স্কুলে যাওয়া নিষেধ, তবু আফগান কিশোরীরা থামতে নারাজ
১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫
আগস্টের শেষে আফগানিস্তানে করা একটি সমীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করে ইউএন উইমেন৷ রাষ্ট্রপুঞ্জের ২০১০ সালে প্রতিষ্ঠিত এই সংগঠন মূলত কাজ করে লিঙ্গসাম্য এবং নারীদের ক্ষমতায়নের উদ্দেশ্যে৷ প্রায় দু'হাজার আফগানের উপর এই সমীক্ষা চালায় তারা৷ সমীক্ষার অন্যতম প্রশ্ন ছিল নারীশিক্ষা নিয়ে৷ অন্তত ৯২ শতাংশ মানুষ জানিয়েছেন, নারীদের, বিশেষ করেকিশোরীদের শিক্ষা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ৷ গ্রামাঞ্চলের ৮৭ শতাংশ পুরুষ ও ৯৫ শতাংশ নারী এই কথা বলেছেন৷ আর শহরের ৯৫ শতাংশ নারী-পুরুষের কথাতেও এই একই সুর৷ আফগানিস্তানে রাষ্ট্রপুঞ্জের নারী বিষয়ক বিশেষ প্রতিনিধি সুসান ফার্গুসনের কথায়, ‘‘মেয়েরা প্রথমেই আমাদের এই কথাটি বলে৷ তারা মরিয়া হয়ে শিক্ষালাভের সুযোগ খুঁজছে৷''
বারো বছর বয়স, ফুরিয়ে গেছে স্কুল
২০২১ সালে তালেবান ক্ষমতায়আসার পর থেকে আফগানিস্তানে ১২ বছরের পরে মেয়েরা আর স্কুলে যেতে পারে না৷তালিবান প্রথমেই মেয়েদের উচ্চশিক্ষায় নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে৷ একটি সমীক্ষায় প্রকাশ, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২১ তারিখে আনুমানিক ১০ লক্ষ কিশোরীর সামনে বন্ধ হয়ে গিয়েছে উচ্চবিদ্যালয়ের দরজা৷ চোখের জলে বুক ভেসেছে তাদের৷ ইউনেস্কোর মতে, অন্তত ১.৪ মিলিয়ন (১৪ লক্ষ) কিশোরীস্কুলশিক্ষা থেকে বঞ্চিত৷ আশঙ্কা, এই সংখ্যাটি আরও বাড়বে৷ তার কারণ, আফগানিস্তানের জনসংখ্যার ৪০ শতাংশেরই বয়স ১৫ বছরের নীচে৷ দেশটির জনসংখ্যার গড় বয়স ১৭ বছর৷
ইসলামী নিয়মনীতি এবং তালেবানের ব্যাখ্যা
তালেবানি ফতোয়া, মেয়েদের ও নারীদের শিক্ষা ইসলামী নীতি ও আফগান সংস্কৃতির উপযুক্ত নয়৷ বিশ্বের কঠোর থেকে কঠোরতম সমালোচনাসত্ত্বেও তারা তাদের অবস্থান থেকে একচুলও নড়েনি৷ ২০২১ সাল থেকেই তারা ধাপে ধাপে বেশ কয়েকটি নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে৷ এতে করে নারীদের অধিকার, স্বাধীনতা ক্রমশ খর্ব হয়েছে৷ তাদেরকে আফগানিস্তানের চাকরির বাজার থেকে জোর করে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে, এমনকি প্রকাশ্যে বেরোনোর উপরেও চাপানো হয়েছে নিষেধাজ্ঞা৷
প্রাক্তন আফগান উপ-শিক্ষামন্ত্রী সর্দার মহম্মদ রহিমি মনে করেন শিক্ষা নিয়ে আফগানদের তালেবান-বিরোধী এই দাবি যথাযথ৷ রহিমি এখন ফ্রান্সে থাকেন, তিনি ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ওরিয়েন্টাল ল্যাঙ্গুয়েজেস অ্যান্ড সিভিলাইজেশনস ইন প্যারিসে শিক্ষকতা করেন৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি জানিয়েছেন, ‘‘তালেবান ক্ষমতায় আসার আগে পরিচালিত সমস্ত সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, আফগানিস্তান জুড়ে নারীশিক্ষায় বিশেষ আগ্রহ ছিল৷'' তিনি আরো বলেন, ‘‘তালেবানরা ক্রমাগত আফগানদের উপর শরিয়ার নিজস্ব ব্যাখ্যা চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে৷ বিশ্বের কাছেও এই বিষয়কে তারা আফগান সংস্কৃতি বলে তুলে ধরতে চায়৷ আদতে একটি দেশের সরকারের কাজ কিন্তু দেশের মানুষকে শিক্ষিত হতে উৎসাহিত করা৷শরিয়ার নামে, ক্ষমতায় থাকা ব্যক্তিরা আফগান জনগণের উপর একটি রাজনৈতিক এবং কঠোর ধর্মীয় কর্মসূচি চাপিয়ে দিচ্ছে৷'' তার মতে, তালেবানরা মেনে নিতে চায় না যে আফগানরা ভিন্ন জীবনধারা গ্রহণ করতে চান।
নারীশিক্ষার জন্য মালালা ফান্ড ক্যাম্পেইন
স্কুলে যাওয়ায় নিষেধ, কিন্তু তা-ও হাল ছাড়েনি বহু আফগান কিশোরীর পরিবার৷ গোপনে লেখাপড়া করছে কিশোরীরা, হয় অনলাইন কোর্স, অথবা রে়ডিওর অনুষ্ঠানের মাধ্যমে৷ আফগানিস্তানের বাইরের বহু মানবাধিকার সংগঠনও তাদের সহায়তা করে৷ এমনই একটি সংগঠন মালালা ফান্ড৷ এই তহবিলটির সহপ্রতিষ্ঠাতা পাকিস্তানের নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী মালালা ইউসুফজাই৷ লেখাপড়া করতে চেয়েছিলেন বলে মালালাকে ২০১২ সালে এক তালেবান দুষ্কৃতী গুলি করে হত্যা করার চেষ্টা করে৷ এই তহবিলের উদ্দেশ্য, প্রতিটি মেয়ের ১২ বছর নিরাপদে, বিনামূল্যে শিক্ষা নিশ্চিত করা৷ তালেবান ক্ষমতায় আসার পরে আফগানিস্তানের লক্ষ লক্ষ কিশোরী এই তহবিলের সাহায্যে চেষ্টা করছে লেখাপড়া করার৷
শবনম ফন হাইন/এসটি