদের জন্য রয়েছে বিনামূল্যে করোনা পরীক্ষার পরিষেবাও৷
ছবি: Reuters/W. Rattay
ভাগে ভাগে বিভক্ত শিক্ষার্থীরা
একটি ক্লাসের সব শিক্ষার্থী আগের মতো একসাথে পড়তে পারবেন না৷ এর পরিবর্তে, ছোট ছোট দল বা ‘কোহোর্ট’ করে তাদের পড়ানো হবে স্কুলে৷ এছাড়াও, অনলাইন ক্লাসের সুবিধা থাকবে তাদের জন্যেও৷ কিন্তু অনলাইনে পড়াশোনা তখনই হবে যদি কোনো স্কুলে কোহোর্টে ভাগ করে পড়ানোর মতো যথেষ্ট সংখ্যায় শিক্ষক না পাওয়া যায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Büttner
রাষ্ট্রের অর্থায়ন
জার্মান সরকার ইতিমধ্যেই এই রাজ্যে ‘ডিজিটাল’ পড়াশোনার খাতে দশ মিলিয়ন ইউরোর বিনিয়োগ করেছে৷ এই অর্থ থেকে অসচ্ছল পরিবারের শিক্ষার্থীদের জন্য ল্যাপটপ ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিস কেনা হবে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Büttner
ডাক্তারদের কী মত?
লাইপৎজিশ বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাক্তার বিলান্ড কিসের মতে, শিশুদের মধ্যে সংক্রমণের সুযোগ কম৷ তাছাড়া, নতুন করে লকডাউন করলে তা শিশুদের ওপর বাড়তি মানসিক ও শারীরিক চাপ সৃষ্টি করতে পারে বলেও তাঁর ধারণা৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Büttner
7 ছবি1 | 7
অন্যদিকে বর্তমান আবহাওয়ায় ছাত্রদের মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করা নিয়ে ফেডারেল ছাত্র সম্মেলনে কঠোর সমালোচনা হয়৷ অনেক ক্লাসরুমে এসি বা জানালা খুলে দেওয়ার ব্যবস্থা না থাকায় বর্তমান তাপমাত্রার বিবেচনায় এটাকে অযৌক্তিক বলেও মন্তব্য করা হয়৷
জার্মান প্যারেন্টস কাউন্সিলের চেয়াম্যান স্টেফান ভাসমুথ জার্মান রেডিও ডয়েচল্যান্ডফুঙ্ককে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে জানান, সারাদিন বা ক্লাসের ভেতর সারাক্ষণ মাস্ক পরে থাকা ছাত্রদের জন্য স্ট্রেসফুল কিন্তু তারপরও করোনার বিস্তার ঠেকাতে মাস্ক পরা উপকারী৷
হামবুর্গের স্কুল সিনেটর টিজ রাবে মাধ্যমিক স্কুলের ছাত্রদের ক্লাসরুম ছাড়াও করিডোর, টিফিন এবং ক্যান্টিনেও মাস্ক পরার ঘোষণা দিয়েছেন৷ আগামী বৃহস্পতিবার গ্রীষ্মের ছুটি শেষে স্কুলে শিক্ষার্থীরা শুধু নিজের ক্লাসের ছাত্রদের সাথে যোগাযোগ রাখার অনুমতি পাবে৷ রাজধানী বার্লিনের স্কুলগুলোতেও মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক৷
বাডেন ভ্যুর্টেমব্যার্গ এবং বাভারিয়ার স্কুলগুলোতেও মাস্ক পরতে হবে৷ জার্মানির শিক্ষামন্ত্রী আনিয়া কারিলিত্সেক স্কুল কম্পাউন্ডে মাস্ক পরার প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন৷
স্যাক্সোনি রাজ্যের সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় স্কুল শুরুর দিনই তাদের স্টেপ বাই স্টেপ প্ল্যানের কথা বলেন, যদি সাতদিনে এক লাখ বাসিন্দার মধ্যে ২০ জন পর্যন্ত নতুন কেউ সংক্রমিত হয় এবং তাদের মধ্যে স্কুল বা কিন্ডারগার্টেনের কেউ থাকে তা স্বাভবিক বলে ধরা যাবে৷ এবং সংক্রমিতের সংখ্যা ৩৬ থেকে ৫০ হলে সে সব স্কুল বা ডে-কেয়ার সাময়িকভাবে বন্ধ থাকবে৷
এনএস/কেএম (এএফপি)
করোনায় জার্মানির জিডিপির রেকর্ড পতন
করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে বছরের দ্বিতীয় কোয়ার্টারে (এপ্রিল থেকে জুন) জার্মানির অর্থনীতির ১০.১% ভাগ ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি হয়েছে৷ তবে সরকারের নীতির কারণে এখনো দেশটিতে সে অর্থে কর্মী ছাটাই বাড়েনি৷
ছবি: picture-alliance/imageBroker
অর্থনীতিতে বিরাট ধাক্কা
বৃহস্পতিবার এ বছর এপ্রিল থেকে জুনের কিছু অর্থনৈতিক উপাত্ত প্রকাশিত হয়েছে৷ সেখানে দেখা গেছে, জার্মানির অর্থনীতির প্রবৃদ্ধিতে রেকর্ড পতন হয়েছে (১০.১%)৷ এমন একটি সময়ে জার্মানির কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যান দপ্তর এই তথ্য প্রকাশ করল, যখন পুরো ইউরোপ করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের ধাক্কায় পড়তে যাচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance /J. Tack
১৯৭০-এর পর প্রথম
১৯৭০ সালে সবশেষ অর্থনীতির এমন পতন দেখেছিল জার্মানি৷ পরিসংখ্যান দপ্তর বলছে, করোনার কারণে এমনকি বাসাবাড়িতে ব্যয় যেমন কমেছে, তেমনি ব্যবসায় বিনিয়োগ কিংবা রপ্তানি সবকিছুতেই ধস নেমেছে কোভিড-১৯ এর কারণে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Hoppe
পরামর্শকদের ধারণা ভুল
মার্চে জার্মানির অর্থনৈতিক পরামর্শকদের প্যানেল বলেছিল যে, পুরো বছরে হয়ত জিডিপির পতন ২.৮% ভাগ হতে পারে৷ তাদের ধারণা ছিল, পাঁচ সপ্তাহের লকডাউন শেষে জীবনযাত্রা স্বাভাবিক হয়ে উঠবে৷ কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি৷
ছবি: Imago Images/F. Sorge
বেকারত্বের হার এখনো স্বাভাবিক
পরিসংখ্যান বলছে, এত কিছু হয়ে গেলেও এ বছর জুলাইতে বেকারত্বের হার ৬.৪%৷ অর্থাৎ বড় আকারে কর্মী ছাটাই হয়নি (মার্চে ছিল ৫%)৷ এতে সরকারের দেয়া প্রণোদনা অর্থ ভূমিকা রেখেছে৷
ছবি: picture-alliance/blickwinkel/McPHOTOs
বাড়ছে প্রণোদনার চাপ
দিন দিন সরকারের প্রণোদনার সুবিধা পাওয়াদের সংখ্যা বাড়াতে হচ্ছে৷ যেমন, মে মাসে ৬৭ লাখ মানুষকে সরকারের ‘ফারলো স্কিমের’ আওতায় অর্থ পেয়েছেন, যেখানে এপ্রিলে এ সংখ্যা ছিল ৬১ লাখ৷