1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান
মানবাধিকারআফগানিস্তান

স্কুলে যাওয়া নিষেধ, তবু আফগান কিশোরীরা থামতে নারাজ

১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫

জাতিসংঘের সমীক্ষায় প্রকাশ, বেশিরভাগ আফগান মনে করেন, নারীশিক্ষা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়৷ মেয়েদের স্কুল যাওয়ার উপর তালেবানি নিষেধাজ্ঞা চাপলেও, আফগান কিশোরী ও নারীরা চেষ্টা করছেন অন্য উপায়ে লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়ার৷

একটি আফগান কিশোরী বই পড়ছে জানলার ধারে বসে৷
২০২১ সালে তালেবান ক্ষমতায় আসার পর থেকে আফগানিস্তানে ১২ বছরের পরে মেয়েরা আর স্কুলে যেতে পারে না৷ছবি: ZOHRA BENSEMRA/REUTERS

আগস্টের শেষে আফগানিস্তানে করা একটি সমীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করে ইউএন উইমেন৷ রাষ্ট্রপুঞ্জের ২০১০ সালে প্রতিষ্ঠিত এই সংগঠন মূলত কাজ করে লিঙ্গসাম্য এবং নারীদের ক্ষমতায়নের উদ্দেশ্যে৷ প্রায় দু'হাজার আফগানের উপর এই সমীক্ষা চালায় তারা৷ সমীক্ষার অন্যতম প্রশ্ন ছিল নারীশিক্ষা নিয়ে৷ অন্তত ৯২ শতাংশ মানুষ জানিয়েছেন, নারীদের, বিশেষ করেকিশোরীদের শিক্ষা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ৷ গ্রামাঞ্চলের ৮৭ শতাংশ পুরুষ ও ৯৫ শতাংশ নারী এই কথা বলেছেন৷ আর শহরের ৯৫ শতাংশ নারী-পুরুষের কথাতেও এই একই সুর৷ আফগানিস্তানে রাষ্ট্রপুঞ্জের নারী বিষয়ক বিশেষ প্রতিনিধি সুসান ফার্গুসনের কথায়, ‘‘মেয়েরা প্রথমেই আমাদের এই কথাটি বলে৷ তারা মরিয়া হয়ে শিক্ষালাভের সুযোগ খুঁজছে৷''

তালেবান শাসনে নারীরা ‘অদৃশ্য’

02:10

This browser does not support the video element.

বারো বছর বয়স, ফুরিয়ে গেছে স্কুল

২০২১ সালে তালেবান ক্ষমতায়আসার পর থেকে আফগানিস্তানে ১২ বছরের পরে মেয়েরা আর স্কুলে যেতে পারে না৷তালিবান প্রথমেই মেয়েদের উচ্চশিক্ষায় নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে৷ একটি সমীক্ষায় প্রকাশ, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২১ তারিখে আনুমানিক ১০ লক্ষ কিশোরীর সামনে বন্ধ হয়ে গিয়েছে উচ্চবিদ্যালয়ের দরজা৷ চোখের জলে বুক ভেসেছে তাদের৷ ইউনেস্কোর মতে, অন্তত ১.৪ মিলিয়ন (১৪ লক্ষ) কিশোরীস্কুলশিক্ষা থেকে বঞ্চিত৷ আশঙ্কা, এই সংখ্যাটি আরও বাড়বে৷ তার কারণ, আফগানিস্তানের জনসংখ্যার ৪০ শতাংশেরই বয়স ১৫ বছরের নীচে৷ দেশটির জনসংখ্যার গড় বয়স ১৭ বছর৷

ইসলামী নিয়মনীতি এবং তালেবানের ব্যাখ্যা

তালেবানি ফতোয়া, মেয়েদের ও নারীদের শিক্ষা ইসলামী নীতি ও আফগান সংস্কৃতির উপযুক্ত নয়৷ বিশ্বের কঠোর থেকে কঠোরতম সমালোচনাসত্ত্বেও তারা তাদের অবস্থান থেকে একচুলও নড়েনি৷ ২০২১ সাল থেকেই তারা ধাপে ধাপে বেশ কয়েকটি নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে৷ এতে করে নারীদের অধিকার, স্বাধীনতা ক্রমশ খর্ব হয়েছে৷ তাদেরকে আফগানিস্তানের চাকরির বাজার থেকে জোর করে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে, এমনকি প্রকাশ্যে বেরোনোর উপরেও চাপানো হয়েছে নিষেধাজ্ঞা৷

প্রাক্তন আফগান উপ-শিক্ষামন্ত্রী সর্দার মহম্মদ রহিমি মনে করেন শিক্ষা নিয়ে আফগানদের তালেবান-বিরোধী এই দাবি যথাযথ৷ রহিমি এখন ফ্রান্সে থাকেন, তিনি ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ওরিয়েন্টাল ল্যাঙ্গুয়েজেস অ্যান্ড সিভিলাইজেশনস ইন প্যারিসে শিক্ষকতা করেন৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি জানিয়েছেন, ‘‘তালেবান ক্ষমতায় আসার আগে পরিচালিত সমস্ত সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, আফগানিস্তান জুড়ে নারীশিক্ষায় বিশেষ আগ্রহ ছিল৷'' তিনি আরো বলেন, ‘‘তালেবানরা ক্রমাগত আফগানদের উপর শরিয়ার নিজস্ব ব্যাখ্যা চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে৷ বিশ্বের কাছেও এই বিষয়কে তারা আফগান সংস্কৃতি বলে তুলে ধরতে চায়৷ আদতে একটি দেশের সরকারের কাজ কিন্তু দেশের মানুষকে শিক্ষিত হতে উৎসাহিত করা৷শরিয়ার নামে, ক্ষমতায় থাকা ব্যক্তিরা আফগান জনগণের উপর একটি রাজনৈতিক এবং কঠোর ধর্মীয় কর্মসূচি চাপিয়ে দিচ্ছে৷'' তার মতে, তালেবানরা মেনে নিতে চায় না যে আফগানরা ভিন্ন জীবনধারা গ্রহণ করতে চান।

অনলাইন কোর্সের মাধ্যমে লেখাপড়া করে বহু আফগান কিশোরী৷ছবি: ZOHRA BENSEMRA/REUTERS

নারীশিক্ষার জন্য মালালা ফান্ড ক্যাম্পেইন

স্কুলে যাওয়ায় নিষেধ, কিন্তু তা-ও হাল ছাড়েনি বহু আফগান কিশোরীর পরিবার৷ গোপনে লেখাপড়া করছে কিশোরীরা, হয় অনলাইন কোর্স, অথবা রে়ডিওর অনুষ্ঠানের মাধ্যমে৷ আফগানিস্তানের বাইরের বহু মানবাধিকার সংগঠনও তাদের সহায়তা করে৷ এমনই একটি সংগঠন মালালা ফান্ড৷ এই তহবিলটির সহপ্রতিষ্ঠাতা পাকিস্তানের নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী মালালা ইউসুফজাই৷ লেখাপড়া করতে চেয়েছিলেন বলে মালালাকে ২০১২ সালে এক তালেবান দুষ্কৃতী গুলি করে হত্যা করার চেষ্টা করে৷ এই তহবিলের উদ্দেশ্য, প্রতিটি মেয়ের ১২ বছর নিরাপদে, বিনামূল্যে শিক্ষা নিশ্চিত করা৷ তালেবান ক্ষমতায় আসার পরে আফগানিস্তানের লক্ষ লক্ষ কিশোরী এই তহবিলের সাহায্যে চেষ্টা করছে লেখাপড়া করার৷

শবনম ফন হাইন/এসটি

 

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ